অনলাইন ডেস্ক : খানিকটা ধীর গতিতে হলেও দুরাবস্থা কাটিয়ে উঠছে শ্রীলঙ্কা। দুই বছর পর এই প্রথম দেশটির মূল্যস্ফীতির হার নেমে এসেছে এক অঙ্কে।

সোমবার দেশটির পরিসংখ্যান দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে রাজধানী কলম্বোসহ অন্যান্য শহরে গ্রাহকপর্যায়ে বিভিন্ন পণ্যের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আগের বছর ২০২২ সালের জুনে এই হার ছিল ১২ শতাংশ।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কলম্বোর ভোক্তা সূচক অনুসারে চলতি ২০২৩ সালে গ্রাহক পর্যায়ে সব পণ্যের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর এই প্রথম একক অঙ্কে নেমে এলো মূল্যস্ফীতি।’

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। তারপর অক্টোবর মাস থেকেই দুই সংখ্যায় পৌঁছে যায় মূল্যস্ফীতির হার। গত বছর সেপ্টেম্বরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার পৌঁছেছিল ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশে।

করোনা মহামারি, ত্রুটিপূর্ণ করনীতি ও অব্যবস্থাপনার জেরে ২০২১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে শ্রীলঙ্কা। দেশটির বিদেশি মুদ্রা বিশেষ করে ডলারের রিজার্ভ তলানিতে নেমে যাওয়ায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এক পর্যায়ে গত বছরের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কাকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন দেশটির তৎকালীন অর্থমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।

বস্তুত, এই অর্থনৈতিক সংকট ছিল শ্রীলঙ্কার জন্য অভূতপূর্ব। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতালাভের পর এই প্রথম এমন সংকটে পড়ে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্র।

এই পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে সাধারণ জনগণ। সেই বিক্ষোভের এক পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশ ছেড়ে পালান গোতাবায়া।

রনিল ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে অর্থনৈতিক সংস্কারে মনযোগী হন, সেই সঙ্গে জরুরি ঋণের (বেইলআউট লোন) জন্য বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আলোচনা শুরু করেন। অবশেষে মিত্র দেশ চীন ও ভারতের সুপারিশে চলতি বছর মার্চে শ্রীলঙ্কাকে ২৯০ কোটি ডলার জরুরি ঋণ দিতে সম্মত হয় আইএমএফ।

এদিকে রোববার পৃথক এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংখ সিবিএসএল জানিয়েছে, ‘সরকারের বিরামহীন প্রচেষ্টায় গত কয়েক মাসে সব ধরণের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম দাম ধীরে ধীরে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসছে। সামনের দিনক গুলোতেও এই ধারা বজায় থাকবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস