অনলাইন ডেস্ক : করোনার কারণে গত তিন মাসেরও বেশি সময় ছিল মানুষ ঘরে বন্দি। সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় রেখে প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে যান না বেশির ভাগ মানুষ। ফলে প্রাধান্য পেয়েছে অনলাইনে কেনাকাটা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অনলাইন কেনাকাটায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করছে মানুষ। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফাঁদ পাতছে সাইবার অপরাধীরা। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহৃত জিনিসপত্র মাস্ক, পিপিই থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন, জামা-কাপড়, ফাস্টফুড সর্বত্রই চলছে প্রতারণা। এই প্রতারণা থেকে বাদ পড়ছেন না প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরাও।
অনলাইনে এক ধরনের পণ্য দেখিয়ে অন্য ধরনের কিংবা নিম্নমানের পণ্য ডেলিভারি দেয়ার বিষয়টি হরহামেশা ঘটছে। আবার, কিছু কিছু পেজে অগ্রিম মূল্য পরিশোধের পরেও পণ্য পাওয়া যায় না। এছাড়া পণ্য ডেলিভারির সময়ও প্রতারকের পাতা ফাঁদে পড়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন ক্রেতারা। ক্যাশ অন ডেলিভারির ক্ষেত্রে পণ্য ডেলিভারি নেয়ার পর দেখতে পান নিম্নমানের পণ্য দেয়া হয়েছে। তখন পণ্যতো ফেরত নেয় না বরং ফেসবুকে যোগাযোগ করতে গিয়ে দেখা যায় আইডি ব্লক অথবা নম্বর বন্ধ। র্যাব’র এক কর্মকর্তা সেল বিডি ডট কম ও বিডি এক্সপ্রেস ডট কম নামে অনলাইনে দামি মোবাইল ফোনের লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে অর্ডার করেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে এ ধরনের প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ পেলেও আমাদের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটবে বুঝতে পারিনি। অর্ডার করে টাকা পাঠালে কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো হয় মোবাইল ফোন। ফোনের প্যাকেট খুলে দেখি খেলনা মোবাইল। অবাক হয়ে যাই। এরপর থেকে চক্রটিকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখি। কিন্তু প্রতারক চক্র এতোটাই চতুর তারা যে ঠিকানা ব্যবহার করেছে, সেটাও ভুয়া ঠিকানা। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের অফিস এবং বাসার ঠিকানায় অভিযান চালাই। সেখানে সিগারেটের কার্টুনে থরে থরে সাজানো বিপুল পরিমাণ ডামি মোবাইল ও স্মার্টফোন লেখা বক্স উদ্ধার করা হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক নারী ফেসবুক পেইজে বিজ্ঞাপন দেখে ঈদ উপলক্ষে অনলাইনে ড্রেসের অর্ডার করেন। অর্ডারের তিনদিন পর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ড্রেসগুলো হাতে পেয়ে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সবগুলো ড্রেসই ছিল খুব নিম্নমানের। এ সময় তিনি পোশাকগুলো ফেরত দিতে চাইলে বেঁকে বসেন কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যক্তি। তিনি বলেন, এখানে আমার কোনো হাত নেই। ক্যাশ অন ডেলিভারিতে কুরিয়ার চার্জও দিতে হবে। কোনো উপায় না পেয়ে অবশেষে ফুল পেমেন্ট করতে হয়। এ সময় ফেসবুক পেইজে যোগাযোগ করলে উল্টো তাকে হুমকি দিয়ে আইডি ব্লক করে দেন। এদিকে মোটরসাইকেলের মতো বড় অঙ্কের অর্থের পণ্য কেনা-বেচার ক্ষেত্রে অনলাইনে ঘটে আরো বড় প্রতারণা। সিআইডি’র সাইবার সূত্র জানায়, এক্ষেত্রে প্রতারক চক্র অবিশ্বাস্য মূল্য ছাড় দিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়। দেড় লাখ টাকার মোটরসাইকেল তারা অফার করে ৮০ হাজার টাকা। বলা হয় সারাসরি দেখে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। পছন্দ হলে সেখান থেকেই মোটরসাইকেল হস্তান্তর করা হবে। প্রি-ইনস্টলমেন্ট মাত্র ৫ হাজার টাকা। এ রকম বিজ্ঞাপনে সাড়া দিলে ঘটতে পারে দুই রকম ঘটনা। প্রথমত, টাকা দিলেই ক্রেতাকে হয় ব্লক করে দেয়া হয়। অথবা টাকা দেয়ার পর সরাসরি ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বলা হয়। টাকা নিয়ে গেলে ক্রেতা ছিনতাইয়ের শিকার হন। এক্ষেত্রে অনলাইন প্লাটফরমের মাধ্যমে কেনা-বেচা না করতে পরামর্শ দিয়েছে সিআইডি। কারণ এ ধরনের প্রোডাক্ট কোয়ালিটি বা ক্রেতা-বিক্রেতার আইডেন্টিটি ভেরিফাই করা হয় না। ডিল হয় সরাসরি ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে। মাত্র ১ হাজার ২০০টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হলেও অনলাইনে ব্যবসা করছে অনিবন্ধিত প্রায় ৭০-৮০ হাজার প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে র্যাব-২ এর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার সাইফুল মালিক মানবজমিনকে বলেন, অনলাইনভিত্তিক সাইবার অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আমরা সবসময়ই সচেষ্ট। এ ধরনের অপরাধ রোধে আমাদের সাইবার মনিটরিং সেল সার্বক্ষণিক কাজ করছে। অনলাইন প্রতারণা ঠেকাতে আমাদের কার্যক্রম চলমান। অনলাইনে প্রতারণা সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন সময় আমাদের কাছে অভিযোগ আসে। প্রতি মাসে অসংখ্য অভিযোগ আসে। তাদের প্রতারণার ধরনও হয় ভিন্ন ভিন্ন।