অনলাইন ডেস্ক : রাশিয়ার মিত্র দেশ হিসেবে খ্যাত বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো, শাসকগোষ্ঠীর ১০১ জন কর্মকর্তা এবং তাদের সহযোগী ও কয়েকজন বিচারকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আলাদাভাবে একই রকম নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কানাডা।

দেশের ভিতরে নিপীড়ন চালাতে ও ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধে সহায়তার জন্য ৫টি এনটিটির বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার এই ঘোষণা দিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেন। অন্যদিকে বেলারুশের ৯ জন ব্যক্তি এবং ৭টি এনটিটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি।

বিবৃতিতে ব্লিঙ্কেন বলেন, বেলারুশে জালিয়াতির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তিন বছর পূর্ণ হলো। লুকাশেঙ্কো শাসকগোষ্ঠী বেলারুশের জনগণের স্বাধীনতার দাবিকে দমনপীড়ন করছেন। বেলারুশের সাহসী জনগণের পাশে অব্যাহতভাবে অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের। এ দেশটির জনগণ দেশে আইনের শাসন চান।

বিবৃতিতে ব্লিঙ্কেন আরও বলেন, লুকাশেঙ্কো শাসকগোষ্ঠী ১৫০০ রাজনৈতিক বন্দিকে আটকে রেখেছে। আমরা তাদের অবিলম্বে এবং শর্তহীন মুক্তি দাবি করছি। এর মধ্যে আছেন আলেস বিয়ালিয়াটস্কি, ভিক্টর বাবারিকা, মারিয়া কালেসনিকাভা, ইহাক রোসিক, সিয়ারহেই টসিখানোস্কি।

২০২০ সাল থেকে বেলারুশের জনগণের বিরুদ্ধে নিষ্পেষণ চালিয়ে যাচ্ছে লুকাশেঙ্কো শাসকগোষ্ঠী। তারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারী ও কমিউনিটি নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে। দমনপীড়ন চালিয়েছে বিরোধী দলগুলো এবং নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে। এসব আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে লজ্জাজনক বিচার করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে লুকাশেঙ্কোকে অবৈধভাবে তার কর্তৃত্ব বহাল রাখতে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য বেলারুশের জনগণকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে মানবাধিকারকে সম্মান দেখানো হবে।

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি বলেছেন, স্পেশাল ইকোনমিক মেজারস অ্যাক্টের অধীনে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বেলারুশে চলমান ভয়াবহ ও পর্যায়ক্রমিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবে এই নিষেধাজ্ঞা। যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, তারা টার্গেটেড। তারা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা অব্যাহতভাবে লঙ্ঘনে রাশিয়ার সঙ্গে আছে।

এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছেন সরকারি কর্মকর্তারা, বিচারকরা, শাসকগোষ্ঠীর সহযোগীরা- এর মধ্যে আছে বেলারুশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রধান ইভান মিখাইলোভিচ আইসমান্ত। এ ছাড়া এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদস্যরা, সামরিক কারখানা ও প্রযুক্তি বিষয়ক কোম্পানি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে প্ররোচনাবিহিন এবং অন্যায়ভাবে ইউক্রেন আগ্রাসনে সমর্থন দেয়ার জন্য বেলারুশের শাসকগোষ্ঠীর সমর্থনের কড়া নিন্দা জানায় কানাডা। এতে তিনি বলেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনে সমর্থন দেয়া অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে আমরা লুকাশেঙ্কোর প্রতি আহ্বান জানাই।

এদিকে নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নানাইয়া মাহুতা বলেন, দেশটির সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার অধীনে পড়েছেন বেলারুশের মোট নয় কর্মকর্তা এবং সংস্থা। এরমধ্যে পাঁচ জন সামরিক কর্মকর্তা, দু’টি আর্থিক সংস্থা এবং দু’টি রাষ্ট্রায়াত্ত্ব কোম্পানি। এই ব্যক্তি ও কোম্পানিগুলো ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে সমর্থন করেছে বলে জানান তিনি।

নানাইয়া আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞাভুক্তরা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে নানাভাবে সাহায্য করেছে। বেলারুশের ভূমি থেকে ইউক্রেনে অভিযান চালাতে রুশদের সহায়তা করেছে তারা। রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে চলাচল এবং তাদের সামরিক সরঞ্জাম মজুদে সহায়তার সঙ্গে যুক্ত ছিল এই ব্যক্তিরা।