আমিন আহমেদ : চলতি বছরের শেষ দিকে মাঠে গড়াবে কাতার বিশ্বকাপ। তার আগেই ফিফা জানিয়ে দিল পরের বিশ্বকাপ মানে ২০২৬ বিশ্বকাপের আয়োজক তিন দেশ। খেলা হবে মোট ১৬টি শহরে। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর আয়োজক শহরগুলোর নাম ঘোষণা করেছে ফিফা। যার মধ্যে রয়েছে কানাডার দুটি আয়োজক শহর টরন্টো ও ভ্যাঙ্কুভার। কানাডার এ দুটি শহরকে আয়োজক হিসেবে বেছে নেয়ায় এখানকার ফুটবল প্রেমিরা বিশ্ব মাতানো সব খেলোয়ারের জাদুকরী প্রদর্শন দেখার সুযোগ পাবেন সরাসরি।
টরন্টো ও ভ্যাঙ্কুভার ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি মেট্রো অঞ্চলকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে – আটলান্টা, বোস্টন, ডালাস, হিউস্টন, কানসাস সিটি, লস অ্যাঞ্জেলস, মিয়ামি, নিউ ইয়র্ক/নিউ জার্সি, ফিলাডেলফিয়া, সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়া ও সিয়াটল। আর মেক্সিকো থেকে তালিকায় রয়েছে গুয়াদালাহারা, মেক্সিকো সিটি ও মন্টেরি।
তালিকায় এডমন্টনের নাম থাকলেও শেষ পর্যন্ত শহরটি নির্বাচিত হয়নি।
গ্লোবাল এ ইভেন্টের তিন পার্টনার কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর মোট ২২টি শহর আয়োজক হওয়ার দৌড়ে অংশ নিয়েছিল।
মেক্সিকো থেকে তালিকায় থাকা তিনটি শহরই নির্বাচিত হয়েছে, যেখানে মনোনয়ন দৌড়ে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬টি শহরের মধ্যে ১১টি শহরকে নির্বাচিত করা হয়েছে?
কোয়ার্টার-ফাইনালের সব ম্যাচসহ বিশ্বকাপের বেশিরভাগ খেলার আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র। টরন্টো এবং ভ্যাঙ্কুভারকে মোট দশটি খেলা ভাগাভাগি করে নিতে হবে।
প্রয়োজনীয় সংস্কার :
টরন্টোর মেয়র জন টরি ২০১৮ সালের কুইন সিটি বিডকে (প্রস্তাবিত মূল্য) উৎসাহের সাথে সমর্থন করেছেন। টরন্টোর বিএমও স্টেডিয়াম পুরুষ ও মহিলা জাতীয় দলের জন্য অসংখ্য প্রীতি ম্যাচ এবং ২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের আয়োজন করেছে।
ভ্যাঙ্কুভার ইতিমধ্যেই ২০১৫ মহিলা বিশ্বকাপ ফুটবলের ৯টি খেলা আয়োজন করেছিল, যা ৫০ হাজারেরও বেশি ফুটবল ভক্ত উপভোগ করেছিল।
ফিফার প্রয়োজনীয়তা মেনে চলার জন্য ভ্যাঙ্কুভারের বিসি প্লেস স্টেডিয়ামের কৃত্রিম টার্ফকে প্রাকৃতিক টার্ফ দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। টরন্টোর বিএমও স্টেডিয়ামে ফিফার চাহিদা অনুযায়ী অস্থায়ী ব্লিচার (বেঞ্চের সারি) যুক্ত করতে হবে, যাতে এই মাঠে ৪০ হাজার দর্শকের স্থান সঙ্কুলান হয়। যদিও এ স্টেডিয়ামের সাধারণ ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৩০ হাজার।
মন্ট্রিল শহরও আয়োজকের তালিকায় তার নাম দিতে চেয়েছিলো, কিন্তু কুইবেক সরকারের কাছ থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের কারণে তহবিলের অভাবে শহরটি গত বছর নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। মন্ট্রিলের প্রত্যাহার ভ্যাঙ্কুভারকে আয়োজক হওয়ার জন্য প্রার্থীতার তালিকায় পুনরায় নাম দিতে উৎসাহিত করেছে। ভ্যাঙ্কুভার ২০১৮ সালে সম্ভাব্য আয়োজক শহরের তালিকা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।
ভ্যাঙ্কুভার এবং টরন্টো উদযাপন : ভ্যাঙ্কুভারের বিসি প্রাদেশিক পর্যটন ও ক্রীড়া মন্ত্রী মেলানি মার্ক ফিফা কর্তৃক নির্বাচিতদের নাম ঘোষণার সময় অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা এবং আদিবাসী নেতাদের সাথে বিসি প্লেস স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন। ভ্যাঙ্কুভার আয়োজক শহর হিসাবে নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথে তিনি উল্লাসে ফেটে পড়েন। একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রী বলেছেন, তিনি এই সংবাদে আনন্দিত। তিনি বিশ্বাস করেন যে, এর ফলে প্রদেশটির পর্যটন শিল্প উপকৃত হবে। তিনি আরো বলেন, এই ইভেন্টটি সারা বিশ্বের দর্শকদের আকৃষ্ট করবে এবং আমরা জানি যে দর্শকরা যখন প্রথমবার ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে আসে, তারা বারবার ফিরে আসে, এবং ব্রিটিশ কলম্বিয়াকে অন্যদের কাছে তুলে ধরে।
ভ্যাঙ্কুভারের মেয়র কেনেডি স্টুয়ার্ট একই কথা বলেছেন, তিনি এই শহরের মনোনয়ন পাওয়াকে এক প্রজন্মের সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, ফুটবল অনুরাগী এবং পর্যটন ক্ষেত্রে, উভয়ের জন্যই।
টরন্টো শহর বলেছে যে, তারা এর মধ্য দিয়ে লাভজনক অর্থনৈতিক ফল প্রত্যাশা করেছে, বিশেষ করে পর্যটন, আতিথেয়তা এবং বিনোদন শিল্পের জন্য। টরন্টোর মেয়র জন টরি বলেছেন, বিশ্বে এর চেয়ে বড় কোনো ক্রীড়া টুর্নামেন্ট নেই, এবং এটি বিশ্বকে স্বাগত জানানোর এবং আমাদের শহরকে আন্তর্জাতিক দর্শকদের কাছে তুলে ধরার একটি সুযোগ। টরন্টো নির্বাচিত হয়েছে জানতে পেরে আনন্দে লাফিয়ে উঠেছিলেন মেয়র টরি।
মার্চ মাসে প্রকাশিত একটি সিটি রিপোর্টে স্থানীয় অর্থনীতিতে বিশ্বকাপের অর্থনৈতিক প্রভাব ৩০৭ মিলিয়ন ডলার হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এ প্রতিবেদনে ৩ হাজার ৩০০ কর্মসংস্থান এবং ১ লাখ ৭৪ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটবে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। পাঁচটি খেলা আয়োজন করতে ২৯০ মিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে। অন্টারিও সরকার এবং ফেডারেল সরকার এই খরচের দুই-তৃতীয়াংশ বহন করবে। আর টরন্টো শহর প্রায় ৭৩ দশমির ৮ মিলিয়ন ডলার খরচ নিজেই পরিশোধ করবে বলে আশা করছে।
এডমন্টনে হতাশা :
এ দিকে প্রদেশ, ফেডারেল সরকার এবং বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সমর্থন থাকা সত্বেও আলবার্টা শহর আয়োজক হিসেবে নির্বাচিত না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন এডমন্টনের মেয়র অমরজিত সোহি। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেছেন, আমি আমাদের প্রচেষ্টার জন্য গর্বিত এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে এডমন্টনকে উন্নীত করার জন্য সব ধরণের উপায় অবলম্বন করব। আমি ২০২৬ বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য যেসব শহর নির্বাচিত হয়েছে তাদের সাফল্য কামনা করছি, বলেন অমরজিত।
অমরজিত মতোই, এক বিবৃতিতে আলবার্টার সংস্কৃতিমন্ত্রী রন অরও হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, আলবার্টা সরকার কঠোর পরিশ্রম করেছে এবং প্রাদেশিক রাজধানীর জন্য বিডের (প্রস্তাবিত মূল্য) সমর্থনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। রন অর বলেন, কমনওয়েলথ স্টেডিয়াম পশ্চিম কানাডার বৃহত্তম এবং একটি চমৎকার আয়োজক হতে পারতো, যদিও এখানে খেলা দেখার আর সুযোগ থাকছে না। আমি আশা করি, কানাডায় আসা ফুটবল ভক্তরা আলবার্টা ভ্রমণের সুযোগ নেবে। তারা আমাদের প্রিমিয়াম আতিথেয়তা গ্রহণ করবে এবং মনোরম ও প্রাণবন্ত শহরগুলি উপভোগ করবে।