সোনা কান্তি বড়ুয়া : কত স্বপ্ন ছিল শিউলির। কত আশা ছিল আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠায় সুপ্রতিষ্ঠিত করবে। জীবনকে নতুন করে নতুন রূপে সাজাবে। নিজের ইচ্ছেমত নিজেকে পরিচালনা করবে। জীবনকে উপভোগ করবে। উচ্ছাসিত আনন্দে খুশীর জোয়ারে ভেসে বেড়াবে। শিউলির মনে পড়ে, একাত্তরের সেই বিভীষিকার রাত। কি ভয়াবহ, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তখন পরাধীন দেশ পূর্ব পাকিস্থানের। যেদিন মুক্তিযুদ্ধচলাকালিন গ্রামে-গঞ্জে শহরে চতুর্দিকে গনহত্যা, লুন্ঠন, মা-বোনের সম্ম্রমহানী, ধর্ষণ, যা আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কম বেশী অবগত আছি। যখন প্রাণের দায়ে সাধারণ জনগণ নিজের মাতৃভ‚মি এবং পৈত্রিক বিষয়-সম্পত্তি পরিত্যাগ করে বেছে নিয়েছিল পলায়নের পথ। ভাবলে আজও গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে।
প্রিয়তমা যুথিকা বড়ুয়া কানাডার টরন্টো প্রবাসী গল্পকার, গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত শিল্পী। ভালোবেসে সখী, নিভৃতে যতনে বাংলাদেশের নামটি লিখো! আমার হৃদমাঝারে প্রিয়তমার গান ও গল্প! প্রিয়তমার বদনখানি মলিন হলে আমি নয়নজলে ভাসি! মানবতার কল্যাণে প্রথিতযশা কবি ও লেখক যুথিকা বড়ুয়া নিভৃতে যতনে “নানা রঙের যাপিত জীবন” গ্রন্থ এবং “একাত্তরের সেই বিভীষিকার রাত” গল্পটি লিখেছেন!
যুথিকা বড়ুয়ার ভাষায়: আমার অনেক বছরের আশা এ বছর ২০২৩ ইং সালে পূরণ হলো। পরম স্রষ্টাকে অশেষ ধন্যবাদ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাবলী গল্পের মাধ্যমে আমার সমস্ত আবেগ ও অনুভ‚তি দিয়ে পাঁচটি বাছাই করা গল্পের সমণ্বয়ে “নানান রঙের যাপিত জীবন” আমার প্রথম মলাটবদ্ধ গ্রন্থটি সাজিয়েছি। সকল পাঠক বন্ধুদের আমার বিনীত অনুরোধ গ্রন্থটি পড়বেন। আপনারাও উপভোগ করবেন। বাংলাদেশে একুশে (২০২৩) বইমেলা ৫৭৮ নম্বর ষ্টলে প্রথম সারিতে গ্রন্থটি স্থান পেয়েছে। আজ আমি ধন্য এবং খুবই আনন্দিত।
বিগত ২৮শে মে ২০২৩, রবিবার, সন্ধ্যায় কবি, লেখক ও কন্ঠশিল্পী যুথিকা বড়ুয়া’র স্মরণে বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো এক শোক সভার আয়োজন করে। বক্তাগণ বলেন- টরন্টোর অত্যন্ত জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী ছিলেন যুথিকা বড়ুয়া। গানের পাশাপাশি তিনি কবিতা এবং ছোটগল্প লিখেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। ঢাকা ও কলকাতায় বেশ জনপ্রিয় লেখক ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম সারির প্রকাশনী সংস্থা “প্রতিবিম্ব প্রকাশ” উত্তরা, ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর গল্পের সংকলন, ‘নানান রঙের যাপিত জীবন’। যা বাংলা একাডেমি বইমেলা ২০২৩ এ প্রথম প্রকাশিত হয়। তিনি গত ১৮ই এপ্রিল কলকাতায় বাটানগর (বাবার বাড়িতে) বেড়াতে গিয়ে অকালে মৃত্যু বরণ করেন।
