শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : “একটা ছাতা নিয়ে এসো, তাড়াতাড়ি একটা ছাতা নিয়ে এসো!”, দীর্ঘ দিনের অভ্যাস বশত আমি চার পাশে থাকা মানুষদের উদ্দেশ্যে এ কথাগুলো চেঁচিয়ে বললাম। আশে পাশের ঐ মানুষ জন একটা ব্যাখ্যাতীত বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে! হয়তোবা তারা ভাবছে আমি একজন পাগল! পরিশেষে ইয়েন লাঙ-ই ছুটে আসলো বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় আমাকে সাহায্য করার জন্য। ইয়েন লাঙ-দের বাড়িতে কোন ছাতা নাই! তাড়াহুড়া করে সে নিয়ে এসেছে আলকাতরার মতো কালো একটা বড় ডেকচির ঢাকনি। এভাবে একটা ডেকচির ঢাকনি মাথার উপর রেখে আমি হেঁটে এসে প্রবেশ করলাম কামার শালের ভিতরে!
কামার শালের ভিতরের কর্মী কামারগণ, সবাই আমাকে জমিদার পুত্র বলে সম্বোধন করছে! ইয়েন লাঙ-এর বাবা-মাসহ শ্বেত লৌহ নগর-এর সবাই, নীরবে নানা ধরনের অনুমান করে পরস্পরের সাথে আলোচনা করছে আমার বংশ আর আদি নিবাস নিয়ে! তারা সবাই ইয়েন লাঙ-কে অনুসরণ করেই আমাকে ডাকছে জমিদার পুত্র! মনে হচ্ছে, আমার এখানে এসে লুকিয়ে থাকার হেতু কি, এ ব্যপারে ইয়েন লাঙ-এর দেয়া, ‘জোর করে আয়োজিত বিয়ের বাক দান’ অনুষ্ঠান এড়ানোর সরল ব্যাখ্যাটি কেউ-ই বিশ্বাস করে নাই! কিন্তু এ কথাও ঠিক, এই অতি সাধারণ মানুষগুলোর কাছে, আমার আসল পরিচয় জানালে, সেটাও হতো তাদের জন্য একটা কল্পনাতীত বিষয়!
প্রতিদিন সকালে চুল্লী থেকে অতি উত্তপ্ত লোহা নামিয়ে এনে বাড়ি দিয়ে বিভিন্ন আকৃতি দেয়ার নিমিত্তে লোহা পেটানোর ঢং ঢং আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে আমার। মনেই থাকে না, আমার শরীরটা এখন আছে কোথায়! কখনও কখনও আমি যেন অস্পষ্টভাবে দেখতে পাই, শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহের রঙিন কাঁচে ঢাকা নকশা কাটা পঞ্চভুজ আকৃতির জানালাটা। কখনও কখনও মনে হয় গাধার পিঠে চেপে হত দরিদ্র অবস্থায়ই চলে যাই উদয়াচলের দিকে! আমার ঘোর কেটে যায় যখন চোখ মেলে দেখি আমার শয্যা শুকনা ঘাসের মাদুরের পাশে স্তুপ করে রাখা আছে নতুন-পুরনো লোহার তৈরী দ্রব্যাদী, কৃষি কাজে ব্যবহৃত নানা যন্ত্রপাতি। একটু দেরী হলেও আমি অনুভব করি, ভাগ্যের নির্মম রশি আমাকে টানতে টানতে নিয়ে এসেছে এমন একটা অতিরিক্ত কাজের চাপে পরিশ্রান্ত হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের বাড়িতে —- পরিবারের ভিতরে!
পাশে থাকা কাঠের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি পিছনের উঠানে কুয়ার পাড়ে বসে ইয়েন লাঙ কাপড় কাঁচছে! তার সামনে থাকা কাঠের মালশাটায় রাখা আছে আমারই বদলে ফেলা ঘামে ভেজা কটু গন্ধ যুক্ত আলখাল্লা পায়জামা ও অন্যান্য কাপড় চোপড়! এই কামার শালে আসার পর প্রথম কয়েকটা দিনগুলিতে আমার এমন সব কাপড়গুলো ধুয়ে দিতেন ইয়েন লাঙ-এর আম্মা। কিন্তু পরে তিনি আমার কাপড়গুলো কাঠের মালশা থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া শুরু করেন।
মহিলাটি যেন পঙ্গপালকে গালিগালাজ করেন, বড়ুই গাছকে ইঙ্গিত করে, যার অর্থ পরোক্ষভাবে আমাকে উদ্দেশ্য করেই খোঁচা দেয়া, কর্কশ কথাবার্তা তিনি বলতে থাকেন কাপড় ধোয়ার সময়, যা শুনে আমার মনে হয়, আমি যেন বসে আছি তীক্ষ্ণ কাঁটায় ভরা একটা গদির উপর!
