শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : যাত্রা পথে সব সময়ই চোখে পড়ে বন মোরগের উড্ডয়ন, ওরা উড়ে এসে আমার মাথার উপর চক্কর দেয়, রাস্তার পাশের ধান ক্ষেতের ধান এখনও পাকেনি, পাখীগুলো ক্ষেতের মাঝে খাবার অনুসন্ধান করে, খুঁজে শস্য দানা! এমনও হয়েছে, একবার একটা বড় হলুদ রঙের চড়ুই পাখী সাহস করে নেমে এসে বসে ছিলো আমার ভ্রমণ সামানের উপর। ধীরে সুস্থে কোন জোরজবরদস্তির তাড়াহুড়া ছাড়াই পাখীটা রেখে গেছে এক কণা ধূসর সাদা রঙের পক্ষী বিষ্টা! কিশোর বয়সে ঝিঁঝি পোকার প্রতি আমার ছিলো প্রবল আসক্তি! তরুণ বয়সে আমার সবচেয়ে প্রিয় জীবন ধারী বস্তু হচ্ছে স্বাধীন ভাবে শূন্য মহাকাশে উড়ে বেড়ানো, মাথার উপর চক্কর দেয়া এই উড়ন্ত পাখীগুলো ! আমি বিশটারও বেশী পাখীর নাম মুখস্থ বলতে পারি। আমি এই পাখী গুলোকে আলাদা করে চিনি, আর এদের ডাকের শব্দ অনুকরণ করতে পারি। নিস্তব্ধ একাকি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার মাঝে আমার নজরে এসেছিলো, আমারই মতো একা ভ্রমণরত বিদ্যার্থী ও ব্যবসায়ীদের। আমি কখনও-ই ঐ মানুষদের সাথে কথা বলতাম না, কিন্তু একা আর নিঃস্তব্ধ পরিবেশের ধূলায় ধূসর পথে চেষ্টা করতাম পাখীদের আত্মার সাথে বাক্যালাপ করার!

ওয়াং——-ওয়াং! আমি শূন্যে ভাসমান পাখীদেরকে উদ্দেশ্য করে উচ্চ স্বরে বললাম!
ওয়াং——- ওয়াং——- ওয়াং! খুব শীঘ্রই ঝাঁক বেঁধে উড়ে চলা পাখীদের প্রতি-উত্তরের আওয়াজ আমার কন্ঠ স্বরকে ঢেকে দিলো!

পাখীদের পর্যবেক্ষণ, দড়াবাজী খেলোয়াড় দল অনুসন্ধানের প্রতি আমার আকাঙ্ক্ষাকে আরও বেগবান করলো। আমি নিজেকে লক্ষ্য করছি, আমার মনে হচ্ছে আমার হৃদয় বিহঙ্গকুলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, আর একই সাথে আমি অবজ্ঞা করি আকাশের নীচে জমিনে বিচরণ করা অন্য সব প্রাণীকে! আমার দৃষ্টিতে মনে হয়, পাখীদের উড়াল দেয়ার অনুকরণ করার সবচেয়ে কাছাকাছি কাজটাই হচ্ছে নৈপুণ্যের সাথে দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার চূড়ান্ত কলা কৌশল যা হতে পারে একটা পরিপূর্ণ শিল্প কর্ম! এক টুকরা নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে পাকানো দড়ি, অনেক উঁচুতে দু’টি খুঁটির মাঝে বাঁধা আছে, এক জন মানুষ ভাসমান মেঘের মতোই উপরে উঠছে, টান টান করে টানা দড়ির উপর দিয়ে এক টুকরা মেঘের মতোই যেন ভেসে ভেসে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে! আমার কাছে মনে হয় এক জন দড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে পারা দড়াবাজ শিল্পী সত্যিই যেন একটা মুক্ত স্বাধীন উড়ন্ত পাখী!

