অনলাইন ডেস্ক : সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠোমোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ নানা স্থাপনায় হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া। এতে করে বেশ ভয়ানক এক শীতকালের মুখোমুখি হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে লাখ লাখ ইউক্রেনীয়।

এই পরিস্থিতিতে শীত মোকাবিলায় ইউক্রেনকে আরও ১১০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা মঙ্গলবার জরুরি শীতকালীন সহায়তা হিসেবে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে অতিরিক্ত ১১০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মূলত ইউক্রেনীয় জ্বালানি গ্রিডের ওপর রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করার জন্য প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অনুরোধের জবাবে এই প্রতিশ্রুতি দিলো দেশগুলো।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, প্রায় ৭০টি দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা মঙ্গলবার প্যারিসে এক বৈঠকে জড়ো হয়। যার লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনীয়দের ‘এই শীত পার করতে’ সক্ষম করা।

এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের ক্ষতিগ্রস্ত জ্বালানি খাতের জন্য স্বল্পমেয়াদে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ইউরো আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ‘অবশ্যই এই সংখ্যাটি পরিমাণের দিক থেকে অনেক বেশি, তবে সম্ভাব্য ব্ল্যাকআউটের মূল্যের চেয়ে এই অর্থ বেশ কম।’

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনা বলেছেন, জ্বালানি খাতের জন্য সহায়তা অঙ্গীকারের মধ্যে ৪০০ মিলিয়ন ইউরোও রয়েছে।

জেলেনস্কি বলেছেন, রুশ হামলার পর জ্বালানি অবকাঠামো মেরামতের জন্য ইউক্রেনের খুচরা যন্ত্রাংশ, উচ্চ-ক্ষমতার জেনারেটর, অতিরিক্ত গ্যাসের পাশাপাশি বর্ধিত বিদ্যুতের আমদানি প্রয়োজন। তার ভাষায়, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে জেনারেটরগুলো সাঁজোয়া যান এবং বুলেট-প্রুফ জ্যাকেটের মতো প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।’

ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিগাল বলেছেন, রাশিয়ার হামলার কারণে ইউক্রেনের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ গ্রিড বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের অনেক এলাকায় দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকে।

এছাড়া রাশিয়ার ড্রোন হামলার পর গত সপ্তাহান্তে দক্ষিণ ওডেসায় ১৫ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিল। রাশিয়াকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের অন্ধকারে ফেলে দিতে চায় এবং এটি ব্যর্থ হবে। সারা বিশ্বে আমাদের অংশীদারদের ধন্যবাদ।’

সংবাদমাধ্যম বলছে, রাশিয়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। মূলত, ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে গত ৮ অক্টোবর থেকে ইউক্রেনের জ্বালানি নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামোগুলোতে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া।

এর মধ্যে গত মাসে অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের বৃহত্তম বন্দরনগরী সেভাস্তোপলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর বেশ কয়েক দফায় ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করে রাশিয়া কার্যত ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি চালায়।

মূলত সম্মুখসারির যুদ্ধে ব্যর্থতার পর রাশিয়ার সাম্প্রতিক এসব হামলা একটি বিস্তৃত কৌশলের অংশ এবং শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে ইউক্রেনে রুশ এই কৌশলের প্রভাব আরও তীব্রভাবে অনুভূত হতে শুরু করেছে।