অনলাইন ডেস্ক : সব বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যতই বাধা আসুক বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’ প্রতি বছর ২০ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে, তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সরকারের চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যেই এ বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নে আমরা অতীতে কখনও ব্যর্থ হইনি এবং ভবিষ্যতেও হবো না।’
সোমবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বাজেট বক্তৃতার বড় অংশজুড়ে প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রসঙ্গ তুলে তা মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে যে সংকটই আসুক না কেন আওয়ামী লীগ সরকার তা শক্তভাবে মোকাবিলা করবে। দেশের কোনও মানুষকে অভুক্ত থাকতে দেবে না।’
আওয়ামী লীগ কখনও হতাশায় ভোগে না উল্লেখ করে বাজেট বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সব সময় একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাই। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় কখনও কখনও সে পরিকল্পনা প্রয়োজন অনুযায়ী পুনর্নির্ধারণ করতে হয়। সেই কারণে আমরা বাজেট ঠিক রেখেছি। প্রণয়নও করেছি। আশা করি এটা আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কোভিড-১৯ এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ সব বিবেচনায় নিয়ে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সংশোধন করে ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। আশা করি, ২০২১ সালে বিশ্ব এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি কোভিড-১৯ প্রভাব থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসবে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে ধরে নিয়ে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।’
প্রবৃদ্ধির হার এই ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে অক্টোবর/নভেম্বরে করোনার টিকা আবিষ্কার, দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া, কর্মসৃজন ও ব্যক্তি আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি ও প্রণোদনার প্যাকেজের কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা মহামারি পূর্বাবস্থায় চলে আসা এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং প্রবাস আয়ে বর্তমান সংকট কেটে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানান সরকার প্রধান।
প্রণোদনা প্যাকেজে ১ কোটি ৬০ লাখ কর্ম সুরক্ষা ও সৃজন
বাজেট বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী তার পূর্বঘোষিত এক লাখ তিন হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠী যেন উপকৃত হয় সে লক্ষ্য নিয়েই পরিকল্পিতভাবে এবং যথাযথ সময়ের আগেই প্রতিটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্যাকেজসমূহ বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় ইতোমধ্যে পাঁচ কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে সুবিধা পেয়েছে। ১৯টি প্যাকেজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে ১২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ সুবিধা পাবে। এছাড়াও, প্রায় এক কোটি ৬০ লক্ষ কর্ম সুরক্ষা ও নতুন কর্মসৃজন হবে।’
করোনায় সারা বিশ্বে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই যাতে খাদ্য সংকট সৃষ্টি না হয় সে জন্য এক ইঞ্চি আবাদি জমিও ফেলে রাখা যাবে না। প্রত্যেকটি জমি যাতে আবাদ হয় তার জন্য আমরা বিশেষভাবে নজর দিচ্ছি, নির্দেশনা দিচ্ছি। ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে কোনও জমিও খালি রাখা না হয়। কারণ, বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ হতে পারে। এ সময় বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয় সেই উদ্যোগ আমরা হাতে নিয়েছি। কাজেই দেশবাসীকে আহ্বান জানাবো, যার সেখানে জমি আছে যে যা-ই পারেন উৎপাদন করেন। উৎপাদন বাড়ান। নিজের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত করুন। সরকার যা যা করার করে যাচ্ছে এবং করবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় কৃষি খামার যান্ত্রিকীকরণ, খাদ্যশস্য সংরক্ষণের স্থান বৃদ্ধি ও মান উন্নয়নের ব্যবস্থার কথা জানান। আগামী অর্থবছরে রাসায়নিক সারের বিক্রয়মূল্য অপরিবর্তিত রাখা হবে ও কৃষি প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বোরো মৌসুমে ধান কাটতে কৃষকদের সহায়তা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বোরো মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান কাটার লক্ষ্যে হারভেস্টার মেশিন ক্রয়ে আমরা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি প্রদান করেছি। ছাত্রলীগের কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছিলাম তারা যেন তাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে কৃষকদের ধান কাটায় সহায়তা করে। ছাত্রলীগের কর্মীরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বর্ষা মৌসুমের আগেই ধান কেটে ঘরে তুলতে সহায়তা করেছে। একইসঙ্গে যুবলীগ, কৃষক লীগ ও যুব-মহিলা লীগের কর্মীরাও স্ব-স্ব এলাকায় কৃষকদের ধান কাটায় সহায়তা করেছে। ফলে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ধানে তেমন একটা ক্ষতি করতে পারেনি।’
তিনি জানান, ‘প্রতি বছরের মতো এ বছরও ১ আষাঢ় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আমি আওয়ামী লীগের ৫৫ লাখ কর্মীর প্রত্যেককে একটি ফলদ, একটি ঔষধি এবং একটি বনজ বৃক্ষ অর্থাৎ তিনটি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়েছি। এর ফলে দেশে বৃক্ষ আচ্ছাদনের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সীমিত হয়ে আসায় খাদ্যশস্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। সংকটের শুরু থেকেই আমরা এ বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ ছিলাম।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আমরা খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আগামী অর্থবছরেও খাদ্যশস্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছি। চলতি বোরো মৌসুমে আমরা ১১ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আট লাখ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছি, যা গত বোরো মৌসুমের তুলনায় দ্বিগুণ। আমাদের খাদ্য চাহিদা তিন কোটি ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে তিন কোটি ৯৯ লাখ মেট্রিক টন। আমাদের উৎপাদনও অব্যাহত থাকবে। কাজেই আমাদের অসুবিধা হবে না।’
