সোনা কান্তি বড়ুয়া : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কোরআন অবমাননার অভিযোগে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুতে কয়েকশ বছরের প্রাচীন বৌদ্ধবিহারসহ ১২টি বিহার ও ২৬টি বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার ১০ বছরেও ১৮টি মামলার একটি মামলার ও বিচার কাজ শেষ না হওয়ায় মানববন্ধনে বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, যারা সা¤প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিল, তারা দুর্বৃত্ত। আমরা তাদের শাস্তি চাই। “আজকের বকওয়াস রাজনীতির কারনে মুসলমান না হলে কি বাংলাদেশের আদর্শবান নাগরিক হওয়া যায় না? ধর্মের নামে অত্যাচার ও হিন্দু বৌদ্ধ জনপদে মৌলবাদী তান্ডব দাহন কেন? ইতিহাস কিন্তু বড় নির্মম! জামাত মৌলবাদীরা মুসলিম হয়ে সে নিজ ধর্ম নিয়ে এতো ধোকা বাজির সত্য কখনো চাপা থাকে না! জনগণের ক্ষমতায়নের গণতন্ত্র বাস্তবে মুসলমান ধর্মান্ধ শাসকশ্রেণির কর্তৃত্ববাদে রূপ নিয়েছে। সমাজতন্ত্রকে মুক্তবাজারি পুঁজিবাদী জোয়ারে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ধর্ম অবমাননার অভিশপ্ত রাজনীতিতে ধর্মান্ধগণের ফেসবুকে ভুয়া আইডি এবং নিজ ধর্ম নিয়ে এতো ধোকা বাজিতে ও বাংলাদেশের সংবিধান প্রজ্বলিত ধ্রুবতারা! সংবিধানানুসারে বাংলাদেশ ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র নহে। বর্তমান বাংলাদেশে জামায়াত ধর্মান্ধগণের ফেসবুকে ভুয়া আইডি স্ট্যাটাস দেওয়ার ইসলামীকরণ ও মৌলবাদী গোষ্ঠীদের জঘন্য চাতুরীর ইতিহাস লিখতে গেলে একটি মহাভারত লিখতে হয়। আমাদের বাংলাদেশ আমাদের ধর্ম! ‘“আমার বাপের ঘরে আগুন দিল কে রে, আমি খুঁজিয়ে বেড়াই তারে! ” অহিংসা মানুষের ধর্ম এবং হিংসা ধর্মান্ধগণ ও পশুর ধর্ম। ধর্মান্ধগণ হিন্দু ও বৌদ্ধগণকে নিশ্চিহ্ন করতে ধর্মান্ধগণের ফেসবুকে ভুয়া আইডি! বেঈমান ধর্মান্ধগণ উত্তম বড়ুয়ার ভুয়া আইডি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল, এবং সেই উত্তম কুমার বড়ুয়াকে ধর্মান্ধগণ হত্যা করেছে! ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে রামুতে মিটিং-মিছিল হয়েছিল। বাংলাদেশে অতীত ও ঐতিহ্যে হিন্দু বৌদ্ধ অবদান!
রামুর বৌদ্ধবিহারে হামলার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন (সমকাল, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২)। কক্সবাজারের রামু উপজেলার বৌদ্ধবিহারে হামলার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদের উদ্যোগে লালচিং-মৈত্রী বিহারের সামনে এ মানববন্ধন হয়। ২০১২ সালে ২৯ শে সেপ্টেম্বর ইসলাম ধর্মের নাম দিয়ে ইসলামি জঙ্গীরা রামু, উখিয়া ও পটিয়ায় বৌদ্ধ জনপদে আগুন দিয়ে তান্ডব দাহন করেছে। মানববন্ধন ছাড়াও বিহার প্রাঙ্গণে মহাসংঘদান, অষ্টপরিস্কার দান ও ধর্মসভা অনুষ্ঠিত হয়। রামুর পানেরছড়া বৌদ্ধবিহারের অধ্যক্ষ সুচারিতা মহাথেরোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন বিশ্বনাগরিক ড. ধর্মকীর্তি মহাথেরো। প্রধান বক্তা ছিলেন কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। বক্তব্য দেন রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদের সভাপতি কেতন বড়ূয়া, সাধারণ সম্পাদক বিপুল বড়ুয়া প্রমুখ! বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার ১০ বছরের অন্ধকারে ও সংবিধান প্রজ্বলিত ধ্রæবতারা!
