শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : সিয়ে দেশের ইতিহাসে এ রকম আরেকটা দলের কথা খুঁজে পাওয়া যাবে না! একটা ক্রম অবনতিশীল আধো পতিত অবস্থার সমাজের মধ্যেই এই দড়াবাজ শিল্পীদের দলটি যেখানেই যাক না কেনো সেখানেই সৃষ্টি করেছে একটা উচ্ছ¡াস আর আনন্দের পরিবেশ! নারী-পুরুষ, কিশোর-তরুণ বয়োজ্যেষ্ঠ সব বয়সের সব ধরনের মানুষ ছুটে চলে গেছে প্রদর্শনীর মাঠে দড়াবাজ শিল্পীদের দক্ষতা দেখার জন্য। ওরা এগিয়ে এসেছে, দেখেছে আমাকে, কেমন করে যেন যাদুর বলে দেহটাকে শুধু মোচর দিয়ে দুলিয়ে সব কিছু বদলে দিয়েছি আমি! এমন অবিশ্বাস্য ঘটনার গল্পকে যেন পরখ করে দেখতে চাইতো ওরা! আমি জানি তাদের এই উচ্ছ¡াসে মাতোয়ারা হওয়ার কারণ হচ্ছে, একটা চরম দুর্দশা গ্রস্ত সময়ে আমি তাদের দিতে পেরেছি —– তাদের জীবনে আনতে পেরেছি খানিকটা হলেও খুশী আর আনন্দ! মানব সৃষ্ট দুর্যোগের ঘন কালো মেঘে ঢাকা সিয়ে দেশের গ্রামে-শহরে আমার দড়াবাজী দলের দক্ষতার প্রদর্শনী খানিকটা হলেও বইয়ে দিয়েছে প্রাণ সঞ্চারক বাতাস। কিন্তু এক জন রাজ দন্ড হারা সিংহাসনচ্যুত সম্রাটের প্রতি মাথা মাটিতে ঠেকিয়ে মানুষ জনের শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ব্যাপারটা আমি নিতে পারছিলাম না! সিয়ে সম্রাটের দর্শনের কারণে উদ্ভূত সাধারণ মানুষের এই আনন্দ উচ্ছ¡াস প্রত্যক্ষ করে, মনের বিষন্নতাকে এড়িয়ে যেতে পারছি না, খানিকটা দুঃখ ভরা মনেই স্মরণে আসছে, কালো চিতার অবয়ব খোচিত মুকুটটা! যা কিনা কতো শত মানুষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সত্যকে ঢেকে রেখেছে! কোন এক কালে ঐ মুকুটটা মাথায় ধারণকারী এই মানুষটি, একালে ইতিমধ্যেই পালিয়ে এসেছে সুপ্রাচীন সেই গহিন গর্তের ফাঁদ থেকে! আর এখন পর্যন্ত সেই আগের মতোই কালো চিতার অবয়ব খোচিত ঐ মুকুটটা প্রাসাদ দেয়ালের বাইরে থাকা কত শত সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে চলেছে! এমন একটা মিথ্যা ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত বস্তু এবং ব্যক্তি চরিত্রের সাথে জড়িত, সব কিছু থেকে আমি নিজেকে আত্ম রক্ষা করেছি! কিন্তু ঐ সরল আর সাদাসিধা মানুষগুলো যে, চিরকালই ভুল পথের দিকে এগিয়ে যায়, ভুল গন্তব্যে নিশানা করা ছাড়া আর কোন উপায় খুঁজে পায় না কখনোই!
