ইব্রাহীম চৌধুরী, নিউইয়র্ক : নিউইয়র্ক নগরীতে এখন ৭০-৮০-র দশকের বাস্তবতা চলছে। তখন অপরাধ আর সহিংসতার জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল এ নগরী। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার নিরাপদ নগরীর তালিকার শীর্ষে ছিল নিউইয়র্ক। করোনা মহামারিতে মৃত্যুপুরী হওয়া নিউইয়র্ক নগরী আবার অপরাধের নগরী হয়ে উঠছে। প্রতিদিন সহিংসতা আর গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। সপ্তাহে ডজন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে কেউ কেউ। লুটতরাজ, ছিনতাই বেড়ে গেছে। অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জুলাই বলেছেন, নগরীর পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্র থেকে হস্তক্ষেপ করতে তিনি প্রস্তুত। প্রয়োজনে নিউইয়র্কে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ফেডারেল এজেন্টদের পাঠাতে চান।
এদিকে রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ২২ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নিউইয়র্কে বিরক্তিকর সময় চলছে। তবে ফেডারেল হস্তক্ষেপের দরকার নেই। রাজ্য সরকারই যেকোনো মূল্যে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে। নিউইয়র্কের জনগণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন।
রাজ্যে নিয়ম থাকলেও জননিরাপত্তার জন্য জরুরি অবস্থা এখনো জারি করা হয়নি। এ কারণে ফেডারেল সরকারের হস্তক্ষেপের কোনো কারণ নেই বলে গভর্নর জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এ নিয়ে একমত হয়েছেন এবং পরিস্থিতি আরও নাজুক হলে তাঁকে জানাতে বলেছেন বলে কুমো সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন।
একজন নিউইয়র্কার হিসেবে অপরাধের সঙ্গে আগেও লড়াই করার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে গভর্নর কুমো বলেছেন, অপরাধের ওঠা-নামা হয়ে থাকে। নগরীর মেয়রের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলের কিছু পরিবর্তন নিয়ে কথা হচ্ছে। নগরীর নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে ধারণা পরিবর্তন হচ্ছে। ৭০ ও ৮০-র দশকের দিকে নিউইয়র্ক নগরী পরিবর্তিত হচ্ছ বলে গভর্নর নিজেই স্বীকার করেছেন।
নিউইয়র্কে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার জন্য বেশ কিছু কারণকে দায়ী করা হচ্ছে। এমন মহামারি বিপর্যয়ের পর ঐতিহাসিকভাবে নগরীগুলোতে অপরাধ বেড়ে যায় বলে বলা হচ্ছে। মহামারির শুরুতে নিউইয়র্কের কারাগার থেকে বহু অপরাধীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠা নিউইয়র্কে পাঁচ মাস ধরে আদালতগুলোতে ঠিকমতো কাজ হচ্ছে না। এই সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। অন্যান্য রাজ্য থেকেও অপরাধীদের আগমন ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্যাপক মানুষ কর্মহীন। যাঁরা বেকার ভাতা পাচ্ছেন, তাঁদের কেউ কেউ নতুন করে কাজের সন্ধানে না গিয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন।
২৫ মে মেনিয়াপোলিসে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর নাগরিক আন্দোলনের সুযোগ নিয়েছে কিছু অপরাধী। পুলিশ সংস্কারের দাবি সামনে চলে আসায় নগরীকে দ্রুত পুলিশ সংস্কারে নামতে হয়েছে। ফলে পুলিশের তত্পরতায়ও পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। পুলিশের বহু বিভাগে আগের লোকবল নেই, অনেকের নতুন আইন মেনে অপরাধ দমনের প্রস্তুতি নেই। নিউইয়র্ক পুলিশের বহু সদস্য কাজ থেকে অবসর নেওয়ারও আবেদন করেছেন। বহুবিধ এমন কারণেই নিউইয়র্কে প্রতিদিন সহিংসতা ঘটছে। এমনকি সড়কপথে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার এঁকে দেওয়ারও প্রকাশ্য প্রতিবাদ হচ্ছে। এক পক্ষ সড়কে হলুদ কালিতে স্লোগানটি লেখে দিয়েছে। নগরীর মেয়র এ উদ্যোগের সমর্থক। এখন প্রতিদিন কৃষ্ণাঙ্গসহ আরেক দল লোক লেখাটি মুছে দিচ্ছেন। এ নিয়ে প্রতিদিনই নগরীতে উত্তেজনা চলছে।