হিমাদ্রী রায় : মুখে ব্রম্মকথা বলা আর মনে মনে খায় মনকলা এমন মানুষ নিয়ে আমাদের চলতে হয় নাহলে যে বন্ধু শূন্য হতে হয়। মুখে এক মনে আরেক মানুষের ভীড়ে চলার একটা কায়দা করা নাম দিয়েছি আমরা মানিয়ে নেওয়া। মুখে ব্রম্ম কথা বলে মনে আরেক এরা সর্বত্র বিরাজমান। ফেইসবুকে অনেককেই প্রকট হতে দেখি তারা বলছেন, শিক্ষিত না তাঁর মাঝে জ্ঞান আসবে কোথা থেকে?

আমার জানতে চাওয়া হলো যার জ্ঞানের শালকায় নরেন্দ্রনাথের জ্ঞানচক্ষু ফুঁটে বিবেকানন্দ হয়েছিলেন, কিংবা যিনি বলেছিলেন গাছের নিচে পেচ্ছাব করোনা পোকামাকড়ের অসুবিধা হতে পারে, যিনি আমির গরীব, ছুঁথ, অচ্ছ্যুৎকে এককাতারে দাঁড়ানোর অধিকার দিয়ে গেলেন নামাজের মাধ্যমে, আরেকজন যিনি বলতে পারেন মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই, মূল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি। ‘শুনি ম’লে পাবো বেহেস্তখানা তা শুনে তো মন মানে না, বাকির লোভে নগদ পাওনা কে ছাড়ে এই ভুবনে’ তা আপনাদের কান্ডজ্ঞান কি বলে? তাঁরা আপনাদের মতো তথাকথিত শিক্ষিত ছিলেন?

হ্যাঁ তাঁরাও শিক্ষিত তবে অন্তরের আলোয়। ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়’ অন্ধকার থেকে আলোর অভিসারী ছিলেন এরা।
মনথেকে সবার ভালো চাওয়া, স্বার্থশূন্য হয়ে বাঁচার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার প্রয়োজন নেই বাবু যা দরকার তা হলো মনুষত্বের পাঠ যা কিনা মানুষকে মার্জিত করে তুলে। অন্যের প্রতি আচরণে আমি কতটা স্বার্থ শূন্য, অন্যকে জ্ঞান দেওয়ার আগে নিজের অভ্যাসের কতটা বদল করতে পেরেছি, কতটা উন্নত করেছি জীবন ধারার মান, পাশের মানুষটি প্রতি আমি কতটা বিনীত আর পরিশীলিত তার উপর নির্ভর করে কতটা শিক্ষা আমার আছে, আমি কতটা সংস্কৃতিবান।

ছাব্বিস বছর আয়ার কাজ করে ছেলেকে আই,টি বানিয়েছেন এক মায়ের সাক্ষাৎকার শুনছিলাম আমির খানের সত্যমে বিজয়তে। আমির খান সেই মাকে প্রশ্ন করলেন এখন নিশ্চয়ই আপনি সুখি। ছেলে এত শিক্ষিত এত সম্মানিত। সেই মায়ের উত্তর আমার সুখ ছেলের উচ্চ মর্যাদায় নয় বাবা আমার সুখ ছেলেকে মানুষ করতে পেরেছি কেননা আমার ছেলে সমাজের কাছে বন্ধুদের কাছে, মা আয়ার কাজ করে এই পরিচয় দিতে লজ্জা পায়না। ঈশ্বরের অস্তিত্বে পুরোপুরি বিশ্বাস নেই এমন লোককে সংযমের মাসে উপবাস থাকতে দেখেছি। এমন একজন মানুষের সাথে আমি কাজকরি তার মুখনিঃসৃত যা আমার কাছে বাণী মনে হয়েছে। ‘যখন থেকে বুঝ হয়েছে তখন থেকেই রোজা রাখি কিন্ত লোভ কমাতে পারলাম কই’? অর্থ আছে এখনো দৌড়াচ্ছি, মনের শান্তি না জানিয়ে বিদায় নিয়েছে কবে টেরই পাইনি।

এই ছোট্ট কথপোকথনে নিজের জন্য কিছু প্রশ্ন বাছাই করলাম চাইলে আপনার আচরণেও যোগ করে নিতে পারেন। লোভ কমানোর শিক্ষা আমিই কি পেয়েছি? আঘাত না দিয়ে আমিও কি কথা বলতে পারি? অন্যের জন্য কতটা সময় দেই? হিংসার আশ্রয়ে আমিও কি বিশ্রাম যাই না? যে বলয়ে চলি, নেতা রুষ্ট হবে বুঝে অন্যের ভালোরও কি প্রশংসা করি? নিজের কল্যাণে স্তাবকের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সিম্পিথি চেয়ে কি পোষ্ট দেই না? জীবনে বন্ধু খুঁজে বেড়াচ্ছি না বন্ধুত্বে জীবন?

সম্ভবত মহাশ্বেতা দেবীর কথা যে প্রশ্ন করতে জানেনা সেও অশিক্ষিত। আমার সহকর্মীকে বললাম ভাই লোভ কমানোর শিক্ষা যদি নাও পেয়ে থাকেন আপনার ভাবনা শিক্ষিত হয়েছে সেই ভাবনাকে আমি কুর্নিশ করি।