বিদ্যুৎ সরকার : মাঝেমধ্যে আমার এমনটা হয়ে যায়। মন বসে না কোন কাজে। কোন কিছুতেই আমার এ মন আর ভালো থাকতে চায় না। মন ভাল না থাকার কোন কারণও খুঁজে পাই না। মন খারাপের উত্স কি, কেন – আমার অজানা থেকে যায় স্বাভাবিকভাবেই। এই মন খারাপের সময়টুকু অতিক্রান্ত হতে কখনো দু’ দিন আবার কখনো দু’সপ্তাহের অধিক সময় লেগে যায়। সুপ্ত দুঃখগুলো, গুপ্ত কষ্টগুলো মাঝেমধ্যে সুখ-দুঃখের উত্স হতে পারে, মন খারাপের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে মনের অজান্তেই অবচেতন মনের বদৌলতে। সুখময় সময়গুলো কত দ্রুত চলে যায় ভোরের মেইল ট্রেনের মতো, কোথাও দু’দন্ড দাঁড়িয়ে কুশলাদি জানিবার সময়টুকু নেই যে তার। আর দুঃখময় সময়? ঠিক যেন চৈত্রের দুপুরের সূর্য। গনগনে উত্তাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মধ্য গগনে। হৃদয় দগ্ধ হয়, ক্ষত-বিক্ষত হয়। রক্তক্ষরণ অবিরাম অলস দুপুর জুড়ে। সুখের স্মৃতি কত সহজেই না মলিন হয়ে যায়, বিলিন হয়ে যায়। দুঃখের স্মৃতিগুলো অক্ষুণ্ণ থাকে, নিপাট থাকে যুগ যুগ ধরে অযতনে, অনাদরেও। সুখ কেন এত ক্ষনস্থায়ী?
দিনের আলো যেমন স্তিমিত হতে থাকে সূর্য অস্তমিত হবার আগেই। সুখের এ কোন্ অসুখ, অসময়ের এক্কা গাড়ি সওয়ার হয়ে হারিয়ে যায় অনন্তের প্রান্তরে! এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে তুমি আসোনি কেন নীলাঞ্জনা? এ মায়াবী রাত তোমার, এ রূপালী চাঁদ তোমার, স্নিগ্ধ – শীতল আলো ঝলমলে পথ মাড়িয়ে, তুমি তো ইচ্ছে করলেই চলে আসতে পারতে। নীলাঞ্জনা, তুমি এ চাঁদকে সাক্ষী করে চলে আসতে পারতে নির্দ্ধিধায়। আমার সুনসান নিকানো উঠোনের চারিধারে শোভিত দোলন চাঁপা, রজনীগন্ধা, চন্দ্রমুখিরা কি আশায় বেঁধেছে আজ রাতের ক্ষণিকের খেলা ঘর। ফুলের সৌরভে সুবাসিত তামাম বনভূমি, গৃহ কোণ তবুও তুমি এলে না নীলাঞ্জনা। একটু আঘাতেই কেমন মূর্ষে পড়ি, ব্যথিত হই কতো সহজেই।
আশাহত হওয়ার বেদনা, না পাওয়ার শূন্যতা একজনকে কতোটা অসহায় করে তুলে, অমনোযোগী বা বিবাগী বানিয়ে দেয় তা তো অজানা নয়! এমন করেই বুঝি ছোট ছোট আঘাতের ঢেউ বুকে এসে বেদনাময় আবেশ স্মৃষ্টি করে এবং আমরা দুঃখিত হই। ‘আজ জ্যোত্স্না রাতে সবাই গেছে বনে…’। নীলাঞ্জনা তোমার না আসায় আমিও ব্যথিত, দুঃখিত এই চাঁদনি রাতের নীল চাঁদোয়ায়।
বিদ্যুৎ সরকার : লেখক, আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা