বিদ্যুৎ সরকার : বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া রাস্তা। গাড়ির চলমান চাকার এক ধরণের সর সর শব্দে সম্বিত ফিরে পাই। কখন জানি এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। এরই মধ্যে হাওয়া বদল। আবহাওয়া বিপরীতমুখী হয়ে সূর্য্য স্নানে নিমজ্জিত। শীতটা যাই যাই করেও যেতে পারছে কই! চন্দ্র-সূর্য্যকে সাক্ষী রেখে গাছের পাতারা সবুজ হতে শুরু করেছে। অথচ, দু’দিন আগেও কেমন নির্মম, জীর্ন চেহারায় দাঁড়িয়ে ছিল ওরা। পৃথিবীর তাবৎ অভিশাপে বুঝি এরা অভিশপ্ত ছিল আকালের সন্ধানে। যারা এর আগে কখনো এমনটি দেখেনি তাদের কাছে তো গাছেরা মৃত এক অচিন দৃশ্যে বিরাজমান। রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাণহীন গাছেরা কী এক শুন্যতায় ভরিয়ে রাখে মনের আঙ্গিনা। পথে যেতে যেতে এসব সুখহীন শোকময় দৃশ্য বার বার আমাকে ভাবতে বাধ্য করে তোলে সযতনে। এই যে চলে আসা প্রতিনিয়তই বুঝি অনুভব করতে শেখার ভুলের চক্রবৃদ্ধি সুদের হার। জীবনের সকল সরল অংক কেমন করে কঠিন হয়ে পড়ে সিদ্ধান্তের ভুল ফলাফলে।

আমার শরতের আকাশ, মাতাল হাওয়ায় দোল খাওয়া আমার পরশী কাশবন, রাতের জোনাকীর আলোক সজ্জা আর ঝিঁঝি পোকার বিরামহীন শব্দ। গ্রামের নিরবতা ভেঙে বাঁজতে থাকে ভোরের সূর্য্যোদয় অব্দি। লাটিমের ফিতেয় জড়িয়ে থাকা আমার শৈশবের স্মৃতি। এখনও কেমন উজ্জ্বল হয়ে আছে ধ্রæব তারা হয়ে। আমার আকাশে উড়ে উড়ে যায় আমার লাটাইয়ের অন্তর্গত লাল, নীল, ভোঁকাট্টা ঘুড়িগুলো। তবুও মাঞ্জা দেয়া সুতোয় লুকিয়ে থাকে মিহি গুড়ো কাচের ধারালো প্রতিপত্তি। চৈত্র সংক্রান্তির পিঠার সাজে দৃষ্টি থমকে যায় রূপালী আশায়। মেলা ফেরৎ দাদুর হাতে চিনির তৈরী পাখি, ঘোড়া, হাতির মিনিয়েচার। বিন্নি ধানের খৈ, কদমা, মুড়ালি ভাজার একান্ত ভালোলাগার হাতছানি- সবকিছুই কি অতীত হয়ে গেল চিরদিনের জন্য, স্মৃতি হয়ে গেল আগামী দিনগুলোর জন্য।

গাছে গাছে অজানা পাখিদের অচেনা সুরে কিচির মিচির। কল-কাকলিতে মুখোরিত হবে অরণ্য। ফুল ফুটবে ঘ্রাণহীন একক সৌন্দর্য নিয়েই। ফুলদানী শোভিত হবে বাহারী ‘ইকাবেনা’য়। এ সকল ফুলেল দৃশ্যে মন খারাপ হওয়া মহূর্তগুলো ভুলে থাকবো কিছুদিন, কিছুকাল। তারপর আবার মনের মাঝে মন্দলাগা- সুদূরে ফেলে আসা সকল ভাল লাগার স্মৃতিগুলো আপনা-আপনিই সজীব হয়ে উঠবে ক্রমশঃ। টিভি’র পর্দায় রেশমার জীবন জয়ের গল্প দেখে, শুনে আশায় বুক ভরে যাবে অজান্তেই।

বিদ্যুৎ সরকার : লেখক, আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা