বিনোদন ডেস্ক : কয়েক সপ্তাহ আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় নায়িকা রাশমিকা মানদানার আদলে এক নারীকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যায়। স্বল্প পোশাকে ক্যামেরার সামনে বিভিন্ন ভঙ্গিতে পোজ দেয়ার সেই ভিডিও রাতারাতি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যালে।
পরবর্তীতে জানা যায়, ভিডিওর মানুষটি আসলে অভিনেত্রী রাশমিকা নয়। মূলত অন্য এক নারীর ভিডিওতে এডিটিংয়ের মাধ্যমে দক্ষিণী নায়িকার মুখ বসানো হয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) অর্থাৎ কৃত্রিম মেধা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল ডিপফেক ভিডিওটি। এরপর ভারতীয় সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা ক্যাটরিনা কাইফ এবং আলিয়া ভাটের মতো তারকাদেরও ভুয়া ভিডিও তৈরি করে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এ ধরনের ভিডিও তৈরিতে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তারকাদের অনুমতি ছাড়াই ছবি নেয়া হয়।
বলিউডে ডিপফেক উত্থানের কারণ: ডিপফেক বহু আগে থেকেই আছে এবং তারকাদের লক্ষ্য করেই তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন সময় নানা অশ্লীল ভিডিও। সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হেয়েছে, এর আগে হলিউডে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। নাটালি পোর্টম্যান বা এমা ওয়াটসনের মতো বড় বড় তারকারাও এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন।
এআই বিশেষজ্ঞ আরতি সামানি মনে করেন, সম্প্রতি এআই যে ধরনের উন্নতি সাধন করেছে তা মানুষের ভুয়া ভিডিও-অডিও তৈরির পথ অনেক সহজ করেছে। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এ ধরনের টুলগুলো গত ছয়মাস বা এক বছরে আরও নিখুঁত হয়ে উঠেছে। ফলে এখন বিভিন্ন দেশে এ ধরনের কনটেন্টগুলো দেখা যাচ্ছে। আর অনেক টুল এখন সহজলভ্য। এ জন্য সামান্য খরচে বা কোনো খরচ ছাড়াই দেখতে বাস্তবধর্মী ছবি তৈরি করা সম্ভব। যা কিনা সবার হাতে হাতে।
এই বিশেষজ্ঞ ভারতের কিছু বিষয় উল্লেখ করেন। বলেন, ভারতের তরুণের সংখ্যা বেশি, সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যপক ব্যবহার এবং বলিউডের সঙ্গে সখ্য ও তারকা সংস্কৃতি রয়েছে। এ জন্য ভুয়া ভিডিওগুলো অল্প সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ও সমস্যাও দ্রুত শনাক্ত হয়। আর এ ধরিনের ভিডিও তৈরির পেছনে দুটি জিনিস কাজ করে। বলিউড তারকা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয় আকর্ষণীয় ক্লিকবেইটে পরিণত হয়। এতে বিজ্ঞাপন থেকে অনেক অর্থ আয় করা যায়। একই সঙ্গে যারা এসব ভিডিওগুলো দেখেন তাদের অজান্তেই তথ্য বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এর আগে ডিফেক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় রাশমিকা মানদানা ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে এক স্টোরিজে লিখেছিলেন, আমার যে ডিপফেক ভিডিও ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, সেটা নিয়ে কথা বলতে গেলেও ভীষণ খারাপ লাগছে। আমি খুবই ব্যথিত। এ ঘটনা আমার কাছে খুবই ভয়ের।
তিনি আরও লিখেছিলেন, এ ঘটনা শুধু তার জন্যই নয়, ক্যামেরার সামনে যারা কাজ করেন তাদের জন্যও ভয়ংকর বলে জানিয়েছেন রাশমিকা। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ভাবতেই ভয় করছে, কীভাবে প্রযুক্তির অপব্যবহার করা হচ্ছে। আজ একজন নারী ও অভিনেত্রী হিসেবে আমি আমার পরিবার, বন্ধু-বান্ধবীদের কাছে কৃতজ্ঞ; যারা আমাকে এই সময় সাপোর্ট করছেন। একবার ভাবুন, আমি যদি এই সময় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী হতাম। আমার তো মাথা কাজই করতো না যে, এই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেব। আমাদের সবার এই ধরনের সমস্যা নিয়ে কথা বলা উচিত।
এ ব্যাপারে এআই বিশেষজ্ঞ আরতি সামানি একমত পোষণ করে বলেন, এটা নারীদের জন্য খুবই ভয়ংকর। নারীদের মূল্যায়নই করা হয় তার সৌন্দর্য দেখে এবং লক্ষ্যবস্তু হয় তার শরীর। আর ডিপফেক আরও এগিয়ে নিচ্ছে। সেটাকে। অনুমতি ছাড়া ডিপফেকের এ ধরনের ব্যবহার নারীদের মর্যাদা ও শরীরের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নিয়ে শক্তিশালী করে অপরাধীর হাতকে।