আমি, আমার এই খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার নির্বাসিত জীবনের চূড়ান্ত গন্তব্যের খুব কাছাকাছি পৌঁছিয়ে গিয়েছি! ছোট্ট মেয়ে ইউ সুয়ো ঘোরের মধ্যে আচ্ছন্ন হয়ে আছে, কখন পৌঁছাবে রাজধানীতে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেবলই ভাবছে, যেন স্বপ্নে দেখছে দেশের রাজধানী শহরের দৃশ্যপট! রাজধানীতে ঢুকবার আগে, আমরা ইয়ো চৌ-তে তৈরী করেছিলাম একটা খেলা দেখাবার —- দক্ষতা নৈপুণ্য প্রদর্শনের মঞ্চ, তিন দিনের জন্য। বুঝে হোক কিংবা না বুঝেই হোক আমার রাজধানীতে পুন:প্রবেশের দিনটা পিছিয়ে গেলো। ছোট্ট মেয়েটা ঐ কয়েকটা দিন লাটিমের মতো ভন ভন করে পাক খেয়ে ঘুরছিলো আমার চার পাশে। ও’ কেবলই শুনতে চাইছিলো আমার কাছ থেকে রাজধানী শহর এবং সিয়ে রাজ প্রাসাদের নানা জিনিসপত্র আর কর্মকান্ড সম্পর্কে! আমি আসলে বাক্যহারা হয়ে গিয়েছিলাম, শুধু বলেছিলাম, একটা কথা, “ওখানে পৌঁছিয়েই তুমি সব কিছু সম্পর্কে জানতে পারবে!”, ছোট্ট মেয়েটা দ্রæতই ছুটে যাচ্ছিলো ইয়েন লাঙ-এর কাছে, আমি দেখেছি , ইয়েন লাঙ ওকে কোন কথা না বলে কোলে তুলে হাঁটুর উপর বসিয়েছিলো। ইয়েন লাঙ-এর দৃষ্টিটা ছিলো দুঃখে ভরা!
“কেনো তোমারা এমন অখুশি? তোমরা কি রাজধানী শহরের ভিতরে ঢুকতে ভয় পাচ্ছো?”, ইউ সুয়ো বললো।
“ভয় পাচ্ছি!”, ইয়েন লাঙ বললো!
“কেনো ভয় পাচ্ছো? ভয় পাচ্ছো যে, রাজধানীর মানুষেরা আমাদের খেলার প্রদর্শনী দেখতে আসবে না, তাই কি?”
“না! ভয় পাচ্ছি ঐ সব বিষয়ের, যেগুলো সম্পর্কে আমরা জানি না!”
ইয়েন লাঙ-এর বলা একটা কথাই সঠিক, সার গর্ভ আর সংক্ষিপ্ত, যা কিনা আমার হৃদয়ের মধ্যে যেন ঠুকে দিয়েছে একটা পেরেক! রাজধানী শহরে আমার পুনঃপ্রবেশের দিবসটি একটা একটা দিন করে এগিয়ে আসছিলো। আমি ইয়ো চৌ-এর বড় সরাইখানার বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছিলাম, কাটাচ্ছিলাম নিদ্রাহীন রাত! আমি কল্পনা করছিলাম, আমি দড়ির উপরে হাঁটার খেলা দেখাচ্ছি মঞ্চে, দর্শকের সারিতে উপস্থিত আছেন পুরনো মন্ত্রীবর্গ, আমলা আর রাজ পরিবারের আত্মীয় স্বজনরা! আমি মনে মনে ভাবছি চির শত্রæ তুয়ান ওয়েন কি এরই মধ্যেই আমাকে ভুলে গেছে! যদি আমি বিশাল সিয়ে রাজ প্রাসাদের পিছনের ঘাসে ঢাকা উদ্যানে মঞ্চ তৈরী করি দড়ির উপরে হাঁটার খেলা প্রদর্শনীর নিমিত্তে, এমনও কি হতে পারে বিশাল সিয়ে রাজ প্রাসাদের কোণার দালানের উপর থেকে আমারই উদ্দেশ্যে ছুটে আসবে বিষ মাখা তীর! সবশেষে চূড়ান্তভাবেই আমি যেন গণনা করলাম আমার শিকড়, বিস্মৃত হয়ে যাওয়া পূর্ব পুরুষদের! এটা কি একটা অদ্ভুত, অবাস্তব আর উদ্ভট জীবন নয় কি? বাক সংযমের প্রয়োজন নাই, বলতে দ্বিধা নাই, আমি সত্যিই ভয় পাচ্ছি, আমাদের অজ্ঞাত-অজানা ঐ সব বিষয়কে! কিন্তু আমি তো খুব ভালো ভাবেই জানি, ‘দড়ির উপর চলার রাজা’ নামের দড়াবাজ খেলোয়ারদের দলটা সবশেষে অবশ্যই রাজধানীতে আসবে, আর ওখানেই হতে যাচ্ছে দলের চূড়ান্ত প্রদর্শনীর অনুষ্ঠান!
