অনলাইন ডেস্ক : নতুন ইতিহাস সৃষ্টির দ্বারপ্রান্তে ফ্রান্স। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্ষমতার খুব কাছাকছি চলে এসেছে উগ্র ডানপন্থীরা। ফলে রাজনীতিতে যে চাল দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তা বুমেরাং হতে যাচ্ছে তার দলের জন্য।
ফ্রান্সে আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন জনমত জরিপের আভাস, মেরিন লে পেনের নেতৃত্বাধীন কট্টর ডানপন্থি দল আরএন এবার প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে পরিচালিত বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেতে যাচ্ছে ন্যাশনাল র্যালি বা আরএন। তবে দলটি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
নির্বাচনে ম্যাক্রোঁর দলের অবস্থান তৃতীয় স্থানে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফ্রান্সের চারটি সংস্থার বুথফেরত জরিপে বলা হয়েছে, প্রথম দফার নির্বাচনে মেরিন লে পেনের দল ন্যাশনাল র্যালি প্রায় ৩৩ শতাংশ ভোট পাবে। অন্যদিকে বামপন্থী নিউ পপুলার ফ্রন্ট জোট প্রায় ২৯ শতাংশ এবং প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থী জোট এনসেম্বল অ্যালায়েন্স সর্বনিম্ন ২২ শতাংশ ভোট পাবে।
ন্যাশনাল র্যালি অভিবাসনবিরোধী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনাকারী হিসেবে বেশ পরিচিত। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেরিন লে পেনের শিষ্য ২৮ বছর বয়সী জর্দান বারদেলা। আরএন যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তবে দলের প্রধান জর্দান বার্দেলা ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। যদিও শাসনক্ষমতা চালানোর কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই তার।
ফ্রান্সের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এই দলের ক্ষমতায় আসার জোর সম্ভাবনার কথা আগে থেকেই বলে আসছে গণমাধ্যমগুলো। তবে ফ্রান্সের রাজনৈতিক ব্যবস্থা বেশ জটিল। ফ্রান্সের পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ৫৭৭ আসনের মধ্যে ২৮৯ আসন প্রয়োজন। জনমত ও বুথফেরত জরিপে ন্যাশনাল র্যালি দলকে সরকার গঠনে এগিয়ে রাখলেও কে শেষ হাসি হাসে, তা জানতে ৭ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এদিন দ্বিতীয় দফার ভোট হবে। তখনই চূড়ান্ত ফল জানা যাবে।
আরএন যদি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, তবে ফরাসি রাজনীতিতে অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে। কারণ পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ বিরোধীদের হাতে থাকলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ক্ষমতায় থাকবেন আরও তিন বছর, অর্থাৎ ২০২৭ সাল পর্যন্ত। ফলে বিরোধী দুই পক্ষ ক্ষমতার দুই কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করায় স্বাভাবিকভাবেই ভারসাম্য বজায় থাকবে না। এছাড়া চলতি নির্বাচনে আরএনের জয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ফ্রান্সের অবস্থানেও পরিবর্তন আনতে পারে। কারণ লে পেন অতীতে একাধিকবার রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে ন্যাশনাল র্যালির সরকার গঠন ঠেকাতে অন্যান্য দলের সঙ্গে জোট গঠন করতে দোড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। ইতোমধ্যে ডানপন্থীদের বিরুদ্ধে একটি বড় গণতান্ত্রিক জোট গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচনে খারাপ ফলের জেরে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন ম্যাক্রোঁ। একই সঙ্গে দেশটিতে আগাম নির্বাচনের ঘোষণাও দেন। তার এ ঘোষণায় দেশটির অনেকেই হতবাক হন। এতে ধীরে ধীরে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।