সোনা কান্তি বড়ুয়া : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি! বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের অভিষেকের তরে সোনার ঘটে আলোক ভরে! বিশ্বসাহিত্যে রবীন্দ্র সাহিত্যের স্রষ্টা বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ১৬৪তম শুভ জন্মজয়ন্তীতে পুণ্যচেতনা স্মরণ করে বিশ্বকবিকে মোদের সাষ্ঠাঙ্গ প্রনতি। তিনি সব বাঙালির। আসুন, সবাই মিলে সেই শুভ দিনটি উদ্্যাপন করি। বৌদ্ধ সহজতত্ত¡ ও রবীন্দ্রনাথের অরূপ সাধনা এই রূপ সব্যসাচী প্রতিভাধর মানুষ আর দেখা যায় না! সাহিত্যের সর্বদিকে তাহার বিচরণ মানুষকে দেয় প্রশান্তি, খুঁজে পায় বিশ্বমানবতা দর্শনের ভাবধারা, তাই সেই বিশ্বমানবতায় উদ্ভাসিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিরন্তন! আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ১৬৪তম জন্মদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
চির-নূতনেরে দিল ডাক / পঁচিশে বৈশাখ। বিশ্বননন্দিত
তোমার প্রকাশ হোক কুজ্ঝটিকা করি উদ্ঘাটন
সূর্যের মতন !
হে নূতন,
তোমার প্রকাশ হোক কুজ্ঝটিকা করি উদ্ঘাটন
সূর্যের মতন।
বসন্তের জয়ধ্বজা ধরি
শূন্য শাখে কিশলয় মুহূর্তে অরণ্য দেয় ভরি–
সেই মতো, হে নূতন,
রিক্ততার বক্ষ ভেদি আপনারে করো উন্মোচন।
ব্যক্ত হোক জীবনের জয়,
ব্যক্ত হোক তোমা-মাঝে অনন্তের অক্লান্ত বিস্ময়।’
উদয়দিগন্তে ওই শুভ্র শঙ্খ বাজে।
মোর চিত্তমাঝে!
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১ – ১৯৪১) মানুষ হিসেবে এ নশ্বর পৃথিবীতে তাঁর “সেই স্বপ্নটি ছিল বিশ্বসাহিত্যে রবীন্দ্র সাহিত্যের সৃষ্টিকে ষোলোকলায় পূর্ণতা দিয়ে আজও তাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অমরত্বের বরপুত্র। জগৎ জুড়িয়া শত বছর পরেও তিনি তাঁর বিশ্বসাহিত্যে রবীন্দ্র সাহিত্যের স্রষ্টার অমরত্বে বেঁচে থাকবেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়,
“আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতা খানি
কৌতূহল ভরে!”
বাংলা সাহিত্য জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে যদি কেউ থেকে থাকেন তাহলে সেটা অবশ্যই আমাদের সকলের প্রিয় বিশ্বকবিরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর অসাধারণ লেখা সব কবিতা ও গান, আজও প্রত্যেকটা বাঙালীর সমানভাবে মন কাঁড়ে। তিনি শুধু একজন শ্রেষ্ঠ গল্পকারই ছিলেন না, সেইসাথে ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিকও! ৫২ টি কাব্যগ্রন্থ, ২২৩২টি গান, ১৩টি উপন্যাস, ৯৫টি ছোটোগল্প, ৩৬টি প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৯ খণ্ড চিঠিপত্র, বহু অসামান্য ছবি, মোট ৩২ খণ্ড রচনাবলী। বিশ্বভারতীর মতো আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যার প্রতিষ্ঠান নির্মাণ। ৮০ বছরের পরমায়ু। এই অ-লৌকিক প্রতিভাসম্পন্ন মানুষটি এক জীবনে যা লিখেছেন, যা ভেবেছেন, তা পাঠ করতেই আমাদের মতো লিলিপুটদের একটা গোটা জীবন কেটে যাবে। আর সেই পাঠ-কে আত্মস্থ করতে চাই আরও একটা জীবন। বিশ্বমানবতায় উদ্ভাসিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ চিরন্তন!
প্রায় ২৬০০ বছর পূর্বে রাজপুত্র সিদ্ধার্থ (গৌতমবুদ্ধ) বাল্যকালে যে বাংলা লিপি অধ্যয়ন করেছিলেন এর ঐতিহাসিক প্রমান বাংলা বিশ্বকোষের ১৩শ ভাগ, ৬৫ পৃষ্ঠায় সগৌরবে লিপিবদ্ধ আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, “তিনি (গৌতমবুদ্ধ) জন্মেছেন মানবের চিত্তে, প্রতিদিন তিনি জন্মাচ্ছেন, প্রতিদিন তিনি বেঁচে আছেন।” বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা “চন্ডালিকা” শীর্ষক নৃত্যনাট্যে বিশ্বমানবতার বানী অহিংসা পরম সুধা প্রচার করেছেন। সারনাথে মূলগ্ধ কুটিবিহার প্রতিষ্ঠা-উপলক্ষে রচিত (তব জন্মভ‚মি) (২৯ জুলাই ১৯৩৩ সাল)! গৌতমবুদ্ধের জন্মভ‚মি নামে একদিন ধন্য হল দেশে দেশান্তরে! গৌতমবুদ্ধের প্রতি বিশ্বকবির ভাষায়:
ওই নামে একদিন ধন্য হল দেশে দেশান্তরে
তব জন্মভ‚মি।
সেই নাম আরবার এ দেশের নগরে প্রান্তরে
দান কর তুমি।
বোধিদ্রæমতলে তব সেদিনের মহাজাগরণ
আবার সার্থক হোক, মুক্ত হোক মোহ আবরণ,
বিস্মৃতির রাত্রিশেষে এ ভারতে তোমারে স্মরণ
নব প্রভাতে উঠুক কুসুমি।’
কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকে হত্যা করলে কুকুর বিড়াল হত্যার সমান পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন (মনুস্মৃতি ১১/ ১৩২)! বিশ্বকবির ভাষায়: “মানুষের অধিকারে বঞ্চিত করেছ যারে, / সন্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান! মানুষের দায় মহামানবের দায়, কোথাও তার সীমা নেই। অন্তহীন সাধনার ক্ষেত্রে তার বাস। জন্তুদের বাস ভ‚মণ্ডলে, মানুষের বাস সেইখানে যাকে সে বলে তার দেশ। দেশ কেবল ভৌমিক নয়, দেশ মানসিক। মানুষে মানুষে মিলিয়ে এই দেশ জ্ঞানে জ্ঞানে, কর্মে কর্মে। যুগযুগান্তরের প্রবাহিত চিন্তাধারায় প্রীতিধারায় দেশের মন ফলে শস্যে সমৃদ্ধ। বহু লোকের আত্মত্যাগে দেশের গৌরব সমুজ্জ্বল। যে-সব দেশবাসী অতীতকালের তাঁরা বস্তুত বাস করতেন ভবিষ্যতে। তাঁদের ইচ্ছার গতি কর্মের গতি ছিল আগামীকালের অভিমুখে।
তাঁদের তপস্যার ভবিষ্যৎ আজ বর্তমান হয়েছে আমাদের মধ্যে, কিন্তু আবদ্ধ হয়নি। আবার আমরাও দেশের ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানকে উৎসর্গ করছি। সেই ভবিষ্যৎকে ব্যক্তিগতরূপে আমরা ভোগ করব না। যে তপস্বীরা অন্তহীন ভবিষ্যতে বাস করতেন, ভবিষ্যতে যাঁদের আনন্দ, যাঁদের আশা, যাঁদের গৌরব, মানুষের সভ্যতা তাঁদেরই রচনা। তাঁদেরই স্মরণ করে মানুষ আপনাকে জেনেছে অমৃতের সন্তান, বুঝেছে যে, তার দৃষ্টি, তার সৃষ্টি, তার চরিত্র, মৃত্যুকে পেরিয়ে। মৃত্যুর মধ্যে গিয়ে যাঁরা অমৃতকে প্রমাণ করেছেন তাঁদের দানেই দেশ রচিত। ভাবীকালবাসীরা, শুধু আপন দেশকে নয়, সমস্ত পৃথিবীর লোককে অধিকার করেছেন। তাঁদের চিন্তা, তাঁদের কর্ম, জাতিবর্ণনির্বিচারে সমস্ত মানুষের।
সবাই তাঁদের সম্পদের উত্তরাধিকারী। তাঁরাই প্রমাণ করেন, সব মানুষকে নিয়ে; সব মানুষকে অতিক্রম করে, সীমাবদ্ধ কালকে পার হয়ে এক-মানুষ বিরাজিত। সেই মানুষকেই প্রকাশ করতে হবে, শ্রেষ্ঠ স্থান দিতে হবে বলেই মানুষের বাস দেশে। অর্থাৎ, এমন জায়গায় যেখানে প্রত্যেক মানুষের বিস্তার খণ্ড খণ্ড দেশকালপাত্র ছাড়িয়ে — যেখানে মানুষের বিদ্যা, মানুষের সাধনা সত্য হয় সকল কালের সকল মানুষকে নিয়ে।”
বাংলাদেশে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে! বাংলাদেশের স্বাধীনতা কি শুধু মুসলমানদের ইসলাম ধর্মের জন্য? বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মুসলমান ছিলেন না! যদিও তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা, তবুও তিনি বাংলাদেশের মুসলমান জাতীয় কবি নন। তাঁর নামে ঢাকায় একটি রাস্তাও নেই; সংস্থা তো নেই। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বড় পণ্ডিত ড. হুমায়ুন আজাদ বলেছেন,
“বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ- ঠাকুর যাঁকে বাতিলের চেষ্টা করে আসছে নষ্টরা পবিত্র পাকিস্তানের কাল থেকে; পেরে ওঠে নি। এমনই প্রতিভা ঐ কবির, তাঁকে বেতার থেকে বাদ দিলে তিনি জাতির হৃদয় জুড়ে বাজেন; তাঁকে পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিলে তিনি জাতির হৃদয়ের কাব্যগ্রন্থে মুদ্রিত হয়ে যান, তাঁকে বঙ্গভবন থেকে বাদ দেওয়া হলে তিনি সমগ্র বঙ্গদেশ দখল করেন; তাঁর একটি সংগীত নিষিদ্ধ হলে তিনি জাতীয় সংগীত হয়ে ওঠেন।
প্রতিক্রিয়াশীল নষ্টরা অনেক লড়াই করেছে তাঁর সাথে, পেরে ওঠে নি; তাঁকে মাটি থেকে বহিষ্কার করা হলে তিনি আকাশ হয়ে ওঠেন; জীবন থেকে তাঁকে নির্বাসিত করা হলে তিনি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন জাতির স্বপ্নালোকে। নষ্টরা তাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে আপ্রাণ। যদিও তিনি জাতীয় সংগীতের রচয়িতা, তবুও তিনি জাতীয় কবি নন। তাঁর নামে ঢাকায় একটি রাস্তাও নেই; সংস্থা তো নেই। তাতে কিছু যায় আসে নি তাঁর; দশকে দশকে বহু একনায়ক মিশে যাবে মাটিতে। তিনি বেঁচে থাকবেন বাঙলায় ও বিশ্বে।”
এই যে মানুষের মন নিয়ে জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসী ইসলাম ধর্মের খেলা। রবীন্দ্র দর্শন – বিশ্ব তো বটেই এই বাংলায় এতটাই প্রভাববিস্তারি যে, আপনার বাবা, আপনি এবং আপনার সন্তানেরা কবিগুরু রচিত জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা /আমি তোমায় ভালোবাসি’ সমস্বরে সঠিক স্কেলে গাইতে বাধ্য হচ্ছেন। পক্ষান্তরে আপনার প্রণীত কোনো একটা শব্দও উচ্চারণ করতে কেউ বাধ্য নন। কার্যত এখানেই আপনার সাথে রবিঠাকুরের ঘোর ব্যবধান। ঠিক আপনাদের সমীপে অনেক আগে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বড় পণ্ডিত ড. হুমায়ুন আজাদ বলে রেখেছেন!
বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে পাকিস্তানী রিফিউজী বিহারী রাজনীতিকরা (মোহাম্মদ পুর রিফিউজি ক্যাম্পসহ) ইসলামিক হালাল রাজনীতি করতে বিভিন্ন কট্টরপন্থী (আরাকান জামাতুল ইসলাম এবং জামাতসহ) ইসলামীক সংঘটনে যোগদান করে রোহিঙ্গাদের সুখের ঘরে আগুন দিয়েছে। বাংলাদেশে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে! রামুর ইসলামি জঙ্গীরা (DATED 29 SEPT 2012) মুসলমান ফেইসবুকে রচিত কোরাণের উপর পদচিহ্ন দিয়ে অন্যায় ন্যায় হল, সত্য হল অসত্য, অসত্য হল সত্য, অধর্ম যুদ্ধ হল ধর্ম যুদ্ধ!
একাত্তররের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র এবং বাংলাদেশের হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্ঠানদের জন্য সমান সুযোগ! একাত্তররের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাস যৌথভাবে গত বছর এ গণকমিশন গঠন করেছিল। গণকমিশনের সভাপতি বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের সভাপতিত্বে সভায় বলা হয়, দুই খণ্ডে প্রকাশিতব্য এই শ্বেতপত্রে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনের বহুমাত্রিক কার্যক্রম তুলে ধরার পাশাপাশি এ বিষয়ে সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করা হবে। এছাড়াও জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, সা¤প্রদায়িকতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের নির্বাচিত কলাম, সংবাদ ও ছবি প্রকাশ করা হবে!
চর্যাপদে আমরা দেখতে পাই সেন আমলে গায়ের জোরে উচ্চবর্ণের হিন্দু শাসকগণ বৌদ্ধগণকে দলিত বানিয়েছিলেন! বুদ্ধাব্দকে (২৫৬৭) বাদ দিয়ে হিজরির (১৪৩৯) অনুকরনে বঙ্গাব্দ লেখা যে সম্রাট আকবরের আদেশ ছিল, তা বাঙলাদেশের মহাবীর ঈশা খাঁ না মেনে সম্রাটের সেনাপতি মানসিংহের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। সমাজে সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠার’ জন্যই Buddhist Saints নাটক চর্চা করতেন এবং চর্যাপদের ১৭ নম্বর কবিতায় (চর্যায়) আমরা পড়েছি, “নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী / বুদ্ধ নাটক বিসমা হোই অর্থাৎ দেবী গাইছেন, বজ্রাচার্য নাচছেন, এভাবে বুদ্ধ নাটক শেষ হলো।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বীয় স্রষ্টাকে বহুবিধ, সংজ্ঞায়, বচনে, উচ্চাসে, উচ্চারণে, কথায়, সম্বোধন করেছেন হে, ওহে, হে প্রিয়তম, ওহে অন্তরতম, ত্রিভুবনেশ্বর, পরাণ সখা, হে প্রিয়, হে আমার বন্ধু, হে আমার নাথ, বন্ধু হে আমার, হে মোর দেবতা, ওহে সুন্দর তুমি, ওগো অসীম, তুমি হে, হে অন্তরযামী, মানব জন্মতরীর মাঝি, ওহে অসীম, তুমি কে, বার বার তার কবিতায়, উপন্যাসে, নাটকে, বিশেষ উপমায়, সম্বোধনে উচ্চারণ করেছেন তা তার বিস্ময়কর মরমীভাবের প্রকাশ। বাঙালির হৃদয়ের আকাশে অবস্থানকারী উজ্জ্বলতম নক্ষত্র কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম তম জন্ম দিনে জানাই সশ্রদ্ধ প্রনাম। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়,
আমার এ জন্মদিন-মাঝে আমি হারা
আমি চাহি বন্ধুজন যারা
তাহাদের হাতের পরশে
মর্তের অন্তিম প্রীতিরসে
নিয়ে যাব মানুষের শেষ আশীর্বাদ।
শূন্য ঝুলি আজিকে আমার;
দিয়েছি উজাড় করি
যাহা কিছু আছিল দিবার,
প্রতিদানে যদি কিছু পাইÑ
কিছু স্নেহ, কিছু ক্ষমাÑ
তবে তাহা সঙ্গে নিয়ে যাই
পারের খেয়ায় যাব যবে
ভাষাহীন শেষের উৎসবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর–
পর্যায় — শেষ লেখা!”