ফিন চৌ শহর-এর শহরতলীর কাছাকাছি পৌঁছাবার পর, আমার মনে হলো আশেপাশের গ্রাম গুলো যেন ঢাকা পড়ে আছে একটা অস্বাভাবিকতার আবরণে! যত্রতত্র সবখানে লম্বা সরু সাদা রঙের শোক পতাকা উড়তে দেখা যাচ্ছে ! অনেক দূর থেকে ভেসে আসা ঢোলের বাদ্য আর সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার তীক্ষ্ণ শব্দ কানে আসছিলো বড় রাস্তার উপর থেকেই! পুরনো দিন গুলোতে ফিন চৌ-র দিকে যাওয়া মহাসড়ক সব সময়ই সরব থাকতো মানুষ আর যানবাহনের ভীড়ে! আর এখন রাজ পথ প্রায় ফাঁকা, যা দেখে আমার মনের গভীরে সঞ্চার হলো এক ধরনের সন্দেহের! আমি প্রথমেই ভাবলাম যুদ্ধ জনিত কারণে আসা দুর্ভাগ্যজনক বিপর্যয়ের কথা। হতে পারে নতুন সিংহাসনে বসা তুয়ান ওয়েন এবং পশ্চিম অঞ্চলের সুবাদার চাও ইয়াং-এর মাঝে বিদ্যমান পুরনো একতা ভেঙ্গে গেছে, এক জন আরেক জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা শুরু করেছে, শুরু হয়েছে বিপরীতমুখি যুদ্ধ! কিন্তু আমার দৃষ্টি সীমার মধ্যে ফিন চৌ সংলগ্ন এলাকায় আমি যুদ্ধের কোন চিহ্নই দেখতে পাচ্ছি না। সূর্যাস্তের পরে গোধূলি বেলায় নগর প্রাকার আর নগর পরিখার পানিতে বিরাজ করছে একটা ভাবগাম্ভীর্য পূর্ণ শান্ত পরিবেশ। হালকা ধূসর রঙের সাধারণ মানুষের ঘর-বাড়ী, হলুদ ধূলার রঙের মঠ-মন্দির এবং মেঘের ভিতরে ঢুকে পড়া নয় তলা বিশিষ্ট সুউচ্চ বৌদ্ধ মন্দিরের চূড়া আগের মতোই গ্রীষ্ম দিবসের উদ্বায়ী বাষ্পের রহস্যময় ঘন কুজ্ঝটিকার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে।

একটা কিশোর বয়সের ছেলে লম্বা একটা বাঁশের টুকরা ওর মাথার উপর তুলে ধরে কয়েকটা পুরনো গাছের চারিদিকে ঘুরছে, আমি দেখতে পেলাম, সে বাঁশ খন্ডটা উঁচু করে ধরে গাছের উপরে থাকা পাখীর বাসা বরাবর খোঁচা দিতে উদ্যত হলো! সে পাগলের মতো লাফিয়ে উঠলো, ওর মুখ থেকে অনর্গল বেরিয়ে আসছিলো নোংরা গালি! ঘাসের ডাটা জোড়া দিয়ে তৈরী করা অনেক গুলো পাখীর বাসা বাঁশটার খোঁচায় স্থানচ্যুত হয়ে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে বাতাসে ভেসে ভেসে নীচে নেমে আসছিলো। আমার চোখের সামনেই মাটিতে পড়া একটা পাখীর বাসা পাড়া দিয়ে চুরমার করে দিলো ঐ ছেলেটি! আমি দেখলাম একটা সরু বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ছেলেটি পাখীর বাসার ভেতরের জিনিস খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বার করছে, আমার নজরে আসলো রাস্তার পাশে ধূলার উপর স্তূপ করে রাখা এক গাদা ভেঙ্গে যাওয়া পাখীর ডিম। খানিকটা দূরে পড়ে আছে পালক খসে যাওয়া পেট ফুলে থাকা একটা মরা পাখী! কিশোর ছেলেটির অদ্ভুত আচরণ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। সামনে ছিলো একটা ছোট নালা, আমি লাফ দিয়ে নালা পেড়িয়ে দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে পৌঁছালাম। আমি দেখলাম কিশোরটি ওর কাজ থমিয়েছে! চোখ বড় বড় করে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাচ্ছে! এবার বড় বাঁশের খন্ডটা আবার হাতে নিলো সে, তারপর আমার দিকে তাগ করলো!

