সোনা কান্তি বড়ুয়া: জয় বাংলার শহীদ দিবসে চোখে আসে পানি / বাংলা ভাষার জন্যে বাঙালির জীবন কুরবানি।
আমার দেশ আমার পরম তীর্থভূমি এবং অমর একুশের রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানকে পরাজিত করে প্রতিষ্ঠত “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” আলোকিত বিশ্বের গৌরবোজ্জ্বল প্রতিশ্রুতি। বিশ্বশান্তি স্থাপন করতে পৃথিবীর সর্বপ্রথম বাংলা বইয়ের নাম ‘বৌদ্ধ চর্যাপদ! একুশের আলোকে হিংসা ও লোভের নাম ধর্ম নয়। আসে ফাল্গুন লাগলো যে আগুন / শহীদের অমর বলিদানি / শহীদ দিবসে চোখে আসে পানি / এসো স্মরণ করি সত্তর বছর আগের কুরবানি। মসজিদ মন্দিরে যাবার আগে / বাঙালী মন হঠাৎ করে চলে যায় শহীদ মিনারে।
সত্তর বছর আগে বাংলার ভাষার স্বাধিকার, মর্যাদা রক্ষার লড়াই বীজ বুনে দিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রামের। দ্বিজাতিতত্তে¡র ভিত্তিতে ভাগ হওয়া ভারতবর্ষে বঙ্গবাসীর টনক নড়ে ভাষার প্রশ্নেই। মায়ের ভাষা কেড়ে নেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা। কিন্তু বীর বাঙালি দমে যায় না। রাজপথ প্রকম্পিত করে হুঙ্কার ছুঁড়ে, মারণাস্ত্রের মুখে বুক চিতিয়ে এগিয়ে যায়। ভেঙ্গে দেয় নিয়মের শৃঙ্খল। জাতির আত্মপরিচয়ে ‘বৌদ্ধ চর্যাপদ! চর্যাপদে বৌদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ Against of Sen dznasty in 1135 এবং গণহত্যায় চারশত বছরের (৮ম শতাব্দী থেকে ১১ শতাব্দী) বৌদ্ধ রাজত্ব বাংলাদেশ দখল করেছিল! ‘আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভইলী (ভুসুকু আজ আলোকপ্রাপ্ত সিদ্ধপুরুষ বা বাঙালি হলেন)” থেকে ঐতিহাসিক ‘বাঙালি’ শব্দের অভূতপূর্ব সংযোজন হয়েছিল এবং (দি বুক অব এনলাইটেনমেন্ট) ৪৯ নম্বর কবিতায় সর্বপ্রথম ‘বাঙালি শব্দ’ মহাকবি ভুসুকু কর্তৃক আবি®কৃত হল। পূজনীয় ব্যক্তির প্রতি সন্মান প্রদর্শন বাঞ্ছনীয়। ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক শেখড়ের সন্ধানে ইহা ও এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, আমরা ‘বৌদ্ধ চর্যাপদের’ সন্ধান পেলাম আজ থেকে শতবর্ষ আগে।
ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ- বাঙালির সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের কথা অনুষ্ঠানে মনে করিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাতৃভাষার জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন, তার মধ্য দিয়েই রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা! “এবং মানবাধিকারই সর্বকালের ধর্মের মূলমন্ত্র। দেশের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ, কোন রাষ্ঠ্রধর্ম নয়! আমাদের বাংলাদেশ আমাদের ধর্ম! জনঅরণ্যের নরদেহধারী পাকিস্তানের মানব সমাজে পশু মানুষের কি ভাই বোন নেই?
