শারমীন শরীফ : ভাষা আন্দোলনকে বলা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের উশালগ্ন। ভাষা আন্দোলনে শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত মেয়েদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। তাঁরা রাজপথে নেমে এসেছিল দলে দলে। পূর্ব পাকিস্তান সরকার ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রাদেশিক পার্লামেন্ট অভিমুখে আমতলা থেকে মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে, কিন্তু ছাত্র সমাবেশ এই নিষেধাজ্ঞা লংঘন করে রাজপথে নেমে আসে। মেয়েরাই প্রথম আমতলার প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল করে রাস্তায় নেমে আসেন, যারাই আমতলা থেকে মিছিল করে বের হয়ে এসেছিলেন সঙ্গে সঙ্গে তাঁদেরকে গ্রেফতার করা হয় সেদিন, লাঠিপেটা করে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলা হয় তাঁদের। একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ এবং পরে গুলি বর্ষণ করা হয় মিছিলের উপরে, কিন্তু সব বাধা উপেক্ষা করে ছাত্রসমাজ সেদিন বাঁধভাঙ্গা মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিল। ভাষা আন্দোলনের সেই মিছিলে সেদিন যেসব ছাত্রী অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের অনেকেই পরবর্তী সময়ে গণতন্ত্র সাহিত্য শাসন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে গৌরবময় অবদান রাখেন।

হাজার ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার জন্য যুক্তফ্রন্ট গড়ে ওঠে। মহিলারা বিপুল সংখ্যায় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন এবং প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ভীত নড়বড়ে করে দিতে তাঁরা ছড়িয়ে পড়েন শহর বন্দর ও গ্রামের সর্বত্র। যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ১৪ জন মহিলা প্রাদেশিক আইন পরিষদে নির্বাচিত হন। এদের মধ্যে মহিলা মুসলিম সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিতদের কয়েকজন হচ্ছেন নূরজাহান মুরশিদ, দৌলাতুন্নেসা খাতুন, বদরুন্নেসা আহমেদ, আমেনা বেগম, সেলিনা বানু, রাজিয়া বানু, তফতুন্নেসা, মেহেরুন্নেসা খাতুন প্রমুখ। মহিলাদের এই নির্বাচনকে ঘিরে সেদিনের স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল অভূতপূর্ব।

১৯২৪ সালের ২২ মে অবিভক্ত বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্ভুক্ত লালগোলা থানার তারানগর গ্রামে শিক্ষিত, সচ্ছল ও সংস্কারমুক্ত, উদার সংস্কৃতিমনস্ক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ভাষাকন্যা নূরজাহান মুরশিদ। জন্মের পর নাম রাখা হয় নূরজাহান বেগ। বাবার নাম জানব আয়ুব হুসেইন বেগ আর মায়ের নাম বিবি ক্ষতিমুন্নেসা। আয়ুব হুসেইন বেগ ছিলেন ব্রিটিশ পুলিশ সার্ভিসের মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলার পুলিশ প্রধান। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল সময়ে নূরজাহানের বেড়ে উঠা।

রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভাঙা-গড়া, পাকিস্তান ও ভারতের ভাগ, মহান ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত। এরপর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ছয়দফা, মুক্তিযুদ্ধসহ পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্থান-পতনের দীর্ঘ সময়। এসবের এক উজ্জ্বল সাক্ষী হলেন ভাষাকন্যা নূরজাহান মুরশিদ।

জানব আয়ুব হুসেইন বেগ ও বিবি ক্ষতিমুন্নেসার ৭ কন্যার মাঝে ৪র্থ কন্যা ছিলেন নূরজাহান। পিতার কাছে প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। নিজ গ্রামেই প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করেন বরিশালে। ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন, কলকাতা থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