“কাছে এসো না, তোমার গায়ে সংক্রামক রোগের জীবাণু আছে কি?”, কিশোর বয়সের ছেলেটি আমার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললো !

“কোন্ সংক্রামক রোগ?”, আমি বুঝতে না পেরে হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। নিজের শরীরের দিকে তাকালাম। আমি বললাম, “আমার কি ভাবে সংক্রামক রোগ থাকবে? আমি ভাবছিলাম তোমার কাছে জানতে চাইবো, এখানে আসলে কি ঘটছে? অযথা তুমি কেনোই বা পাখীর বাসা গুলো পাড়া দিয়ে মাড়িয়ে ধ্বংস করছো! তুমি কি মনে করো না, জীব জগতের মধ্যে পাখীদের আত্মাই সবচেয়ে উঁচু মর্যাদার?”
“আমি এই পাখী গুলোকে ঘৃণা করি!”, সে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে পাখীর বাসার ভিতরের জিনিস আবার খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বার করতে লাগলো। সে কঞ্চির ডগা দিয়ে নাড়া চাড়া করতে লাগলো বাতাসে শুকিয়ে যাওয়া কিমার মতো গোশত এবং কালো হয়ে যাওয়া আমার অচেনা কোন এক ধরনের গৃহপালিত পশুর অন্ত্র! ওগুলো নাড়তে নাড়তে কিশোরটি বললো, “ফিন চৌ শহরে আসা মহামারী এরাই ছড়িয়েছে! আমার আম্মা বলেছেন, এই পাখীগুলো মহামারীকে সাথে করে নিয়ে এসেছে গ্রামের মধ্যেও! প্রাণনাশ করেছে আমার আব্বার এবং আমার মেঝ ভাই-এর!

এত ক্ষণে আমি বুঝতে পারলাম যে ফিন চৌ শহরের বিপর্যয়টা এসেছে বিশেষ ধরণের বড় মহামারী থেকে! আমি সচকিত হয়ে অনেকক্ষণ যাবৎ কোন কথা না বলেই অল্প বয়সী ছেলেটির সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর ঘাড় ফিরিয়ে দূরের ফিন চৌ শহরের দিকে তাকালাম। আমি যেন অস্পষ্ট দেখতে পেলাম ওখানে আছে অসংখ্য শোক পতাকার সাদা ছায়া! এখন আমি উপলব্ধি করতে পারছি, নগর প্রাকার ও পরিখার উপরে থাকা রহস্যময় কুজ্ঝটিকা আসলে বিপর্যয় থেকে নির্গত হয়ে আসা একটা আলোর রশ্মি!