সময় এসেছে সা¤প্রদায়িক ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। কেউ হিন্দু আর কেউ মুসলমান / কেউ বৌদ্ধ আর কেউ খৃষ্টান। সবাই মিলে আমরা বাঙালী। / যারা খুন হলো রাজপথে সে তো বাংলা মায়েরই সন্তান। / শহীদ দিবসে আসে চোখে পানি / এসো স্মরণ করি কুরবানি।
১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ব দলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ছাত্র আবদুল মতিন ওগাজীউল হক উভয়ই ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার প্রস্তাব করলে চতুর্দিকে গগন বিদারী শ্লোগান ওঠে, ১৪৪ ধারা মানি না। ইসলাম ধর্মকে তলোয়ার বানিয়ে পাকিস্তান ১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষা আন্দোলনে পাকিস্তান রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য জয় বাংলার সালাম বরকত রফিক জব্বারসহ অনেক নাম না জানা শহীদদের হত্যা করেছিল! ইসলাম ধর্মকে তলোয়ার বানিয়ে বাংলাদেশে বাঙালি জাতির ফরমহরঃু ৎবংঢ়বপঃ ও মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই ছিল পাকিস্তানের রাজনীতির ইসলাম ধর্ম! ধর্মের নামে অবিচারকে বাদ দিয়ে বাঙালি জাতি এক তাবদ্ধ হয়ে মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার জন্যে প্রান দান! রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের ক্ষেত্রে বাঙালির অখন্ড সাধনা এবং এই অখন্ড সাধনার ফলেই সালাম বরকত রফিক জব্বারের স্মৃতি, এসো স্মরণ করি ভাইদের কুরবানি। জয় বাংলার শহীদ দিবসে চোখে আসে পানি / বাংলা ভাষার জন্যে বাঙালির জীবন কুরবানি। কবিতা লিখি:
অগ্নিগিরি জেগে ওঠে শহীদ মিনারের পাশে।
আটই ফাল্গুনে দেখি কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে আগুন,
যেন বাঙালি মনের অগ্নিগর্ভ।
কবি সরহপাদ বাংলাভাষা ও সাহিত্যের আদি পুরুষ চর্যাপদ যুগের!
মসজিদ মন্দিরে যাবার আগে
বাঙালি মন হঠাৎ করে চলে যায় শহীদ মিনারে।
মৃত্যুর পর মৃত্যু পেরিয়ে বাঙালির ৮ই ফাল্গুন
বা একুশ প্রত্যহ বাঙালির রক্তে রক্তে প্রবহমান।
শহীদের আত্মদান দেখিয়াছি আমি, তাই কোরবানির মর্মার্থ –
বিশ্লেষণ করতে চাই না আর।
জয় মানবতার জয়। গৌতমবুদ্ধের মহাশান্তি মহাপ্রেম কে নিয়ে লেখা বাংলা ভাষার প্রথম বইয়ের নাম গৌরবোজ্জ্বল বৌদ্ধ চর্যাপদ! একুশে ভাষা আন্দোলনের আলোকে বাংলা ভাষা এবং একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্যে “কত প্রাণ হল বলিদান / লেখা আছে অশ্রæজলে।” চর্যাপদের অপাপবিদ্ধ সিদ্ধপুরুষ কবি ভুসুকু ‘বাঙালি’ শব্দের আবিষ্কারক ছিলেন। পাল রাজত্বের চারশত বছরকে (৮ম শতাব্দী থেকে ১১ শতাব্দী) বাঙালি জাতির এনলাইটেনমেন্ট যুগ বলা হয় এবং সেই যুগে বুদ্ধাব্দই (গৌতমবুদ্ধের জয়ন্তি সাল) বঙ্গাব্দ ছিল।
লপরিক্রমায় আবার ফিরে এসেছে একুশের সেই ক্ষণ। মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত সেই একুশে ফেব্রæয়ারি উদযাপন করছে বাংলাদেশ। বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে বীর সন্তানদের। রফিক, শফিউদ্দিন, বরকতদের সেদিনের রক্ত বৃথা যেতে দেয়নি বাংলাদেশ। ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ের সেই দিনটি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের বহু দেশে একযোগে উদযাপিত হবে মাতৃভাষা দিবস। প্রতিটি দেশ, রাষ্ট্র ও জাতিসত্তা নিজ নিজ ভাষার স্বাতন্ত্র্য, মর্যাদা ও ঐতিহ্যের কথা বলবে এদিন।
