অনলাইন ডেস্ক : দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আগে বেশির ভাগ সময় বাংলাদেশিরা ভারতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করত। কারণ প্রতিবছরই চিকিৎসা, কেনাকাটা, ভ্রমণসহ নানা কাজে অসংখ্য বাংলাদেশি ভারতে যায়। যার ফলে ক্রেডিট কার্ডে ভারতেই সবচেয়ে বেশি খরচ করত বাংলাদেশিরা।
এখন সেই জায়গা দখল করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ড। ক্রেডিট কার্ডে ভারতে বাংলাদেশিদের ব্যয় ৩ নম্বরে চলে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
দেশের বাইরে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার এখন থাইল্যান্ডে।
দেশটিতে এক মাসের ব্যবধানে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচ বেড়েছে ১৬ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছিল ৪২ কোটি টাকা। অক্টোবরে এই খরচ একলাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ কোটি টাকায়। তাতেই বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে দেশটি।
সেপ্টেম্বরেও দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ভারত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চলতি বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটক ভিসা বন্ধ রেখেছে ভারত সরকার। ভিসা কবে চালু হবে, সে বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই সর্বোচ্চসংখ্যক পর্যটক ভারতের কলকাতা, দিল্লি, দার্জিলিং, সিকিম, মেঘালয়ে যেতেন।
সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘এখন যাদের জরুরি প্রয়োজন, তাদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে।
কারণ আমাদের লোকবল কম। আমাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক হলে এটি (ট্যুরিস্ট ভিসা) শুরু করা সম্ভব হবে। তবে এখন যাদের জরুরি, তাদের মেডিক্যাল ভিসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভারতে গিয়ে তৃতীয় কোনো দেশের ভিসার আবেদন যারা করছে, তাদের আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ দেশের ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারী ৪৪টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের এবং দেশের ভেতর বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের তথ্য তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে দেশে-বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। দেশের অভ্যন্তরে এক মাসের ব্যবধানে ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে ১৯৭ কোটি টাকা বা প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ। আর বিদেশে খরচ বেড়েছে ৭৮ কোটি টাকা বা সাড়ে ১৮ শতাংশের বেশি। গত অক্টোবরে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ করা হয়েছে দুই হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে যার পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। আর অক্টোবরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিরা খরচ করেছে ৪৯৯ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে যার পরিমাণ ছিল ৪২১ কোটি টাকা। বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের সর্বোচ্চ ব্যবহার এখন যুক্তরাষ্ট্রে। অক্টোবরে দেশটিতে খরচ হয়েছে ৮৪ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে যার পরিমাণ ছিল ৭৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে সাত কোটি টাকা বা সোয়া ৮ শতাংশের বেশি।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগস্টের পটপরিবর্তনের আগে চিকিৎসা ও ভ্রমণে বাংলাদেশিদের অন্যতম গন্তব্য ছিল ভারত। কিন্তু পটপরিবর্তনের পর ভিসা প্রদানে কড়াকড়ির কারণে দেশটিতে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। যার ফলে দেশটিতে কমে গেছে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারও। তার বদলে চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরকে বেছে নিচ্ছে বাংলাদেশিরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিদেশে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে যত অর্থ খরচ করে, তার ২৮ শতাংশের বেশি বা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ খরচ হয় যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডে। অক্টোবরে বিদেশে খরচ হওয়া ৪৯৯ কোটি টাকার মধ্যে ১৪১ কোটি টাকায় খরচ হয়েছে এই দুই দেশে। ক্রেডিট কার্ডে খরচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে ছিল ভারত। দেশটিতে অক্টোবরে বাংলাদেশিরা খরচ করেছে ৫৪ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে চার কোটি টাকা বেশি।
বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে খরচের দিক থেকে থাইল্যান্ডের পর বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে সিঙ্গাপুরে। দেশটিতে অক্টোবরে বাংলাদেশিরা খরচ করেছে ৪৩ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে যার পরিমাণ ছিল ৩০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে দেশটিতে ক্রেডিট কার্ডে খরচ ১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
এদিকে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে। গত অক্টোবরে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে ১২৯ কোটি টাকা খরচ করেছেন। সেপ্টেম্বরে যার পরিমাণ ছিল ১১১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে বিদেশিদের খরচ বেড়েছে ১৮ কোটি টাকা বা সোয়া ১৬ শতাংশ। এ দেশে বিদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি করে নগদ অর্থ উত্তোলনে। অক্টোবরে ১২৯ কোটি টাকা খরচের মধ্যে ৪৭ কোটি টাকায় বিদেশিরা নগদে উত্তোলন করেছে।