হাসান জাহিদ : কথাশিল্পী হাসান জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্যে, আর কানাডায় পড়াশুনা করেছেন সাংবাদিকতা ও কালচার এন্ড হেরিটেজ বিষয়ে। তিনি ইকো-কানাডা স্বীকৃত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের লেখক হাসান জাহিদ ‘বালুকা বেলা’ কলামে ‘বাংলা কাগজ’ এর পাঠকের কাছে তুলে ধরবেন তাঁর প্রিয় সব বিষয়ের অনুসন্ধিৎসু ক্যানভাস।
মাধবী। প্রথমত একটি ফুলের নাম। দ্বিতীয়ত কোনো মেয়ের নাম। তৃতীয়ত আমার একটি গল্পের নাম। মাধবী ফুল যেমন সুন্দর, এই নামের কোনো মেয়েকেও সুন্দরী-স্মার্ট হতে হবে। বাস্তবে হয়তো তা সচরাচর না-ও হতে পারে। কিন্তু গল্পে বিশেষত আমার ‘মাধবী’ গল্পে মেয়েটি সুন্দর-স্মার্ট আর বাস্তবানুরাগী। গল্পে সে দেখতে কেমন? আফ্রোদিতির মতো? কিংবা ত্রিপুরসুন্দরীর মতো। না, আমি যেমন খাঁটি বাঙালি, নায়িকাটাও তেমনি রূপবতী, স্নিগ্ধ ও প্রেমিকা।
মাধবী গল্পটি বছর কয়েক আগে আমাদের সময় পত্রিকার সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত হয়। এরপর এটা সাড়া ফেলে দেয় বলা যায়। পরবর্তীতে আমার ‘প্রেয়সী ও গোলাপের কাঁটা’ গল্পগ্রন্থে গল্পটিকে স্থান দিই। এরপর আমি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে গল্পটি দিই। একটি অনলাইন পত্রিকাও আমার এই গল্পটিকে রিপ্রোডিউস করে। সম্প্রতি গল্পটি প্রকাশিত হয় ‘পেন্সিল’-এ। টরোন্টোতে আমার গল্পকার বন্ধু আতোয়ার রহমান ও আমি গল্পটার অভিনব আঙ্গিক ও সরস উপস্থাপনা নিয়ে আলাপ করি।
আসলে একটু ভুল করে ফেললাম। গল্পের নায়িকার নাম সোনালি। আমার দুইজন নায়িকা ছিল। একজন রূপালি ও একজন সোনালি। সোনালিকেই আমি প্রতীকী রূপে মাধবীতে পরিণত করেছিলাম। আমি শখের গায়েন আর লিখি। একটা সওদাগরী আপিসে চাকরি করি। আমার মতো মানুষ প্রেমিক হিসেবে অদ্বিতীয়, কিন্তু পাত্র হিসেবে নগণ্য। তো সোনালির বাবা আমার মতো অপদার্থের সাথে মেয়েকে বিয়ে দেবে কেন। সেই কথাটাই সোনালি একদিন জানিয়েছিল আর বলেছিল ভালো চাকরি জোগাড় করে নিতে। আমি নিতান্ত আনস্মার্ট ছিলাম না। ভাবলাম, সোনালি শর্ত দিল!
এরপর জীবনে এলো রূপালি। রূপালি নদীর মতো বর্ষায় ঢলোঢলো। নিজেকেই ঠাট্টা করেছিলাম। সোনা পাইনি, রূপা তো পেলাম। হা হতোস্মি। সেই বাঁক খাওয়া রূপালি নদীটিও হারিয়ে গেলো আমার অহং থেকে, আমার জীবন ও যৌবন থেকে।
তারপর চুলে পাক ধরে।
কিন্তু প্রেমিক মন গুনগুন করে সুর ভাঁজে। কোনো ষোড়শীকে দেখে তার ভেতরের প্রেমিক মন পাক খায়।
গল্পটির আইডিয়া আমার করোটিতে আসে, যখন আমি আবিষ্কার করলাম আমার জীবনটা খড়কুটো আঁকড়ে বেঁচে থাকলেও যৌবনটা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলো।
আমার ভেতরের রসবোধ তীক্ষ্মতর হতে থাকে। গুনগুনানি বেড়ে যায়। আমি জানি, আমার আংশিক পক্ক চুল দেখে কোনো মেয়ে আমার প্রেমে পড়বে না। তবুও আমি আশাবাদী-হাম গুনগুনাইঙ্গে তুম মুশকুরাইঙ্গে। কেউ মুশকুরাইল না। রিকশায় বসে ছিলাম জ্যামে। এক বুড়ি হাত বাড়িয়ে মুশকুুুরাইল। আমি তেলে-বেগুনে জ¦লে উঠে শার্ল বোদলেয়ারের ভাষায় বললাম-‘বুড়ি বেশ্যার শহীদ স্তন।’
গল্পটাতে আমি সময়ের কারসাজি করেছি। গল্পের শুরু তিনযুগ আগে-বর্তমানের আদলে। এই তিন যুগ ভাগাভাগির কোনো অবকাশ নেই।
আমার এক জুনিয়র শক্তিমান কবিবন্ধু গল্পটা পড়ে এই মন্তব্য লিখে পাঠিয়েছিল:
‘আপনার মাধবী পড়েছি
গল্পের বুনট … কথক… কথন … সবমিলিয়ে এক অনন্য কম্বিনেশন …
তিন যুগের লিঙ্ক এতো ছোট পরিসরে নিয়ে এসেছেন – তাতে আমি বিস্মিত
আপনার বইয়ের গল্প পড়ছি
আপনার লেখা আমার পাঠ তালিকায় ছিল না এজন্য লজ্জিত …
আশা করছি পাঠে পুষিয়ে নিতে পারবো।’
আমার এই গল্পটি বা অন্যান্য গল্প কেউ পড়তে ইচ্ছুক হলে রকমারি.কম থেকে আমার গল্পগ্রন্থ ‘প্রেয়সী ও গোলাপের কাঁটা’ অনলাইনে সংগ্রহ করতে পারেন।
আজ বালুকা বেলায় বিচরণ এটুকুই।