নানা ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর বিদীর্ণ করে ১৯৭১ সা লের ২৬শে মার্চে প্রতিষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস! বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে অভিযোগ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হলো না কেন? ১৯৪৭ সালে ১৪ আগষ্ট পাকিস্তান কি ভাবে বাংলাদেশ কে অন্তর্ভুক্ত করলেন? জয় বাংলার স্বাধীনতা দিবসে চোখে আসে পানি / বাংলাদেশের জন্যে বাঙালির জীবন কুরবানি। ইসলাম ধর্মের নাম দিয়ে পাকিস্তান বাংলাদেশ কে অন্তর্ভুক্ত করলেন! ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চে পাকিস্তান ইসলামের নাম দিয়ে বাংলাদেশে “অপারেশন সার্চ লাইট নামে বাংলাদেশে পাকিস্তান ইসলাম ধর্মকে তলোয়ার বানিয়ে অপব্যবহার করে ৩০ লক্ষ বাংলাদেশী মানুষ হত্যা, ২ লক্ষ মা-বোনকে ধর্ষণ এবং বুদ্বিজীবি হত্যা করেছিল! রাজনীতির মাফিয়া চক্রে ধর্মের মস্তক বিক্রয়। জয় সত্য ও মানবতার জয়। দেশের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ, কোন রাষ্ট্রধর্ম নয়:! একাত্তরের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের শহীদ মিনারের স্মৃতির সাগর তীরে কবিতা লিখি:
হে মোর চিত্ত গণতীর্থে জাগোরে ধীরে
বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের শহীদ মিনারের স্মৃতির সাগর তীরে।
বাঙালির অন্তর জগতে সালাম-জব্বার-রফিকের কবর, কল্পবৃক্ষের তলে-
পঞ্চাশটি বছর ভিজিয়ে রেখেছে কোটি নয়নের জলে।
হেথায় দাঁড়িয়ে দু’বাহু বাড়ায়ে নমি ভাষা সৈনিকদের সুর্বণ জয়ন্তি।
বাংলা ভাষার অর্ঘ্যে পরমানন্দের বন্দন করি তাঁদের নীতি বিশ্বশান্তি।
ব্রহ্মপুত্র পদ্মা মেঘনা নদ-নদী ভরা বাংলাদেশ আমার,
সুরমা কর্ণফুলির বঙ্গোপসাগর
আনন্দ বেদনা সুখ দুঃখের স্মৃতি ঘেরা এদেশ আমার।
সালাম বরকত রফিক জব্বারের ইহলোক কেড়ে নিল।
পাকিস্তানের রাক্ষুসী বুলেট রাত্রি অন্ধকার।
চলেছে শহীদদের জীবনদান যজ্ঞ, যুগ হতে যুগান্তর পানে-
শত্রæর সকল বন্ধন মাঝে ধরিয়া সাবধানে বাংলা ভাষার মশাল।
শুনিয়াছি মাতৃভাষার জন্য কত যে শহীদ অকাতরে দান করে গেল,
সাধ অহ্লাদ দুর্লভ মানব জীবন। শহীদ প্রাণ যুদ্ধক্ষেত্রে ও সহিয়াছে;
পলে পলে শক্রর আক্রমন বিষাদের জ্বালা-
নাম না জানা শহীদের অলিখিত স্মৃতিতে বিদ্যমান শহীদ মিনারে।
মসজিদ মন্দিরে যাবার আগে
বাঙালী মন হঠাৎ করে চলে যায় শহীদ মিনারে।
শহীদের আত্মদান দেখিয়াছি আমি, তাই কোরবানির মর্মার্থ
বিশ্লেষণ করতে চাই না আর। অগ্নিগিরি জেগে ওঠে শহীদ মিনারের পাশে।
আটই ফাল্গুনে দেখি কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে আগুন, যেন বাঙালী মনের অগ্নিগর্ভ।
কবি সরহপাদ বাংলাভাষা ও সাহিত্যের আদি পুরুষ চর্যাপদ যুগের
অশোকের শিলালিপির মত ইতিহাস বিজয়ী আমাদের শহীদ মিনার।
শহীদের কাফনের মত পবিত্র জাতীয় পতাকা ও সঙ্গীত আমাদের
বাঙালি অস্তিত্তে¡র সর্বকালের অভিব্যক্তি একমাত্র মাতৃকণ্ঠস্বর।
যে কবিতাখানি সযতেœ করেছি রচনা আজ –
তার মাঝে হেরি আমি একুশের ভাষা সৈনিকদের বায়ান্নোর লাশ।
সালাম জব্বার রফিক বরকত জয় করে গেল পাকসেনার প্রেত
অট্টহাসি।
বাংলা বর্ণমালার ও জাতীয় অস্তিত্তে¡র প্রতিসূত্রে উঠিছে উচ্ছসি।
হে মোর চিত্ত গণতীর্থে জাগোরে ধীরে-
শহীদ মিনারের স্মৃতির সাগরে তীরে।
বৌদ্ধ দেশ দখল করার নাম Political হিন্দু ধর্ম! ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধ ত্রিপিটকের পালি বর্ণমালা কে ব্রাহ্মী বর্ণমালা করেছিল! ২৬০০ বছর পূর্বে গৌতমবুদ্ধের ভাষা আন্দোলন! গৌতমবুদ্ধ সংস্কৃত ভাষাকে বাদ দিয়ে তাঁর ভিক্ষুসংঘ এবং জনতাকে পালি ভাষায় উপদেশ দিয়ে ছিলেন। সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারত গোলেমালে হিন্দু ইন্ডিয়া হল কেন? ব্রাহ্মণ শাসিত সংস্কৃত ভাষার ব্রাহ্মণ্যবাদে জাতিভেদ প্রথার দুর্বৃত্তপনা! সম্রাট অশোক ব্রাহ্মণ শাসিত সংস্কৃত ভাষা বাদ দিয়ে পালি ভাষা গ্রহন করেছিলেন। সম্রাট অশোক ব্রাহ্মণ শাসিত সংস্কৃত ভাষা বাদ দিয়ে বৌদ্ধ ত্রিপিটক পালি ভাষায় প্রকাশনা প্রচার ও প্রসার করার দায়িত্ব গ্রহন করেছিলেন।
মহাভারতে হিংসার বিভীষিকা বন্ধ হয়ে গেল একমাত্র গৌতমবুদ্ধের অহিংসা পরমধর্মে। সম্রাট অশোকের শিলালিপি পালি ভাষায় ব্রাহ্মী অক্ষরে বিরাজমান!
হিন্দুধর্মের পূর্বে মহেঞ্জোদারোর হিন্দু রাজনীতির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে মহেঞ্জোদারো মিউজিয়ামে ধ্যানমগ্ন রাজর্ষি মহেঞ্জোদারো (Maha Sudarshan) বোধিসত্ত¡ বিরাজমান! Great Poet Kalidas Kastahari জাতককে (৭) বদলায়ে Shakuntala বানিয়েছে! শ ত শ ত জাতককে বদলায়ে Mr. Somadeva Betal Panchabingsati বানিয়েছে! হিন্দুধর্মের পূর্বে মহেঞ্জোদারোর প্রতœতাত্তি¡ক বৌদ্ধ ইতিহাস বহু দিনের রক্তাক্ত পথ পেরিয়ে, রাজনীতির বহু সঙ্কট পেরিয়ে বাংলাদেশ অর্জন করেছিল বাংলা ভাষার স্বীকৃতি। তাই তো কবি লিখেছেন, ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারও দামে পাওয়া নয়।’ ১৯৪৭; দ্বিজাতিতত্তে¡র ভিত্তিতে ভাগ হল ভারতবর্ষ। প্রায় দুইশ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলের অবসানের পরও বাঙালির নিপীড়ন, যন্ত্রণার শেষ হয়নি। রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক-সবক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তান দমিয়ে রাখতে চাইল বাঙালিদের। নিপীড়নের শুরুটা হল ভাষার লড়াইয়ের। পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে চাইলে পশ্চিমা শাসকরা।’
বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা কি তা মেনে নেয়? দেশজুড়ে বিক্ষোভ দানা বাধে, দিনে দিনে তা পরিণত হয় বাংলা ভাষার আন্দোলনে। প্রত্যুষের সূর্যোদয় থেকে অমাবস্যার ঘন অন্ধকার, পৃথিবী জানল বাঙালি মায়ের ভাষা রক্ষায় রাজপথে নেমেছে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, এছাড়া বাঙালির আর কোনো দাবি নাই। ১৯৪৭ সালের ২৭ নভেম্বর করাচিতে অনুষ্ঠিত শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকায় এ খবর পৌঁছানো মাত্রই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা খাজা নাজিমুদ্দিনের বাসভবনের সামনে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করে।
এর কিছুদিন পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র শেখ মুজিব তার সাংগঠনিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ঢাকায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে গণপরিষদের ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে এক সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
প্রস্তাবটি প্রত্যাখান করে খাজা নাজিমুদ্দিন আইন পরিষদে ঘোষণা দেয়, পূর্ব বাংলার জনগণকে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিতে হবে। কিন্তু নাজিমুদ্দিনের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ছাত্রলীগ, তমদুন মজলিস ও অন্যান্য দলের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