নূরজাহান মুরশিদ

বরিশাল সাইদুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে নূরজাহানের কর্মজীবন শুরু করলেও এরপর পরেই প্রথম মুসলিম মহিলা ঘোষিকা হিসাবে অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে কাজ করেন। পূর্ব পাকিস্তান গঠন হওয়ার পরও পাকিস্তান রেডিও-তে তার এই পেশা অব্যাহত থাকে। ধীরে ধীরে তিনি ঘোষক থেকে প্রোগ্রাম প্রযোজক পদে অধিষ্ঠিত হন। রেডিওর পেশাগত কারণে লায়লা সামাদ, কামাল লোহানী, শামসুল হুদা ও লায়লা আর্জুমান্দ বানুর মতো ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পান তিনি। রেডিওর চাকরির পরে তিনি বরিশালের সাইদুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হন। এরপর তিনি ঢাকার কামরুন্নেসা বিদ্যালয়, ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল ও হলি ক্রস কলেজের মত উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন।
ভাষাকন্যা নূরজাহান মুরশিদ সম্পর্কে শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্নেষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লিখেন,
“আমরা প্রত্যেকেই অনন্য, প্রত্যেক মানুষই একজন আরেকজন থেকে পৃথক। কারো সঙ্গে কারো মেলে না। কিন্তু নূরজাহান মুরশিদকে মাপব বা তাঁকে কোন মানদণ্ডে দাঁড় করাব, এ রকম মানুষ আমি তেমন একটা খুঁজে পাই না।

তিনি এ রকমই অসাধারণ ছিলেন। মুর্শিদাবাদের গ্রাম থেকে সব প্রতিক‚লতা ভঙ্গ করে বেরিয়ে এলেন; দেখি তিনি শিক্ষার জন্য বরিশাল যাচ্ছেন, বরিশাল থেকে কলকাতায় আসছেন, কলকাতা থেকে বরিশাল যাচ্ছেন এবং সেই যে ১৯৪৬-৪৭ সালের ভয়াবহ, নারকীয় দাঙ্গা, তার মধ্যে কাজ করেছেন মেয়েদের হোস্টেলের সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম, সেখানে তিনি অনড় ছিলেন এবং তিনি দৃষ্টান্ত ছিলেন। সারা জীবন তিনি মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা যে বৃহত্তর রাজনৈতিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, এটাও তাঁর কাজের মধ্যে আমরা দেখেছি।”
ডক্টরস ক্লাবের মঞ্চে, শরৎচন্দ্রের ‘বিজয়িনী’ নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করলেন, যেখানে মুনীর চৌধুরীও অভিনয় করেছিলেন। পরিবেশটা আজকের দিনে আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারি না। তখন আমাদের মা-খালারা বাইরে যেতেন ঘোড়ার গাড়িতে, শাড়ি দিয়ে গাড়ি ঘেরাও করে যেতেন। সেই ঢাকায়, একজন মহিলা, প্রকাশ্যে, মঞ্চে, নারীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, তা-ও পুরুষের সঙ্গে, এটা অকল্পনীয়! সাংস্কৃতিক জীবন তখন এ রকমই ছিল যে ছেলেরা মেয়ে সেজে অভিনয় করত। নূরজাহান মুরশিদের সাহস, সাংস্কৃতিক সাহস ও দৃঢ়তা দেখা গেল, তিনি অভিনয় করেছেন। তারপর অন্য নাটকেও অভিনয় করলেন।”

১৯৪৮ সালে শিক্ষাবিদ, ক‚টনীতিক, সমাজচিন্তক খান সারওয়ার মুরশিদ এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন নূরজাহান মুরশিদ। বিয়ের আগে নূরজাহান বেগ নাম থাকলেও বিয়ের পর নামের সাথে বেগ এর পরিবর্তে মুরশিদ নামে পরিচিত হন তিনি। আগে থেকেই রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও বিয়ের পর মূলতো তাঁর শ্বশুর রাজনীতিবিদ আলী আহমেদ খানের অনুপ্রেরণায় তিনি রাজনীতির সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত হন। এই মুরশিদ দম্পতির চার সন্তান।

“পাকিস্তানের বৈরী সময়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য যাঁরা দেশের রাজনীতি, স্বাধীনতা, বাঙালি সংস্কৃতি নিয়ে ভাবতেন, নানাভাবে যুক্ত থাকতেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ। স্বাধীনতার পরেও দেশের শিক্ষা–সংস্কৃতির বিকাশ এবং রাজনৈতিক ক্রান্তিলগ্নে উত্তরণে পথে অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছেন তিনি। সমাজ–সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন তাঁর সহধর্মিণী নূরজাহান মুরশিদও।”
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিক্ষক ও সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম এক আলোচনায় নূরজাহান মুরশিদকে নিয়ে বলেন,
“পারিবারিক পরিসরে নূরজাহান মুরশিদকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। তিনি আমার মায়ের একমাত্র মামা প্রবাদপ্রতিম অধ্যাপক ড. খান সরওয়ার মুরশিদের জীবনসঙ্গী। সেই সূত্রে সম্পর্কে তিনি আমার নানি হন। পাকিস্তান-উত্তর সময়ে যে নারীরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে নিজেদের মেধা ও মননের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষর রেখেছিলেন নূরজাহান মুরশিদ নিঃসন্দেহে তাদের অন্যতম।অসংখ্য মানুষের মতো আমার জীবনেও নূরজাহান মুরশিদ অন্যতম এক প্রেরণার নাম। জীবনের নানা উত্থান-পতনে আজও কাজের ঘরে পড়ার টেবিলের সামনে চশমা চোখে নূরজাহান মুরশিদের ব্যক্তিত্বময় সৌম্য চেহারাটাই আমার চোখে ভেসে ওঠে। তার কর্মমুখর জীবন, নান্দনিক আর সাহসী বোধের মতো এ ছবিটিও আমার চোখে অ¤øান-অমলিন।”