চতুর্থ দিন ভোর বেলা, ‘দড়ির উপর চলার রাজা’ দড়াবাজ দলটি তাবু গুটিয়ে ফেললো। দড়াবাজী খেলার সকল যন্ত্রপাতি সহ আঠারো জন শিল্পীর দলটি একটা তিন ঘোড়ায় টানা গাড়িতে চড়ে ইয়ো চৌ শহর ত্যাগ করে উত্তর দিকে যাত্রা করলো। ওটা ছিলো একটা সর্বত্র কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাওয়া ভোর বেলা। সিয়ে দেশের মধ্য ভাগের উম্মুক্ত প্রান্তরগুলো ঢাকা পড়ে আছে সবুজ ঘাসে, কিছু জমিতে নতুন চাষ দেয়া হয়েছে, আছে নতুন লাঙ্গল টানা মাটির মৃদু গন্ধ! কোদাল হাতে কাজ করতে থাকা কৃষকরা রাস্তার পাশে এসে দেখছিলো এই দলটাকে, গুণতে শুরু করেছিলো শিল্পীদের সংখ্যা, গণনা করা শেষ হওয়ার আগেই মিলিয়ে গেছে শিল্পীদের দল ওদের দৃষ্টিসীমা থেকে! “তোমরা কোথায় যাচ্ছো?”, কৃষকরা জিজ্ঞেস করেছিলো। ওরা সতর্ক করে বলেছিলো, “উত্তর অঞ্চলে তো যুদ্ধ চলছে, তোমরা যাচ্ছো কোথায়?”
“আমরা যাচ্ছি রাজধানী শহরে খেলার প্রদর্শনী করতে!”, ছোট্ট মেয়ে ইউ সুয়ো উচ্চ স্বরে ওদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলো।
বসন্ত কালে ফং কুয়ো দেশ ব্যাপকভাবে সিয়ে দেশের ভিতরে সামরিক আগ্রাসন চালায়! দেশের আঁকা বাঁকা দীর্ঘ সীমান্ত রেখা বরাবর ত্রিশটিরও বেশি আক্রমণ হয়, সংগঠিত হয় খন্ড যুদ্ধ! ‘দড়ির উপর চলার রাজা’ দড়াবাজী খেলার দলটি হর হামেশা সংগঠিত হওয়া যুদ্ধ বিগ্রহের সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেছে! তারা উত্তর দিকে তাদের যাত্রা অব্যহত রাখলো। পথে যেতে যেতে ওরা আলোচনা করছিলো দড়ির উপরে হাঁটার দড়াবাজী খেলার কিছু অপ্রচলিত কৌশল সম্পর্কে, যে কৌশলগুলো কিনা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে! আরও গল্প করছিলো নানা উল্টা পাল্টা বিষয়ের! শয্যা, শয্যা সঙ্গী-সঙ্গীনি, গোপন যৌনাচার —— নানা ধরনের নানা বিষয়ের গল্প! তাদের এসব কথাবার্তার মধ্যে মিশে যাচ্ছিলো —– এসব বিষয়ে একেবারেই অভিজ্ঞতাহীন অজ্ঞ ছোট্ট মেয়ে ইউ সুয়ো-র হাসির শব্দ! গোটা ভ্রমণ পথেই দড়াবাজীর নৈপুণ্য প্রদর্শনকারী পেশাদার এই দলটি ছিলো আনন্দে উৎফুল্ল। অতি আসন্ন, ঠিক যেন মাথার উপরে ঝুলতে থাকা সিয়ে দেশের অস্তিত্ব বিনাশকারী মহা বিপর্যয় সম্পর্কে ওরা ছিলো একেবারেই অসচেতন!
