স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩৬৫ অলআউট (মুশফিক ১৭৫*, লিটন ১৪১; রাজিথা ৫-৬৪, ফার্নান্দো ৪-৯৩)
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৫০৬ অলআউট (ম্যাথিউস ১৪৫*, চান্দিমাল ১২৪; সাকিব ৫-৯৬, এবাদত ৪-১৪৮)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৬৯ অলআউট (সাকিব ৫৮, লিটন ৫২; ফার্নান্দো ৬-৫১, রাজিথা ২-৪০)
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস: ২৯/০ (ওশাদা ২১*, করুনারত্নে ৭*; এবাদত ০-৫, সাকিব ০-৭)
ফলাফল : শ্রীলঙ্কা ১০ উইকেটে জয়ী
হারের শঙ্কা মাথাচাড়া দিয়েছিল ঢাকা টেস্টের চতুর্থ দিনেই, বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা। তবে দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান বলেছেন, হারের আগে হার মানার মানসিকতা নেই তাদের দলের। ইনিংস হারের শঙ্কা নিয়ে আজ (শুক্রবার) পঞ্চম ও শেষ দিনে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম সেশনে ইনিংস হার এড়িয়ে উল্টো লিড নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দেয় স্বাগতিকরা। তবে সেসব চোখ রাঙানি কাজে আসেনি। পরাজয়ের নিয়তি মানতে হয়েছে।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৩৬৫ রানে গুঁটিয়ে যায় বাংলাদেশ দল। পরে লঙ্কানদের প্রথম ইনিংস থামায় ৫০৬ রানে। এতে ১৪১ রানের লিড পায় সফরকারীরা। তবে আবারো দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ফের প্রথম ইনিংসের মতো হতশ্রী শুরু করে বাংলাদেশ দল। খাদের কিনারা থেকে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে, তবে সেই চেষ্টা আলোর মুখে দেখেনি। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৬৯ রানে। এতে ২৯ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে ১০ উইকেটের বিশাল জয় পেয়েছে শ্রীলঙ্কা।
দেড় সেশনের বেশি সময় হাতে রেখে পাওয়া এই জয়ের ফলে দুই ম্যাচের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজটি ১-০ ব্যবধানে জিতে নিল লঙ্কানরা। চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম ম্যাচ ড্রয়ে শেষ হয়। ‘হোম অব অব ক্রিকেট’ খ্যাত মিরপুরে ২৩ ম্যাচে এটি বাংলাদেশ দলের ১৪তম হার। সব মিলিয়ে ঘরের মাঠে এটি ৬৯ টেস্টে ৪৫তম পরাজয়। দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরিসংখ্যান একেবারেই সুখকর নয়। ১০ ম্যাচে কোনো জয় নেই, এই নিয়ে হার ৭ ম্যাচে।
বাংলাদেশের দেওয়া ২৯ রানের লক্ষ্য টপকাতে একেবারেই বেগ পেতে হয়নি লঙ্কানদের। ওশাদা ফার্নান্দোর ৯ বলে ঝড়ো ২১ রানের সঙ্গে করুনারত্নের ৯ বলে ৭ রানের কল্যাণে মাত্র ৩ ওভারেই ম্যাচের ফলাফল বের করে নেয় শ্রীলঙ্কা। তাদের দেশের চলমান অস্থিরতার মাঝে পাওয়া এমন জয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের মাটিতে টেস্টে চতুর্থ সিরিজ জয় সফরকারী শিবিরে স্বস্তির সুবাতাস বয়ে আনবে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে এই জয়ের ফলে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শ্রীলঙ্কার অর্জন দাঁড়িয়েছে ৪০ পয়েন্ট। ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ৯ দলের টুর্নামেন্টে ৮ নম্বরে অবস্থান বাংলাদেশ দলের।
প্রথম সেশন শেষে অবিচ্ছেদ্য ৯৬ রানের জুটিতে সাকিব ৫২ এবং লিটন ৪৮ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন। বিরতি কাটিয়ে ফিরে প্রথম ওভারেই ক্যারিয়ারের ১৩তম ফিফটি পেয়ে যান লিটন। একই ওভারে লিটন-সাকিবের জুটিও শতরান পূর্ণ করে। কিন্তু ফিফটির পরই ফিরতে হয়েছে লিটনকে, দারুণ এক ফিরতি ক্যাচ নেন আসিথা ফার্নান্দো। ১৩৫ বলে ৪ চারে সাজান ৫২ রানের ইনিংসটি। জুটি থামে ১০৩ রানেই।
লিটনের বিদায়ের পর আসিথা ফার্নান্দো ঝড়ে ১৩ রান যোগ করেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৭২ বলে ৭ চারে সাকিবের ব্যাটে সর্বোচ্চ ৫৮ রান। আসিথা একে একে তুলে নেন মোসদ্দেক (৯), তাইজুল (১) ও খালেদকে (০)। বাংলাদেশকে ১৬৯ রানে আটকে দেওয়ার পথে ৫১ রান খরচায় ৬ উইকেট তুলে নিয়ে লঙ্কান এই পেসার করেছেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ১৩ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশ দলের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে খালেদ আহমেদ শূন্য রানে আউট হওয়ায় বিব্রতকর আরেকটি রেকর্ডে নাম তোলে বাংলাদেশ। দুই ইনিংস মিলিয়ে এই ম্যাচে ৯ ব্যাটসম্যান আউট হলেন শূন্য রানে, বাংলাদেশের যা সর্বোচ্চ। আগের রেকর্ড ছিল ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জ্যামাইকায় ৮ শূন্য।
ঢাকা টেস্টে লঙ্কান পেসার অসিথা ফার্নান্দো রেকর্ড বইতে নাম তুলেছেন। এই টেস্টের আগে ৪ টেস্ট খেলে একবারও ৫ উইকেটের স্বাদ পাননি তিনি। এবার শুধু ৫ উইকেটই নয়, ম্যাচে ১০ উইকেটের স্বাদ পেয়ে গেলেন! এতে চামিন্দা ভাসের পর দেশটির দ্বিতীয় পেসার হিসেবে ম্যাচে ১০ উইকেট নিলেন অসিথা। একই সঙ্গে মাত্র দ্বিতীয় পেসার হিসেবে মিরপুরে টেস্ট খেলতে নেমে ১০ উইকেট শিকার করলেন আসিথা। আগের জন ভারতের জহির খান।
২৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা লঙ্কানদের বিপক্ষে এক ওভারের বেশি করার সুযোগ পাননি তাইজুল, সাকিব ও এবাদত। ততক্ষণে ৯ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ২১ রানে অপরাজিত থাকেন ওশাদা, ৯ বলে ১ চারে করুনারত্নের ব্যাটে অপরাজিত ৭।