যুথিকা বড়ুয়ার অনবদ্য গ্রন্থ ও অমর সৃষ্টি “নানা রঙের যাপিত জীবন!” একাত্তরের সেই বিভীষিকার রাত। শিউলির মনে পড়ে, একাত্তরের সেই বিভীষিকার রাত। কি ভয়াবহ, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তখন পরাধীন দেশ পূর্ব পাকিস্থানের। যেদিন মুক্তি যুদ্ধচলাকালিন গ্রামে-গঞ্জে শহরে চতুর্দিকে গনহত্যা, লুন্ঠন, মা-বোনের সম্ম্রমহানী, ধর্ষণ, যা আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কম বেশী অবগত আছি। যখন প্রাণের দায়ে সাধারণ জনগণ নিজের মাতৃভ‚মি এবং পৈত্রিক বিষয়-সম্পত্তি পরিত্যাগ করে বেছে নিয়েছিল পলায়নের পথ। ভাবলে আজও গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে।
ঘুম ভাঙ্গতেই মেজাজটা খাট্টা হয়ে গেল শিউলির। সকাল থেকেই ঠান্ডা আবহাওয়া। সূর্য্য দর্শণের কোনো সম্ভাবনা নেই। গুমোট মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। এক্ষুণি ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি নামবে মনে হচ্ছে। সাতটা বেজে গেছে কখন। বিছানা ছেড়ে ওর উঠতেই ইচ্ছে করছে না। সহসা ওঠার কোনো লক্ষণও নেই। গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে দিব্যি শুয়ে আছে। মাতা রেনুবালা কখন থেকে ডেকেই চলেছে। ওর কোনো সাড়া শব্দ নেই। এখনো নিজের কাপড় চোপড় কিছুই গোছগাছ করা হয়নি। সন্ধ্যে ছটায় গাড়ি। যেতে হবে, স¤প্রতি স্বীকৃতি প্রাপ্ত এবং পৃথিবীর মানচিত্রে অন্তর্ভূক্ত স্বাধীন দেশ বাংলাদেশে। ওর নিজের জন্মস্থান মাতৃভ‚মিতে। গতকাল মাতা রেনুবালা কত জল্পনা কল্পনা করে, কত প্ল্যান-প্রোগ্রাম করে ওর সম্মতি নিয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশেই ফিরে যাবেন। অথচ সকাল হতেই বেঁকে বসেছে শিউলি। দেশে যারার কোনো তাগিদবোধই করছে না। ডুবে থাকে আপন ভুবনে। বিচরণ করে, অতীতে যাপিত দারিদ্র্যপীড়িত গ্রাম্য জীবনের দুঃখ-দীনতা এবং প্রবঞ্ছণার সেই দিনগুলিতে। যা কখনো ভোলার নয়। বিদেশে থেকে হাজার প্রতিক‚লতার মধ্যেও এতদিনের সংঘর্ষ এবং নিজের প্রচেষ্টায় বর্তমান সুশীলসমাজে পূর্ণ মান-মর্যাদায় অবস্থান করে আজ সবই কি ব্যর্থ হয়ে যাবে! না না, এ হতে পারে না। কিছুতেই না।
কত স্বপ্ন ছিল শিউলির। কত আশা ছিল আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠায় সুপ্রতিষ্ঠিত করবে। জীবনকে নতুন করে নতুন রূপে সাজাবে। নিজের ইচ্ছেমত নিজেকে পরিচালনা করবে। জীবনকে উপভোগ করবে। উচ্ছাসিত আনন্দে খুশীর জোয়ারে ভেসে বেড়াবে। শিউলির মনে পড়ে, একাত্তরের সেই বিভীষিকার রাত। কি ভয়াবহ, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তখন পরাধীন দেশ পূর্ব পাকিস্থানের। যেদিন মুক্তিযুদ্ধচলাকালিন গ্রামে-গঞ্জে শহরে চতুর্দিকে গনহত্যা, লুন্ঠন, মা-বোনের সম্ম্রমহানী, ধর্ষণ, যা আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কম বেশী অবগত আছি। যখন প্রাণের দায়ে সাধারণ জনগণ নিজের মাতৃভ‚মি এবং পৈত্রিক বিষয়-সম্পত্তি পরিত্যাগ করে বেছে নিয়েছিল পলায়নের পথ। ভাবলে আজও গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে।
