অনলাইন ডেস্ক : রাজধানী বসিলার গরু ব্যবসায়ী মো. মহিবুল্লাহ। প্রতিবছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৮/১০টি গরু বিক্রি করেন। বিক্রির টাকায় সারা বছর সংসারের খরচ মিটিয়ে সঞ্চয়ও করেন। এ বছর কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন ৮টি গরু। করোনা ভাইরাসের কারণে কোরবানির পশুরহাটে এসব গরু বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তিত। তাই অনলাইনে গরু বিক্রির প্রচার চালাচ্ছেন। বিগত ১ মাসের বেশি সময় ধরে গরুর ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে যাচ্ছেন। কথা হলে মানবজমিনকে তিনি বলেন, করোনার কারণে গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছি।
শুনেছি এ বছর পশুরহাট অনেক কমেছে। তাছাড়া আগের মতো একই হাটে বেশিদিন গরু বিক্রি করা যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতা আসবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ফেসবুকে গরু বিক্রির জন্য প্রচার চালাচ্ছি। ক্রেতাদের জন্য বিভিন্ন অফার দিয়ে রাখছি। এছাড়া কেউ চাইলে লাইভের মাধ্যমে গরু দেখানো হয়।
এদিকে আগামী ৩১শে জুলাই কিংবা ১লা আগস্ট কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হবে। সে হিসেবে ঈদের বাকি ৩ সপ্তাহ। এ বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এখনো জমে উঠেনি কোরবানির পশুরহাট। ফলে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা পশু নিয়ে বিপাকে খামারিরা। পশুরহাট জমে না উঠলে পশুর দাম কমে যাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। করোনায় সৃষ্ট সংকট থেকে উত্তোলনের জন্য অনেকেই অনলাইনে গরু বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে সবর হচ্ছেন খামারিরা। খামারের নাম কিংবা পশুরহাটের নাম করে ফেসবুক আইডি খুলে তাতে কোরবানি পশু বিক্রির প্রচার চালাতে দেখা গেছে। আগাম প্রচারে খামারিরা ক্রেতাদের কাছে এসব পশু বিক্রি করছেন অনলাইনের মাধ্যমে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনেকটা খামারদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলছে এসব পশুর হাট। আর এর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইটগুলো। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় অনলাইনে এ বছর সবচেয়ে বড় কোরবানি পশুরহাট ???‘ডিজিটাল হাট’ বসাবে। যেখানে অনলাইনের মাধ্যমে কোরবানির পশুর ক্রেতা ও বিক্রেতারা একসঙ্গে মিলিত হবেন। গরু যাচাই-বাছাই করে দাম দর করতে পারবেন। পছন্দ হলে অনলাইনের মাধ্যমেই করতে পারবেন লেনদেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসন্ন কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই নিজের খামারের নামে ফেসবুকে পেজ খুলে সেখানে পশুর ছবি, ভিডিও, দাম, বিবরণসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্যই তুলে ধরেছেন। ক্রেতারা চাইলে পশু পছন্দ করে অর্ডার করলেই, বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে সেই পশু। অনেকেই পশু কোরবানি ও মাংস প্রক্রিয়াজাত করে ক্রেতার বাসায় পৌঁছে দেয়ার কথাও বলেছেন।
