শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : মানুষ জন একের পর এক ভবনের লাল রঙের সিংহ শাবক দরজা ঠেলে বেরিয়ে আসছিলো, যাদের গলায় ইতিমধ্যেই পড়ানো হয়েছে কাঠের তক্তার বেড়ী। চায়ের দোকানের সামনে ভীড় করা চা খেতে আসা মানুষদের মধ্যে কেউ কেউ হাতে তালি দিচ্ছিলো, বার বার চিৎকার করে ওদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছিলো। এটা আসলে ওদের বুকের ভেতর জমে থাকা দীর্ঘ দিনের ঘৃণা আর ক্রোধের উদগীরণ বৈ অন্য কিছু নয়! আমার কানে আসলো কে যেন বলছে, “এবার পাথর খনি এলাকায় শান্তি পূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসবে।”

চায়ের দোকানের খদ্দেরদের অন্য মানুষের বিপর্যয়ে এমন উল্লাসে মেতে উঠার ব্যাপারটা আমার কাছে রীতিমতো বিস্ময়কর মনে হলো। আমি তাদের মধ্যে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি মঙ কুয়ো চিউ-র প্রতি এত বিরক্ত কেনো, কেনো তাকে এত ঘৃণা করেন?”, আমার এই প্রশ্ন শুনে দোকানে চা খেতে আসা ঐ মানুষটি ঠিক আমারই মতো আশ্চর্য হলো! লোকটি বললো, “বাবাজী, আপনি তো একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করেছেন! ক্ষমতাবান আত্মীয়স্বজনদের জোরে মঙ কুয়ো চিউ মানুষের সাথে বড়াই করে চলতেন, কুকুরের মতো হুমকি দিয়ে ক্ষমতার দর্প প্রকাশ করতেন। তার অত্যাচারের ভুক্তভোগী গ্রামের সাধারণ মানুষ। প্রতিটা শীতকাল আসলেই তিনি ভ্রূণ শিশুদের মগজ ভক্ষণ করতেন নিজ দেহকে পরিপুষ্ট রাখার জন্য। এই পাথর খনি জেলায় কোন মানুষটা জানে না, কোন মানুষটা তাকে ঘৃণা করে না?”

আমি খানিকক্ষণ নির্বাক রইলাম, তারপর ঐ চায়ের দোকানের খদ্দেরকে আবার প্রশ্ন করলাম, “যদি মঙ কুয়ো চিউ-র শিরচ্ছেদ করা হয়, তা’হলে কি পাথর খনি এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে, সব কিছু কি ঠিক হয়ে যাবে?”, চায়ের দোকানের খদ্দের উত্তর দিলেন, “তা কে বলতে পারে? হিংস্র বাঘকে তাড়াবার পর চলে আসতে পারে নরখাদক নেকড়ে! সাধারণ মানুষ তো এতো কিছু বুঝে না, ওদের তো বেশি কিছু করারও নেই! এই পৃথিবীটা এমনই! ধনী মানুষেরা চায় গরীবরা যেন গরীব থাকা অবস্থাই মরে, আর গরীব মানুষেরা তো অনন্যোপায়, ওরা শুধু আশা করে হঠাৎ করেই অপ্রত্যাশিতভাবে যেন আসে বড় লোকদের মরণ!”

