হাসান আমিন : পাঁচ দশকের বেশি সময় পর চাঁদে নভোচারী পাঠাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। গত ৩ এপ্রিল, সোমবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে নতুন চন্দ্রাভিযানের নভোচারীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো এ চন্দ্র মিশনে একজন নারী ও একজন কৃষ্ণাঙ্গের পাশাপাশি থাকছেন একজন কানাডিয়ান নভোচারী। ফলে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করা প্রথম অ-আমেরিকান হবেন কানাডার জেরেমি হ্যানসেন।
নাসা এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি যৌথভাবে আর্টেমিস-টু নামে একটি মিশন পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে। ১৯৭২ সালের ঐতিহাসিক অ্যাপোলো মিশনের পর এবারেই প্রথম নভোচারীদের নিয়ে চাঁদের এই মিশন পরিচালিত হচ্ছে। এই মিশনের নাম দেওয়া হয়েছে আর্টেমিস–টু। ২০২৪ সালের নভেম্বরে এই মিশন শুরু হবে।
নাসার নভোচারী হিসেবে যাঁদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রেইড ওয়াইজম্যান, ভিক্টর গ্লোভার ও ক্রিস্টিনা কোচের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে কানাডিয়ান মহাকাশ সংস্থার নভোচারী জেরেমি হ্যানসেনের প্রথম মহাকাশযাত্রা হবে এটি। যুক্তরাষ্ট্রের হাউসটনে জনসন স্পেস সেন্টারে চার নভোচারীকে পরিচয় করিয়ে দেন নাসার পরিচালক বিল নেলসন।
রেইড ওয়াইজম্যানকে আর্টেমিস টু মিশনের কমান্ডার ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য দিকে, হ্যানসেন মিশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করবেন। এই মিশনে অবশ্য তারা চাঁদে অবতরণ করবেন না। তারা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবেন।
নাম ঘোষণার পর হ্যানসেন বলেন, প্রায় ১০ দিনের এই মিশনে বিজ্ঞান ও আবিস্কারের সমস্ত কিছুই ঘটবে। পৃথিবীর দিকে ফিরে তাকানো তার একটি ব্যক্তিগত অগ্রাধিকার থাকবে বলে জানান হ্যানসেন। আমরা কিছু সময় নি¤œ-পৃথিবী কক্ষপথে, তারপর উচ্চ-পৃথিবী কক্ষপথে, জিনিসগুলো পরীক্ষা করব। অরিয়ন ক্যাপসুল তখন পৃথিবীর উপগ্রহকে প্রদক্ষিণ করার সময় চাঁদের বহুদূরের বাইরে ভ্রমণ করবে। আমি আমাদের মহাকাশে ঝুলন্ত গ্রহে চাঁদের অতীত দেখার সুযোগ পাব।
তিনি যোগ করেছেন যে, যদিও তিনি এখনও একটি প্যাকিং তালিকা তৈরি করেননি, সবচেয়ে অর্থপূর্ণ জিনিস আমার পরিবার থেকে নেবে। তারা এই মিশনের একটি বিশাল অংশ। তাদের স্বীকৃতিও গুরুত্বপূর্ণ হবে। এ ছাড়াও তিনি রয়্যাল কানাডিয়ান এয়ার ক্যাডেটদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং কানাডার সামরিক বাহিনী এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে কানাডিয়ানরা এই মিশনের মালিকানা এবং গর্ব অনুভব করে। এটি হাজার হাজার লোকের পরিশ্রম যারা এটিকে একটি সম্ভাবনা দিকে নিয়ে গেছে।
উদ্ভাবন, বিজ্ঞান ও শিল্প মন্ত্রী ফ্রাঙ্কোইস-ফিলিপ শ্যাম্পেন বলেন, এটি চাঁদে ফিরে যাওয়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু। “এটি ভবিষ্যতের বিনিয়োগ সম্পর্কে। এই সম্ভাবনা সম্পর্কে। এটি মহাকাশ অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন এবং আরও অনেক কিছুর সুযোগ গ্রহণের বিষয়ে।”
নাসার নভোচারী হিসেবে যাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রেইড ওয়াইজম্যান, ভিক্টর গ্লোভার ও ক্রিস্টিনা কোচের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে কানাডিয়ান মহাকাশ সংস্থার নভোচারী জেরেমি হ্যানসেনের প্রথম মহাকাশযাত্রা হবে এটি। ক্রিস্টিনা কোচই প্রথম নারী হিসেবে চন্দ্র অভিযানে যাচ্ছেন।