সেই সময় মুক্তিযুদ্ধের রণক্ষেত্রে শিউলির বড়ভাই একুশ বছরের তরুণ যুবক বাবুলাল গুলীবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। শিউলির হতভাগ্য দরিদ্র পিতা রঘুনাথ মন্ডল ছিলেন খেটে খাওয়া মানুষ। একজন সাধারণ মজদূর। বাপ-ঠাকুরদার আমলের ধানি জমিতে আনাচপাতীর চাষ করতেন। থাকতেন খড়ের ছাউনি দেওয়া একটি ছোট্ট মাটির ঘরে। যেখানে ছিল রাজ্যের মশা-মাছি, কীট-পতঙ্গ, পোকা-মাকড়ের বসবাস। সামান্য বর্ষণে কেঁচো, সাপ-ব্যাঁঙসব কিলবিল করতো। কিন্তু দুঃখ-দৈনতা তাকে কখনো ঘায়েল করতে পারেনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবণতি ঘটলেও তাকে কখনো বিভ্রান্ত করতে পারেনি। কিন্তু রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র পুত্রকে চিরতরে হারিয়ে নিজের মাতৃভ‚মির প্রতি তার এতটুকু আকর্ষণ ছিল না।
দেশের প্রতিও ভালোবাসা ছিল না। যেদিন পৈত্রিক ভিটেবাড়ি সহ বিস্তর চাষের জমি পরিত্যাগ করতে তাকে এতটুকু পীড়া দেয়নি, অনুশোচনাও হয়নি। বাস্তবের রূঢ়তা, সংকীর্ণতা, অমানবিকতা এবং হীনমন্যতার ক্ষোভে দুঃখে, শোকে স্ত্রী রেনুবালা এবং চৌদ্দ বছরের কিশোরী কন্যা শিউলির লাজ বাঁচাতে সর্বস্ব ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। পুত্রশোক বুকে চেপে ভয়ে-আঁতঙ্কে রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে চুপিচুপি গভীর জঙ্গলের ভিতর দিয়ে অবিশ্রান্ত চলতে শুরু করলে রাতারাতি যশোর পেরিয়ে এসে পৌঁছে যান বনগাঁও, বেনাপোল সীমান্তে। সেখান থেকে দিনের শেষে আঁধার ঢলে পড়লে পূনরায় শুরু করেন যাত্রাভিযান। কত রোদ-ঝড়-বৃষ্টি মাথায নিয়ে সীমান্তের কর্দমাক্ত এবং কন্টকময় দুর্গমপথ পেরিয়ে ঊষার প্রথম আলোয় সরাসরি গিয়ে আশ্রয় নিলেন, পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের রিফিউজি ক্যাম্পে। কি নোংরা, দুর্গন্ধ তাদের গায়ের জামাকাপড়। রাজ্যের ধূলোবালিতে ভরা, রুক্ষশুক্ষ এলোকেশ। টানা দু’দিন বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করে অবিরাম পদযাত্রায় ক্ষিদায় তৃষ্ণায় তাদের চোখমুখ একেবারে গর্তে ঢুকে গিয়েছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, যেন মাটির তলদেশ থেকে বেরিয়ে এসেছে।
অগত্যা, করণীয় কিছুই ছিল না। সময়ের নির্মমতা কাঁধে চেপে শুরু করেন তাদের নতুন জীবনধারা। বদলে গেল তাদের প্রাত্যাহিক জীবনের কর্মসূচী। অচেনা অজানা জায়গা। নিত্য নতুন অপরিচিত মানুষের আনাগোনা। ভিন্ন মনোবৃত্তি। অনিয়ম বিশৃক্সক্ষল পরিবেশ। পদে পদে বিব্রত, লাঞ্ছিত, অপদস্থ, বিড়ম্বনা। যেখানে পারিপার্শ্বিকতার সাথে খাপ খাইয়ে চলা তাদের পক্ষে ছিল অত্যন্ত দুস্কর। নিয়তি যাদের প্রতিনিয়ত উপহাস করে, দুঃখ-দীনতা যাদের