চন্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের সপ্তম দিনের ভোর বেলা ওরা পৌঁছিয়েছিলো রাজধানী শহরে, নথিপত্রে এমনই উল্লেখ আছে। ঠিক এই দিনই ফং কুয়ো দেশের দশ সহস্র সৈন্যের এক বিশাল দল নগর তোরণ দিয়ে ঢুকে পড়ে সিয়ে দেশের রাজধানী শহরের ভিতরে, পতন ঘটে দেশটির! এখন দেখে মনে হয় এমন কাকতালীয় ঘটনার যুগপৎ সংগঠন
ঘটেছিলো ইতিহাসের দুঃখজনক আয়োজনে!
।৪।
তিন ঘোড়ায় টানা গাড়িটা রাজধানী শহরের দক্ষিণ তোরণ অতিক্রম করার সময় ভোরের উজ্জ্বলতার আভা খুব সামান্যই ফুটে উঠেছে। নগর প্রাকারের নীচে পানি ভর্তি পরিখায় ঢেউ খেলছে এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত। সব্জি, ফল আর মরা গৃহপালিত জীবজন্তুর পোঁচে যাওয়া মৃত দেহের একটা অতি পরিচিত দুর্গন্ধ ভেসে আসছে! পরিখার উপরের ঝুলন্ত সেতুটা নামানো আছে, আর নগর তোরণের ফটক আছে খোলা অবস্থায়ই! যদি মাথা তুলে নগরের দলানগুলোর উপরে থাকা উঁচু উঁচু পতাকার খুঁটিগুলোর দিকে নজর দেয়া হয়, তা’হলে এটা আবিষ্কার করা কঠিন কিছু হবে না যে, কালো চিতার মুখ অবয়ব খোচিত সিয়ে দেশের নিশানগুলো ইতিমধ্যেই নামিয়ে ফেলা হয়েছে। ওগুলোর বদলে উত্তোলন করা হয়েছে ফং কুয়ো দেশ-এর জোড়া নীল ঈগলের প্রতিকৃতির নিশান! শহরের নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রাপ্ত কয়েক জন সৈন্য নগর তোরণের গায়ে হেলান দিয়ে নিশ্চল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। খুব ভোরে আগমন করা এই দড়াবাজ দলটিকে সৈন্যরা যেন দেখেও দেখলো না! যুবক বয়সের যেই ছেলেটা ঘোড়ার গাড়ীটা চালাচ্ছিলো, সে ঘাড় ফিরিয়ে গাড়িতে থাকা দড়াবাজী খেলার শিল্পীদের উদ্দেশ্য করে বললো, “সৈন্যরা তো মনে হয় পাঁড়মাতাল হয়ে আছে! ওরা তো প্রায়ই মদ খেয়ে আধ মরা হয়ে যায়, দেখে মনে হয় ওখানে আছে কতগুলো প্রাণহীন চেতনা লোপ পাওয়া মানুষ! কাজের কাজ যেটা হয়েছে, নগরে ঢুকবার সময় প্রদেয় রাজপথ কর আমাদের দিতে হলো না, করের টাকাটা বেঁচে গেলো!”
“তুমি কি দেখেছো? নগর তোরণের ফটক আবার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে! তুমি কি ধরতে পারছো, শুধুমাত্র আমাদেরকেই ফং কুয়ো দেশের লোকেরা কেনো রাজধানী শহরের ভিতরে ঢুকতে দিয়েছে?”, গাড়ির উপরে সোজা হয়ে বসে থাকা ইয়েন লাঙ-কে আমি এই প্রশ্নটা করলাম।
ইয়েন লাঙ ছোট মেয়ে ইউ সুয়ো-কে কোলে করে জড়িয়ে বসে ছিলো, সে দুই হাতের তালু দিয়ে বাচ্চা মেয়েটির চোখ ঢেকে রেখেছিলো যাতে আতঙ্কজনক কোন কিছু ওর চোখে না পড়ে, ভয়ে চিৎকার করে যেন না উঠে। ইয়েন লাঙ বললো,
“সম্ভবত ওরা দেখেছে, আর মনে করেছে, আমরা হচ্ছি এক দল খেলা দেখাবার খেলোয়াড় শিল্পী; ওরা সম্ভবত দড়াবাজ শিল্পীদের দেখানো খেলা খুবই পছন্দ করে।”