সাভারের হেমায়েতপুরের গরু ব্যবসায়ী সাজিদ ইমরান নিলয় বলেন, এবছর কোরবানির ঈদের বাজারে বিক্রি করার জন্য সম্পূর্ণ হালাল উপায়ে ২২টি গরু মোটাতাজা করেছি। করোনার কারণে আর পশুরহাটে গরু উঠাবো না। অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করছি। ক্রেতারা অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখে ফোন করেন। লাইভ ভিডিওতে গরু দেখে দাম করেন। অনেক ক্রেতা সরাসরি এসে গরু দেখে দাম দর করেন। এখন পর্যন্ত ৬ টা বিক্রি করা হয়েছে। করোনার কারণে এবছর গরুর দাম তেমন একটা পাচ্ছি না। তবুও যাতে পশুরহাটে যেতে না হয়। তার জন্য সীমিত লাভে ছেড়ে দিচ্ছি। অনলাইনে আমাদের খামারে ৪৫০ কেজি পর্যন্ত ষাঁড় গরুগুলো লাইভ ওয়েটে ৪০০ টাকা, ৪৫০-৫০০ কেজি পর্যন্ত লাইভ ওয়েটের ৪২০ টাকা এবং ৫০০-৬০০ কেজি পযন্ত লাইভ ওয়েটের গরুগুলো ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রয় করা হয়। ঢাকার মধ্যে ফ্রি হোম ডেলিভারির সুবিধা রয়েছে। গরু বিক্রির পর বাড়তি কোনো টাকা পয়সা নেয়া হয় না।
মিরপুর বেড়িবাঁধের গরু ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া জানান, বিগত বছরগুলোতে এই সময়ে পশুরহাট জমে উঠতো। হাটে উৎসবমুখর দিন পার করেছি। ক্রেতা- বিক্রেতাদের দাম কষাকষিতে কোরবানির পশুর ন্যায্য মূল্য পাওয়া যেতো। এ বছর পশুরহাটে ভাটা পড়েছে। এখনো হাট বসেনি। ঢাকার কাছাকাছি এলাকার খামারিরা এ নিয়ে চিন্তিত। হাট বসলেও অল্প যে সময়টুকু পাওয়া যাবে, এই সময়ে ক্রেতাদের উপস্থিতি না থাকলে কপালে ভাঁজ পড়বে। এই কারণে সবাই অনলাইনে গরু বিক্রির প্রচার চালাচ্ছেন। গরু বিক্রির জনপ্রিয় সাইটে একের পর এক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করছি। গরুর ওজন, বয়স, দাম, কোথা থেকে আনা হয়েছে, এমন সব তথ্য দিয়ে রাখছি। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। কোরবানির হাটে গিয়ে ক্রেতা যেভাবে গরু যাচাই-বাছাই করেন, সেভাবেই ভিডিও কলের মাধ্যমে যাচাই করতে পারবেন। গরুরহাটের চিন্তা এখন মাথায় আনতে চাই না। আশা করি অনলাইনে সব গরু বিক্রি করে ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ীদের ও সহযোগিতা করতে পারবো। আমি ফেসবুকে বিভিন্ন অফার দিয়ে গরু বিক্রির প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। ক্রেতারা ফেসবুকে গরুর ছবি দেখে যোগাযোগ করেন। অনেকই বায়না করে গেছেন। এখন যারা গরু কিনছেন, অথচ গরু রাখার স্থান নাই। তাদেরকে ঈদের আগের দিন ঠিকানা অনুযায়ী নির্দিষ্ট গরু পৌঁছে দেয়া হবে।
অনলাইনে গরু, ছাগল, ভেঁড়া বিক্রির ওয়েবসাইট গরুরহাট ডটকমের কর্মকর্তা রুমী জানান, এ বছর গরুর খামারিরা অনলাইনে বেচা বিক্রির দিকে ঝুঁকেছেন। করোনার কারণে পশুরহাট সংকীর্ণ হবে এইজন্য ব্যবসায়ীরা অনলাইনে গরু বিক্রি করছেন। এত ক্রেতারা বাসায় বসেই ইচ্ছামতো গরু দেখতে পারেন। ফেসবুক ও ইমো লাইভের মাধ্যমে গরু দেখে দর দাম করতে পারেন। তাছাড়া ফোনের মাধ্যমে ক্রেতারা যোগাযোগ করে সরাসরি গরু দেখে নিতে পারেন। আমাদের সাইটে প্রতিদিন ২ থেকে ৩শ’ গরুর এড জমা হয়। বিক্রেতাদের পরিচয়পত্রসহ নিবন্ধন করার কারণে ক্রেতারা প্রতারিত হওয়ার ভয় নেই।