অনলাইন ডেস্ক : টরন্টো পিয়ারসন বিমানবন্দরে যাত্রীদের ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা দেশটির বৃহত্তম এই শহরটির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এছাড়া এই সমস্যাটি করোনা পরবর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দেখা দিতে পারে। ব্যবসায়ী নেতাদের একটি গ্রুপ গত বৃহস্পতিবার এই সতর্কবার্তা জানিয়েছেন।

একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করার সময় তারা বিমানবন্দরের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। তারা কাস্টমস ও নিরাপত্তার নামে যাত্রীদের হয়রানীর বিষয়গুলোর প্রতি জোর দেন এবং দ্রুত সমস্যাগুলোর সমাধানের দাবি জানান। তারা ফেডারেল সরকারের কাছে বিমানবন্দরে আরো কর্মী নিয়োগ, সুবিন্যস্ত অ্যাপ ব্যবহার এবং কোভিড-১৯ এর র‌্যান্ডম টেস্টিং বাতিলের দাবি জানান। টরন্টো রিজিয়ন বোর্ড অব ট্রেডের প্রেসিডেন্ট ও সিইও জেন ডি সিলভা বলেন, শুধুমাত্র গত সপ্তাহে টরন্টো পিয়ারসন বিমানবন্দর দিয়ে এক লাখের বেশি যাত্রী যাতায়াত করেছেন। তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ যাত্রী স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বিলম্বের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক যাত্রীদের ৩ ঘন্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করতে বাধ্য করা হচ্ছে। কাস্টমস অফিসারদের রুটিন কাজে বিলম্ব হওয়ায় অনেক সময় যাত্রীদের বিমানের ভেতরেই দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হচ্ছে, যা খুবই বিরক্তিকর। ডিসিলভার মতে, যাত্রীদের এই অপ্রয়োজনীয় বিলম্বের জন্য বিমানবন্দরে কর্মীদের ঘাটতি ও করোনা মহামারি প্রতিরোধে পুরানো নীতি প্রয়োগের বিষয়গুলো দায়ী। কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন যে, শুধু পিয়ারসন নয়, সা¤প্রতিক সময়ে কানাডার বিভিন্ন বিমানবন্দরে দীর্ঘ নিরাপত্তা লাইনের জন্য মূলত কর্মী সঙ্কটই দায়ী। অন্টারিও ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা ক্রিস্টেফার বøুর বলেন, মহামারির আগে বিমানবন্দরে একজন যাত্রীর জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর কাজ প্রক্রিয়াকরণে সময় লাগত মাত্র ৩০ সেকেন্ড। এখন ওই একই কাজ দুই মিনিটেও শেষ করা যাচ্ছে না। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বøুর বলেন, বিমানবন্দরে এখন যেভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় তা আগে কখনো দেখা যায়নি। এই অপ্রচলিত পদ্ধতিগুলো যাত্রীদের মূল্যবান সময়ের অপচয় করছে। তিনি কানাডার বৃহত্তম বিমানবন্দরে সময়ের অপচয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি ‘পুরাতন ও প্রাচীন’ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাগুলো অবিলম্বে তুলে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনা শনাক্তের জন্য এখন আর র‌্যাপিড টেস্টের মত সময় সাপেক্ষ পদ্ধতি ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। এর প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক বিকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ‘স¤প্রদায়ের বর্জ্যজল’ বা তরল বর্জ্য পরীক্ষা। বর্তমানে এই পদ্ধতিতে করোনা শনাক্তের বিষয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাপকভাবে সমর্থিত। এই পদ্ধতিতে খুব অল্প সময়ে বিশাল জনগোষ্ঠির করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

বøুর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিমানবন্দরের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য দ্রæত পদক্ষেপ না নিলে টরন্টো তার আন্তর্জাতিক মর্যাদা হারাবে। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের কাছ থেকে তারা যে অর্থ আয় করতো তা থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি বলেন, ‘আর কোন বিলম্ব নয়। ফেডারেল সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’

তবে কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির (সিবিএসএ) মুখপাত্র রেবেকা পার্ডি বলেছেন, কানাডিয়ানদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার সাথে সরকার আপস করবে না। তার মানে হল কানাডায় ভ্রমণকারীদের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে এখন আগের চাইতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। তিনি সহযোগীতা ও ধৈর্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতির বিষয়টি আমাদের সবাইকে মেনে নিতে হবে।

অন্যদিকে কানাডার পাবলিক হেলথ এজেন্সি (পিএইচএসি) বলছে, কানাডিয়ানদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য করোনা বিধি-নিষেধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয়তাগুলো ক্রমাগত পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সংস্থাটি বলছে, পিয়ারসন বিমানবন্দরে যাত্রীদের বর্তমান সমস্যাগুলোর জন্য করোনা স্বাস্থ্য সমস্যা ছাড়াও বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এক ই-মেইল বার্তায় পিএইচসি বলেছে, ‘বিমানবন্দরে যাত্রীদের সংখ্যাবৃদ্ধির সাথে সাথে সরকার অতিরিক্ত দক্ষতা ও জনবল বাড়ানোর জন্য কাজ করছে। তারপরও ভ্রমণকারীদের এই মুহূর্তে সম্ভাব্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। পিক টাইমে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অপেক্ষার সময় দীর্ঘ হতে পারে।’

এদিকে কানাডিয়ান এয়ার ট্রান্সপোর্ট সিকিউরিটি অথরিটি (সিএটিএসএ) গত বৃহস্পতিবার সিবিসি নিউজকে জানিয়েছে, মহামারির শুরুতে সারাদেশে প্রায় ৭ হাজার ৪০০ স্ক্রিনিং অফিসার বিমানবন্দরগুলোতে কাজ করতেন। এখন এই সংখ্যা ৬ হাজার ৫০০ জনের নিচে নেমে এসেছে। ফলে বন্দরগুলোতে কাস্টমসের কাজ সম্পন্ন করতে আগের চাইতে বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। সিএটিএসএ বলেছে, তারা এ বছরই ১ হাজার স্ক্রিনিং অফিসার নিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। তবে তাদের নিয়োগ ও যথাযথ প্রশিক্ষণের জন্য আরো কিছু দিন সময়ের প্রয়োজন।

ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ফেডারেল সরকারকে দ্রæত পদক্ষেপ নিতে হবে। ফেয়ারমন্ট রয়েল ইয়র্কের জেনারেল ম্যানেজার এডউইন ফ্রিজেল বলেন, একজন পর্যটককে কানাডা সম্পর্কে প্রথম ধারণা দেয় বিমানবন্দর। কিন্তু এই মুহূর্তে পিয়ারসনে আমরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমখি হচ্ছি তা দুঃখজনক। আমরা উদ্বগ্ন যে বিমানবন্দরের বর্তমান পরিস্থিতি মানুষকে দ্বিতীয়বার কানাডায় আসতে বাধা দেবে। এছাড়া খারাপ অভিজ্ঞতার গল্পগুলি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তখন পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা অন্য গন্তব্য বিবেচনা করতে বাধ্য হবেন। টরন্টো এটি বহন করতে পারে না এবং আমরা এটি বহন করতে পারি না। তিনি বলেন, ফেডারেল সরকারের উুচিত দেশের স্বার্থে জরুরীভাবে বিমানবন্দরের সমস্যাগুলো সমাধানে পদক্ষেপ নেয়া।

অ্যাসোসিয়েশন ফর কানাডিয়ান ট্রাভেল এজেন্সির সভাপতি ওয়েন্ডি পেরাডিস বলেন, বিমানবন্দরে দীর্ঘ সময় অপচয় হওয়ার খবরে ইতোমধ্যে অনেক যাত্রী তাদের রিজার্ভেশন বাতিল ও ভ্রমণ পিছিয়ে দেয়ার আবেদন করেছেন। এটি টরন্টোর পর্যটন ও পর্যটন শিল্পের জন্য হুমকি। তিনি বলেন, মহামারিতে আমাদের সেক্টরে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা আর ক্ষতির বোঝা বহন করতে পারব না। সূত্র : সিবিসি