অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশের সঙ্গে পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় যে অভিযোগ করেছিলেন তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই বলে জানাল দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজ শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এর মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এ কথা বলেন।
রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তা তার (মমতার) বক্তব্যকে সমর্থন করে না। সব অংশীদারদের সমন্বয়ে গঠিত (বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি সংক্রান্ত) অভ্যন্তরীণ কমিটির সব বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছে। এমনকি এ বছরের ৬ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার এটাও জানিয়েছে যে- ২০২৬ সালে চুক্তি শেষ হয়ে গেলেও তাদের সুপেয় পানি ও শিল্পের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা থাকবে।’
তিনি বলেন, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার পানিবণ্টনে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি সই হয়। চুক্তিটি ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে তার মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে বলে উল্লেখ ছিল।
সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে জানান, চুক্তিটি পুনর্নবায়ন করার জন্য দুই দেশ টেকনিক্যাল পর্যায়ে আলোচনা শুরু করবে।
এরপর গত ২৪ জন নরেন্দ্র মোদিদে চিঠি লেখেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের পরিপ্রেক্ষিতে আমি এই চিঠি লিখছি। মনে হচ্ছে, এই গুরুত্বপূর্ণ সফরে তিস্তা ও গঙ্গা পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পরামর্শ ও মতামত ছাড়া এ ধরনের একতরফা আলোচনা গ্রহণযোগ্য বা কাম্য নয়।’
মমতা লিখেছেন, ‘রাজ্যের ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমি বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি এবং সর্বদা তাদের মঙ্গল কামনা করি। পশ্চিমবঙ্গ অতীতে বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের চুক্তি, ইন্দো-বাংলাদেশ রেলওয়ে লাইন ছাড়াও বাস পরিষেবাগুলো এই অঞ্চলে অর্থনীতির উন্নতির মাইলফলক।’
তিনি লেখেন, ‘পানি খুবই মূল্যবান এবং মানুষের জীবনরেখা। আমরা এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে আপস করতে পারি না, যা জনগণের ওপর মারাত্মক এবং বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ ধরনের চুক্তির প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি বুঝতে পেরেছি ভারত সরকার, ভারত-বাংলাদেশ ফারাক্কা চুক্তি নবীকরণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যার মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। এটি একটি চুক্তি যা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জল বণ্টনের নীতিগুলো বর্ণনা করে।’
মোদির উদ্দেশে মমতা লেখেন, ‘আপনি জানেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জীবন-জীবিকা বজায় রাখার জন্য নদীর পানি একটি বিশাল প্রভাব রয়েছে। ফারাক্কা ব্যারেজে পানি সরানো হয়, তা কলকাতার বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আমি আপনার নজরে আনতে চাই, ভারত ও বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের নদীর রূপতত্ত্ব পরিবর্তিত হয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত করেছে এবং রাজ্যের পানির প্রাপ্যতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে। আমি আশা করি আপনি পশ্চিমবঙ্গের জনগণের প্রয়োজনীয়তা এবং প্রত্যাশাকে উপলব্ধি করবেন এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