আমার আর কিছু বলার ছিলো না। আমার এখনকার গরিবী হালাত আর বিব্রতকর অবস্থা সম্পর্কে চায়ের দোকানের খদ্দেররা যাতে বুঝতে না পারে সেজন্যে, আমি আমার নজর ফিরালাম মঙ বাড়ির লোকদের দিকে, যারা পতিত হয়েছে বিপর্যয়কর অবস্থায়, যাদেরকে তাড়াহুড়া করে সৈন্যরা নিয়ে যাচ্ছে দন্ড কার্যকর করার স্থান দন্ড মাঠ-এর দিকে। ঐ সময় আমার জীবনে দ্বিতীয় বারের মতো দেখতে পেলাম আমার মামাকে যার আসল নাম মঙ ত কুই! প্রথম বার তাঁকে দেখেছিলাম ফং শ্রে-র সাথে আমার জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠানের সময়! শুধুমাত্র সামাজিকতা বজয় রাখার কারণে তিনি এসেছিলেন বিয়েতে, আমার সাথে তাঁর কোন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় নাই, আমার স্মৃতিতে তাঁর ব্যক্তিত্বের কোন ছাঁপ স্থায়ী হয় নাই। আমি কখনও-ই ভাবি নাই, আমার মামা মঙ ত কুই-এর সাথে আরেক বার আমার দেখা হতে পারে এমন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে! স্বাভাবিকভাবেই আমার মনটা দুঃখে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে, কিন্তু আমি তো নিরুপায়! কিছুই করতে পারছি না! গোপনে চোরের মতো ছুটে গেলাম চায়ের দোকানের জানালার পিছনে, সেখান থেকে অপেক্ষায় রইলাম আমার মামা মঙ ত কুই-এর চলে যাওয়ার দৃশ্যটা দেখার জন্য। তাঁকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আমি দেখতে পেলাম, তাঁর চোখ থেকে মিট মিট করে বিকিরণ হচ্ছিলো এক ধরনের ফ্যাকাশে সাদা আলো যার মধ্যে ছিলো হতাশা আর ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ! তাঁর অবয়ব হয়ে গেছে মলিন বিষন্ন, দেহটা হয়ে গেছে শীর্ণকায়। সব রকম মলিনতার মাঝে এক মাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে ওনার মোটা থলথলে দেহের নড়া চড়ার ভঙ্গি, যার কারণ হয়তোবা বাচ্চাদের মগজ থেকে আরোহীত পুষ্টি! এমন ব্যপারটাকে কেউ কেউ তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর সাবলীল গতিময়তার হেতুর সাথে সম্পৃক্ত করছেন। অনেকেই মঙ ত কুই বরাবর থু থু ফেলছিলো। জনতার নিক্ষেপ করা থুথু খুব শীঘ্রই ছিটকিয়ে পড়তে লাগলো তাঁর মুখ মন্ডলে বাড়ি খেয়ে। আমি দেখতে পেলাম, তাঁর গলায় পরানো কাঠের তক্তার বেড়ি সমেত ঘাড়টা ঘুরিয়ে আশে পাশে তাকিয়ে তিনি খুঁজে দেখতে চাচ্ছিলেন ঐ সব থুথু দেয়া লোক জনকে। আমি শুনতে পেয়েছিলাম তাঁর হতাশ কন্ঠের উচ্চ স্বরে পাগলের মতো করা চিৎকার! তিনি বলছিলেন, “কোন মানুষ যখন পড়ে যাচ্ছে তখন তাকে আঘাত করতে হয় না! আমি মরবো না! যারা আমাকে থুথু দিচ্ছো, তোমরা কেউ ই পালিয়ে যেতে পারবে না। তোমারা অপেক্ষায় থাকো, আমি ফিরে আসবো? ফিরে এসে আমি তোমাদের মগজ চুষে নিবো!”

