দেলওয়ার এলাহী : অনেকদিন পরে গত ১৩ই মে শনিবারের কোন অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ হলো গতরাতে। JRB EVENTS আয়োজিত টরন্টোর চাইনিজ কালচারাল সেন্টারে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী অমিত শুভ্র রায়ের একক সঙ্গীতায়োজন- ‘অমিত সুরের ধারা-২’ শিরোনামের এই অনুষ্ঠানে দর্শকশ্রোতার উপস্থিতি দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। কমিউনিটির একজন শিল্পীর একক গানের অনুষ্ঠানে প্রায় পৌনে পাঁচশো দর্শকশ্রোতার উপস্থিতি প্রমাণ করে এই শিল্পীর জনপ্রিয়তা এবং কমিউনিটির সুধীমহলে সংস্কৃতির প্রতি দায় ও সহযোগিতামূলক অংশগ্রহণের সাথে সাথে সোৎসাহে প্রেরণাদান। সংস্কৃতিবান্ধব আমাদের এই কমিউনিটির প্রতিনিয়ত প্রেরণাদানের প্রমাণ টরন্টো কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ক্রমবর্ধমান চর্চা বা ক্রমস¤প্রসারণের ঢেউ।

প্রবাস জীবনে সাধারণত কেউ কোন অনুষ্ঠানে গেলে মূল অনুষ্ঠান বা পরিবেশনা উপভোগ করা ছাড়াও ভেতরে এক আনন্দ সঞ্চারী অনুভ‚তির চঞ্চলতা কাজ করে। বহুদিন পর প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা হওয়া। বন্ধু বলয়ের আড্ডা। অভিমানী চোখে তাকানোর লজ্জা। এইসব নিয়েই আমাদের প্রবাস জীবনের যে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মূর্ত করে সৃষ্টি হয় সময় ক্ষেপণের আবহ। গতকালও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। বহুদিন পরে দেখলাম কত প্রিয় মুখ!

‘অমিত সুরের ধারা-২’- অনুষ্ঠানের শুরুতে ফ্লোরা শুচি মিষ্টি হাসি দিয়ে সবাইকে স্বাগত জানালেন। অতঃপর মঞ্চে আহবান করলেন অমিত শুভ্র রায় ও তার সহযোগী শিল্পীদেন- লিটন ডি কস্তা, রূপতনু শর্মা, ঝলক দেব চৌধুরী, জন মার্টিন ও জয় সরকার নিজ নিজ বাদন যন্ত্রের আসনের সামনে এসে দাঁড়ালে দর্শকশ্রোতা বিপুল করতালির মাধ্যমে তাঁদেরকে স্বাগত জানালেন। শুরু হলো অমিত শুভ্র রায়ের পরিবেশনা। কত কত গীতিকার ও সুরকারের গান করলেন অমিত! ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, আব্দুল করিম, জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, শ্যামল গুপ্ত, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, কাওসার আহমেদ চৌধুরী, আমজাদ হোসেন, সৈয়দ শামসুল হক, জাহিদুল হক, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, গুলজার প্রমুখের লেখা। আলী হোসেন, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সুধীন দাশগুপ্ত, আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, লাকী আখন্দ্, নচিকেতা ঘোষ, মান্না দে, প্রভাস দে প্রমুখ সুরকারের সুর করা গান শুনে বারবার তাদের অবিস্মরণীয় সৃষ্টিকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছিলাম। কৃতজ্ঞতায় তাদের নাম আমার অনুভ‚তির দরজায় করাঘাত করছিল। শ্রোতাদর্শকদের বিহŸলিত মুগ্ধতা নিশ্চয়ই তাঁরা দূর থেকে উপভোগ করছিলেন। শ্রোতাদের মুগ্ধতা, ভালোবাসা ও গানের সঙ্গে তাদের জীবন-গল্পের আনন্দ-বেদনার সহভাগের উৎফুল্লতায় আড়াল থেকে তাঁরা নিশ্চয়ই খুঁজে পেয়েছেন তাঁদের প্রকৃত স্বীকৃতি ও নীরব সম্মান। এসব ভাবতে ভাবতে এরই ফাঁকে একসময় সংগঠকের পক্ষ থেকে দর্শক ও স্পনসরদের কাছে মঞ্চে এসে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান রনি মজুমদার।

‘অমিত সুরের ধারা-২’ অনুষ্ঠানে অমিত রায়ের গানের পরিবেশনার পাশাপাশি আনন্দমুখর শ্রোতাদর্শক দেখে ভালো লেগেছে অনেক। কথায় আছে হাসিকান্না প্রভাববিস্তারী। শত শত মানুষের আনন্দ ও উচ্ছ¡সিত ইতিবাচক মনোবৃত্তি একজন শিল্পীকে অনেক সাহসী করে তোলে। নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার আবেগকে উস্কে দেয়? এবং সেটাই হয়েছিল অমিত রায়ের কণ্ঠে গান পরিবেশনার আয়োজনে। অমিত শ্রোতাদর্শকদের সম্পূর্ণ মনোযোগ জয় করেছিলেন? প্রতিটি শ্রোতাদর্শক আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখেছিলেন সমবেত কণ্ঠে। অমিত রায়ের মাতা-পিতার উপস্থিতি স্বয়ং অমিতকে তো বটেই, এমনকি অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রতিটি শ্রোতাদর্শকদের আবেগকে আলাদা মাত্রায় নিয়ে গেছে। সকল দর্শকশ্রোতা দাঁড়িয়ে মাকে সম্মান দেখিয়েছেন। অমিত মাকে সম্মান দেখিয়ে পরিবেশন করেন বিশেষ গান।

শত শত মানুষের ভীড়েও তো কারো কাছে কেউ কেউ থাকেন বিশেষ। কারো সঙ্গে জীবনের আনন্দ-বেদনার গল্প সহভাগ করার ব্যাকুল অপেক্ষায় থাকেন কেউ কেউ? অভিমানী চোখ দেখেই দৃষ্টি নামিয়ে দূরে কোথাও তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে আমিও বলেছি হয়তো –
কিছু বলে না
যদি হৃদয় পুড়ে যায়, ফাগুন ফিরে যায়
আগুন পাখির দু’ডানায়
কিছু বলো না…
গানের শক্তি বুঝি এখানেই!