‘বিশ্ব ভুবনের অস্তিত্ব ও আমার অস্তিত্ব একাত্মক। ভ‚ভুব: স্ব: এই ভ‚-লোক, অন্তরীক্ষ, আমি, তারই সঙ্গে অখন্ড। এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের আদি অন্তে যিনি আছেন তিনি আমাদের মনে চৈতন্য প্রেরণ করেছেন। চৈতন্য ও বিশ্ব, বাহির ও অন্তরে, সৃষ্টির এই দুইধারা একধারায় মিলেছে। এমনি করে ধ্যানের দ্বারা যাকে উপলব্ধি করছি তিনি বিশ্ব আত্মাতে আমার আত্মাতে চৈতন্যের যোগে যুক্ত’।
প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন ‘খেয়ার নেয়ে’ আলোছায়ার রহস্যলোকে অস্পষ্টভাবে ক্ষণে ক্ষণে দেখা দিয়েছেন আর গীতাঞ্জলীর দেবতা ভক্তের সম্মুখে আসীন। রবীন্দ্রনাথের DEEP SPIRITUAL বিশ্বমানবতায় রসানুভ‚তি গীতাঞ্জলি, গীতিমাল্য ও গীতালীতে স্তরে স্তরে গভীর হতে গভীরে গিয়ে পূর্ণতা লাভ করেছে। (রবীন্দ্র জীবনী ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা- ২৪৫)। আত্মার দৃষ্টি রচনায় কবি বলেছেন “আমাদের চেতনা আমাদের আত্মা যখন সর্বত্র প্রসারিত হয় তখন জগতের সমস্ত সত্তাকে আমাদের সত্তা ধারাই অনুভব করি। ইন্দ্রিয়ের দ্বারা নয়, বৈজ্ঞানিক যুক্তি দ্বারা নয়, সে পরিপূর্ণ অনুভ‚তি একটি আশ্চার্য্য ব্যাপার!
