কবি আতোয়ার রহমান প্রাকৃত পাখির গানের সুরের আবেশ ছড়িয়ে একেবারে খোলা চোখে দেখেন তাঁর জগতের আশপাশকে। তাঁর এই দেখা বারে বারে আমাদের অন্তরের সাদা চোখকে উম্মোচিত করে দেয় এ পৃথিবীর একাকীত্বের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। আতোয়ারের রহমানের হৃদয়ের মধ্যে এক প্রবল প্রেমের দ্যোতনা ঝনঝন করে বেজে উঠে নীরবে। সেই পরম প্রেম তাঁকে অপূর্ব এক লয়ের গতিতে নিয়ে যায় প্রকৃতির কাছে আর প্রেমিক হৃদয়ের উষ্ণতার আস্বাদনে। আমাদের একেবারে নিত্য ব্যবহার্য শব্দ একের পর এক ব্যবহার করে কি করে অপূর্ব সুন্দর সব কবিতা নির্মাণ করা যেতে পারে, কবি আতোয়ার রহমান সেই পথ আমাদের দেখিয়ে দেন। এক প্রচণ্ড শক্তি আছে তাঁর কাব্য নির্মাণে যা আমাদের হৃদয় আলোকিত করে কবিতার কমলা আলোর দিকবিদিক উপচিয়ে পড়া আলোর স্রোতে।
মনিস রফিক
কবি আতোয়ার রহমান-এর জন্ম ১৯৬৪ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশের রংপুরের মিঠাপুকুরে। কানাডার টরন্টো শহরে বসবাস করছেন দীর্ঘদিন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। বাংলাদেশের কবি নজরুল কলেজ, জগন্নাথ কলেজ ও ইডেন কলেজে দীর্ঘদিন ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক ছিলেন। এক সময় সাংবাদিকতার সাথেও জড়িত ছিলেন। দি নিউ নেশন, অধুনা লুপ্ত মর্নিং সান, দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রভৃতি পত্রিকায় সাব-এডিটর হিসাবে কাজ করেছেন। কলেজ জীবন থেকেই লেখালেখিতে হাতেখড়ি। বাংলাদেশ ও কানাডার বিভিন্ন বাংলা দৈনিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সাহিত্য পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নিয়মিত লিখেন। মূলত গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধগুলোতে বার্তাধর্মী নানারকম তথ্য পরিবেশন করে থাকেন। প্রিয় বিষয় মানুষ এবং প্রকৃতি। অবসর সময়ে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ যাপিত জীবন বিভাস প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছিল ২০১৫ সালে।
যুদ্ধ
গ্রামের মাঝে আঁকাবাঁকা পথের গোড়ায়
কালো শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকা
প্রৌঢ়া মায়ের সমুখ দৃষ্টি ঐ দিগন্তরেখার দিকে-
কবে ছেলে ফিরে আসবে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে?
যুদ্ধ মানে অশান্তি নিষ্ঠুরতা বর্বরতা
যুদ্ধ মানে ক্ষমতার মদমত্ততা
সম্পদ কুক্ষিগত করার উদগ্রতা
আমাজনের মতো গভীর বিভাজনের রেখা
পাখির কাকলি, ঠোঁটের শিসে নিষেধাজ্ঞা
এই নীল গ্রহের ভয়ে শিউরে ওঠা।
যুদ্ধ মানে মানবতার, শুভবুদ্ধির অভাব
যুদ্ধ মানে মানুষের আদিম স্বভাব।
যুদ্ধ মানে ভয় আতঙ্কের একাত্তরের দিনগুলো
নখরাঘাতে বাগানের থ্যাঁতলানো ফুলের আগুনগুলো।
যুদ্ধ মানে নিরাপত্তার নামে আধিপত্য বিস্তার
আদর্শের নামে জীবন বিনাশী কারবার
রক্তাক্ত অনাথ শিশুর আর্ত চিত্কার
যুদ্ধে শোধ হয় না পৃথিবীর দায়ভার।
যুদ্ধ মানে লাভ-লোকসানের জটিল অঙ্ক
সুপরিকল্পিত মিথ্যার বিশ্বাসঘাতকতার গল্প।
যুদ্ধ মানে ধ্বংসস্তুপে সদ্য হারানো স্মৃতির খোঁজাখুঁজি
যুদ্ধ মানে রক্তপাত ধর্ষিতা রমণী
যুদ্ধের মানে হলো পাগলামি
যুদ্ধে জয়ী বলে কেউ নেই, যুদ্ধে আমরা সবাই হারি।
শিশুর কান্নার বিনিময়ে যুদ্ধ চাই না
সবুজ পৃথিবী চাই যেখানে শান্তির গোলাপ ফুটবে।
ঘুম ভাঙা পাখিরা আবার বনে ফিরবে।
বসন্তে কোকিলের ডাক শুনতে চাই
নতুন চোখে একে অপরের দিকে তাকাতে চাই
নীল ক্যানভাসে রঙ তুলির আঁচড় দিতে চাই
শীতের সকালে মিঠে রোদ পোহাতে চাই
মেঘে ছেয়ে যাওয়া আকাশ থেকে অঝোর বৃষ্টি চাই।
রক্তে নয়, জ্যোত্স্নায় পৃথিবী ভেসে যেতে দেখতে চাই
গানে সুরে সুখে ভরা সুন্দর প্রজাপতির মতো
একটি পৃথিবী দেখতে চাই।
স্বাধীনতার স্বপ্ন
মায়ের শুকনো বুক চুষতে চুষতে ঘুমিয়ে
পড়ে কোনো কঙ্কালসার অভুক্ত শিশু,
জাকাতের কাপড়ের লাইনে পায়ে চাপা পড়ে
মারা যায় কোনো বৃদ্ধা,
অবুঝ শিশু হাতে থালা নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে
আছে এক মুঠো ভাতের আশায়
নিস্পাপ এই শিশুর শূন্য দৃষ্টির মাঝে লুকিয়ে আছে কান্না,
সে যে আমার পতাকার কান্না।
কোনো বেকার যুবক টুক করে ঝুলে পড়েছে সিলিং ফ্যান থেকে
বাতাসে ভেসে বেড়ায় হাজারটা সার্টিফিকেট।
বারবার বিয়ে ভাঙা মেয়েটি বাড়ির পেছনে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে
বাতাসে ভেসে বেড়ায় ইঁদুর মারা বিষের গন্ধ।
প্রাণ জ্বালিয়ে গড়া সেতুগুলি ভেঙ্গে যায়,
বিভাজনের দেওয়াল ক্রমশ যমুনার মতো চওড়া হয়।
তার পাশেই আবার দেখি
বাঁকাচোরা পথের দুরুত্ববিলাসিদের বুনো প্রজাপতি জীবন
শত হাজার কোটি লোপাটের রেকর্ড ভাঙার ছড়াছড়ি,
তবুও বক্তৃতা মঞ্চে কথার ফুলঝুড়ি
লাগামছাড়া ভোগে দূষিত চারপাশ।
দুর্নীতির আলো-আঁধারিতে কুয়াশার ধোঁয়াশায়
ক্ষমতার ডালে ডালে নেচে বেড়ায়
সিগারেটের ধোঁয়ার মতো কুন্ডলী পাকিয়ে
পেঁজা তুলোর মত উড়তে থাকে নিষিদ্ধ সুখ হয়ে।
কোন এক রহস্য সন্ধ্যায় জৌলুসের সুইমিং পুলের
নীল জলে রাক্ষুষে মাছেরা সাঁতরায়
মেতে থেকে জলকেলির ঝড় তুলে,
সব খায় চুষে অক্টোপাসের মতো
