লৌহাঙ্গ খাদক

ওরা সকলেরইতো চোখ ছিল, ছিল যথেষ্ট চিন্তা শক্তি,
বিবেচনা বোধও ওদের ছিল প্রখর।
মধ্যবিত্তের দালান কোটা থেকে সু-উচ্চ অট্রালিকাবাসী
বিশালাক্ষীদের দৃষ্টিশক্তিতো ছিল না পীড়িত?
ছিল উজ্জ্বলতর!
আমি নিজেও শুনেছি কত
ঐসব পন্ডিত প্রচেতার অন্বেষা দৃষ্টিপূর্ণ, নৈপুণ্য বুলির স্তুপীকৃত উচ্চরব;
শিখায়েছে ওরা, জ্ঞানতাপসরা- তাদের অগণন শিক্ষা, “কি সৎ কি অসৎ”,
গুনধরেরা শিখায়েছে নিয়ম নিরন্তর-নীতি-ধর্ম, জীবন-যাপন সঠিক পথ।
অথচ এই এরাই কি বধির ছিল সেদিন! দেখেনিকি তারা?
কেমন করে দ্রæততরে ভিনদেশির ছল-বল-কৌশল করায়ত্তে
অসহায়ে মস্তক নমিত করছিল বাঙালি ভায়েরা?

জানেনি কি তারা?
সেদিন আমারই গৃহবাসে কুপ্রবৃত্ত প্রবেশ্যে এক দস্যু লুণ্ঠক-
সেজে মহেশ্বর –
কেদারা টেনে পা উঁচিয়ে নেড়ে নেড়ে আমাকেই চোখ রাঙিয়ে-
আদেশে বলেছিলো, “এই উঠতো, উঠ, উঠ”- আমি উঠলাম,
আবার আদেশ করে, “এই এবার বস, বস, বিচ্যু-চাকর-নফর”।
অপমানে, লজ্জায়, নিজের প্রতি ঘৃণায় মনে হচ্ছিলো
ফেটে ধসে যাক আমার মেঝে ঐ মুহূর্তে,
লুকাই যেন মোর মস্তক মন্ডু আমারই মাটির খন্ডিত গর্তে।

কই দেখিনিত সেদিন-
দেখিনিত ঐ বৃংহিত হাতির গর্জনের মত বুলি আওড়ানো
কোনো গুণবত্ব এগিয়ে এলেন?
যাদেরইবা দেখেছিলাম তারা কেউবা জেগে ঘুমিয়ে নাসিকা গর্জনে রত ছিলেন,
কেউবা আড়ালে আবডালে মগ্ন হয়ে আকণ্ঠভোজন গলধঃকরণ করছিলেন।
আর বাকিরা?
তেলাপোকা রূপে অথচ অগ্নিজিহ্বা নিয়ে অন্তপুর চরিলেন-
লুটতে যদি পারে মোর গণ্য-গরবী-ভোষন আর আহৃত
কপাট আধারের গণতন্ত্র।
লুটতরাজ সম্পদ চওড়া দাম দিয়ে হাঁটে বেচে কিনবে খাকি রঙের স্বৈরতন্ত্র।

এই তারাই,
আমার সেই দুর্দিনে হাল ধরা কান্ডারির লৌহাঙ্গ পনেরই আগস্টের
নৈশভোজনে আপাদমস্তক গিলে
বদহজম ব্যাময় ভোগছেঃ
তাইত তারা,
মৃত্যুঞ্জয়ালোক বিমাতা পুত্ররাঙ- স্বোদরে পুরে খাদ্যেকে দোষারোপে
তাঁর সর্বাঙ্গ খুঁচে খুঁচে ছিদ্র নিংড়াচ্ছে।
আবার আমিত দেখছি-
বিরোধীর ফলাহারে দধি-সর লেলিহানে কিংবা শরৎ
চাঁদ লোফনে আজ বৈমাত্রিক ভাইয়েরা সমিদ্ধ,
সদা সতন্তর স্বার্থসিদ্ধ।
আজ দিকে দিকে স্বাধিকার প্রমত্তে¡ স্বরাজ স্বায়ত্তে¡ সর্বদা শুধু
আমিত্ত¡বাজির স্বরিত স্বরূপ স্বভাবসিদ্ধ।

তোমরা খাদকদের স্পর্ধার তারিফ না করে পারছি না!

 

প্রহরী সে বলাকা

জানি একাত্তরে দূর্দিনে
শহীদের রক্তে লাল হয়েছিল বাংলার মাঠ, ঘাট, নদী, প্রান্তর
হয়েছিল সবুজ-শ্রী বাংলার রং লাল, পুড়ে খাক মাতৃকা অন্তর!
অতঃপর; কত বছর গেলো, কত বৃষ্টি হলো, এখনো কেন সে দাগ মুছে না,
এখনো যে মাতা-পিতার কয়লা কলিজা? খয়েরি কি আর হবে না?
নদীর জলের লোহিত স্বাদে
পদ্মার ইলিশ এখনো কাঁদে।
বাংলার দোয়েল এখনও হাঁপায়- দম বন্দ প্রায় তার
নিঃশ্বাসে পুত্রের লাশের গন্ধ। ধর্ষিতার আর্তনাদে-এ ভূমি এখনো বিষাদাগার!

বাংলার কাঁক এখনও চক্ষু ঝরায়-
কাঁখ, কাঁখ কহে বিষাদে, “ওই গন্ধ সয়ে যাও, পিয়ে নাও অক্সিজেন সাথে
এ যে তোমারই পিতার গাত্র-গন্ধ, কন্যার আর্তনাদ- মেখে রাখো কলিজাতে।”
আর কেঁদোনা ওগো মা, কেঁদো না বাবা, প্রিয়ে হারা প্রেম ব্রতা প্রতিমা,
আর গেয়ো না কো বিষাদের গান বাংলার বাবুই, বউ কথাকও, বক-প্রিয়তমা।
আর আসিবে না পাক-পিশাচ শুষে নিতে তোমার বুকের তাজা রক্ত
তাড়িয়ে দিয়েছে বাংলার বাঘেরা হায়েনাদেরকে- একাত্তরের তিমিরা অক্ত।
পুত্র দিয়ে প্রাণ তার কিনেছে নিরাপদ মাতৃকা, বাংলা মানচিত্র ভূমি
কন্যা বিক্রে ইজ্জত তার করিছে ক্রয় দরজা, জানালা, গূঢ় গৃহ, জমি
ঘুমাও এবার নিরাপদ ঘরে খিড়কির শিকল শিথিল করে, আসিবে তার রূহ
বুকে জড়িয়ে শহীদের মুখ তন্দ্রালু আদরে বুলিয়ে কপোল
তার- একটু শোকসহ।

উড়ছে দেখো আজ আকাশে- সবুজের বুকে লাল বৃত্ত একটি স্বনির্ভর পতাকা!
স্বাধীন স্বাধিকার পতাকা!
বাংলাদেশের পতাকা!!
দিচ্ছে পাহারা দিবা নিশি উঁচিয়ে মাথা আকাশে প্রহরী সে বলাকা!!
উড়ছে বাঙালির দৃপ্ত দাগে-রক্ত ভেজা ঘাস একাত্তর এর বিজয় নিশান
বঙ্গ-স্বপ্নাদৃষ্ট-জয় কেতন বিশ্বাকাশে উড়ছে, উড়ছে হয়ে চির অ¤øান!
কেদোঁনা ওগো মা, কেঁদো না বাবা
যুদ্ধে গেল বলে পীড়িতা পত্নী সন্তান সম্ভবা।।