দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে

অনলাইন ডেস্ক : সময় যত গড়াচ্ছে কানাডার চলমান দাবানল তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হচ্ছে। ফেডারেল ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস মন্ত্রী বিল বেøয়ার বলেন, মৌসুমের আগেভাগে এই পরিস্থিতি নজিরবিহীন। বর্তমানে কানাডার অবস্থা সত্যিই ভয়াবহ। চলতি বছর এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ জমি পুড়ে গেছে তার পরিমাণ গত দশ বছরে ১ জুন পর্যন্ত পুড়ে যাওয়া জমির তুলনায় প্রায় দশগুন। পরিমাণটা ৫০ লাখ ফুটবল মাঠের সমান। আর প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করলে এর পাঁচগুন।

নতুন করে আরও এলাকাজুড়ে দাবানল ছড়িয়ে পরায় হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। এ দিকে কানাডার একজন প্রাদেশিক মন্ত্রী সতর্ক করে বলেছেন, চলমান এই দাবানল ‘পুরো গ্রীষ্মজুড়ে’ চলতে পারে। নতুন এবং তীব্রতর দাবানল কানাডাজুড়ে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বাধ্য করছে। অবশ্য উত্তর আমেরিকার এই দেশটি এসব দাবানল নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যত সংগ্রামও করে চলেছে।

চলতি বছরের শুরু থেকে এই দাবানলে প্রায় ১৭ হাজার ৮০০ বর্গমাইল এলাকা পুড়ে গেছে। পূর্ববর্তী বিভিন্ন দাবানলে গড়ে যত অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হতো, সর্বশেষ পরিসংখ্যান তার চেয়ে অনেক বেশি। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উত্তর আমেরিকার এই দেশটি বিশ্বের অন্যান্য অংশের তুলনায় দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। চলমান দাবানলে কানাডার পশ্চিমাঞ্চল বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকদিনের বিরামের পর দেশটির আলবার্টাতে আগুনের তীব্রতা বেড়েছে। সেখানে গত শুক্রবার রাতে এডসন শহর থেকে আরও মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ নিয়ে গত মে মাস থেকে এই শহরটির মানুষ দ্বিতীয়বার উচ্ছেদ প্রত্যক্ষ করল।

এডসন শহরটি যেখানে অবস্থিত সেই ইয়েলোহেড কাউন্টির প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা লুক মার্সিয়ার বলেছেন, ‘আগুন এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যে, কিছু বনকর্মীকে পিছু হটতে হয়েছে। তারা এই আগুনের সাথে লড়াই করতে পারছেন না।’ স¤প্রচারকারী সিবিসি’র সাথে কথা বলার সময় সেখানকার বাসিন্দা হেইলি ওয়েটস বলেছেন, ‘বিশাল কাফেলার’ আকারে পলায়তরত লোকদের একটি দলকে এডসন শহর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলছেন, ‘মানুষ আতঙ্কিত হয়ে কেবল পালিয়ে যাওয়ার কথাই ভাবছে। কিন্তু গাড়িতে ওঠার পর অনেকেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করেন: ‘যখন আমি ফিরে আসব তখন যদি আমার বাড়িটি আর না থাকে?’ এ দিকে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে টাম্বলার রিজ শহরের কয়েক মাইলের মধ্যে দাবানল পৌঁছে গেছে। আর এই কারণে ২৪০০ জনসংখ্যার এই শহরটির বেশিরভাগই খালি করা হয়েছে।

এ ছাড়া কানাডার পূর্বাঞ্চলীয় কুইবেকের জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বোননারডেল স্থানীয় সময় শনিবার সকালে বলেছেন, প্রভিন্সের মধ্য ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পরিস্থিতি বেশ কঠিন। সেখানে বেশ কয়েকটি শহর হুমকির মুখে রয়েছে। তবে উত্তর-পূর্ব কুইবেকের দাবানল ‘স্থিতিশীল’ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বোননারডেল আরও বলেন, ‘কুইবেকের ইতিহাসে এবারই প্রথম এতগুলো দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই করা হচ্ছে, এত মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা কার্যত একটি যুদ্ধ করতে যাচ্ছি যা পুরো গ্রীষ্মজুড়ে চলবে আমরা মনে করি।’ কুইবেক প্রদেশের প্রায় ১৪ হাজার লোককে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বোননারডেল ঘোষণা করেছেন, ‘আমরা এখনও এই যুদ্ধে জয়ী হইনি।’

কানাডার পরিবেশ কর্তৃপক্ষ বর্তমানে দেশটিতে ৪১৬টি সক্রিয় দাবানলের তালিকা প্রস্তুত করেছে। এর মধ্যে ২০৩টিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ছয়টি দেশের সঙ্গে ফায়ারফাইটার বিনিময়ের চুক্তি রয়েছে কানাডার। দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কোস্টারিকা। সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৫৬৬ জন ফায়ারফাইটার অন্য অঞ্চলকে সহায়তার জন্য বিভিন্ন প্রদেশে ভ্রমণ করেছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড থেকে কানাডায় এসেছে আরও ৪৪৩ জন ফায়ারফাইটার। তাদের বেশিরভাগই এখন পর্যন্ত আলবার্টাতে গেছেন। সেখানে মে মাসেই ১০ লাখ হেক্টরের বেশি জমি ভস্মিভ‚ত হয়েছে।

কানাডিয়ান ইন্টারএজেন্সি ফরেস্ট ফায়ার সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত আটটি প্রদেশে ২০৯টি আগুন জ্বলছিল। নর্থওয়েস্ট টেরিটোরিতেও আগুন ছিল। এর মধ্যে ৮৭টি আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। দাবানলের কারণে এখন পর্যন্ত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ২৮ হাজার মানুষকে। এর মধ্যে নোভা স্কশিয়া থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ১৮ হাজার মানুষকে। আলবার্টা থেকে মে মাসে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার মানুষকে। তবে তাদের অধিকাংশই আবার নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরে গেছেন।