১৯৫০ সালের শুরুর দিকে নূরজাহান মুরশিদের রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কথাই বেশি শুনা যায়।

জানা যায় ১৯৫৪ সালে অসা¤প্রদায়িক, সংস্কৃতিমনস্ক, উদার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নূরজাহান মুরশিদ মূলধারার রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার কথা। অন্যদিকে নূরজাহান মুরশিদ স্মারক গ্রন্থের ভূমিকায় ১৯৫৪ সালকে যদিও তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে তার পদচারণা ছিল দেশভাগের আগ থেকেই। ১৯৪৭ সালে যখন দ্বিজাতিতত্তে¡র ভিত্তিতে দেশভাগ হচ্ছে, তখন তার বয়স ২৩। ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরেই আত্মপ্রকাশ করেছিল গণতান্ত্রিক যুব লীগ, যেখানে কমিউনিস্ট, ফরোয়ার্ড বøক, আরএসপি, জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও মুসলিম লীগের প্রগতিশীল তরুণকর্মীরা অংশ নিয়েছিলেন। তখন থেকেই মুসলিম লীগে প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল দুটো ধারার রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। নূরজাহান মুরশিদ তখন কলকাতায় থাকতেন। সেখানেই তিনি সংযোগ গড়ে তুলেছিলেন মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশটির সঙ্গে, যার নেতৃত্বে ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম।

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন নূরজাহান মুরশিদ। সে সময় জয়ী হওয়া ২ জন নারীর মাঝে তিনি একজন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। পূর্ব বাংলার আইন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আইন পরিষদ সচিব (পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি) হিসেবে কাজ করেন তিনি। আইন পরিষদের একজন নারী সদস্য হিসেবে বিভিন্ন আইন প্রণয়নে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সাধারণ আসনে কোনো মহিলাই মনোনয়ন পাননি। জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ৭টি আসনে আওয়ামী লীগের ৭ জন নির্বাচিত হন। তাদের একজন বেগম নূরজাহান মুরশিদ। ১৯৬৯-৭১ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

নূরজাহান মুরশিদ একমাত্র মহিলা যার বিরুদ্ধে ইয়াহিয়া এই দণ্ডাদেশ জারি করেছিলেন।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নূরজাহান মুর্শিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ভারতীয় বিধানসভার উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এর ফলে তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে পাকিস্তানের সামরিক সরকার তাকে নিরুদ্দেশ অবস্থাতেই ১৪ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল।

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয় নূরজাহান মুরশিদকে। যুদ্ধোত্তর সেই বিপর্যস্ত সময়ে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ স্বাধীন দেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান করে সরকার গঠন করে। এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন নূরজাহান মুরশিদ। ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ৩০০ জন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের ১৫ জনসহ মোট ৩১৫ জন সংসদ সদস্য নিয়ে প্রথম সংসদ যাত্রা শুরু করে। তবে সে যাত্রা বেশি এগুতে পারেনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং বাংলাদেশের চার জাতীয় নেতা, তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এইচ এম কামরুজ্জামানকে জেলখানায় হত্যা করার পর তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেন।

নূরজাহান মুর্শিদ বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কাজের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থেকে আজীবন কাজ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ মহিলা সমিতির প্রথম সভাপতি ছিলেন। আজিমপুর লেডিস ক্লাব ও অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি বারডেম এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, উন্মেষকালে আইন ও সালিশ কেন্দ্র এর একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্ত্রীদের জন্য ক্লাব শ্রেয়সী প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালে নূরজাহান মুরশিদ এর দেহে ক্যানসার ধরা পড়ে। মাত্র একবছর পর ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, নারী আন্দোলনের অন্যতম বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ভাষাকন্যা বেগম নূরজাহান মুরশিদ। ঢাকার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। (তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট)