অনলাইন ডেস্ক : ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদের পদত্যাগের পর একই পথে হেঁটেছেন দেশটির শিশু ও পরিবারমন্ত্রী উইল কুইন্স এবং জুনিয়র পরিবহনমন্ত্রী লরা ট্রট। একের পর এক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ইতোমধ্যে ভাবমূর্তি সংকটের মুখে পড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ভবিষ্যৎকে আরও হুমকিতে ফেলেছে মন্ত্রীদের এই পদত্যাগ।

এখন প্রশ্ন উঠেছে এমন টালমাটাল ব্রিটিশ রাজনীতিতে যদি হাওয়া বদল ঘটে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন অথবা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, তাহলে কে হবেন তার স্থলাভিষিক্ত?

লিজ ট্রুস

তৃণমূলে কনজারভেটিভদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রুজ। কনজারভেটিভের নিজস্ব ওয়েবসাইটে পরিচালিত দলের সদস্যদের জরিপে বরাবরই জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন তিনি।

সাবধানি ট্রুসের নিজস্ব ভাবমূর্তি রয়েছে এবং গত বছর একটি ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছিলেন; যার সাথে ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের ১৯৮৬ সালে তোলা বিখ্যাত একটি ছবির মিল রয়েছে।

জনসনের প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম দুই বছর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী হিসাবে কাজ করেছিলেন ৪৬ বছর বয়সী ট্রুস। ব্রেক্সিটকে চ্যাম্পিয়ন করে তোলায় কাজ করেছিলেন তিনি। গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে ব্রিটেনের প্রধান আলোচক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন তিনি।

সোমবার ট্রুস বলেছেন, জনসনের প্রতি শতভাগ জনসমর্থন রয়েছে এবং তাকে সমর্থন জানাতে সহকর্মীদের অনুরোধ জানান তিনি।

জেরেমি হান্ট

৫৫ বছর বয়সী ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি কনজারভেটিভ নেতৃত্ব নির্বাচনে ২০১৯ সালে অংশ নিয়েছিলেন। সেই সময় তার অবস্থান ছিল বরিস জনসনের পরই। জনসনের প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় নেতৃত্ব নেওয়ার ব্যাপারে প্রস্তাব পেতে পারেন তিনি।

গত দুই বছরে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব বেশ ভালোভাবেই সামলিয়েছেন তিনি। এ সময় নিজের অতীত অভিজ্ঞতার ব্যবহারও করেছেন। এছাড়া দেশটির ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ সরকারে কাজ করার জন্য কলঙ্কের দাগও নিজের শরীরে লাগাননি তিনি।

চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উচ্চাশা এখনও একেবারে ছেড়ে দেননি বলে জানিয়েছিলেন। জনসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য গত মাসে আস্থা ভোটে ভোট দেবেন বলে জানান তিনি। যদিও সেই ভোটে অল্পের জন্য বেঁচে যান জনসন।

বেন ওয়ালেস

কনজারভেটিভ হোমের মতে, ইউক্রেন সংকট মোকাবিলার সুবাদে সম্প্রতি কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের কাছে সরকারের সবচেয়ে জনপ্রিয় সদস্য হয়ে উঠেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস (৫২)।

সাবেক এই সৈন্য নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, সাইপ্রাস এবং মধ্য আমেরিকাতেও কাজ করেছেন। ১৯৯২ সালে প্রেষণে পাঠানো হয় তাকে।

১৯৯৯ সালের মে মাসে স্কটল্যান্ডের বিতর্কিত সংসদের সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। পরে ২০০৫ সালে ওয়েস্টমিনিস্টার পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন তিনি।

ঋষি সুনাক 

গত বছর পর্যন্ত জনসনের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ভাবা হতো সদ্য পদত্যাগ করা ব্রিটিশ এই অর্থমন্ত্রীকে। করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালীন অর্থনীতি উদ্ধার প্যাকেজ ঘোষণা করে প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি। এই প্যাকেজে নতুন কর্মসংস্থান কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল; যা ব্যাপক বেকারত্ব ঠেকাতে সহায়তা করে। আর এতে ব্যয় হয় ৫১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তবে পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ব্যয়-নির্ভর সহায়তা না দেওয়ার জন্য সমালোচনার মুখোমুখি হন তিনি। এছাড়া তার ধনাঢ্য স্ত্রীর অনাবাসিক ট্যাক্স ফাঁকি এবং কোভিড-১৯ লকডাউনের বিধি লঙ্ঘনের দায়ে জনসনের পাশাপাশি তাকেও জরিমানা গুনতে হয়।

মঙ্গলবার পদত্যাগের পর তিনি বলেছেন, সরকার সঠিকভাবে, দক্ষতার সাথে এবং গুরুত্ব সহকারে পরিচালিত হবে; জনগণ এমনই আশা করে।

নাদিম জাহাবি

গত বছর ব্রিটেনে দ্রুততার সাথে করোনাভাইরাসের টিকাদানের কারণে দেশটির লোকজনের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নাদিম জাহবি।

জাহাবির জীবনের গল্প অত্যন্ত করুণ। ইরাক থেকে শিশু শরণার্থী হিসেবে ব্রিটেনে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। পরে কনজারভেটিভ রাজনীতিতে নাম লেখান তিনি। তবে অন্যান্য রক্ষণশীল প্রতিযোগীদের চেয়ে কিছুটা আলাদা তিনি।

গত সপ্তাহে জাহাবি বলেছেন, কোনও এক পর্যায়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ আসতে পারে তার।

পেনি মর্ডান্ট

জনসন যখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, তখন নেতৃত্ব নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হান্টের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন পেনি। যে কারণে ক্ষমতায় আসার পরপরই তাকে বরখাস্ত করেন বরিস জনসন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন পেনি। অধুনা-লুপ্ত রিয়েলিটি টিভি ডাইভিং শোতে অংশ নিয়ে জাতীয় শিরোনামও হয়েছিলেন তিনি।

বর্তমানে দেশটির জুনিয়র বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পেনি মর্ডান্ট। সরকারি দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের লকডাউন বিধি লঙ্ঘনকে ‌‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।

পেনি বলেছেন, ভোটাররা সরকারের ‘পেশাদারিত্ব ও যোগ্যতা’ দেখতে চান। তার আগে জনসনের প্রতি নিজের আনুগত্যও প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

সূত্র: রয়টার্স।