স্বপন কুমার সিকদার : ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি’ একটি বিশাল কালজয়ী, চিরায়ত, সর্বোৎকৃষ্ট বা সর্বোত্তম ভাস্কর্য যা ফ্রান্স ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে স্বাধীনতার শত বর্ষে উপহার হিসেবে প্রদান করে। ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিবল্যান্ড এই ভাষ্কর্যটি ফ্রান্স ও আমেরিকা পরস্পরের মধ্যে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসাবে দান করেন। মুক্তি বা স্বধীনতার চিরন্তন প্রতীক ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি’ আমেরিকার আপার নিউইয়র্ক বে-তে অবস্থিত। এই ভাষ্কর্যটি নিউইয়র্কের লিবার্টি আইল্যান্ডে অবস্থিত যা যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনকারী এবং অন্য দেশ থেকে আসা আমেরিকানসহ সকল পর্যটকদের স্বাগতম জানায়। ইহা দুই জাতি আমেরিকা ও ফ্রান্সের মধ্যে ঐতিহাসিক মৈত্রীর বন্ধনকে দৃঢ় করতে ফ্রান্স কর্তৃক আমেরিকার শত বর্ষে প্রদত্ত সেরা উপহার।
নিউইয়র্কের লিবার্টি আইল্যান্ড; ম্যানহেটন আইল্যান্ড, নিউইয়র্ক সিটি থেকে এক মাইল দক্ষিন-পশ্চিমে এবং নিউজার্সি সোর থেকে ১, ৩০০ ফুট পূর্বে অবস্থিত। ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি’ ফ্রান্সের প্যারিসে মি. গুস্তেব আইফেল-এর সহযোগীতায় মিঃ ফ্রেদেরিক আগুস্তে বার্থোল্ডি নির্মাণ করেন। পরে এটাকে আমেরিকায় আনা হয় ও স্থাপন করা হয়। এটা আমেরিকা ও ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হয়। এটার উচ্চতা ৯৩ মিঃ বা ৩০৫ ফুট। এটা আমেরিকার সবচেয়ে বেশি স্বীকৃতিযোগ্য প্রতীকের মধ্যে একটি। বিশ্বেরও সবচেয়ে বেশি স্বীকৃত ল্যান্ডমার্ক। এটা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের স্থায়ী প্রতীক। ১৯২৪ সালে মনোনীত জাতীয় সৌধ হিসাবে বিবেচিত হয়। ১৮৭৬ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ও শেষ হয় ১৮৮৬ সালে। এর উদ্বোধনের তারিখ ২৮ অক্টোবর, ১৮৮৬ সাল। স্ট্যাচু এলাকা বর্তমানে ২৭ একর জুড়ে বিস্তৃত হয়েছে। এই স্ট্যাচুতে ব্যবহৃত তামার ওজন ৩১ টন এবং ষ্টীলের ওজন ১২৫ টন। এর নির্মাণে ২৫০,০০০ ডলার ব্যয় হয়।
প্রধানত ফ্রান্স ও ইউ.এস-এর জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের প্রতীক এবং তাদের উভয়ের স্বাধীনতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ইচ্ছার নিদর্শন হিসাবে এটা নির্মিত হলেও বর্তমানে এর লক্ষ্য ও অভিপ্রায় আরও অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এটা নির্বাসিতদের মা যিনি লক্ষ লক্ষ অভিবাসী যারা আমেরিকায় অধিকতর উন্নত জীবন লাভের অভিপ্রায়ে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে পাড়ি জমায়, তাদের স্বাগত জানানোর প্রতীক এবং লক্ষ লক্ষ অভিবাসীর স্বপ্ন, আকাঙখা ও সুযোগকে মূর্ত বা বাস্তবে রুপ দান করার প্রতীক। এটা আমেরিকাকে চিত্রিত বা প্রতিনিধিত্ব করে।
‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি’ তার বাম হাতে আমেরিকার মহান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে ধারণ করে আছে। এটা সহনশীল হত্তয়ার অত্যন্ত শক্তিশালী প্রতীক যাহা গভীরভাবে চিন্তা বা মনন, আদর্শের জন্য বিতর্ক যেমন স্বাধীনতা, মানবধিকার, দাস প্রথার বিলোপ, গণতন্ত্র, সুযোগ লাভ ইত্যাদিকে উৎসাহিত করে। এটা একজন মহিলাকে প্রতিনিধিত্ব করে যার উত্তোলিত ডান হাতে একটি টর্স যা যেন অন্ধকারে আলোর বর্তিকা যাহা বা যিনি জাতিকে পথ প্রদর্শন করছেন।
এই ভাষ্কর্য্যটি স্বাধীনতা বা মুক্তির রোমান দেবী লিভারটাসের আদলে নির্মিত। তার মুকুটের সাতটি পয়েন্ট যা আলোক রশ্মিকে প্রতিনিধিত্ব করে। তা আবার সাতটি সমুদ্র ও সাতটি মহাদেশেরও প্রতীক মনে করা হয়। স্ট্যাচুর পায়ের কাছে রয়েছে ভাংগা চেইন বা পায়ের বেড়ি যা প্রতীকী নারী মুক্তি বা স্বাধীনতাকে মূর্ত বা প্রকাশ করে। এই স্ট্যাচুর মুখের অবয়ব নির্মাণ শিল্পীর মায়ের মুখের আদলে নির্মিত মনে করা হয়। এই স্ট্যাচুর বহিরাবয়ব তামা দিয়ে তৈরী যা অক্সিডেশান বা জারনের ফলে সবুজাভ রং ধারন করেছে। তার ডান হাতের টর্সটি ন্যায়বিচার বা স্বাধীনতার পথ প্রদর্শকের প্রতীক।
তাহার বাম হাতের ফলকটিতে ইউ.এস.-এর স্বাধীনতার ঘোষণার তারিখ রোমান ভাষায় “JULY IV MDCCLXXVI”, (জুলাই ০৪, ১৭৭৬) খোদাই করা আছে।
আপার নিউইয়র্ক বে, লিবার্টি আইল্যান্ড, ইউ.এস.এ.তে অবস্থিত বিশাল এই ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি’ আমেরিকা ও ফ্রান্সের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বের স্মৃতিকে অ¤øান করে রেখেছে। এই লিখাটি লিখতে যাদের সহযোগীতা নিয়েছি তাদের সবার প্রতি রইল অফুরন্ত কৃতজ্ঞতা। সবাই নিরাপদ ও সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।