অনলাইন ডেস্ক : পরিবেশগত গোষ্ঠীগুলোর একটি জোটের এক প্রতিবেদন দেখা গেছে যে, রয়্যাল ব্যাংক অফ কানাডা (আরবিসি) গত বছর বিশ্বের বৃহত্তম জীবাশ্ম জ্বালানী অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান ছিল। গেল বছর ব্যাংক অফ কানাডা ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল প্রদান করেছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
বার্ষিক ব্যাংকিং অন ক্লাইমেট ক্যাওস প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ব্যাংকের তহবিল প্রদান এটিকে তালিকার দিক থেকে পঞ্চম বৃহত্তম জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থদাতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু ২০২২ সালে প্রথমবারের মত এ ব্যাংক সবচেয়ে বেশি অর্থ সরবরাহ করে তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে।
২০২১ সালে রয়্যাল ব্যাংক অফ কানাডা বিশ্বের জীবাশ্ম জ্বালানী প্রকল্পের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থদাতা ছিল। আরবিসি ২০২২ সালে আমেরিকান ব্যাংক জেপি মরগানকে টপকে যাওয়ার আগে এটি ২০২১ সালে ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কিছু বেশি তহবিল প্রদানের মাধ্যমে শিল্পের সবচেয়ে বড় অর্থদাতা ছিল। জেপি মরগান গত বছর এই শিল্পটিকে ৩৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করেছে।
তথ্য অনুসারে, ২৯.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল নিয়ে গত বছর স্কোটিয়াব্যাংক বিশ্বব্যাপী নবম স্থানে ছিল এবং টিডি প্রায় ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে প্রদান করে এর ঠিক পিছনে ছিল। অন্য দিকে ব্যাংক অফ মন্ট্রিল এবং সিআইবিসি যথাক্রমে ১৯.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ১৭.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করে ১৫ তম এবং ১৬ তম স্থানে ছিল।
সম্মিলিতভাবে, বড় পাঁচটি কানাডিয়ান ব্যাংক গত বছর জীবাশ্ম জ্বালানি উন্নয়নে প্রায় ১৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করেছে।
গত সপ্তাহে রয়্যাল ব্যাংক অফ কানাডার বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার সভায় প্রধান নির্বাহী ডেভ ম্যাককে ব্যাংকের তহবিল এবং জলবায়ু রেকর্ডের সমর্থনে বলতে গিয়ে শক্তি নিরাপত্তার গুরুত্ব এবং জীবাশ্ম জ্বালানি তহবিল থেকে দূরে একটি সুশৃঙ্খল রূপান্তরের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ম্যাককে বলেছেন, আমরা সক্রিয়ভাবে সরকার, আমাদের ক্লায়েন্ট এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে একটি নেট-জিরো (গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস) অর্থনীতি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছি।
তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংক বিশ্বাস করে নেট-জিরোতে রূপান্তর সফল হওয়ার জন্য অবশ্যই সুশৃঙ্খল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং আমাদের অর্থনীতি ও কিভাবে আমরা শক্তি এবং সম্পদ ব্যবহার করি সে বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে হবে।
এই প্রতিবেদনের বিষয়ে সিবিসি নিউজের মন্তব্যের অনুরোধে ব্যাংক সাড়া দেয়নি।
পরিবেশবাদী আইনজীবীরা নতুন তেল ও গ্যাস প্রকল্প তৈরি করা এবং নেট-জিরো নির্গমনে স্থানান্তরকে ত্বরান্বিত করার উপায় হিসাবে জীবাশ্ম জ্বালানি তহবিল পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার জন্য ব্যাংকগুলোকে চাপ দিচ্ছেন।
গ্রিনপিস কানাডার সিনিয়র এনার্জি স্ট্রাটেজিস্ট কিথ স্টুয়ার্ট এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রয়্যাল ব্যাংক অফ কানাডার বিশ্বের বৃহত্তম জীবাশ্ম জ্বালানী অর্থদাতা হয়ে ওঠা প্রমান করে যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সঠিক কাজ করার জন্য ব্যাংকারদের বিশ্বাস করা যায় না, তাই তাদের নিয়ন্ত্রিত করা দরকার।’
ওন্টের কিংস্টনে কুইন্স ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল পলিসির ডিরেক্টর ওয়ারেন মাবি বলেছেন, কানাডিয়ান ব্যাংকগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি সংস্থাগুলোর প্রধান অর্থদাতা হওয়া দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই, কারণ তারা কানাডার অর্থনীতির একটি বড় অংশ। তিনি এক সাক্ষাৎকারে সিবিসি নিউজকে বলেছেন, তারা অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়, তাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি হোল্ডিং রয়েছে, তাদের কার্বন ক্যাপচার সিকোয়েস্টেশন প্রকল্প রয়েছে, তাদের জ্বালানি সক্ষমতা প্রকল্প রয়েছে। তিনি বলেন, শিল্পে অর্থায়ন কোনো সমস্যা নয়। প্রশ্ন হল, শিল্পের অর্থ কোথায় যাচ্ছে? মাবি বলেন, “তাদের যা জিজ্ঞাসা করা উচিত তা এই নয় যে ব্যাংক এই সংস্থাগুলোতে বা এই খাতে কত টাকা রাখছে, বরং সেই অর্থ কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে সেটি? আমরা কি আসলেই ডিকার্বনাইজেশন দেখছি?” প্রশ্ন ছুড়ে দেন মাবি। সূত্র : সিবিসি নিউজ