নাদিরা তাবাস্সুম : সাফিদ মায়ের স্বাভাবিক সুস্থতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিয়ম মতো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া, ঔষধ খাওয়ানো, সময় মতো খাবার খাওয়ানো ইত্যাদি। কিন্তু প্রতিনিয়ত চলতে ফিরতে আশেপাশের প্রকৃত সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষদের মাঝে যখন অস্বাভাবিক ও অনৈতিক কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয় তখন মনে প্রশ্ন জাগে এই বলে যে, তারা আদৌ কি স্বাভাবিক?
যে কাজগুলো ধর্ম, নীতি ও সমাজ বহির্ভুত এবং যা দেখে ও শুনে অন্যেরা নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে সেই কাজগুলোকেই সাধারণত অস্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। এইতো সেদিন প্রতিবেশী বশির সাহেবের মেয়ে রেবার বান্ধবী হঠাৎ জানা গেলো আত্মহত্যা করেছে। কারণ হিসেবে জানা যায় যে, ঘরে সুন্দরী ও শিক্ষিত স্ত্রী এবং ফুটফুটে দুটো ছেলেমেয়ে থাকা সত্তে¡ও তার স্বামী অফিসের সহকর্মীর সংগে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। মেয়েটি স্বামীকে তা থেকে ফিরিয়ে আনার অনেক চেষ্টা করেছে। পারিবারিক ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি শেষ পর্যন্ত অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে।
কয়েক মাস আগে সাফিদের বন্ধু শিহাবের স্ত্রী তিনটে ছেলেমেয়ে রেখে তার পুরোনো প্রেমিকের সংগে পালিয়ে গেলো। শিহাব অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী একটা মানুষ। সততার সাথে চাকরী করে। তারপরেও সংসারে কোন অভাব অনটন ছিলো না। স্ত্রীকে অনেক বার বাধা দিয়েছে বন্ধুদের সাথে বেশি মেলামেশা না করার জন্য। স্ত্রী কোন বাধা শোনেনি।
উচ্চাভিলাসী এবং উছশৃংখল জীবন যাপনে অভ্যস্ত থাকায় শিহাবের সততা ও নীতি বোধ তার কাছ মূল্যহীন ছিলো। অবশেষে স্ত্রীকে আর নিজের কাছে রাখতে পারেনি। শিহাবের স্ত্রী তার সাথে শুধু নয় ,তার ছেলেমেয়েদের সাথেও প্রতারণা করেছে; এগুলোকে কি সুস্থ ও স্বাভাবিক বলা যায়? এমনই যারা দিনের পর দিন মানুষ ঠকিয়ে ব্যবসা করছে, খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে লাভবান হচ্ছে, প্রতারণা করে চলেছে নিরীহ সাধারন মানুষদের; ক্ষমতা ও ধন ঐশর্য্যের দম্ভে দুর্বল মানুষদের নিপীড়ন করে চলেছে; তুচ্ছ বিষয়ে কারনে অকারণে মানুষ হত্যা পর্যন্ত করছে। কখনও স্বাভাবিক মানুষগুলো যখন অস্বাভাবিক কাজে জড়িয়ে যায় তখনই আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ি। তাই আমরা বলে থাকি ‘মানুষের মন পরিবর্তনশীল’। কিন্তু দেখা যায় ,মানুষের মন যতই পরিবর্তনশীল হোক না কেন যারা সচেতন ও চিন্তাশীল তারা কখনই সমাজ, রীতিনীতি ও ধর্মবিরোধী কোন আচরণ করতে পারেন না- যদি করেন তখন তিনিও অস্বাভাবিক হয়ে যান। সাধারনভাবে মানুষ সচেতন ও অবচেতন অবস্থায় তার নিজের বিষয়ে, চারিপাশে ঘটে এমন সকল বিষয়ে, নীতিগতভাবে করণীয় বিষয়ে ও ধর্মীয় অনুভূতি বিষয়ে যা ভাবে তার সবই ভিতর থেকে আসে।
নিউরোসাইন্টিষ্ট-দের মতে মস্তিষ্কে এর উৎপত্তি এবং মস্তিষ্কের বিদ্যুতায়িত চুম্বক শক্তির কারণে মানুষ সচেতন ও চিন্তা করতে সক্ষম। তাহলে মানুষ সচেতন বলেই এ বিশ্ব, এ পৃথিবী এবং এই জীবন! শৈশব হতে বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত মানুষ তার চারপাশের প্রকৃতি, পরিবেশ ও অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে যে অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও জ্ঞান আহরণ করে তার ভিত্তিতে মস্তিষ্কে সচেতনতা তৈরী হয় কিন্তু প্রত্যেকের সচেতনতা যার যার বৈশিষ্ট্যে আলাদা। এবং যার যার সচেতনতা তাকে সেভাবেই গন্তব্যের দিকে নিয়ে যায়!