চৌ রাস্তায় জমায়েত হওয়া মানুষের ভীড় আস্তে আস্তে কমে যেতে লাগলো। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসলো। চায়ের দোকানের খদ্দেররা এক এক করে দোকানের ভিতরে ঢুকতে শুরু করলো। দোকানের কর্মচারী চীনামাটির কেতলিতে আরেক বার চায়ের পানি ফুটানো শুরু করলো। আমি আগের মতোই জানালার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু আগে শেষ হওয়া দুঃস্বপ্নের মতো বাস্তব ঘটনাটির স্বাদ যেন এখনও অনুভব করতে পারছি!
হতভাগা, হতভাগ্য! জীবন এবং মৃত্যুর উত্থান ও পতন! আমার দুঃখ ভারাক্রান্ত আবেগের অর্ধেকটা জুড়ে আছে মঙ পরিবারের সদস্যদের কথা মনে করে, যাদেরকে দন্ড মাঠে নিয়ে জমায়েত করা হয়েছে। বাকী অর্ধেকটা নিঃসন্দেহে আসছে আমার নিজের স্বতঃস্ফূর্ত অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ থেকে! চায়ের দোকানের ভিতরের গরম বাতাস আর চা খেতে আসা দোকানের খদ্দেরদের শরীরের ঘামের গন্ধ মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে! একটা মাদী বিড়াল একটা মরা ইঁদুর মুখে নিয়ে আমার পায়ের পাশ দিয়ে নিঃশব্দে চোরের মতো ছুটে চলে গেলো। এমন হট্টগোল পূর্ণ খুনের জিঘাংসায় আচ্ছন্ন মানুষে ভরা রাস্তার পাশের চায়ের দোকান, এমন নিষ্ঠুর ফোসকা পড়া তীব্র গরমের গ্রীষ্ম দুপুর!

আমি হন্তদন্ত হয়েই ত্যাগ করতে চাইলাম চায়ের দোকান এবং আকাশ ছোঁয়া অসন্তোষে স্ফীত হওয়া চা খেতে আসা খদ্দেরদের! কিন্তু হঠাৎ করেই মনে হচ্ছে, আমার পা যেন আর চলতে পারছে না! আমার গোটা শরীরটা হয়ে গেছে দুর্বল তুলার মতো নরম, যেন ভেসে চলে যাবে চায়ের দোকানের ময়লা দূষিত বাতাসের মধ্যে! আমার সন্দেহ হচ্ছে, আমার জ্বরের ঘোরের অসুখটা আবার ফিরে এসেছে! তাই আমি পাশে থাকা নীচু জল চৌকিটার উপর বসে পড়লাম। প্রয়াত সম্রাটের পবিত্র আত্মার আশীর্বাদ চাইলাম আমার শারীরিক সুস্থতার জন্য। আমি ঈশ্বরের কৃপা চেয়ে মনে মনে বললাম, নির্বাসনে পালানোর পথে অনুগ্রহ করে আমাকে অসুস্থতায় নিপতিত করবেন না!

খাটো বামন আকৃতির এক জন, যাকে দেখে চায়ের দোকানের কর্মচারী বলে মনে হচ্ছে, দৌড়ে আমার পাশে আসলো। সে নিয়ে এসেছে একটা তেল চিট চিটে চায়ের কেতলি। আমি তার উদ্দেশ্যে মাথা নাড়লাম। এমন একটা গরমের দিনে, এখানকার স্থানীয় চায়ের দোকানের খদ্দেরদের মতো তেল তেলে চায়ের পানি পেটের মধ্যে চালান করতে পারবো না। বামন কর্মচারীটি আমার মুখের দিকে তাকালো। একটা হাত তুলে আমার কপাল স্পর্শ করলো, “বৎস, তোমার তো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে”, সে বললো,
“কাকতালীয় ব্যাপার! মেই চিয়া নামের চায়ের দোকানের গরম চা খিচুনি আর জ্বর নামানোর কাজে অব্যর্থ! বৎস, তুমি তিন পেয়ালা ‘মেই চিয়া’ চায়ের দোকানের চা খাও, তোমার অসুখ পুরোপুরি সেরে যাবে।”, এই চা বিক্রির ধন্দা করা বামন কর্মচারীটির সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছিলো না আমার। তাই আমি ‘না’ সূচক মাথা নাড়লাম। আমার মনে হচ্ছে, আমার একটু বিশ্রাম করা দরকার। এ জন্য এক কেতলি চা এর দাম বাবদ একটা খুচরা রূপার খন্ড আমি টাকার থলে থেকে বের করে দিলাম। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের টাকা পয়সার লেনদেন —- এমন কাজের অভিজ্ঞতা আমার আগে কখনোই হয় নাই! কিন্তু আমি জানি, আমার এই ভ্রমণ পথে এ কাজগুলোই মাছির ঝাঁকের মতো ঘিরে রাখবে আমার চারপাশ! এগুলোকে ভেদ করে আমি আগাবো কি ভাবে? এটা আমার জন্য একটা কঠিন প্রশ্ন। আমি তো আমার বিশ্বস্ত অনুগত গোলাম ইয়েন লাঙ-কে কামার শালের মধ্যেই ফেলে এসেছি!