১১ মার্চের ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে শেখ মুজিবসহ অনেক ভাষাসৈনিক সচিবালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার হন এবং ১৫ মার্চ মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পরদিন অর্থাৎ ১৬ই মার্চ শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পুনরায় ছাত্ররা প্রাদেশিক পরিষদ ভবন ঘেরাও করে, সেখানে পুলিশের লাঠিচার্জে অনেকেই আহত হন। জিন্নাহ ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে উর্দুর পক্ষে বক্তব্য রাখে এবং ২৪শে মার্চ কার্জন হলে আয়োজিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বলে ঘোষণা দিলে ছাত্ররা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করে। ভাষা আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনে রূপদান করতে শেখ মুজিব দেশব্যাপী সফরসূচি তৈরি করে ব্যাপক প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন এবং সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
তিনি ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি মুক্তি পান। ১৯ এপ্রিল আবার গ্রেপ্তার হয়ে জুলাই মাসে মুক্তি পান। এরপর তিনি ১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর গ্রেফতার হলে ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান। শেখ মুজিব ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ থেকেও ভাষাসৈনিক ও ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন এবং আন্দোলনকে বেগবান করতে নানা পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ তিনজন দূত মারফত খবর পাঠান, ২১ ফেব্রæয়ারি দেশব্যাপী হরতাল ডাকতে হবে এবং মিছিল করে ব্যবস্থাপক পরিষদের সভাস্থল ঘেরাও করতে হবে। ৪ ফেব্রæয়ারি ছাত্রদের মিছিল শেষে এই ঘোষণা জানিয়ে দেয়া হয়। একপর্যায়ে শেখ মুজিব আমরণ অনশন ঘোষণা করলে ১৬ ফেব্রুয়ারি কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা থেকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তরিত করে।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পূর্ব-বাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের বাজেট অধিবেশনের জন্য নির্ধারিত ছিল। শেখ মুজিবের পরামর্শ ও নির্দেশ অনুযায়ী ঐদিন সারাদেশে সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করা হয়।
পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মুসলিম লীগ সরকার ২০ ফেব্রæয়ারি থেকে ঢাকা শহরে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি এবং সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত ছাত্ররা সেই ১৪৪ ধারা ভেঙেই সেদিন মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায়। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নির্দেশে মিছিলের ওপর পুলিশের গুলি চলে, শহীদ হন রফিক, শফিক, জব্বার, বরকত, শফিউদ্দীন, সালামসহ আরও অনেকে।
এর প্রতিবাদে প্রাদেশিক পরিষদের কয়েকজন সদস্য অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াকআউট করেন।
পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালিত হয়। নিরুপায় হয়ে সরকার সেনাবাহিনী তলব করে, কার্ফু জারি করে এবং প্রাদেশিক পরিষদে বাংলা ভাষার প্রস্তাব গ্রহণ করে। ১৯৫৪ সালের ৮ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। আওয়ামী লীগ সদস্যগণ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
