অনলাইন ডেস্ক : পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সরাসরি সংঘাত হলে তা বিশ্বে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন তিনি।

পুতিন বলেছেন, যদি কোনোভাবে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সাথে ন্যাটোর সৈন্যদের সরাসরি সংঘাত অথবা সরাসরি যোগাযোগ হয়, তাহলে সেটি হবে অত্যন্ত বিপজ্জনক পদক্ষেপ; যা বিশ্বকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমি আশা করি যারা এ ধরনের কথা বলছেন, তারা কীভাবে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকা যায় সেবিষয়ে বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তাভাবনা করবেন।

এর আগে, গত মাসে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল দখলে নেওয়ার পর রুশ ভূখণ্ড রক্ষায় প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবেন বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখলে নেওয়াকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে চলতি সপ্তাহে এর নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।

হোয়াইট হাউসের বিবৃতি অনুযায়ী, মঙ্গলবার শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার গুরুতর পরিণতি ডেকে আনবে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বক্তৃতায় ইউক্রেনে যুদ্ধের উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্কবার্তায় রাশিয়ার পারমাণবিক তর্জন-গর্জনের ব্যাপারে কথা বলেছেন।

ডেমোক্র্যাট সিনেটরদের প্রচার কমিটির এক তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, পুতিন যখন কৌশলগত পারমাণবিক বা জৈবিক বা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে কথা বলছেন, তখন তিনি রসিকতা করছেন না। কারণ তার সামরিক বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হোঁচট খাচ্ছে।

তবে বাইডেন বলেছেন, আমি মনে করি না যে, সহজে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার অথবা পারমাণবিক যুদ্ধে জড়ানোর করার সক্ষমতা রাশিয়ার আছে।

অন্যদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধে ‘রিজার্ভ সেনা’ হিসেবে দেশের সক্ষম নাগরিকদের বাধ্যতামূলক যোগদানের যে প্রক্রিয়া রাশিয়ায় চলছে, তা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে নিশ্চিত করেছেন পুতিন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জন্য তিনি অনুতপ্ত নন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘ইউক্রেনকে ধ্বংস করে দেওয়ার কোনো ইচ্ছে বা পরিকল্পনা আমাদের নেই। একটি দেশ ধ্বংস হয়ে যাক, তা আমরা কখনও চাইব না। এ কারণে সেখানে আর বড় কোনো হামলা হবে না।’

‘সেই সঙ্গে আমি আরও একটি তথ্য দিতে চাই, তা হলো—সামরিক অভিযানে রিজার্ভ সেনা হিসেবে রুশ নাগরিকদের নিয়োগের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।’

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর রাশিয়ার প্রধান বৈরীপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের রাজনৈতিক বলয়ে ঢুকতে দেন-দরবার করছিল ইউক্রেন। রাশিয়ার কাছে ক্রিমিয়া হারানোর পর এই তৎপরতা আরও বৃদ্ধি পায়। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে ইউক্রেন।

ইউক্রেনের এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয় মস্কো এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানায় তারা। কিন্তু কিয়েভ তাতে কান দেয়নি।

প্রায় চার বছর এই ইস্যুতে ‍দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলার পর অবশেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনীকে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন ভ্লাদিমির পুতিন।

গত ৯ মাসের অভিযানে ইউক্রেনের চার প্রদেশ খেরসন, ঝাপোরিজ্জিয়া, দনেৎস্ক ও লুহানস্ক দখল করে নিজের সীমানভুক্ত করেছে রাশিয়া। হাজার হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন এ অভিযানে। ইউক্রেনের ছোট-বড় প্রায় সব শহর গোলার আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স, এএনআই।