“না, এটা হচ্ছে আসলে একটা মৃত্যুর আমন্ত্রণ!”, আমি দূরে নগর দালানের উপরে থাকা নীল রঙের জোড়া ঈগলের প্রতিকৃতি সম্বলিত পতাকাটার দিকে তাকালাম, ভোরের মৃদু মন্দ বাতাসে ঐ নিশানটা আন্দোলিত হচ্ছিলো। চোখের সামনে হঠাৎ করেই ভেসে উঠলো —— আমি যেন দেখতে পাচ্ছি, বহু বছর আগে গত হওয়া পুরনো প্রাসাদ ভৃত্য সুন সিন-এর নিরাশ আর বিষন্ন অবয়ব। সিয়ে দেশের বিপর্যয় তো ইতিমধ্যেই এসে গেছে! আমি বললাম,
“আমার সেই শিশুকাল থেকেই একজন মানুষকে দেখেছি, যে ভবিষ্যৎ বাণী করতো, এমনই বিপর্যয়ের! কোন এক কালে ওর কথাগুলো শুনে আমি খুব ভয় পেতাম। এখন তো বিপর্যয়ের দিনটা সত্যি সত্যিই চলে এসেছে! আমার হৃদয়টাও ভরে গেছে শূন্যতায়। তুমি আমার হাত স্পর্শ করে দেখো, এরপর শুনতে আসো আমার হৃদ স্পন্দন, এখন আমি নিশ্চল পানির মতোই প্রশান্ত। আমি এখন দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে খেলা দেখাবার একজন দড়াবাজী খেলার শিল্পী! পরাজিত আর পরাধীন হয়ে যাওয়া কোন দেশ অধিপতির ভাগ্য আমাকে বরণ করতে হয় নাই, বেছে নিতে হয় নাই জীবন-মরণ, অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব, পছন্দ-অপছন্দের বিকল্প! তাই আমার কোন ভয় নাই, আমি ভীত নই একেবারেই।”
আমরা যেন হয়ে গেছি এক পাল ভেড়া-শাবকের মতো, যারা কিনা দৌড় দিয়ে ঢুকে পড়েছে নেকড়ের পালের মধ্যে! পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নগর তোরণের ফটক বন্ধ করে দেয়ার পর, লুকিয়ে থাকা ফং কুয়ো দেশের সৈন্যরা নগর প্রাকারের নীচের কুঠুরিগুলো এবং গাছপালা, বনজঙ্গলের ভিতর থেকে দ্রæত বেরিয়ে আসছে রাস্তায়, যাচ্ছে মানুষের বসত বাড়িতে! আমি দেখতে পাচ্ছি, যুবক বয়সের একজন সেনা কর্মকর্তা ঘোড়ায় চড়ে তলোয়ার হাতে রাস্তায় পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে উচ্চ স্বরে চিৎকার করছে, “ফং সম্রাট-এর ফরমান এসেছে, হত্যা, জবাই, খুন —– খুন করে ফেলো সবাইকে!”
আমি স্বাক্ষী হলাম সিয়ে দেশের রাজধানী শহরে ফং কুয়ো দেশের লোকজন কর্তৃক নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে বইয়ে দেয়া রক্ত বন্যার অতি মর্মান্তিক দৃশ্যের! গণহত্যার উম্মাদনা ভোর বেলা থেকে শুরু হয়ে একটানা চললো শেষ বিকাল বেলা পর্যন্ত! পুরো শহরটা ভরে আছে নীল রঙের পোশাক আর সাদা শিরস্ত্রান পরিহিত ফং কুয়ো দেশের অশ্বারোহী সৈন্যে! তাদের হাতে থাকা ছুরি আর তলোয়ারগুলো ভিজে গেছে মানুষের রক্তে। তাদের বর্ম আর শিরস্ত্রানগুলো ভরে গেছে রক্তের ছাঁট আর ছিটকে ছুটে আসা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরা টুকরা হয়ে যাওয়া কিমার মতো মাংস পিন্ডে! পুরো শহরটা পূর্ণ হয়ে গেছে খুন হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর মৃত্যু মুহূর্তের হাহাকার আর আর্ত্মনাদে! (চলবে)