বিদ্যুৎ সরকার : কিছু কিছু স্বপ্ন আছে, বাস্তবায়িত হয়ে স্বপ্ন পূরণের আস্বদ এনে দেয় স্বপ্নদ্রষ্টার দু’চোখে ও হৃদয়ের মাঝে। আর বাকী সব স্বপ্ন স্বপ্ন হয়েই রয়ে যায় মনের মাঝে চিরকাল। তবুও মানুষ স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখে সুখ খুঁজে পায়। না থাকুক সে সকল স্বপ্নের সফল চিত্রায়ন। স্বপ্নবিলাসী মন স্বপ্ন খুঁজে ফিরে চিরদিন পাতাবাহারের বাহারী কারুকাজে। এমনতর স্বপ্ন স্বপ্ন খেলায় মন মেতে উঠে সুখময় স্বপ্নের সন্ধানে।

আবার এমন কিছু স্বপ্নের আবির্ভাব ঘটে মনের তাগিদেই সরবে নিরবে, সে স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নের প্রত্যাশায় উন্মুখ হয়ে থাকে সারাবেলা, প্রতিক্ষণ। পৃথিবীর সর্বত্রই এমন কিছু ব্যক্তিত্বের খোঁজ মিলে যারা নিজেদের স্বপ্ন নিজেরাই গড়ে তোলে নিজ উদ্যোগে, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাসের পলেস্তারায়। তিলে তিলে সে স্বপ্নকে লতায় পাতায় ফুলে-ফলে শোভিত করতে থাকে নিজের সবটুকু ভাললাগা ও ভালোবাসার পরশ দিয়ে। আর অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে কবে সে স্বপ্ন মূর্ত হয়ে ভেসে উঠবে আসমানী রঙ্গের চোখের পর্দায়। বীজতলার স্বপ্ন বড় হয় নিঃশব্দে একাকী। এক দক্ষ তীরন্দাজ যেমন দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে অপেক্ষমান থাকে অব্যর্থ লক্ষ্য ভেদের আশায়। তেমনি, স্থির থাকে এ সকল স্বপ্নচারীরা তাদের সেই স্বপ্নপূরণের আশায়। এটাই যেন তাদের নিজ নিজ পৃথিবী। সেই পৃথিবী জয় করার শুভক্ষণটি একদিন সত্যি সত্যিই চলে আসে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে শিরোনাম হয়ে উঠে গণমাধ্যমের সকল শাখায়। তেমনি খবরের শিরোনাম হয়ে স¤প্রতি আবির্ভূত হলো ওয়ালেন্ডা নামে এক আমেরিকার নাগরিক। পুরো নাম নিক ওয়ালেন্ডা। বয়স ৩৩। যে এতোদিন সযতনে লালন করে আসছিল একটি স্বপ্ন। সে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে জয় করে নিল বরমাল্য। কী এক দুঃসাহসীক শিহরণ জাগানো খবরের শিরোনাম হয়ে উঠলেন ওয়ালেন্ডা। ঘটনা ঘটানোর পূর্বে বিশ্বজুড়ে রেডিও, টেলিভিশন ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমগুলো সরব ছিল এ অবিশ্বাস্য ঘটনার ঘটার আগাম সংবাদ দিয়ে। নায়েগ্রার দু-পাড়ের সকল হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউস অনেক আগেই বুক্ড হয়ে গেছে চড়া দামে, কার পাকিং সেও তিনগুন-চারগুন দাম। তাও যদি ভাগ্যগুনে পাওয়া যায়। টরন্টো থেকে হাজার হাজার মানুষ চলে গেছে, স্পেশাল ট্রেন, বাস কিংবা নিজস্ব বাহনে।

২০১২ সালে ১৫ জুন রাত ৯-৩০ মিঃ (টরন্টো সময়) পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের কোটি কোটি দর্শক টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখেছিল এ দৃশ্যটি অবলোকন করার জন্যে। আর নায়েগ্রার দু-পাড়ে লাখো জনতার নির্লিপ্ত চোখ ওয়ালেন্ডার দিকে, কেমন করে ৫ সেঃ মিঃ ব্যাসের তারের উপর দিয়ে ৫৫০ মিটার হেঁটে নায়েগ্রার সবচেয়ে কঠিনতম, দুর্গম স্থানটি দিয়ে পাড়ি জমায়! এবং সত্যি সত্যি সে কাজটি কতো সাহসিকাতার সাথে সম্পন্ন করে যেতে পারলো তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। ওয়ালেন্ডা যখন অনেক ছোট, তখন থেকেই সে স্বপ্ন দেখে আসছিল এ দুঃসাহসিক অভিযানটি করার। তার এ লালিত স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত হলো। আর, সমস্ত পৃথিবীর মানুষ অবাক হয়ে দেখলো জীবনকে বাজি রেখে কেমন করে পৌঁছে গেল তার কাক্সিক্ষত লক্ষে। তার চোখে মুখে ছিল দীর্ঘস্থায়ী তৃপ্তি, মনোভ‚মিতে পৃথিবী জয়ের আন্দোলিত আলোড়ন। গভীর মুগ্ধতা নিয়ে আমরা চেয়ে থাকলাম সেই চলমান দৃশ্যের দিকেই।

বিদ্যুৎ সরকার : লেখক, আলোকচিত্রী, টরন্টো