কখনো পিছুই ছাড়ে না, সেখানে অসহায় দুর্বল মানুষের সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকা বড়ই কঠিন। একদিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রিফিউজি ক্যাম্পেই জীবনাবসান হয় রঘুনাথ মন্ডলের। আর দুঃখের দহনে করুণ রোদনে জীবনপাত করতে রেখে গেলেন, স্ত্রী রেনুবালা এবং কিশোরী কন্যা শিউলিকে। তখন ওর উঠতি বয়স, বাড়ন্ত শরীর। অপরিণত বয়সেই বাঁধভাঙ্গা যৌবনের ঢেউ যেন উপছে পড়ছিল শরীরে। আর ঐ যৌবনই ছিল শিউলির অভিশাপ। প্রতিটি মুহূর্তই ছিল বিপদ অবশ্যম্ভাবী। যা নিজেরও অনুমান ছিল না শিউলির। প্রতিনিয়ত ক্ষুধার্ত হায়নার মতো লোভাতুর কামপ্রিয় পুরুষমানুষ ওকে ধাওয়া করতো। যখন ভোগের লালসায় নারী দেহের গন্ধে একজন ভোগ-বিলাসী পুরষের মনোবৃত্তিকে কলুষিত করে, অপবিত্র করে। আর তারই অপকর্মের বীজ রোপণ কোরে দূষীত হয় আমাদের সুশীলসমাজ। যখন বাধ্যতামূলক কতগুলি নীরিহ, অবলা অসহায় কচি কচি যুবতী মেয়েরা ছদ্মবেশী প্রতারকের প্রলোভনে বশ্যতার স্বীকার হয়ে অচীরেই পতিত হয়, অনিশ্চিত জীবনের নিরাপত্তাহীন এক ভয়ঙ্কর অন্ধকার গুহায়। যা আইনত অপরাধ এবং দন্ডনীয়। কিন্তু এসব গ্রাহ্য করছে কে! এ নিয়ে কেউ কখনো ভাবেনা। এ তো মনুষ্য চরিত্রের আবহমানকালের চিরাচরিত একটি প্রধান বৈশিষ্ঠ্যও বলা যায়। বিশেষতঃ যাদের অন্তরে সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধটুকুই থাকেনা, রুচীবোধ থাকেনা, মানবিক মূল্যায়ন করে না। যারা মান-মর্যাদা এবং পাপ-পূন্যের ধার ধারে না। যার অভাবে মা-বোনের ইজ্জত রক্ষার পরিবর্তে বন্যপশুর মতো অমানবিক আচরণে লিপ্ত হয়ে তারা নিজেরাই হরণ করে বসে।
শিউলি অঁজ পাড়াগাঁয়ের অত্যন্ত সহজ সরল নিরীহ প্রকৃতির মেয়ে। বয়সের তুলনায় বিবেক-বুদ্ধির বিকাশ তখনও ঘটেনি। একেবারে ছিল না বললেই চলে। লোকজন দেখলে ফ্যাল্ ফ্যাল্ করে তাকিয়ে থাকতো। কাউকে হাসতে দেখলে নিজেও দাঁতকপাটি বার করে নিঃশব্দে হাসতো। যখন ওর চমকপ্রদ রূপ আর লাবণ্যময় যৌবনের মুগ্ধ আর্কষণে ভ্রমরের মতো প্রেমরস শোষণ করতে উড়ে এসে গেঁঢ়ে বসতে চেয়েছিল, রিফিউজি ক্যাম্পেরই স্বেচ্ছাসেবক নামধারী এক তরুণ যুবক। যেদিন বিপন্ন সময়ের শিকার হয়ে রাতারাতি রিফিউজি ক্যাম্প ছেড়ে কোলকাতার মফঃস্বল এলাকার এক প্রখ্যাত পল্লীতে গা ঢাকা দিয়ে আসন্ন বিপদ থেকে শিউলিকে রক্ষা করেছিলেন ওর গর্ভধারিনী মাতা রেনুবালা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সভ্যসমাজে বাস করবার মতো কোনো যোগ্যতাই তখন ওদের ছিল না। ছিল না শরীরের যথাযথ আবরণ, বেশভ‚ষা। না জানতো ভাষা, না জানতো ব্যবহার। শুদ্ধ বাংলাও ভালো বলতে পারতো না। কাপড়-চোপড়ও ঠিক মতো পড়তে জানতো না। বাড়ি থেকে বের হলে আশে-পাশের ছেলেমেয়েরা হাসাহাসি করতো। জটলা বেঁধে ব্যঙ্গ-ব্যঙ্গ করতো। কাঁখে কলস চেপে টাইমকলের জল ভোরতে গেলে বলতো,-‘লজ্জাবতী ময়না, কথা কভু কয় না, মন যে কারো সয় না!’
