অনলাইন ডেস্ক : গত ৫ নভেম্বর, রবিবার সন্ধ্যায় টরন্টোর ৪৯ ফেলস্টিড এভিনিউ’র সেইন্ট প্যাট্রিক ক্যাথলিক সেকেন্ডারি স্কুলের মিলনায়তনে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় টরন্টোর বাংলাদেশী প্রবাসীরা কবি আসাদ চৌধুরীকে স্মরণ করলেন। কবি আসাদ চৌধুরী নাগরিক স্মরণসভা’র আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। কবি দিলারা হাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ স্মরণসভায় কবি আসাদ চৌধুরীর উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী, স্মরণালোচনা, নাচ, গান এবং কবিতা আবৃত্তি উপস্থপিত হয়।
উল্লেখ্য, গত ৫ই অক্টোবর, বৃহস্পতিবার রাত তিনটায় কবি আসাদ চৌধুরী টরন্টোর অশোয়ার লেক রিজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরের দিন শুক্রবার বাদ জুম্মা কবির নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয় টরন্টোর নাগেট মসজিদে। পরে সেই দিন বিকেলে কবির মরদেহ পিকারিং ডাফিন মেডোজে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। কবি আসাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে টরন্টোর বাঙালিদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রায় এক দশক এই শহরে বসবাস করা আসাদ চৌধুরী সমাজের সর্ব স্তরের মানুষের কাছে খুবই প্রিয় এক মানুষ ছিলেন। টরন্টোর বাংলাদেশীদের যে কোন অনুষ্ঠানে তিনি হাসি মুখে হাজির হতেন এবং তাঁর উপস্থিতি সবাইকে ভালো কাজে উদ্দীপ্ত করতো। তাঁর কথা সবার কাছে এক পরম অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করতো। টরন্টোর সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগতে তিনি ছিলেন প্রধানতম অভিভাবক। তাঁর প্রাণ খোলা হাসি, সবাইকে নিমিষেই আপন করে নেবার ক্ষমতা, মানবিকতা এবং অসাধারণ কথা বলার ক্ষমতা সব সময় তাঁকে আপামর জনসাধারণের কাছে শ্রদ্ধার আসনে রাখবে। এমন এক মহান ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ উপস্থিত হন।
কবি আসাদ চৌধুরী স্মরণে নাগরিক স্মরণসভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সভার সমন্বয়ক আহমেদ হোসেন ও দেলওয়ার এলাহী। মূল অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেল ও কোরান থেকে পাঠ করেন যথাক্রমে শ্যামল ভট্টাচার্য্য, অপূর্ব বড়ুয়া, মৌ হৈমন্তী কোরাইয়া ও শমসের আলম হেলাল। পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠের পর কবির জামাতা চলচ্চিত্র নির্মাতা নাদিম ইকবাল নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। সুমন সাঈয়েদ এর নেতৃত্বে কবি আসাদ চৌধুরী রচিত দুটি গানের সমবেত সঙ্গীতে অংশ নেন সৈয়দা রোকসানা বেগম, সঙ্গীতা মুখার্জি, সুমি বর্মণ, এলোরা বড়ুয়া, বিন্দু চৌধুরী, অনুশ্রী বড়ুয়া, মুনিরা সুলতানা মিলি, সুমন মালিক, অরুনা হায়দার, ফরিদা হক, শাহীন মাহবুবুর রহমান, জুলফিয়া আহমেদ ইন্টু, মৈত্রেয়ী দেবী, ইভা নাগ, শ্যামল মিয়া, আশরাফুল বারী মঞ্জু, রিফার নূর শান্তা, মমতাজ মমতা, ফারহানা শান্তা, গৌরি দাস, সাব্রিনা সাব্রিনা, অর্চনা সাহা, জুম্পা চক্রবর্তী, অনন্ত নির্ঝর, তানজীর,, আলম রাজীব, জাহিদ হোসেন, ফারহানা খান টিনা এবং শিরিন চৌধুরী।
কবি আসাদ চৌধুরীর কবিতা আবৃত্তি ও নৃত্যের যুগলবন্দীর শিরোনাম ‘নদীর জলে আগুন ছিল’তে অংশ নেন আবৃত্তি সংগঠন ‘বাচনিক’ এর সদস্যবৃন্দ এবং এতে নৃত্যে অংশ নেন নৃত্যশিল্পী সুলতানা হায়দার, অরুনা হায়দার, বিপ্লব কর এবং তাপস দেব।
অনুষ্ঠানে কবির কবিতা থেকে একক কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন ফারহানা আহমেদ, জ্যাকুলিন ডি রোজারিও, আসমা হক, অনুরাগ আহমেদ, ফ্লোরা নাসরিন ইভা, এলিনা মিতা, সুমন মালিক, মুনিরা সুলতানা মিলি, নাজমা কাজী, আনিসা রশীদ লাকি, রাশেদা মুনীর, শেখর গোমেজ, মেরী রাশেদীন, মেহরাব রহমান এবং লিজা গালীব।
সব শেষে নাগরিক স্মরণালোচনায় অংশ নেন ড. তসলিমুর রহমান, নাসির উদদোজা, আমিন মিয়া, এনায়েত করিম বাবুল, সাহানা চৌধুরী, নওশের আলী, আসমা আহমেদ, মিনারা বেগম, মনির জামান রাজু, রেজা অনিরুদ্ধ, ফরিদা রহমান, হাসান মাহমুদ, জাহানারা আখতার, নজরুল ইসলাম মিন্টু, শহিদুল ইসলাম মিন্টু, ফায়েজুল করিম, তাসরিনা শিখা, ইত্তেজা আহমেদ টিপু, মঞ্জুরে খোদা টরিক, সুমন সাইয়েদ, ড. বাদল ঘোষ, মাহবুব চৌধুরী, গোলাম মোস্তফা, মনির হোসেন বাবু, ফরিদা হক, সুমন রহমান ও কবি পরিবারের সদস্যবৃন্দ। সব শেষে কবি পুত্র আসিফ চৌধুরী তাঁর পিতার স্মরণে একটি গান পরিবেশন করেন।
চার ঘন্টার এই অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফারহানা পল্লব, সেলিনা সিদ্দিকী শুশু এবং ফ্লোরা শূচি ডি রোজারিও। উল্লেখ্য, ৫ নভেম্বর ছিল কবি আসাদ চৌধুরীর জন্মদিন।