অনলাইন ডেস্ক : রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে যে আগ্রাসন চালিয়ে আসছে, সক্ষমতা অনুযায়ী মস্কোকে তার পাল্টা জবাব দিচ্ছে কিয়েভ। এমন পরিস্থিতিতে গত ২ মার্চ রাতে ইউক্রেনের অলভিয়া হামলার শিকার হয় জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’। জাহাজটিতে থাকা ২৯ জন বাংলাদেশি নাবিকের একজন হাদিসুর রহমান নিহত হন।
এক সপ্তাহ পরে ওই হামলায় বেঁচে যাওয়া ২৮ নাবিককে আজ বুধবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দুপুরে তারা ঢাকা পৌঁছেছেন। নিহত ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুরের পরিবার ভেবেছিল- এই ২৮ জনের সঙ্গে হাদিসুরের মরদেহও আসবে। সে জন্য তারা বিমানবন্দরে এসে অপেক্ষা করছিলেন।
কিন্তু শেষমেশ জানা গেলো- রকেট হামলায় নিহত ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মৃতদেহ ইউক্রেনের একটি হিমাগারে রাখা হয়েছে। যুদ্ধের কারণে আপাতত তার মরদেহ আনা না গেলেও পরে সুবিধাজনক অসময়ে সেটি দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
বাস্তবতা হয়তো এমনই। তবে প্রিয়জন হারানো স্বজনোর মন এমন সান্ত্বনায় কি গলে! তাইতো বিমান বন্দরে অপেক্ষমাণ স্বজনদের আইজারিতে ভারী হলো চারপাশের আকাশ-বাতাস।
বড় ভাইকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স কান্না, আহাজারি, বিলাপ, মাতম; তার সবই যেন তিনি প্রকাশ করছিলেন শোকের প্রচণ্ড কাতরতায়- ‘ও ভাই, আমার ভাইরে আইনা দেন। ও ভাই, আমার পড়ালেখার খরচ কে চালাবে। আমাদের সব শেষ, ভাইরে.., আমার ভাই…।’
দুপুর ১টার কিছু আগে শাহজালাল বিমানবন্দরের সিআইপি গেটে এসে পৌঁছান হাদিসুরের ভাই প্রিন্স। কয়েক মিনিট অপেক্ষার পর ভাই, ভাই বলে চিৎকার করতে থাকেন তিনি। এক পর্যায়ে কণ্ঠ ভেঙে আসে তার। কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন প্রিন্স।
বেশ কিছুটা সময় ভাই, ভাই বলে মেঝেতে গড়াগড়ি করতে থাকেন প্রিন্স। পরে তিনি উঠে দাঁড়ান। আবার ভাই, ভাই বলে চিৎকার করতে থাকেন। এসময় বিমানবন্দরে উপস্থিত সবার মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকের চোখ ভিজে যায় হাদিসুরের ভাইয়ের কান্নায়।
প্রিন্স বলেন, ‘আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি আমার ভাই (মরদেহ) আসবে। আমার ভাই, কখন আসবে সেটা জানতে চাচ্ছি। কিন্তু তারা কিছুই বলছে না।’
প্রিন্স যেখানে কান্নাকাটি করছিলেন তার একটু সামনে গেটের বাইরে নিহত নাবিক হাদিসুরের বাবা-মাও কান্নাকাটি করছিলেন। হাদিসুরের বাবা একবার মেঝেতে পড়ে যান। তিনিও আহাজারি করতে থাকেন ‘আমার ছেলেরে আইনা দাও, আইনা দাও’ বলে।