ততক্ষণে দ্রæতপায়ে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়তো। থাকতো গুদাম ঘরের মতো ঠান্ডা স্যাঁতসেতে জায়গায়। যে বাড়িতে মা-মেয়ে দুজনে ঝি-কাজ করতো। এছাড়াও পালা করে অন্যান্য বাড়িতে এঁটো বাসন মাজতো, মশলা বেটে দিতো, জামা-কাপড় কেঁচে দিতো। অবসর সময়ে কাগজের ঠোঁঙ্গা বানাতো। তাতে উপার্জন যা হতো, ঘর ভাড়া দিয়ে দু’বেলা পেট ভরে অন্নও জুটতো না। কোনদিন উপবাসেও কাটাতে হতো। শুধুমাত্র আশ্রয়টুকুই ছিল সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু মানুষ ও মানুষের জীবন পরিবর্তনশীল। কখনো একইধারায় প্রবাহিত হয় না। স্থান-কাল-অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বেমালুম বদলে যায় মানুষের জীবনধারা। ঠিক তেমনিই ক্রমাণ্বয়ে সামাজিক রীতি-নীতির অনুগামী হয়ে এবং পারিপার্শ্বিকতার সাথে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে শিউলি যখন বাইরের পৃথিবীকে জানতে শেখে, মানবাধিকারের দাবিতে মনুষ্যত্বের দাঁড়িপালায় জীবনের মূল্যায়ন করতে শেখে, তখন ও’ ঊনিশ বছরের পূর্ণ যুবতী। সেই সঙ্গে দুর্বিসহ জীবনের একটা সুরাহা এবং নিজের জ্ঞান-বুদ্ধিকে বর্দ্ধিত করবার এক অভিনব ইচ্ছা-আশা-আকাক্সক্ষায় ওকে প্রচন্ড উৎসুক্য করে তোলে।
সকাল সন্ধ্যে দুইবেলা মন্ত্রপাঠের মতো পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের রচিত পাঠ্য বই “বাল্যশিক্ষা” গভীর মনোযোগ সহকারে অধ্যায়ন করতে শুরু করলে উপযুক্ত সময়ে মাতা রেনুবালা ওকে দাখিল করে দেয় স্থানীয় বালিকা বিদ্যালয়ে। সেখানে ক্রমাণ¦য়ে বিদ্যা অর্জন করতে থাকলে শুধু বেশভ‚ষাই নয়, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দৈনন্দিন জীবনধারা, চালচলন, কথা বলার ভাবভঙ্গি এমনভাবে রপ্ত করে নেয়, সামাজিক রীতি-নীতির হাজার বৈষম্যতা ও প্রতিক‚লতার মধ্যেও বেমালুম বদলে গেল শিউলি। জীবনের গøানি ঝেড়ে ফেলে সদ্য প্রস্ফূটিত ফুলের মতো রূপে, গুণে পারদর্শী হয়ে ওযে কবে চাঙ্গা হয়ে উঠলো, নিজেকে পরিপূর্ণভাবে গড়ে তুললো, পাড়া-পর্শী কেউ টের পেল না। যারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতো, অবজ্ঞা করতো, তারা সবাই বিস্ময়ে একেবারে হতবাক হয়ে যায়। সে যেন এক অজ্ঞাত ক‚লশীল যুবতী মহিলা। সমগ্র অস্থি-মজ্জা এবং হৃদয়ের কোণে ঘুমিয়ে থাকা সুর ও ছন্দের চমকপ্রদ প্রতিভার দক্ষতায় শিউলি হাসিল করে নেয়, সভ্যসমাজে বাস করবার পূর্ণ অধিকার। যেদিন খুঁজে পেয়েছিল নিজের অস্তিত্ব, মনুষ্যত্ব এবং বেঁচে থাকার প্রকৃত অর্থ। জাগ্রত হয়, প্রখর সংগ্রামী মনোভাব, মানবিক চেতনা। বর্দ্ধিত হয়, নিজের প্রতি আস্থা, ভরসা, আত্মবিশ্বাস। মাত্র পাঁচ বছরে একাগ্রহে নিজের সততা, নৈতিকতা এবং নিরলস কর্ম দক্ষতায় দেখতে পেয়েছিল, অনাগত ভবিষ্যৎ জীবনের একফালি খুশীর ঝলক। সেদিন দৃঢভাবে নিশ্চিত হয়েছিল, ওর জীবনের পরিবর্তন অবধারিত। হতেই হবে! ভগবান এতো নির্দয় নয়। ওর স্বপ্ন একদিন সার্থক হবেই। হয়েও ছিল তাই। ক্রমে ক্রমে আর্থীক অভাব, অনটন দূরীভ‚ত হয়ে মোটামুটি স্বচ্ছলভাবেই ওদের দিন চলে যাচ্ছিল। যা ছিল স্বপ্নেরও অতীত। যেদিন চার-দেওয়ালের বদ্ধজীবন থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে অচীরেই ভুলে গিয়েছিল, ভাগ্যবিড়ম্বণায় শৈশব ও কৈশোরের চরম দারিদ্রপীড়িত গ্রাম্য জীবনের দুঃখ দীনতার কথা। ভুলেই গিয়েছিল, পূর্ব পাকিস্থান এখন স্বীকৃতি প্রাপ্ত স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ। যার সম্মুখে ছিল, এক সুদূর প্রসারী সম্ভাবনার স্বপ্ন এবং আশাতীত সফলতা। ক্রমে ক্রমে সবুজ শ্যামল যে দেশটি ধনধান্যে পুস্পে ভরে উঠেছিল। গড়ে উঠেছিল, সুখ-সমৃদ্ধশালী এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে।
তা হোক, তবু কিছুতেই এখন আর দেশে ফিরে যাবেনা শিউলি। সে কখনো মাতৃভ‚মি স্পর্শ করবে না। সেখানে ওর আছেইবা কে? বড়ভাই বাবুলালকে কখনো কি আর ফিরে পাবে? কেউ কি পারবে কোনদিন ওকে ফিরিয়ে দিতে? দেশ আমাদের কি দিয়েছে? কি পেয়েছি আমরা? মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন এক একটি দিনের প্রতিটি মুহূর্ত কত দৃর্বিসহ ছিল। কত দৃঃখ, যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। এতো শীর্ঘই সব ভুলে গেল মা?
অন্তর্কলহে জর্জড়িত শিউলি মনস্থির করে, নাঃ, মায়ের সিন্ধান্ত কিছুতেই মেনে নেবে না। মাকে কখনো সমর্থন করবে না। কিছুতেই দেশে ফিরে যেতে দেবে না। শিউলি এখন আর ছোট নেই। ভালো-মন্দ বোঝার ওর যথেষ্ট বয়স হয়েছে। ইতিপূর্বেই মাতা রেনুবালার উৎফুল্ল কণ্ঠস্বরে ফিরে আসে বাস্তবে।-‘উইঠা যা শিলু, উইঠা যা! বেলা হইতেছে। সময় হইয়া যাইবো গিয়া, উঠ শিগগির!’ শিউলি তখনও গায়ে চাদর জড়িয়ে শুয়ে ছিল বিছানায়। একেই মন-প্রান বিষাদে আচ্ছন্ন হয়েছিল। তন্মধ্যে মায়ের কথায় পড়ে যায় মহা সংকটে। একরাশ মনবেদনা নিয়ে অস্ফূট স্বরে বলল,-দেশে ফিরে আর কি হবে মা! বেশতো আছি! এখানকার আদপ-কায়দায়ও প্রায় সবই রপ্ত করে নিয়েছি। ধীরে ধীরে তুমিও এ্যাডযাষ্ট করে নিতে পারবে।’
বলতে বলতে মায়ের মুখের দিকে পলকমাত্র দৃষ্টিপাতে নজরে পড়ে, স্বদেশে ফিরে যাবার আগ্রহ উৎসাহে রেনুবালা একেবারে উতল। আনন্দ ও আবেগের সংমিশ্রণে চাপা উত্তেজনায় চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। শিউলির কথা শোনা মাত্রই মায়ের মুখখানা বিৎদুতের ঝিলিকের মতো মুহূর্তে বিলীন হয়ে গেল। ক্রোধে ফুলে ওঠে। চোখমুখ রাঙিয়ে বলে,-তরে যাদু করছে কেউ! এত্তো কথা কইলাম, বুঝাইলাম। আমাগো আছে কে এইখানে? দ্যাশে ঘর আছে, জমি আছে, আত্মীয়-স্বজন আছে। মাথা গরম করিস নে। উইঠা তাড়াতাড়ি তৈরী হইয়া ল।’
বহুদিন পর মায়ের হাস্যোৎজ্জ্বল মুখ দর্শণে জীবনের সব স্বপ্ন, আশা-ভরসা নিমেষে চূর্ণ হয়ে গেল শিউলির। হারিয়ে গেল মনের শক্তি। পারেনি মায়ের অবাধ্য হতে। মায়ের আদেশ অমান্য করতে। মায়ের মুখের হাসি কেড়ে নিতে। মায়ের মনে কষ্ট দিতে। শতচেষ্টা করেও সেদিন কোনভাবেই আর অমত করতে পারেনি। মাকে বাধা দিতে পারেনি।
অবলীলায় মায়ের একান্ত ইচ্ছা আর পীড়াপীড়িতেই আসন্ন সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও আনন্দময় জীবন উপেক্ষা করে মেনে নিতেই হয়েছিল। ওকেও নিজের মাতৃভ‚মি বাংলাদেশে ফিরতে হয়েছিল। ভেবেছিল, স্বদেশে ফেলে আসা বিস্তর ধানিজমিটুকু নিশ্চয়ই ফিরে পাবে। ফিরে পাবে নিজের মাতৃভ‚মিকে। ফিরে পাবে নিজের দেশবাসীকে। যেখানে শেষ করে এসেছিল, সেখান থেকেই আবার শুরু করবে ওদের পূণর্জীবন।
কিন্তু অদৃষ্টের কি লিখন! পরিকল্পিত অনুযায়ী যথারীতিই যাত্রা শুরু করলে পরদিন সূর্য্যদেয়ের অনেক আগেই চিরতরে নিভে গেল শিউলির অনাগত ভবিষ্যৎ জীবনের একখন্ড উজ্জ্বল আলোর রেখা। বিগতদিনে যাপিত জীবনের আনন্দ বেদনার একরাশ অভিজ্ঞতা সাথে নিয়ে একটি বিশাল লাক্সারী বাসে চেপে বসে শিউলি। মাতা রেনুবালার অনুগামী হয়ে যাত্রা শুরু করে ছিল, একটি নতুন দিনের নতুন সূর্য্যরে আশায়। স্মৃতির উপত্যকায় বসে স্বদেশের শষ্য-শ্যামল গাঁয়ের সবুজ বনভ‚মি আর ধানভাঙ্গার স্বপ্ন দেখতে দেখতে কখন যে মধ্যরাত পেরিয়ে গিয়েছিল, টেরই পায়নি শিউলি। গভীর তন্ময়ে নিমজ্জিত হয়ে ছিল আকাশকুসুম ভাবনার অতল সাগরে।
ততক্ষণে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। ইতিমধ্যে হঠাৎ যাত্রীবাহী বাসটি বিনা নোটিশে একটি রেস্তোরার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। রাত তখন এগারোটার মতো হবে। চারদিক নিরব নিস্তব্ধ। ঘুটঘুটে অন্ধকার। রাস্তার আলোও নিভু নিভু প্রায়। সুস্পষ্ট কিছু দেখা যাচ্ছেনা। মাঝেমধ্যে দু-একটা গাড়ি একেবারে হৃদ কাঁপিয়ে দ্রæত গতীতে পাস করছে। সেই সময় কয়েকজন যাত্রীর পিছন পিছন শিউলির মাতা রেনুবালাও গাড়ি থেকে নেমে পড়ে ছিলেন। গিয়ে ছিলেন কিছু জল খাবার কিনে আনতে। যখন দুষ্টচক্রের শিকার হয়ে চিরদিনের মতো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল শিউলি। যা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে মায়ের অলক্ষ্যে একেবারে যাদুমন্ত্রের মতো গাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেল। কেউ টের পেলো না। ঠিক যেন তীরে এসে তড়ী ডুবে যাবার মতো ঘটনা।
উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রেনুবালার তখন শোচনীয় অবস্থা। উন্মাদের মতো গাড়ির প্রতিটি সীটে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। দ্যাখে শিউলি গাড়িতে নেই। আশ্চর্য্য, ওতো গাড়ি থেকে বেরই হয়নি! গেল কোথায়! তখনই নজরে পড়ে, গাড়িতে পুরুষ যাত্রীর সংখ্যা বেশী। সবাই মাঙ্কিটুপি পড়া। কারো কোনো বিকার নেই, উদ্বেগ নেই। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাও করলো, কেউ জানে না। মনে মনে বলে,-এ্ই রাতের অন্ধকারে একটা কিশোরী কন্যা সবার সম্মুখে একলা গাড়ি থেকে নেমে গেল, কারো চোখে পড়লো না!
কিছু বুঝে ওঠার আগেই শিউলির সীটের মধ্যে ওর হ্যান্ডব্যাগটা নজরে পড়তেই ভাবলো, নিশ্চয়ই বাইরে মুক্ত বাতাসে দম নিচ্ছে, এক্ষুণি এসে পড়বে ক্ষণ! কিন্তু কিছু যে একটা ঘটেছে, রেনুবালার মতো সহজ সোজা মহিলার মগজে সেরকম কোনো ধারণা তখন উদয় হয়নি। তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেন নি, তার অলক্ষ্যে কতবড় সর্বণাশ ঘটতে চলেছে।
ক্রমশ সময় বয়ে যাচ্ছে। কোনো পাত্তাই নেই শিউলির। গাড়ির জানালা দিয়ে গলা বারিয়ে দ্যাখেন, নির্জন ময়দান। শূন্য নিবিড় ঘন অন্ধকার। বিন্দু বিন্দু আলোর কণা ছড়িয়ে চারদিকে জোনাকিরা উড়ছে, ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকছে। রেস্তোরার আশে-পাশে একটি প্রাণীও কোথাও দেখা যাচ্ছে না। রাত যতো বাড়ছে, ভয়ে-আতঙ্কে তার বুক শুকিয়ে আসছে। ভিতরে ভিতরে সারাশরীর থরথর করে কাঁপছে। কোথায় গেল শিউলি?
হঠাৎ গাড়ি পুনরায় যাত্রা শুরু করলে রেনুবালা চিৎকার করে ওঠেন,-‘গাড়ি থামাও, গাড়ি থামাও, আমার শিলু উঠে নাই গাড়িতে, গাড়ি থামাও!’ শিউলির হ্যান্ড্ ব্যাগটা হাতে নিতেই চোখ পড়ে, ব্যাগের মধ্যে একখানা কাগজের টুকরো। তাতে লেখা,-‘ছোড়ির তালাশ করবি, খালাশ করে দেবো!’
