অনলাইন ডেস্ক : ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা থেকেই চীনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় বসেই চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এরপর হংকংয়ে নতুন নিরাপত্তা আইন, উইঘুর মুসলিম ইস্যু ও মানবাধিকার লঙ্ঘন, করোনা ভাইরাস, ভারতের সঙ্গে চীনের সীমান্ত বিরোধ এবং দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ ট্রাম্প। মেয়াদের শেষ দিকে এসে তিনি চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছেন। হিউস্টনের একটি চীনা কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন যা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রথম কড়া পদক্ষেপ।

বেইজিং এই সিদ্ধান্তকে চরম উসকানিমূলক ও নজিরবিহীন স্পর্ধা বলে মন্তব্য করেছে। তবে এখানেই থেমে নেই যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি চীনবিরোধী একটি জোট গঠনেরও ঘোষণা দিয়েছে।

কঠোর অবস্থানে ট্রাম্প

টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনে চীনের কনস্যুলেট শুক্রবারের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মর্গান ওরতাগুস জানিয়েছেন, মেধাস্বত্ব রক্ষার জন্য তাদের এই পথ বেছে নিতে হয়েছে। এর আগে আরেক বিবৃতিতে ওরতাগুস জানান, যুক্তরাষ্ট্রে সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের কাজে হস্তক্ষেপের সুযোগ চীনকে দেওয়া হবে না। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানায় যে, চীন করোনা ভাইরাস টিকা গবেষণায় হ্যাকিং করার চেষ্টা করছে। দুজন চীনা নাগরিককে এই হ্যাকিংয়ে জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মার্কিন সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মার্কো রুবিও বলেন, এটার দরকার ছিল। কারণ, এখান থেকেই গুপ্তচরবৃত্তি করা হয়। এর আগে সোমবার ১১ চীনা কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করে ওয়াশিংটন। কয়েক দিন আগে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চার নেতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। দেশটি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সব সদস্যসহ তাদের পরিবারের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও পরিকল্পনা করছে। আর বাণিজ্য যুদ্ধ তো চলছেই। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকা জানিয়েছে, হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট ভবন থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডুলি উড়তে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অফিস বন্ধ করার আগে চীনা কর্মকর্তারা তাদের নথিপত্র হয়তো পুড়িয়ে ফেলছেন।

চীনবিরোধী জোট গড়বে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বর্তমানে ইউরোপ সফরে রয়েছেন। তার এই সফরে চীনই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাবের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন তিনি। সেখানে চীনের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উত্থাপন করে একটি জোট গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই জোট চীনকে মোকাবিলা করবে বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। চীনকে তিনি আগ্রাসী হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তাদের দখলদারিত্বের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, করোনা মহামারিকে অত্যন্ত হীনভাবে নিজেদের ভবিষ্যত্ স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করছে বেইজিং। পম্পেও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। এমনকি চীনা ভিন্নমতাবম্বীদের সঙ্গেও তার বৈঠকের কথা রয়েছে।

কড়া হুঁশিয়ারি বেইজিংয়ের

বেইজিং এই নির্দেশকে চরম উসকানিমূলক এবং নজিরবিহীন স্পর্ধা হিসেবে বর্ণনা করে পালটা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্র একদিকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ঘটাচ্ছে এবং অন্যদিকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নীতিও ভঙ্গ করছে। মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রে চীনা কূটনীতিক ও শিক্ষার্থীদের অবৈধভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে। বেইজিং হিউস্টন কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর এটাই চীনের প্রথম কনস্যুলেট। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের আটটি রাজ্যে এই কনস্যুলেট থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। —সিএনএন ও বিবিসি