এরই মধ্যে ৩০ মে পাকিস্তানের গভর্নর ৯২(ক) ধারা জারি করে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভাকে ভেঙে দেয়। শেখ মুজিবসহ সব নেতারা গ্রেপ্তার হন। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় মন্ত্রিসভা গঠন করে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়, প্রথম ২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং এই দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে।
সেই সরকারই শহিদ মিনার তৈরি, বাংলা একাডেমি থেকে সাহিত্য-বিজ্ঞানের বই প্রকাশ এবং বাংলা টাইপ-রাইটার উদ্ভাবনের জন্য প্রথম প্রকল্প গ্রহণ করে। দুর্ভাগ্য, ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সামরিক শাসন জারির ফলে সেই আকাঙ্ক্ষাগুলো আর পূরণ হয়নি।
স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা সকল দাপ্তরিক কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তিনি সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করেন। বাংলায় জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা দিয়ে আমাদের মাতৃভাষাকে বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হয়। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে কানাডা প্রবাসী রফিক এবং ছালাম নামে দুজন বাংলাদেশি কয়েকজন আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সদস্য মিলে ‘মাতৃভাষা সংরক্ষণ কমিটি ‘গঠন করে। ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস‘ উদযাপনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব পাঠায়।
জাতিসংঘ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি ইউনেস্কোতে পাঠানোর পরামর্শ দেয়।পরে মাতৃভাষা সংরক্ষণ কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৯৯৯ সালের ৯ অক্টোবর ইউনেস্কোকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি পুনরায় পাঠানো হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রæয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ধর্মান্ধ ইসলাম এমন এক অভিশাপ ধর্মান্ধ জটিল ধাঁধা, যা থেকে নিস্তার পাইনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা! ৭১-এর পরাজিত শক্তিই হিংস্র জীব-জানোয়ারের চেয়েও ভয়ঙ্কর মানুষরূপী কোন জীব। মুসলমান না হলে কি বাংলাদেশের আদর্শবান নাগরিক হওয়া যায় না?
২৫৬৩ বছর পূর্বে বাংলাদেশের সন্তান বঙ্গবীর বিজয় সিংহ শ্রীলঙ্কা জয় করলেন এবং আমাদের ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ আমরা ১৪২৭ বঙ্গাব্দ লিখছি। বাংলাদেশ পাকিস্তানের রাজনীতির যাঁতাকল ভেঙে কি হিন্দুরাজনীতির যাঁতাকলে পড়বে ? কারন বাংলার পাল রাজত্বকে কর্ণাটকের সেন রাজা ধ্বংস করে হিন্দু ধর্মের জাতিভেদ প্রথা প্রতিষ্ঠা করা হল। জড়িয়ে ধরেছি যারে সেই আমার নয়।
গৌতমবুদ্ধ বাংলাভাষা সহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা ব্রাহ্মণদের হাত থেকে রক্ষা করেন (দেশ, কোলকাতা ১ ফেব্র“য়ারী ১৯৯২ এবং নয়া দিগন্ত, এস. কে. বড়ুয়া, ২৫ আগষ্ট ২০১০)। সম্রাট অশোক (A.D 2 300) ব্রাহ্মণ শাসিত সংস্কৃত ভাষার বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলন করে সংস্কৃত ভাষা বাদ দিয়ে পালি ভাষায় তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতিতে (ভিক্ষু সন্মেলন) বৌদ্ধ ত্রিপিটক পালি ভাষায় প্রকাশনা এবং জগং জুড়ে প্রচার ও প্রসার করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!