চিঠির ভাষা সম্পূর্ণ বুঝতে না পারলেও রেনুবালা দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত হলেন, সর্বণাশ হয়ে গেছে, শিউলি এখন তার নাগালের বাইরে। ওকে কোনভাবেই আর ফিরে পাওয়া যাবে না। মাথায় বজ্রাঘাত পড়ে রেনুবালার। রুদ্ধ হয়ে আসে কণ্ঠস্বর। চিৎকার করবে, হা-হুতাশ করবে, সে ক্ষমতাও তখন তার ছিল না। বুদ্ধিভ্রষ্ঠ হয়ে পাথরের মতো শক্ত হয়ে থাকে। কি কৈফেয়ৎ দেবে সে এখন নিজেকে? কি শান্তনা দেবে সে নিজেকে? শিউলি তো আসতেই চাইছিল না। ওর একান্ত ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে, ওর মরা বাপের দিব্যি দিয়ে ওকে বাধ্য করেছিল দেশে ফিরে আসতে। শিউলি বাঁচতে চেয়েছিল। নিজের মতো করে সাজিয়ে জীবনকে উপভোগ করতে চেয়েছিল।
অনুতাপ, অনুশোচণার অন্ত নেই রেনুবালার। কেন শুনলো না, বুঝলো না। হে ভগবান, মা হয়ে শিউলির এ কি সর্বণাশ করল সে? ওকে কোণ্ নরকে ঠেলে দিলো? কি হবে এর পরিণাম? ওকে আর ফিরে পাবে কোনদিন? চোখের দেখাও কি আর দেখতে পারবে কোনদিন? ওইতো ছিল জীবনের একমাত্র সম্বল, বেঁচে থাকার শক্তি, প্রেরণা। রেনুবালা এখন বাঁচবে কি নিয়ে? কাকে নিয়ে? যাকে শান্তনা দেবার মতোও সেদিন কেউ ছিল না।
ততক্ষণে সব শেষ। সর্বণাশের কিছ্ইু আর অবশিষ্ঠ নেই। সীমান্তের দুস্কৃতকারীরাই বিষাক্ত ক্যামিকেলের তীব্র ঘ্রাণে সংজ্ঞাহীণ করতে সক্ষম হলে শিউলিকে সরাসরি চালান করে দেয় অন্যত্রে। কিন্তু জলজ্যান্ত একটা কিশোরী কন্যা মন্ত্রের মতো রাতারাতি গাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেল কোথায়? ওকে কে নিয়ে গেল? কারা নিয়ে গেল? কোথায় নিয়ে গেল? কেন নিয়ে গেল? এসবের কোনো ধারণাই ছিল না রেনুবালার।
কথায় বলে,-চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে।’ ঠিক তাই। গাড়ি ক্রমশ চলতে থাকলে এ যে চতুর ধূর্ত, দুষ্ট লোকের চক্রান্ত, তা বুঝতে একমুহূর্তও আর দেরী হলো না রেনুবালার। কিন্তু সবকিছু বুঝেও সেদিন তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অসহায়, অপারগ, একেলা নিঃসঙ্গ, সম্বলহীন পথ যাত্রী। এক অভাগিনী মা জননী।
অবশেষে ঊনিশ বছরের উজ্জ্¦ল সুদর্শণা যুবতী কন্যা শিউলিকে চিরদিনের মতো হারানোর শোক, দুঃখ, বেদনা বুকে চেপে রেনুবালা দেশে ফিরে গিয়ে ছিলেন ঠিকই। কিন্তু কোথায় কোণ্ মোহনায় গিয়ে তিনি আঁটকে ছিলেন, কিভাবে জীবন যাপন করছিলেন, কে জানে! পরবর্তীতে গোয়েন্দা বিভাগের সদর দপ্তর থেকে কানাঘুষোয় জানা গিয়ে ছিল, নিষ্ঠুর স্বার্থাণ্বেষী দেশদ্রোহীরাই বিদেশী মুদ্রার বিনিময়ে সীমান্তের গুপ্তচরের সহায়তায় সেদিন সেই রাতেই শিউলিকে সঁপে দিয়েছে, নারী পিপাসু অত্যাচারী পাষন্ডদের হাতে। কেউ বলে,-‘আবর দেশের রাজা-বাদশাদের হাতে।’
যেখানে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে মাথাক‚টে কেঁদে মরে গেলেও কেউ শুনবে না শিউলির আর্তনাদ, ওর অনুনয়-বিনয়, আকুতি-মিনতি। যার কোনো খোঁজ-খবর আর পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE, (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!