আমি জানালার কাছাকাছি থাকা সাদা কাঠের টেবিলটার উপর শুয়ে পড়লাম, চোখে আসছিলো ঘুম ঘুম ভাব! গ্রীষ্মের তীব্র তাপদহের মধ্যে গরম চা খেতে আসা ঐ পুরুষ মানুষগুলোর উপর আমি খুবই বিরক্ত! আমি আশা করছি ওরা একে অন্যের সাথে যৌন বিষয়ক অশ্লীল গল্প করা বন্ধ করবে! উচ্চ স্বরে অট্টহাসি হাসবে না! দূর্ভাগ্যে নিপতিত মঙ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পরহিংসক পরিহাসমূলক কথাবার্তা বলবে না! গা থেকে বেরিয়ে আসা ঘাম, আর পায়ের মৌজার দুর্গন্ধ ছড়াবে না!

কিন্তু আমি জানি, এটা তো আমার অতীত জীবনের আবাস সেই বিশাল সিয়ে রাজ প্রাসাদ নয়! আমাকে সহ্য করতেই হবে, মানিয়ে চলতে হবে সব কিছুর সাথে। পরে আমি ঘুমের ঘোরের মধ্যে অস্পষ্ট ভাবে শুনতে পেলাম শহরের বাইরে থেকে চায়ের দোকানে চা খেতে আসা কয়েক জন খদ্দেরের কথাবার্তা। ওরা রাজধানী শহরের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে আলাপ করছিলো। ওদের কথার মধ্যে উঠে আসছিলো তুয়ান ওয়েন এবং চাও ইয়াং-এর নাম। ওরা কথা বলছিলো স¤প্রতি কালের সিয়ে রাজ প্রাসাদের ভিতরে ঘটে যাওয়া রাজ পরিবারের সদস্যদের পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে করা খন্ড যুদ্ধ গুলো সম্পর্কে। আমি খুবই বিস্মিত হয়ে শুনতে পেলাম চাও ইয়াং-এর খুন হওয়ার খবরটা!

“ছোটরা তো বড়দের কাছ থেকেই শিখে! তুয়ান ওয়েন যে দিন আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে বসে, সেই দিনই বিলাস কেন্দ্র প্রাসাদের সামনে তলোয়ারের এক কোপে চাও ইয়াং-এর শিরচ্ছেদ করেছে!”, একজন চা খেতে আসা মানুষ এমন কথাই বললো!
তুয়ান ওয়েন বহু বছর ধরে করেছে কষ্টকর কঠোর অনুশীলন, যার নিমিত্ত শুধুমাত্র ছিলো কালো চিতার অবয়ব খোচিত রাজ মুকুটটি হস্তগত করা!
যে সেতুটিকে অবলম্বন করে সে পার হয়েছে নদীটি, এখন সে নিজ হাতেই ধ্বংস করছে সেই সেতুটাই! সে কোনভাবেই চাও ইয়াং-এর সাথে রাজ মুকুট ভাগাভাগি করবে না।
আরেক জন চা খেতে আসা খদ্দের বললো, “আমার মতে, বেশি বয়সের কারণেই চাও ইয়াং হয়ে গিয়েছিলো হত বিহŸল! ওঁর সারা জীবনের বীরত্বের সুনাম শেষ হয়ে গেলো এক মুহূর্তে! মানুষটা মারা গেছে, সেই সাথে পিঠে করে বয়ে নিয়ে গেছে ধোয়ার অযোগ্য কালিতে ভরা কালো রঙের বড় একটা কড়াই!”

আমি কোমর সোজা করে উঠে দাঁড়ালাম, লক্ষ্য করলাম চায়ের দোকানে চা খেতে আসা মানুষদের! ওদের মুখের অভিব্যক্তি দুই রকমেরই আছে! কেউ কেউ দিগন্তে ডানা মেলে দেয়া পাখীদের মতো পরম আনন্দে আন্দোলিত যা স্পষ্ট হয়ে আছে তাদের চেহারায়, আবার কারো কারো অবয়বে ফুটে উঠেছে দেশ ও জনসাধারণের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃচিন্তা ও শঙ্কার ভাব!

যে বিস্ময়কর খবরটা আমি শুনেছি এই চা-এর দোকানে এসে, সেটার সত্যতা আমি মনে মনে যাচাই করার চেষ্টা করছিলাম! এর পরই আমি শুনতে পেলাম, ওরা আমার প্রসঙ্গ উত্থাপন করছে! “সিয়ে দেশের ছোট রাজা এখন কেমন আছে?”, দোকানের বামন কর্মচারী প্রশ্ন করলো।
“আর কেমন থাকবে!”, রাজধানী থেকে আসা ব্যবসায়ীটি বললো। “ওরও দেহ থেকে কল্লাটা আলাদা করা হয়েছে, মরে গেছে, সে মরেছে শাসন খাল-এর ভিতরে!”, চা-এর দোকানের খদ্দের ঐ ব্যবসায়ীটি উঠে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে নিজের ঘাড়ে ঘষা দিয়ে কাটার পর মুন্ডুটা মাটিতে পড়ে যাওয়ার অঙ্গ ভঙ্গি করলো!

আমি আরও আতঙ্কিত হলাম। উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর আসার লক্ষণ হঠাৎ করেই মিলিয়ে গেলো। আমি টান দিয়ে ভ্রমণ সামানটা তুলে নিয়ে খুব দ্রæত মেই চিয়া ছা কোয়ান নামের চায়ের দোকানটা থেকে ছুটে বেরিয়ে গেলাম। চলে গেলাম দূরে, জেলা শহরের ভিতরের দিকে, তারপর পাগলের মতো ছুটলাম নগর তোরণ বরাবর! আমার মনে হচ্ছে মাথার উপর গনগনে সূর্যটা যেন অতিরিক্ত উত্তপ্ত সাদা আলো বিকিরণ করছে! মূলত এ কারণেই রাস্তায় চলা মানুষ জন অনেকটা পাখীদের মতোই আতঙ্কিত হয়ে তাড়াহুড়া করে যেন উড়াল দেয়ার ভঙ্গি করেই ছুটছে! আসলে এই পৃথিবীটা ইতিমধ্যেই আমার জন্য উপযুক্ত নয় বলে প্রমাণিত হয়ে গেছে! পৃথিবীটা আমারই জন্য যেন মুক্ত করে দিয়েছে একটা গন গনে উত্তাপে শ্বেত বর্ণ ধারণ করা দিগন্ত বিস্তৃত পথ, যেখানে আমি হয়ে যাচ্ছি একটা পলায়নপর নির্বাসিত দ্রæত ছুটে চলা ধাবমান মানুষ!

বছরের সপ্তম মাসের তাপদহ চলছে। আমার পায়ে আছে এক জোড়া ছিঁড়ে যাওয়া প্রায় ছিন্নভিন্ন ঘাসের তৈরী জুতা। যেটা পায়ে দিয়ে আমি অতিক্রম করেছি উঁচু ঝাউ বন, মেঘ মালা, কালো অঙ্গার, বাঁশ বন, শপলা কমল, সৌরভ, পদ্ম শিকড় নামের তিনটি বিভাগ এবং চারটি জেলা! (চলবে)