নভোচারী রেইড ওয়াইজম্যান এর আগে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধবিমান চালিয়েছেন।
অন্য দিকে গ্লোভার (৪৬) প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নভোচারী হিসেবে এই অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। তিনি এর আগে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কাজ করছেন। চন্দ্র মিশনের ফ্লাইট পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন তিনি।
৪ নভোচারীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিচে তুলে ধরা হলো:
রেইড ওয়াইজম্যান:
৪৭ বছর বয়সী ডেকোরেটেড নেভাল অ্যাভিয়েটর ও টেস্ট পাইলট রেইড ওয়াইজম্যানকে নাসা ২০০৯ সালে নভোচারী হিসেবে নির্বাচন করে। বাল্টিমোরের বাসিন্দা ওয়াইজম্যান ১৬৫ দিনের সফরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে পদত্যাগের আগে তিনি নভোচারীর কার্যালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।ওয়াইজম্যান ‘আর্টেমিস টু’ অভিযানের কমান্ডার হিসেবে কাজ করবেন।
ভিক্টর গ্লোভার:
৪৬ বছর বয়সী নেভাল অ্যাভিয়েটর ভিক্টর গ্লোভার স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানের পাইলট ছিলেন। প্রায় ৬ মাস আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থেকে ২০২১ সালে তিনি পৃথিবীতে আসেন। হিউস্টনে অবস্থিত নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে গ্লোভার বলেন, ‘মানবজাতির ইতিহাসে এ দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ পথ ধরেই একদিন মানুষ মঙ্গল গ্রহে যাবে।’
ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্মগ্রহণকারী গ্লোভার ২০০০’র দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি বিভাগে কাজ করেছেন। তিনি মার্কিন বিমান বাহিনীতে টেস্ট পাইলটের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ২০১৩ সালে গ্লোভার নভোচারী হিসেবে নাসায় যোগ দেন। তিনি স্পেসএক্স ক্রু ওয়ান মিশনে প্রথম মহাকাশ অভিযানে গিয়েছিলেন। ২০২০ সালের নভেম্বরে তিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের পরিভ্রমণশীল গবেষণাগারে ৬ মাস অবস্থান করেছিলেন।
ক্রিস্টিনা কোচ:
একজন নারী হিসেবে দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার রেকর্ড আছে ক্রিস্টিনা কোচের। ৪৪ বছর বয়সী এই ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার ৩২৮ দিন মহাকাশে ছিলেন। তিনি নাসার বেশ কয়েকটি মহাকাশ অভিযানের জন্য বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি উন্নয়নে সহায়তা করেছেন।মিশিগানের এই বাসিন্দা চন্দ্রাভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে ১ বছর দক্ষিণ মেরুতে ছিলেন।
জেরেমি হ্যানসেন:
৪৭ বছর বয়সী জেরেমি হানসেন ২০০৯ সালে কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সিতে নভোচারী হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। যুদ্ধবিমানের পাইলট হানসেন কানাডার ৪ সক্রিয় নভোচারীর একজন। প্রথম কানাডীয় হিসেবে তিনি স¤প্রতি নাসার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
একজন কানাডীয় হিসেবে তিনি প্রথম মহাকাশে দূরের অভিযানে যোগ দিচ্ছেন। সূত্র : ন্যাশনাল পোস্ট