এ যুগের জগত শেঠ আর ক্যালিবানরা,
ব্যাংকে ব্যাংকে, রাজনীতিতে দুর্গ গড়ে
মোহন চেহারার মাফিয়ারা।
ক্ষমতার দালান থেকে মুমূর্ষু ও রাহুগ্রস্ত জবাবদিহির
আর দায়বদ্ধতার অসহায় আর্তচিত্কার ভেসে আসে
বিপন্ন প্রজাতির নিরীহ প্রাণীদের মতো,
দাম্ভিকতার অট্টহাসিতে ঢেকে যায় চরাচর।
বাংলা ভাষা
চর্যাপদের ডিম থেকে ছানা হয়ে বেরিয়ে
প্রাকৃতের রোপিত বীজ থেকে পলিমাটির সৌরভ ছিড়ে
ডানা মেলার মতো প্রথম অঙ্কুরিত হলে,
মনসামঙ্গল চন্ডীমঙ্গল ধর্মমঙ্গল চন্দ্রাবতী
আলাওলের আলো ছায়ায় হামাগুড়ি দিয়ে
বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র, মীর মোশাররফ,
মাইকেল রবীন্দ্রনাথ নজরুলের হাত ধরে
হাঁটি হাঁটি পা পা করে যাত্রা শুরু করলে,
সাথে নিয়ে প্রগাঢ় ফেনিল দীপ্র সুর বাউল গান
অর্থময়তার ভাবের আলোর অন্তরলীন প্রাণ।
বহু যুগের অপেক্ষার পর ছোট ছোট পদক্ষেপে
স্টেশনে স্টেশনে দাঁড়িয়ে ভয় প্রলোভন দূরে ঠেলে
গলা টিপে কলুষিত স্তব্ধ করাকে থামিয়ে
আপন মাহাত্ম্যে ডানা ঝেড়ে উড়লে।
বাংলার জল কাদা শ্যামল সবুজ বাতাস সেচে
আর দোয়েল কোকিল শালিকের গান নিংড়ে
পরিপুষ্ট হলে, যৌবন জোয়ারে ভাসলে
শত বৈরিতা প্রতিক‚লতা আঘাত সামলে
তিল তিল করে গড়ে তুললে
তোমার সাধের দারুণ সজীব অনিন্দ্যসুন্দর সৌধ।
যে বাংলা ভাষার আন্দোলন বাঙালির রক্তে
ডুবিয়ে দেয়ার বিক্রম দেখিয়েছিল শত্রুরা একদিন,
সে ভাষাই ফেব্রুয়ারির অগ্নি স্ফুলিঙ্গে শুচিশুদ্ধ হয়ে
স্বাধীনতার জন্মবীজ বুনলে,
আনলে রক্তে রাঙানো নতুন সূর্যোদয়।
রফিক-সালাম-বরকতদের রক্তমাখা পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে
তোমার জয়গাঁথার কথা প্রতিধ্বনি তুললে বুকের গহীনে
মিশে গেলে বাঙালির ধমনীর রক্তে রক্তে
বুকে বুলেটের ক্ষত নিয়েও
অমরত্ম পেয়ে হয়ে উঠলে মহীরুহে,
কাঁটা তারের বেড়া পেরিয়ে পড়লে ছড়িয়ে সারা বিশ্বে,
সবখানে হাওয়া-বাতাসে বাংলা অক্ষর উড়িয়ে
সবাইকে পথ দেখিয়ে আস্তানা গাড়লে শহরে নগরে মিনারে।
গৌরব অহংকার ঐতিহ্য প্রেরণা মাথা নত না করা
আর হার না মানা চেতনার সে মিনার।
ইতিহাসের অস্ত্রোপচার
বাংলা মানে কৃষক বিদ্রোহ, বাঁশের কেল্লার তিতুমীর
বাংলা মানে ঈশা খাঁ, সিরাজুদ্দৌলা, মঙ্গল পান্ডের উন্নত শির।
বাংলার ইতিহাস মানে মেদিনীপুরের ক্ষুদিরাম
প্রীতিলতা সূর্যসেনের ব্রিটিশ কাঁপানো চট্টগ্রাম।
বাংলা মানে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন বিদ্যা সাগর
রাম মোহন মাতঙ্গিনী হাজরা,
বাংলা মানে নেতাজি সুভাষ শেরে বাংলা
পাকিস্তানের ভিত কাঁপানো স্লোগান ‘জয় বাংলা’।
বাংলা মানে মাইকেলের সাগরদাঁড়ি লালনের সহজিয়া সমর্পণ
নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন।
বাংলা মানে নজরুলের অমর বিদ্রোহী কবিতা
জসিম উদ্দিনের নকশী কাঁথা জীবনানন্দের বনলতা।
বাংলা মানে মানিক তারাশঙ্কর বিভূতিভুষণ
জারি সারি ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালি কাওয়ালি কীর্তন
বাংলা মানে জগদীস চন্দ্র সত্যজিত শহীদুল্লাহ
পদ্মা মেঘনা যমুনার জোয়ারভাটার ঢেউয়ের দোলা।
বাংলা মানে স্বাধীনতা সংগ্রামী রংপুরের নুরুল দীন
আলোর দিশারি বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।
বাংলা মানে মওলানা ভাসানীর মাথায় তালের টুপি
শতাব্দির আঁধার চিরে ভোর নিয়ে আসা
শেখ মুজিবুরের সূর্যমুখীর মতো উদ্যত তর্জনী।
বাংলা মানে রফিক-সালাম-বরকত বায়ান্নর শোকগাঁথা
বাংলা মানে পলিমাটি একাত্তরের শহীদের রক্তের গন্ধ মাখা।
এ বাংলা কখনও হারতে জানে না।
বুলডোজার দিয়ে রাস্তার পাশের দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়ার মতো
বাংলার সংস্কৃতি মুল্যবোধ গুঁড়িয়ে দিতে চায়, কারা ওরা?
বাংলাকে দমাতে যারা অস্ত্র শানায় আড়ালে
কোথা হতে তাদের উদ্ভব?
ইতিহাসের অস্ত্রোপচার করে শেকড় উপড়ে ফেলে
কৃত্রিম শেকড় পুঁতে দেওয়াটা কি সম্ভব?
বাংলা সংস্কৃতির দুর্বিনীত গতি কে করিবে রোধ?
দ্বিতীয় ভালোবাসা
তুমি প্রথম যে পুরুষকে ভালোবেসেছিলে
সে আমি নই
আমি প্রথম যে নারীর দিকে তাকিয়েছিলাম
পূর্বসূরীদের একটি মুখ দিয়ে,
তা তুমি নও।
আমরা উভয়েই ক্ষতিকে জেনেছি,
ছুরির ধারালো প্রান্তের মতো।
আমরা উভয়েই বাস করেছি
ঠোঁটে ত্বকের চেয়ে বেশি
দাগযুক্ত টিস্যু নিয়ে।
আমাদের ভালোবাসা এসেছিল
অঘোষিত মধ্যরাতে।
ভালোবাসা আমাদের বন্ধ দরজায় কড়া নেড়েছিল
যখন আমরা এর জন্য ডাকাডাকি করা ছেড়ে দিয়েছিলাম।
ধরেই নিয়েছিলাম তোমার আমার প্রেম
কেবলই সমুদ্রের বুকে জেগে থাকা
লাইটহাউসের মতো বিচ্ছেদের অবধারিত উপস্থিতি।
কিন্তু পড়ন্ত বেলায় তোমার এভাবে ফিরে আসা
সবকিছুকে ভুল প্রমাণিত করলো।
প্রতিবাদী স্বর
নির্যাতিতদের পক্ষে কথা বলায় কাল একজন
আমাকে গলা চেপে চেয়ার ঠেলে পেছনে ফেলে দিল
অন্যায়ের প্রতিবাদ করায়
পুলিশের ভারী বুটের নিচে থেঁতলালো আমার শরীর
যেমন পথচারিরা শহরের ফুটপাথের
বুকে পদচিন্ন এঁকে দেয়।
আমি তো খারাপ কিছু নই
আমি তিয়েনআনমেনে ট্যাঙ্কের সামনে দাঁড়ানো হারিয়ে যাওয়া সেই যুবক
পেছনে ফেলে এসেছি তোমার তীক্ষ্ণ দাঁত-নখ অত্যাচারের ল্যাবরেটরি
তবু আমি মুখে কুলুপ এঁটে থাকিনি।
আমার গলার কাছে খঞ্জর ছুরি তরবারী
তবুও আমাকে নীরব করতে পারেনি
আমি শঙ্খচূড়ের মতো ফণা তুলে জিহ্বা বের করে
মেরেছি ছোবল সব অন্যায়ের কালো শরীরে
কাঁপন ধরিয়েছি ওদের কালো বুকে
প্রতিবাদি পাখিরা ছদ্মবেসে এসে আমার পিঠ চাপড়িয়েছে।
আমার রক্তে বিরসা মুন্ডা প্রীতিলতা তিতুমীর সূর্য সেন
আমি রাজপথের চলন্ত পোস্টার বসুনিয়া নুর হোসেন,
আমি ববি স্যান্ডস মায়া অ্যাঞ্জেলু নজরুলের কবিতার সেই অগ্নি অক্ষর
যা মানুষের মনে স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছিল, কন্ঠে দিয়েছিল বজ্রস্বর।
আমি মিছিলের আগে বুক চিতিয়ে থাকা ছেড়া প্যান্ট লুঙ্গি পরা
বয়স না বাড়া বারবার শহরের রাস্তায় ফিরে আসা টোকাই
আমি আপস না মানা নাছোড় যোদ্ধা, বিকট স্পর্ধায় সামনে যাই।
আমি প্রমাণ করেছি, পৃথিবীতে এমন কোনো দেয়াল নেই
যা টপকানো যায় না, এমন কোনো জেল নেই
যার তালা ভাঙা যায় না।
যত দিন অত্যাচার, অসাম্য অশুভ শক্তি থাকবে,
যত দিন আকাশ নীল বা চাঁদ ধুসর সাদা না হবে
ততদিন আমি প্রতিবাদ করে যাব।
আমি মানুষের রক্তে রক্তে শিরায় শিরায় মিশে আছি
আমি লক্ষ বছরের আঘাত সহ্য করেছি,
এবং শেষ পর্যন্ত তাই করবো।
তোমাকে দেখেছি
দারিদ্র্য তোমাকে দেখেছি কম মজুরির মধ্যে
কিনতে না পারা বাবার প্রেসারের ওষুধের খালি প্যাকেটে
ক্ষুদা পেটে রাতে ঘুমুতে যাওয়া মায়ের চোখে।
দারিদ্র্যকে দেখেছি সপ্তাহের পর সপ্তাহ একই তরকারি
খেয়ে স্কুলে যাওইয়া শিশুটির ঠোঁটে।
দারিদ্র্যকে দেখেছি জীবনে দাওয়াত না পাওয়া
কুরিল বস্তির করিমন বেওয়ার চোখে।
দারিদ্র্যকে দেখেছি জীবনে যার কোন করমর্দন নেই
তার করমর্দনলিপ্সু হাতের মধ্যে।
টাকার অভাবে বাজার করতে না পারা বৃদ্ধের চোখে
বানের জলে ভেসে যাওয়া ঘরের টিনের চালে,
ছোটখাটো শখ পুরণ করতে গেলে
অঙ্ক এসে যাদের পথ আটকে দাঁড়ায়,
দারিদ্র্যকে দেখেছি তাদের শূন্য দৃষ্টির মধ্যে।
দারিদ্র্য তোমাকে দেখেছি একাকিত্ব গ্রাস করা মানুষের মধ্যে
দারিদ্র্যকে দেখেছি নেশার মায়জালে জড়া বেকার যুবকের মধ্যে।
এই সামাজিক ব্যাধিকে দেখেছি তার চোখে
যে নিজের পাতে ঝোল টেনে নেয়
ভিড়ের মাঝে লুকিয়ে থেকে ঝামেলা এড়িয়ে।
দারিদ্রকে দেখেছি তার মধ্যে যে গরীবের পেটে লাথি মারে
যে গরীবের পাকা ধানে মই দেয়।
আবার দারিদ্র্য তোমাকে দেখেছি যুদ্ধাস্ত্র বানানোর ল্যাবরেটরিতে
দারিদ্র্য তোমাকে দেখেছি মানহীন শিক্ষকের ক্লাশে
দারিদ্র্যকে দেখেছি লিঙ্গ অসাম্যের মধ্যে
হে দারিদ্র্য, সর্বোপরি তোমাকে দেখেছি
তার মধ্যে যার শুধু পকেট ভর্তি টাকা আছে,
কিন্তু আর কিছুই নেই।
টরন্টো, কানাডা