আইনের শাসনে বাংলাদেশে কোরআন নিয়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই জামাতের হিংসায় উন্মত্ত সা¤প্রদায়িক রাজনীতি! ধর্ম অবমাননার অভিশপ্ত রাজনীতিতে বাংলাদেশে সংবিধান অন্ধকারে প্রজ্বলিত ধ্রুবতারা! বঙ্গবন্ধুর ভাষায়- ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের আখরে লেখা’ সংবিধান গণপরিষদে গ্রহণ হয়েছিল ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর। প্রতিবছর বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন দিনটিকে সংবিধান দিবস হিসেবে পালন করলেও সরকারের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। এবার সংবিধানের ৫০ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে, সুবর্ণজয়ন্তীতেও সংবিধান দিবস পালনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেই। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে এবার সংবিধানের ৫০ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে, জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের চেতনা জাগ্রত রাখতে এবং অনাগত প্রজন্মের কাছে সংবিধান লালন ও বিকাশে দিনটি গুরুত্ব দিয়ে পালন করা উচিত বলে মনে করেন বিশিষ্টজন। তাঁরা বলছেন, যে দলটির নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সংবিধান পেয়েছে, সেই দলটি টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায়। তবু সংবিধান দিবস রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না পাওয়াটা আক্ষেপের।
ইসলাম ধর্মের নাম দিয়েপাকিস্তানে জাতির নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বাংলাদেশের বাংলা ভাষা বন্ধ করে দিল! রামুর মুসলমান ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা ফেক আইডি বানিয়ে কোরাণের উপর পদচিহ্ন দিয়ে বৌদ্ধ উত্তম বড়ুয়ার নাম করার গভীর যড়যন্ত্র ও ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে রামুতে মিটিং-মিছিল হয়েছিল। ওই সময়ে ছবি-ভিডিওতে অনেক ব্যক্তিকে চেনা গেছে। তাদের ইন্ধনে হামলা হয়েছিল। কিন্তু মামলার পর চিহ্নিত অনেক ব্যক্তি বাদ পড়েছেন। পাশাপাশি নিরপরাধ অনেকে হয়রানির শিকার হয়েছেন। বৌদ্ধ ধর্ম শান্তির কথা বলে। আমরা শান্তি চাই। শান্তি ও স¤প্রীতির সঙ্গে এখানে বসবাস করতে চাই।’ বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার ১০ বছর ও বিচার দাবিতে সংবিধান প্রজ্বলিত ধ্রুবতারা!
জয় বাংলার বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায়নি সংবিধান দিবস! সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দলিল। আজ জমাটবাঁধা অন্ধকারে দেশ ছেয়ে গেছে। কর্তৃত্ববাদী শাসন চরম ফ্যাসিবাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সংঘাত, সহিংসতা বিস্তারে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির দিকে দেশ এগোচ্ছে। বিরোধীদের সভা-সমাবেশে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। ভোলা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে এর ভয়াবহ নজির আমরা দেখলাম। উন্নয়নের নামে যা হচ্ছে তা হলো পুঁজিবাদী শোষণমূলক ব্যবস্থায় মুষ্টিমেয় মানুষের লুণ্ঠনের উন্নয়ন। দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিদের লুটপাটের মৃগয়াক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এভাবে পুঁজিপতি শ্রেণির মধ্যে এদের একটা করপোরেট শক্তি তৈরি করে দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এ ধারায় শাসকদের গড় স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে গ্রুপ স্বার্থের সংঘাত তৈরি হচ্ছে। রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা বাড়ছে। আন্তঃদলীয় কোন্দল সংঘাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে, আমলাতন্ত্রের মধ্যে স্বার্থ-সংঘাত বাড়ছে!
আইনের শাসনে বাংলাদেশে কোরআন নিয়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই জামাতের হিংসায় উন্মত্ত সা¤প্রদায়িক রাজনীতি! জঙ্গিবাদ ছড়াতে জামায়াত ধর্মান্ধগণের ফেসবুকে ভুয়া আইডি শত শত হিন্দু ও বৌদ্ধদের বৌদ্ধ বিহার হিন্দু মন্দির ও বাড়িঘর ভস্মীভূত করে ইসলাম ধর্মের কোনো লাভ হয়নি। এতে আসলে এই সকল মানুষরূপী অমানুষদের লজ্জা বলিয়া কিছু নাই। বাংলাদেশে অতীত ও ঐতিহ্যে হিন্দু বৌদ্ধ অবদান এবং মুসলিম জঙ্গীরা বাঙালি’ শব্দের আবিষ্কারক ছিলেন না! বৌদ্ধ চর্যাপদের অপাপবিদ্ধ সিদ্ধপুরুষ বৌদ্ধ কবি ভুসুকু ‘বাঙালি’ শব্দের আবিষ্কারক ছিলেন।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক সমকালকে বলেন, ‘সংবিধান দিবসের স্বীকৃতি এবং সেটা অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পালন করা উচিত। ‘৭২-এর সংবিধান তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান। ১৯৯৯ সালে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির ৩৪ জনের মধ্যে জীবিত থাকা ১৯ জনকে আমরা সম্মাননা জানিয়ে বড় অনুষ্ঠান করেছিলাম। গুরুত্বপূর্ণ এই দলিলটি তৈরিতে যাঁরা অসামান্য অবদান রেখেছেন তাঁদেরও কোনো সরকার আলাদা সম্মান জানায়নি। এটা আমাদের জন্য পীড়াদায়ক। দুর্ভাগ্য, সব সরকারই মুখে আইনের শাসনের কথা বলে কিন্তু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সংবিধানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি তাঁরা বোঝেন না।’ সমকাল পত্রিকা অনেক প্রতিক‚লতার মধ্যেও সেই কাজটি করার চেষ্টা করছে; এ জন্য আবারও পত্রিকা সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যুক্তি, মুক্তচিন্তা ও আগামী- এটি এবার সমকালের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল প্রতিপাদ্য।
মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ ইসলাম ধর্ম কে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করায়, আমাদের হাজার বছরের বৌদ্ধ বাংলা পূর্ব পাকিস্তান হলো! গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে জামায়াত কোরান অবমাননার গুজব ছড়িয়ে রাষ্ট্রদ্রোহী কাজে লিপ্ত বাংলাদেশের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে বাংলাদেশ ধ্বংস করেছে! ১৯৭২ সালের ৪ই নভেম্বর বাংলাদেশ গণপরিষদ গৃহীত এবং ১৯৭২ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রথম খন্ডে প্রকাশিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সাথে হিন্দু বৌদ্ধ রাষ্ঠ্রদ্বয় (ভারতও ভুটান) পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে এবং পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশের বিজয় হয়।
বাঙালি সংস্কৃতির মূল কথা হলো অসা¤প্রদায়িকতা ও স¤প্রীতি। বর্তমান বাংলাদেশে হাজার বছর ধরে মুসলমান, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান, চাকমা, সাঁওতালসহ সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (INDEGENOUS) এক সঙ্গে স¤প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছে বলেই সব স্রোত এক ধারায় এসে মিলিত হয়ে বাঙালি সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। আমাদের মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর অভূতপূর্ব বিজয় অর্জনে এককভাবে যে উপাদানটি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে তা হলো বাঙালি সংস্কৃতির শক্তি।
এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক সমকালকে বলেন, ‘সংবিধান দিবসটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। শিগগির এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ গেল কয়েক বছর সরকারের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, তবে স্বীকৃতির উদ্যোগ দৃশ্যমান নয় কেন, উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটু অপেক্ষা করেন, দেখেন, আশা করি ইতিবাচক কিছু দেখতে পাবেন’।
জাতীয় দিবসগুলো নির্ধারণ করে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী তিন ভাগে ৮৫টি জাতীয় দিবস পালন হয়। ‘ক’ শ্রেণির দিবস ১৮টি, ‘খ’ শ্রেণির দিবস ৩৪টি এবং ‘গ’ শ্রেণির দিবস আছে ৩৩টি। সাধারণত ‘ক’ শ্রেণির দিবসগুলোতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী অংশ নেন। ‘খ’ ও ‘গ’ শ্রেণির দিবসগুলোতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান হয়।
সংবিধান প্রণয়ন কমিটির ৩৪ জনের মধ্যে চেয়ারম্যান ড. কামাল হোসেনসহ তিন সদস্য বেঁচে আছেন। অন্য দু’জন হলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। এদের তিনজনই সংবিধানে খসড়া তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অধ্যাপক আবু সাইয়িদ সমকালকে বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান রচনা করেও সেটি মানুষের কাছে গুরুত্ব দিয়ে পৌঁছানো যায়নি। এটা আমাদের জাতিগত অবমাননা।’ তিনি বলেন, ‘বহু দেশে সব স্তরের শিক্ষায় বিভিন্ন মাত্রায় সংবিধানকে জানার সুযোগ রাখা হয়। যাতে তরুণরা দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠার পাশাপাশি রাষ্ট্র গঠন, পরিচালনা ও রাষ্ট্রের নীতি-আদর্শ সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা পেতে পারে। তবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সেটা নেই।’
সংবিধান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট আরিফ খান বলেন, ‘ফরাসি বিপ্লব থেকে এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বের ৩সব সংবিধানের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, বিশ্বের অধিকাংশই সংবিধান গড়ে ১৭ বছরের বেশি টেকেনি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংবিধান ৫০ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের রচিত কোনো সংবিধানের ৫০ বছর টিকে থাকা বৈশ্বিকভাবেই একটি বিশাল ঘটনা।
১৯৭২ সালের সংবিধানকে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। সংবিধান দিবস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কিছু বিচ্যুতি সত্তে¡ও বাংলাদেশের সংবিধান বিশ্বের অনেক দেশের কাছে উদাহরণ। সংবিধান প্রণয়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা যে গুরুত্ব দিয়ে গেছেন তা প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে সংবিধানকে বেশি বেশি করে জানার-বোঝার ব্যবস্থা করতে হবে।’
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘পৃথিবীর আর কোনো দেশের সংবিধান অর্জন করতে এত রক্তের প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু সংবিধানকে সম্মান জানিয়ে একটি দিন পালন করা হয় না।’ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সংবিধান দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা উচিত।’
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন এভাবে অবহেলিত থাকা উচিত নয়।’ সংবিধান দিবসের বিষয়ে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকেও কোনো উদ্যোগ নেই বলে জানা গেছে। জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে পাশের দেশ ভারতে স্বাধীনতা দিবসের চেয়েও বেশি আড়ম্বর নিয়ে সংবিধান দিবস পালন করা হয়। ভারতে সংবিধান দিবস পালন হয় ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসেবে। সমকালের নয়াদিল্লি প্রতিনিধি গৌতম লাহিড়ী জানিয়েছেন, ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস হলেও আড়ম্বরের দিক থেকে প্রজাতন্ত্র দিবস বেশি জাঁকজমপূর্ণ হয়। এদিন রাজপথে তিন বাহিনীর সমন্বয়ে সুসজ্জিত কুচকাওয়াজ হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। এদিন ভারতের স্ব স্ব রাজ্য তাদের ঐতিহ্যবাহী বিষয়গুলো প্রদর্শন করে আমাদের স্বাধীনতারও ৫০ বছর আমরা পার করেছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা ছিল এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একটা যুক্তিবাদী সমাজ, মুক্তচিন্তার অবাধ পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বৈষম্যহীন আগামী নির্মাণ হবে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল, ‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণ উৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে।’ কিন্তু সে আশা দূরাশায় পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই শাসকরা বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দেশ পরিচালনা করে চলেছে। যার ফলাফলে এবং পরিণতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার নাম জপতে জপতে রাষ্ট্রকে ক্রমাগত সা¤প্রদায়িক দোষে দুষ্ট করা হয়েছে। স্বাধীন বিকাশের জাতীয় স্বার্থ চেতনাকে সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী শক্তির কাছে নতজানু করে ফেলা হয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের অঙ্গীকার সাম্যের বাণী বৈষম্যের বিশাল গহ্বরে পতিত। মানবিক মর্যাদা প্রাপ্তি দরিদ্র মানুষদের জন্য বিত্তবান-প্রভাবশালীদের দয়া-করুণার বিষয়ে পর্যবসিত হয়েছে। সামাজিক ন্যায় বিচার সমাজ থেকে উধাও হয়ে ক্ষমতাবানদের দৃশ্য-অদৃশ্য, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ বিধি নিয়মের যূপকাষ্ঠে বলি হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন।
গত ৫১ বছরের শাসন-শোষণে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তার ফলে বৈষম্য বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে। অভাব-অনটন, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা, সহিংসতা বহু জিনিস একটার পর একটা সামাজিক ব্যাধি হিসেবে ছড়িয়ে পড়ছে। বৈষম্য যত বাড়ে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, পারিবারিক সব ক্ষেত্রে ভারসাম্যগুলো তত নষ্ট হতে থাকে। সেগুলোর কিছু প্রত্যক্ষ ফলাফল থাকে, কিছু পরোক্ষ ফলাফল থাকে। প্রত্যক্ষ ফলাফল হলো, দারিদ্র্যের অভিঘাত। মানুষ তাঁদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারেন না।
সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারেন না, শ্রমজীবীরা যে মজুরি পান তা দিয়ে সংসার চালাতে পারেন না। পরোক্ষ প্রভাবে মানুষের মানবিক মূল্যবোধগুলো ধসে পড়তে থাকে। আত্মকেন্দ্রিকতা, সহিংসতা, নৈরাজ্য, বেপরোয়া মনোভাব বৃদ্ধি, স্বেচ্ছাচার, স্বৈরাচারী প্রবণতা ইত্যাদি মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মতো সমাজজীবনকে অন্ধকারে ছেয়ে ফেলে। একই সঙ্গে দেখা দেয় সা¤প্রদায়িক কুপমণ্ডুক মানসিকতা, যুক্তিহীনতা ও মুক্তচিন্তাকে রুদ্ধ করার পরিবেশ।
সাম্য, সমতার নীতি বর্জন করে চলছে রাজনীতি। শোষণ-দুর্নীতি আর বৈষম্যকে সীমাহীন মাত্রায় নিয়ে চলছে অর্থনীতি। সংস্কৃতি ক্ষেত্রে আত্মকেন্দ্রিকতা ও ভোগবাদকে চরমে জাগিয়ে চলছে অপসংস্কৃতির জোয়ার। তিন ধারার ত্রিমুখী আক্রমণে ও ব্যবচ্ছেদে শিক্ষা কাঠামোকে ক্ষতবিক্ষত করে চলছে শিক্ষাব্যবস্থা। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচার ধারাকে শিক্ষা থেকে অনুপস্থিত রাখা হচ্ছে এবং সার্টিফিকেট প্রদর্শনীকে শিক্ষার সাফল্য হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে। হেফাজতে ইসলামীর পরামর্শে পাঠ্যপুস্তকে প্রগতিশীল লেখক-সাহিত্যিকদের লেখা বাদ দিয়ে সা¤প্রদায়িক ধ্যান-ধারণা যুক্ত করা হয়েছে। শাসকদলের বয়ানেই আজ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচিত হচ্ছে। সেখানে একক নেতৃত্ব আছে কিন্তু জনগণ নেই। ভিন্ন মতামত আসলে তাকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হচ্ছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্যকে পুরোপুরি বাজারি পণ্যে পরিণত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বলে কিছু আর অবশিষ্ট নেই। করোনা দুর্যোগ তা পরিস্কারভাবে দেখতে সহায়তা করেছে। দরিদ্র মানুষ রোগে মরার আগে আর্থিকভাবে মরে, আপন পরিজনদের সহায়-সম্বলহীন করে যায়। ধনীদের জন্য চিত্র ভিন্ন। করোনাকালের ঘরবন্দি অবস্থা বাদ দিলে বিত্তবানরা সাধারণত স্বাস্থ্য উদ্ধারে বিদেশে পাড়ি জমান। ধনীদের উন্নয়নকে দেশের উন্নয়ন হিসেবে দেখাতে গিয়ে লুণ্ঠন ও দুর্নীতিকে দেশময় বিস্তৃত করা হয়েছে। ফলে রাজনীতি হয়েছে দুর্বৃত্তায়িত আর রাজনৈতিক ক্ষমতা স্তরে স্তরে দুর্বৃত্তদের হাতে চলে গিয়েছে। এটা করতে গিয়ে আইন, বিচার, শাসন, প্রশাসন, প্রথা-প্রতিষ্ঠান সবকিছুকে জনস্বার্থের প্রশ্নে ভঙ্গুর ও অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে।
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি