রাজীব আহসান, কানাডা থেকে : বিশ্ব এখন অধীর অপেক্ষায় কখন সেই কাঙ্ক্ষিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দেখা মিলবে।

আশার আলো আর প্রাণের আলো মিলিত হয়ে আমরা সবাই আবার ফিরে যাব সোনালি সেই দিনে।

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন : কোথায় আমাদের অবস্থান?- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে একটি আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কানাডার ক্যালগেরিতে।

কানাডার ক্যালগেরির টম বেকার ক্যান্সার সেন্টারের ক্লিনিক্যাল রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর এবং আরএক্স মীমসের পরিচালক আহমেদ হোসেনের তত্ত্বাবধানে জুমঅ্যাপের মাধ্যমে ওই আলোচনায় কানাডা, বাংলাদেশ, নেপাল ও অস্ট্রেলিয়া থেকে বিশিষ্ট গবেষকরা অংশ নেন।

এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরিতে সবচেয়ে আলোচিত ও অগ্রগামী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাকে।

কতটা ফলপ্রসূ হবেন তারা? এ প্রশ্ন এখন বিশ্ববাসীর মুখে মুখে। গবেষকদের একাংশ বলছে, সেপ্টেম্বরে ভ্যাকসিন আনার ব্যাপারে তারা শতভাগ নিশ্চিত।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের টিকার ইতিবাচক খবরের মধ্যে চমকপ্রদ খবর দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির বিজ্ঞানীরা বলেছেন, তারা এক মাসের মধ্যে করোনার টিকা আনার ব্যাপারে আশাবাদী।

মস্কোভিত্তিক ইংরেজি ভাষার অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য মস্কো টাইমস’-এর এক প্রতিবেদনে রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে বলা হয়, বিশ্বের প্রথম করোনাভাইরাসের টিকা আগামী মাসেই রোগীদের শরীরে প্রয়োগ করা হবে। এখন যেভাবে সব কিছু চলছে, এভাবে চলতে থাকলে যে কোনো একটি ভ্যাকসিন পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে চলে যাবে।

অনেক সরকার হুশিয়ারি দিয়েছে যে, তাদের জনসংখ্যা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি না করা পর্যন্ত দৈনন্দিন জীবন স্বাভাবিকের দিকে ফিরে আসতে পারে না। তাৎক্ষণিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ইতিমধ্যে চলছে, তবে ভ্যাকসিনের পূর্ণ বিকাশে সময়ের প্রয়োজন।

ভার্চুয়াল ওই আলোচনায় যুক্ত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ডা. শাহনাজ পারভীন, নেপালের ডা. শ্যাম প্রাসাদ লোহানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ডিন ডা. এসএনএম আবদুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক প্রফেসার সাইদুর রহমান ও গ্লোব বায়োটেক রিসার্চের সিইও ডা. কাকন নাগ।

আলেচনায় সাম্প্রতিক বিশ্বে করোনা নিয়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয়, বিশ্ববাসীর মধ্যে জনসচেতনতা, সংক্রমণে কার্যকরী ভূমিকা এবং ভ্যাকসিনের প্রসঙ্গ উঠে আসে।

এ ছাড়া আলোচনায় উঠে আসে ভ্যাকসিন আগামী ২-৩ মাসে কোনো কোনো দেশে আগে ও পরে পাওয়া যাবে এবং এর মূল্যই বা কত হবে?

এতে বক্তারা অভিমত প্রকাশ করেন, সবার কাছে এই ভ্যাকসিন পৌঁছাতে হয়তো ২-৩ বছর সময় লেগে যেতে পারে। আলোচনায় আরও উঠে আসে বাংলাদেশে বিশ্বমানের ক্লিনিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের প্রসঙ্গ।

আয়োজক কানাডার ক্যালগেরির টমবেকার ক্যান্সার সেন্টারের ক্লিনিক্যাল রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর এবং আরএক্স মীমসের পরিচালক আহমেদ হোসেন শাহিন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের সব গবেষকের একটিই লক্ষ্য– কীভাবে একটি সফল ভ্যাকসিন তৈরি করা যায়।

ব্যাপারটি যেমন সহজ নয়, আবার অসম্ভবও নয়। অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে আমেরিকা, লন্ডন, চীন, রাশিয়া ও ভারত এমন আরও অনেক দেশ ইতিমধ্যে প্রমাণ রেখেছে।

বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ইতিমধ্যে গ্লোব বায়োটেকের প্রি-ক্লিনিকাল ট্রায়াল বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।

বাংলাদেশে বিশ্বমানের ক্লিনিক্যাল রিসার্চ সেন্টার তৈরি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা আর সহযোগিতার। আর এটি হলে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমাদের দক্ষ জনশক্তিকে কাজে লাগানো যাবে, দেশের বেকারত্ব ও হ্রাস পাবে।