বুদ্ধভ‚মি পুন্ড্রবর্দ্ধনে (বগুড়া) গৌতমবুদ্ধের বাংলাদেশ : “সমস্ত বিশ্বে আজ এ বাণী পৌঁছেছে , ইউরোপেও। ইউরোপ আজ বড় দুঃখে পীড়িত, হিংসায় শতধা বিভক্ত। কোন রাজনৈতিক কলে (পন্থায়) শান্তি তৈরী করা যেতে পারে না, ইউরোপ তা বোঝে না। শান্তি ম্যাঞ্চেষ্টারের কল এ তৈরী করা কাপড়ের মত কিছু হতে পাওে না, এই যে মানুষের মন নিয়ে খেলা। ইউরোপকে একবার প্রাচ্যেও দিকে তাকাতে হবে, যেখানে সত্য রয়েছে, সেখানে কবে মানুষের দৃষ্ঠি পড়বে?বড় দুঃখে আমরা অনেক দিনের পাপ বহন করে এসেছি, এই মানুষকে অপমান করে। তিনি আমাদের এই ভেদ বুদ্ধি থেকে রক্ষা করুন। পার্লামেন্টারী বিধি নিয়মে, অথবা ভোট নেবার কোন এক কৌশলে অন্তরের মধ্যে বিষ পোষণ করে, কলের (যন্ত্র) সৃষ্ঠ শান্তি আমাদের ধর্ম নয়। ধর্ম হইতেছে জীবে দয়া, মানুষে শ্রদ্ধা।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব কবি হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত তবে তিনি বহু প্রতিভার মানুষ ছিলেন। একদিকে তিনি প্রথম ভারতীয় সাহিত্যের জন্য নোবেল জিতেছিলেন এবং অন্যদিকে একজন উপন্যাসিক যিনি একটি সম্পূর্ণ ঘরানার গান লিখেছেন এবং সুর করেছেন। তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদ যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা প্রচলিত শিক্ষাকে চ্যালেঞ্জ করে গড়ে উঠেছিল মুক্ত প্রকৃতিতে। আবদ্ধ ঘর যে প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারে না, তিনি তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন।
সকল ধর্মের উপদেশে বিরাজমান, “মানুষ মানুষের ভাইবোন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা, ছোট ছোট দুঃখ কথা / নিতান্তই সহজ সরল ! সহস্র বিস্মৃতি রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি / তারি দু’চারিটি অশ্রুজল / নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা / নাহি তত্ত¡ নাহি উপদেশ!” ‘বিশ্ব ভুবনের অস্তিত্ব ও আমার অস্তিত্ব একাত্মক। ভ‚ভুব: স্ব: এই ভ‚-লোক, অন্তরীক্ষ, আমি, তারই সঙ্গে অখন্ড। এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের আদি অন্তে যিনি আছেন তিনি আমাদের মনে চৈতন্য প্রেরণ করেছেন। চৈতন্য ও বিশ্ব, বাহির ও অন্তরে, সৃষ্টির এই দুইধারা একধারায় মিলেছে। এমনি করে ধ্যানের দ্বারা যাকে উপলব্ধি করছি তিনি বিশ্ব আত্মাতে আমার আত্মাতে চৈতন্যের যোগে যুক্ত’।
প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন ‘খেয়ার নেয়ে’ আলোছায়ার রহস্যলোকে অস্পষ্টভাবে ক্ষণে ক্ষণে দেখা দিয়েছেন আর গীতাঞ্জলীর দেবতা ভক্তের সম্মুখে আসীন। রবীন্দ্রনাথের DEEP SPIRITUAL বিশ্বমানবতায় রসানুভ‚তি গীতাঞ্জলি, গীতিমাল্য ও গীতালীতে স্তরে স্তরে গভীর হতে গভীরে গিয়ে পূর্ণতা লাভ করেছে। (রবীন্দ্র জীবনী ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা- ২৪৫)। আত্মার দৃষ্টি রচনায় কবি বলেছেন “আমাদের চেতনা আমাদের আত্মা যখন সর্বত্র প্রসারিত হয় তখন জগতের সমস্ত সত্তাকে আমাদের সত্তা ধারাই অনুভব করি। ইন্দ্রিয়ের দ্বারা নয়, বৈজ্ঞানিক যুক্তি দ্বারা নয়, সে পরিপূর্ণ অনুভ‚তি একটি আশ্চার্য্য ব্যাপার!
সোনাকান্তি বড়ুয়া, বিবিধ গ্রন্থ প্রণেতা, কলামিষ্ট এবং মানবাধিকার কর্মী।) সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে REPRESENTATIVE OF THE WORLD FELLOWSHIP OF BUDDHISTS, BANGKOK , THAILAND