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধি
তিনি জানান, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় নিম্ন আয় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত মহিলা ভাতা এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীর সংখ্যা ১১ লাখ পাঁচ হাজার জনে বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি ‘পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম’ শুরু করেন যা বর্তমানে দেশের সব জেলায় প্রত্যেক উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি জানান, গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল করা এবং গ্রামে বসবাসরত দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় মোট উপকারভোগীর সংখ্যা হলো ১২ কোটি ৩৩ লাখ ৫৫ হাজার জন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে আগামী অর্থবছরে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা মোট বাজেট বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং জিডিপি’র ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
করোনায় দেড় কোটির বেশি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা
করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট দুর্যোগে দেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে মানবিক সহায়তা হিসেবে আমরা বিস্তৃত পরিসরে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছি, যার আওতায় এ পর্যন্ত আমরা সারাদেশে দেড় কোটির বেশি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। সারা দেশে এক কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার পরিবারের মাঝে এক লাখ ৮৪ হাজার ১২২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। নগদ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি প্রায় ১২৩ কোটি টাকা; এতে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা ৯৫ লাখ ৭৯ হাজার। শিশুখাদ্য সহায়ক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছি ২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং এতে সাত লাখ ৭৭ হাজার ৫২৫টি পরিবার উপকৃত হয়েছে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময়ে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকায় এবং দ্রুত ত্রাণ তৎপরতা শুরু করতে পারায় আমরা তা সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি।’
উন্নয়ন
এবারের বাজেটে শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমের গুনগত মান উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আগামী অর্থবছরের মধ্যে দেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় চলে আসবে বলে তিনি জানান। ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও চাহিদা মেটাতে ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক/মহাসড়কগুলোকে পর্যায়ক্রমে চার লেনে উন্নীতকরণ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন, দেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এ সব নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে তা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির জন্য ব্যাপক সুফল বয়ে আনতে সক্ষম হবে।’
দুর্নীতি করলে কাউছে ছাড় নয়
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে, এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং আমাদের অর্জনসমূহ সমুন্নত রাখতে সরকার দুর্নীতিবিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখবে।’
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বেগবান করার জন্যে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনা ও ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে উৎকৃষ্ট অবস্থান অর্জন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছি।’
ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বৃদ্ধি মুজিববর্ষের উপহার
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবং মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাগণের করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বৃদ্ধি এবং করহার কিছুটা হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও করপোরেট ট্যাক্সের হার দুই দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে নিম্ন-আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য আসবে এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।
বাজেট সহায়তা উন্নয়ন সহযোগীদের ১৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা প্রদান
করোনাভাইরাস জনিত অর্থনৈতিক অভিঘাত হতে উত্তরণে সরকারের ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজকে অত্যন্ত কার্যকর ও সময়োপযোগী উল্লেখ করে উন্নয়ন সহযোগীরা তা বাস্তবায়নে দ্রুত সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়ন সহযোগীরা ইতোমধ্যে পাঁচ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরমধ্যে ১৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা সরকারি খাতে জমা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর তার মধ্যেই আমরা প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ এর মত বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলা করছি। আম্পানের মতো ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছি। হয়তো আগামীতে বন্যা আসবে, সেটাও মোকাবিলা করবো। সেই প্রস্তুতিও আমাদের রয়েছে।’
যতই ঝড়ঝঞ্ঝা, দুর্যোগ হোক না কেন, মনের সাহস রেখে সুষ্ঠু কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলে সফলতা অর্জন করা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে আমরা সফলভাবে এ মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে উঠে উন্নয়নের অভিযাত্রায় পুনরায় শামিল হবো। কারণ, বৈশ্বিক মানদণ্ডে আমাদের রয়েছে শক্তিশালী আর্থ-সামাজিক অবস্থান। গত ২ মে, ২০২০ দ্যা ইকোনমিস্ট একটি গবেষণা প্রতিবেদনে চারটি মানদণ্ডে সবল অর্থনীতির ৬৬টি দেশের যে তালিকা করেছে; সেখানে বাংলাদেশ শক্তিশালী নবম অবস্থানে রয়েছে। করোনাভাইরাসকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করে এবং আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পেশকৃত জনবান্ধব, উন্নয়নমুখী ও সুষম এই বাজেটের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাবো।’