কানাডার উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড

হাসান আমিন : কানাডার ফেডারেল সরকার আগামী ২৮ মার্চ, মঙ্গলবার তার পরবর্তী বার্ষিক বাজেট পেশ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। দেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড গত ১০ মার্চ, শুক্রবার বাজেট প্রকাশের তারিখ নিশ্চিত করেছেন। হাউস অফ কমন্সে দেয়া ভাষণে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট জীবনকে আরও সাশ্রয়ী করে তুলবে এবং সমস্ত কানাডিয়ানদের জন্য ভাল চাকরি এবং সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।

বাজেটে সা¤প্রতিক মার্কিন ‘মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন’ এবং গত মাসে লিবারেল সরকার কর্তৃক ঘোষিত নতুন ফেডারেল প্রাদেশিক স্বাস্থ্যসেবা চুক্তির প্রভাব মোকাবেলার ব্যবস্থা থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন স্বাস্থ্যসেবা চুক্তির ঘোষণা অনুসারে ফেডারেল সরকার পরবর্তী দশকে এ খাতে ১৯৬.১ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে – যার মধ্যে পূর্বে বাজেট করা তহবিলের উপর আরও ৪৬.২ বিলিয়ন ডলার নতুন ব্যয় ধার্য করা হয়েছে।

এই চুক্তিটি ফেডারেল সরকার একটি ভঙ্গুর স্বাস্থ্য-পরিচর্যা ব্যবস্থার জন্য প্রজন্মের সমাধান হিসাবে তৈরি করছে। প্রদেশ এবং অঞ্চলগুলো কানাডা হেলথ ট্রান্সফারের (সিএইচটি) জন্য নিঃশর্তভাবে প্রণোদনামূলক ২ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার পাবে। এর মাধ্য দিয়ে এই চুক্তিটির কার্যক্রম শুরু হবে। যার লক্ষ্য হাসপাতালের জমে থাকা কাজ সম্পন্ন করা এবং শিশু হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চাপ মোকাবেলা করার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার সমাধান করা।

প্রস্তাবে পরের বছরগুলোতে স্থায়ীভাবে তহবিল বাড়ানোর জন্য একটি অন্তর্নির্মিত ব্যবস্থা সহ আগামী পাঁচ বছরের জন্য সিএইচটি বার্ষিক পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন : গত বছর মূল্যস্ফীতি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও করপোরেট কর বাড়ানো বিষয়ে ‘ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট’ নামে একটি বিল পাস করে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট। এ বিলের অন্যতম উদ্দেশ্য জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা করা। আগামী ১০ বছরে প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ডলার আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এই অর্থের প্রায় ৪৩০ বিলিয়ন ব্যবহার করা হবে কাবর্ন নিঃসরণ কমানো এবং স্বাস্থ্যবীমায় ভর্তুকিতে। টাকা আসবে কর্পোরেট কর বাড়িয়ে। নামে আইন মনে হলেও আদতে এটি ৭৩৮ বিলিয়ন ডলারের একটি ভর্তুকি প্যাকেজ।

স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ‘মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন’ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। ইউরোপীয় কমিশনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ডমব্রোস্কি বলেছেন, বিশাল বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক ভর্তুকি বা ট্যাক্স ক্রেডিটের পথ বেছে নেওয়া উন্নয়নসমস্যা সৃষ্টি করবে।

গত শরতে, একজন ঊর্ধ্বতন ফেডারেল অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা ট্যাক্স ক্রেডিটকে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য গেম-চেঞ্জার’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এবং সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে তারা কানাডা এবং অন্যান্য দেশের খরচে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘একটি মহাকর্ষীয় বø্যাক হোল’ অঙ্কন মূলধনের পরিমাণ হবে।

ফ্রিল্যান্ড গত শরতের অর্থনৈতিক বিবৃতিতে সেই চ্যালেঞ্জগুলোর একটি প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া উপস্থাপন করেছেন – বলেছেন, ট্যাক্স ক্রেডিট মূলত পরিচ্ছন্ন জ্বালানি মূলধন ব্যয় এবং হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য। ২০২৩ সালের বাজেটে আরও পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেই ক্রেডিটগুলো ঢাল হিসেবে রাখা হয়েছিল। এখন, ফেডারেল সরকার সতর্ক করছে যে প্রদেশগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ নিষ্কাশন এবং উন্নত উৎপাদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে তাদের নিজস্ব প্রণোদনা দিতে হবে।

এ দিকে, মার্কিন ‘মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন’ বিলের বৈষম্যমূলক সুরক্ষাবাদী বিধানগুলো দেশটির মিত্রসহ অনেক পক্ষ থেকে বিরোধিতা ও সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন বলেছেন, মার্কিন সরকারের ভর্তুকিযুক্ত গ্রিন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ইউরোপকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইনসংক্রান্ত বিলে জলবায়ুবান্ধব শিল্প প্রকল্পের জন্য ৩৯১ বিলিয়ন ডলার বাজেট বরাদ্দ রয়েছে। বাইডেনের এই কাজটিকে ইউরোপের শিল্পের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন উরসুলা। এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, মার্কিন সরকারের এই প্রণোদনার ফলে দেশটিতে উৎপাদিত পণ্য ও এর উৎপাদককে অসম সুযোগ দেবে। এবং এই অসম প্রতিযোগিতায় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলে টিকে থাকতে পারবে না। ফলে ভেঙে পড়তে পারে সাপ্লাই চেইন। তিনি আরও বলেন, একদিকে আইআরএ ও ভঙ্গুর সাপ্লাই চেইন, অন্যদিকে রেকর্ড পরিমাণ জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে অসুবিধার মধ্যে রাখতে পারে। এ বিলটির বিষয়ে ইইউ পার্লামেন্টের বাণিজ্য কমিটির প্রধান বার্ন্ড ল্যাঞ্জ বলেছিলেন, আইনটি পরিবর্তনের জন্য ওয়াশিংটনকে চাপ দেওয়া সময়ের অপচয়; বরং এর পরিবর্তে ইইউ’র উচিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে অভিযোগ দায়ের করা। সূত্র : সিবিসি নিউজ