“শহরের মধ্যে যুদ্ধ চলছে মোট এগারো দিন, শুনেছি নতুন সিয়ে সম্রাট এবং উত্তর অঞ্চলের সুবাদার-পুত্রের সাথে সংগঠিত হয়েছিলো যুদ্ধটা! মাটিতে পড়েছিলো নয় হাজার সেনা কর্মকর্তা আর সৈনিকের মরদেহ! লাশগুলো রাস্তার পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছিলো। কেউ-ই ওদেরকে বিক্ষিপ্ত আর বিশৃঙ্খল গণকবর গুলোতে নিয়ে যায় নাই! এ রকম গরম আবহাওয়ায়, মৃত দেহ গুলো পঁচে ফুলে উঠে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে!”, অল্প বয়সী ছেলেটি অবশেষে হাতে থাকা বাঁশের খন্ডটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো। আমার প্রতি ছেলেটির ভয় জাগানো সন্দেহ মোটামুটি ভাবে কেটে গেছে! মহামারী বিষয়ে ছেলেটির আগ্রহ ব্যপক! সে বললো, “মৃত দেহ গুলোর সবই পঁচে গেছে, বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। মাছি এবং ইঁদুর মরা মানুষের পেটের মধ্যে ঢুকছে বের হচ্ছে, আসা যাওয়া করছে! আরও আছে এই পাখী গুলো যারা ঝাঁক বেঁধে শহর বরাবর উড়ে যাচ্ছে, যাচ্ছে শহরের ভিতরে! শুয়োরের মতো গৃহ পালিত প্রাণী গুলো উদর পূর্তি করছে আজে বাজে জিনিস খেয়ে। প্রাণঘাতী রোগের ছড়িয়ে পড়ার শুরুটা হয়েছে এ ভাবেই! আপনি কি বুঝতে পারছেন? মরণ ব্যাধি মহামারী এ ভাবেই বিস্তার লাভ করেছে, পড়েছে ছড়িয়ে! ফিন চৌ শহরে এরই মধ্যে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের, আমাদের গ্রামেও মারা গেছে বেশ কয়েক জন, গত পরশু মারা গেছেন আমার আব্বা, গতকাল মারা গেছে আমার মেঝ ভাই! আমার আম্মা বলেছেন, আরও কয়েকটা দিন পরেই আমরা মা-ছেলে দু’জনই মরতে যাচ্ছি!”

“যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমরা এ জায়গা ছেড়ে চলে যাচ্ছো না কেনো? পালাচ্ছো না কেনো?”
“পালানো যাবে না!”, ঠোঁট কামড়িয়ে ছেলেটি বললো। ওর চোখ থেকে হঠাৎ করেই জমে থাকা এক বিন্দু অশ্রæ বেরিয়ে আসলো। সে মাথা নীচু করে বললো,” আমার আম্মা আমাকে পালাতে দিবেন না! আমাদেরকে বাড়ীতে থাকতেই হবে, এক পরিবারের সকলেই যদি মরেই যায়, তবে সবাই এক সাথে এক জায়গায়ই মরবো!”
কোন একটা ব্যাখ্যাতীত কারণে হঠাৎ করেই গা কাঁটা দিয়ে উঠলো, শীত করতে লাগলো! মৃতদের আত্মাকে পাহারা দেয়ার দায়িত্ব নেয়া ঐ কিশোর ছেলেটির দিকে আমি শেষ বারের মতো তাকালাম। তারপর দ্রæত বড় রাস্তায় উঠেই ছুটলাম! অল্প বয়সী ছেলেটা পিছন থেকে উচ্চ স্বরে বললো, “জনাব, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”

আমি এক বার ভাবলাম ছেলেটিকে বলি যে, পুরো গ্রীষ্মকালটা ধরে কঠিন বৈরী পরিবেশের ভেতর দিয়ে ক্লান্ত শ্রান্ত দেহটা টেনে টেনে নিয়ে ধীর পদক্ষেপে হেঁটে হেঁটে আমি এসেছি ফিন চৌ-তে দড়াবাজীগর দলের পদ-চিহ্ন খুঁজতে! আমি ওকে সব কিছুই খুলে বলবো বলে ভাবছিলাম। কিন্তু বিমূর্ত কঠিন উপলব্ধির বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা কি ভাবে শুরু করবো সেটা ভেবে পাইনি, তাই ওকে আর কিছু বলা হয় নাই! ঐ অল্প বয়সী ছেলেটি কয়েকটা শোক নিশানের মাঝে থাকা একটা নতুন কবরের উপর এসে দাঁড়ালো। একটা প্রশংসা ভরা দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে সে আমাকে যেন বিদায় দিলো এই বিপর্যয় গ্রস্ত এলাকা থেকে! আমি তাকে উদ্দেশ্য করে কি বলবো? সব শেষে আমি পাখীর ডাক অনুকরণে শব্দ করে ওর প্রতি আমার বিশেষ বিদায় বার্তা জ্ঞাপন করলাম!

ওয়াং —— ওয়াং!
আমার আর কোন কারণ নাই যে আমি আবার ফিন চৌ শহরে ফিরে আসবো, এখন আমি আমার গন্তব্য হারিয়ে ফেলেছি! পুরো একটা গ্রীষ্মকাল ব্যপী দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া ভ্রমণের উদ্দেশ্য যেন হয়েছে একেবারেই নিষ্ফল, করেছি চূড়ান্ত বোকামি! সামনের রাস্তাটা ভাগ হয়ে চলে গেছে দু’দিকে, কোন দিকে আগাবো বুঝতে পারছিলাম না, কি করবো ভেবে চার দিকে তাকাবার সময় দেখতে পেলাম, একটা ঘোড়ার গাড়ী ফিন চৌ শহরের দিক থেকে খুব দ্রæত পাগলের মতোই ছুটে আসছে! ঘোড়ার গাড়ীর চলক পুরুষ মানুষটির দেহের উপরের অংশ উদাম, জামা গায়ে দেয় নাই!
আমি শুনতে পেলাম, অদ্ভুত উত্তেজিত কন্ঠে সে গান গাইছে : “বেঁচে থাকা ভালো,
মরে যাওয়াও ভালো,
তবে হলুদ মাটির কবরে ঢুকা সবচেয়ে ভালো!”

অল্পক্ষণ পরেই ঘোড়ার গাড়ীটা আমার সামনে এসে পৌঁছালো, গাড়ী চলকের মাথার উপর এক ঝাঁক কালো রঙের বড় মাছি ভন ভন গুঞ্জনে উড়ে চলছে! সবশেষে আমি পরিষ্কার দেখতে পেলাম, গাড়ীটাতে বোঝাই করা আছে এক গাদা পঁচা গলা মৃত দেহ! মৃত দেহ গুলোর মধ্যে আছে তরুণ সৈনিকদের লাশ, আরও আছে সাধারণ বেসামরিক মানুষের মর দেহ! স্তুপ করে রাখা মৃত দেহ গুলোর শীর্ষ স্থানে রাখা আছে একটা পাঁচ ছয় বছরের বাচ্চার লাশ! আমি লক্ষ্য করলাম মৃত শিশুটির বাহুতে দৃঢ় ভাবে গেঁথে দেয়া হয়েছে একটা ছোট কাঁসার তৈরী ছুরি!

ঘোড়ার গাড়ীর চালক মারমুখী ভঙ্গিতে ঘোড়ার চাবুকটা আমার বরাবর তাক করলো, তারপর হঠাৎ করে অদ্ভুত ভাবে পাগলের মতো অট্টহাসি হেসে বললো, তুমিও আসো, গাড়ীতে ওঠো! সবাই আসুক গাড়ীতে, আমি তোমাদের সবাইকে এক সাথে গণ কবরের কবরস্থানে নিয়ে যাবো। আমি অবচেতন ভাবেই রাস্তার পাশে সরে দাঁড়ালাম। এড়িয়ে গেলাম পাগলের মতো ছুটে আসা মৃত দেহবাহী গাড়ীটাকে। ঘোড়ার গাড়ীর চালক সম্ভবত একজন বদ্ধ উন্মাদ! সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার অট্টহাসি দিয়ে ঘোড়ার গাড়ী ছুটিয়ে খানিকটা পথ গিয়ে, হঠাৎ করেই ঘাড় ফিরিয়ে আমার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললো, “তুমি তো মরতে চাও না, তাই নয় কি? যদি তুমি মরতে না চাও, তবে দক্ষিণে যাও, দক্ষিণ বরাবর যাও, থামতে যেও না পথে!”
দক্ষিণ দিকে হাঁটা! সম্ভবত এখন কেবল দক্ষিণ বরাবর যাওয়াই এক মাত্র উপায় , আমার নির্বাসনে যাওয়া পালানোর পথগুলো এরই মধ্যে তালগোল পাকিয়ে পুরপুরি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে! (চলবে)