“আমি এখানে আরও থেকে কি করবো?”, রাগান্বিত আর নিরাশ দৃষ্টিতে ইয়েন লাঙ-এর দিকে চেয়ে আমি বললাম, “তুমি আমাকে হাজার লি পথ অতিক্রম করিয়ে বহু দূরে অবস্থিত তোমার বাড়িতে নিয়ে এসেছো, শুধুই কি একটা বিষাক্ত জিহ্বাধারী মহিলার কটু অপমানজনক কথা শুনবার জন্য?”
“আসলে সবটাই আমার দোষ। ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আমি নিজ হাতে সব টাকা পয়সা তুলে দিয়েছি ডাকাতদের হাতে! যদি টাকাগুলো না খোয়া যেত, তা হলে আমার আম্মা জাঁহানপানার সাথে এমন বেয়াদবি করতেন না।”, ইয়েন লাঙ ডাকাতির প্রসঙ্গ টেনে উল্লেখ করলো যে এমন বিপর্যয়ের পরও আমরা দুইজন বুক ফুলিয়ে পথ চলেছি, এগিয়ে গেছি!
সে সব সময়ই ভাবছে যে, আমাদের এই বিব্রতকর অবস্থার উৎপত্তি আর একমাত্র কারণ হচ্ছে ঐ ডাকাতির ঘটনাটাই! দীর্ঘ ভ্রমণ পথের অতিরিক্ত পরিশ্রম ইয়েন লাঙের প্রাণবন্ত মুখ খানাকে ইতিমধ্যেই করে তুলেছে শীর্ণকায়। ওর ফরসা ত্বক পরিবর্তিত হয়ে ধারণ করেছে পীত বর্ণ! ইয়েন লাঙ-এর এমন অসহায়ত্ব আর অজ্ঞতা সিক্ত মুখের অভিব্যক্তি আমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, বহু বছর আগের কথা, যখন বারো বছর বয়সের এই খোজা দাসটি সবে মাত্র এসেছিলো —— প্রবেশ করেছিলো সিয়ে রাজ প্রাসাদের ভিতরে! অত্যন্ত সহানুভূতি পূর্ণ ভাষায় ইয়েন লাঙ আমাকে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলো, সে বললো, “জাঁহানপানা, শুধুমাত্র আমার মুখ রক্ষার জন্য হলেও আপনি আমার আম্মার সাথে কোন কথা-কাটাকাটিতে যাবেন না। আমার আম্মা সেই কোন সকাল —– ভোর বেলা থেকে কাজ করা শুরু করেন, টানা কাজ করে যান সেই সন্ধ্যা পর্যন্ত! আমার ছোট ভাইবোনগুলোকে দেখাশুনা করতে হয় তাকে। আমার আম্মার বড় আশা ছিলো, আমি প্রাসাদ থেকে বড় সাফল্য আর সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসবো বাড়িতে! উনি ভাবতেও পারেন নাই, আমি বাড়ি ফিরে এসেছি একেবারে কপর্দকহীন অবস্থায়! আরও সাথে করে নিয়ে এসেছি আরেকটি মুখ, যার জন্য যোগাতে হবে খাবার! তার আছে অভিযোগ। আসলে তার অভিযোগ থাকাটাই স্বাভাবিক!”
ইয়েন লাঙ এক বাটি জাউ নিয়ে এলো। সে ব্যথায় কোঁকাচ্ছে। চেহারার মধ্যে ফুটে উঠেছে আকস্মিক খিঁচুনির টান। আমি দেখলাম ওর দেহ এবং হাত যেন হঠাৎ করেই দুলতে শুরু করেছে! হাতে থাকা জাউ এর বাটিটা উল্টিয়ে পড়ে গেলো মাটিতে! “হায় খোদা, এখন আমার কি হবে?”, ইয়েন লাঙ মুখ ঢেকে কেঁদে উঠলো! “তোমারা কি জানো না, আমি যে একজন নপুংসক! শুধুই শক্তিহীন! আমাকে দেখে মানুষ চোখ টিপে অশ্লীল ইঙ্গিত করে! আমি পুরুষও নই, নারীও নই, আমি নপুংসক! জাঁহানপানা যখন সিংহাসনে আসিন ছিলেন, তখন আমি ছিলাম একান্ত অনুগত, মন ও প্রাণ নিবেদিত, জাঁহাপনার দুর্ভাগ্য আর দুঃসময়েও আমি আছি আগের মতোই, সঙ্গি হয়ে থাকবো ডানে বামে, সব খানে! হায় খোদা! আমি আর কোন কিছু করার কি সামর্থ্য রাখি?”
ইয়েন লাঙ-এর কথা ও কাজ আমার প্রত্যাশিত প্রত্যাশাকে গিয়েছে ছাড়িয়ে! বাস্তবে আমি যেন ওকে একটা যন্ত্রের মতোই ব্যবহার করে আসছি, আর এমনটাতেই অভ্যস্থ হয়ে আছি আমি! এ যেন এক ধরনের মেজাজ, প্রকৃতি আর ধাত! আমি ভুলে যাই, ইয়েন লাঙ হচ্ছে একটা অনভিজাত সাধারণ পরিবার থেকে আসা বুদ্ধিমান প্রত্যুতপন্নমতি ছেলে! আমি খুব কাছে থেকে ইয়েন লাঙ-কে দেখেছি, ওর অন্তরের মধ্যে জমে থাকা জটিল দুঃখ ভারাক্রান্ত আবেগ অনুভূতির প্রতি সহানুভূতি আছে আমার। মনে পড়ছে অনেক বছর যাবৎ ওর মনের মধ্যে ধারণ করা গভীর অনুভূতির আর না বলা কথাগুলো! এটা যেন একটা রঙিন রেশমের রুমাল যার মধ্যে আছে পারস্পরিক আস্থা আর বিশ্বাস। পরস্পর পরস্পরের হিতসাধন, পারস্পরিক আলোচনা, আর প্রশংসা বন্দনা! যা কিনা একটা সময় আবদ্ধ করেছিলো একজন সম্রাটকে একজন খোজা দাসের সাথে বন্ধুত্বের বন্ধনে! আর এখন আমি পরিস্কার সচেতনভাবে উপলব্ধি করতে পারছি, এই রেশমী ফিতার বন্ধনটি ছিঁড়ে যাওয়ার প্রান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে! আমার হৃদয়ের গায়ে যেন ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, আর সেটার ব্যথা আমি অনুভব করছি সর্বক্ষণ!
“তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি ইয়েন লাঙ! এখন আমি আর তুমি একই! আমরা হচ্ছি সাধারণ মানুষ যাদের কোন ভবিষ্যৎ নাই! আগের মতো আর অনির্দিষ্ট কালের জন্য তোমাকে আর আমার সাথে থাকতে হবে না, আমি নিজেই নিজের দেখা শোনা করতে পারবো। সাধারণ মানুষ হিসাবে নিজেকে গড়ার অনুশীলন করার সময় হয়তো আমার জন্য এসে গেছে! এখন আমাকেই নতুনভাবে পথে নামতে হবে, আর সেই সময় সমাগত হয়েছে!”
“জাঁহাপনা, আপনি কোথায় যাওয়ার কথা ভাবছেন?”
“আমি যাবো দড়ির উপর হাঁটার দড়বাজ খেলোয়াড়দের দলের খোঁজে, আমি ওখানে শিক্ষা নবিশ হতে চাইবো। তুমি সব ভুলে গেছো?”
“না! ওটা তো ছিলো শুধু মজা করার জন্য বলা! মর্যাদাবান দেহধারী স্বর্গের পুত্র কি ভাবে দড়াবাজ শিল্পীদের মতো কতোগুলো আজে বাজে মানুষের সাথে মিশবে? জাঁহাপনা যদি পথে বের হওয়ারই সিদ্ধান্ত নেন, তবে যাওয়া যায় থিয়ান চৌ এলাকায়, ওখানে দক্ষিণ অঞ্চলের সামন্ত রাজার কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রর্থনা করা যাবে। অথবা যাওয়া যেতে পারে মঙ ফুরেন-এর ভাই মঙ কুয়ো চিউ-এর বাস ভবনে।”
“রাজ পরিবারের কোন অভিজাত সদস্যের বাড়ি গিয়ে মুখ দেখাবার জো আমার নাই! আর এটাই বোধ হয় ঈশ্বরের ইচ্ছা! ঈশ্বর বোধহয় চাচ্ছেন, রাজ মুকুট ত্যাগ করে আমি যেন দড়াবাজীর অনুশীলন করতে যাই! রাজ প্রাসাদের দেয়াল টপকে পার হওয়ার আগ মুহূর্তেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি! দড়াবাজী খেলোয়াড়দের দলে যাওয়াই হচ্ছে আমার চূড়ান্ত গন্তব্য!”
“কিন্তু আমাদের অতিক্রম করা পথে আমরা কোন দড়াবাজী খেলা দেখাবার খেলোয়াড়দের দলের সামান্যতম চিহ্নটুকুও লক্ষ্য করি নাই! এমন কলা কৌশলী শিল্পীদের জীবনের কোন নিশ্চয়তা নাই, তাদের চলাচলের মধ্যেও কোন শৃঙ্খলা নাই! জাঁহাপনা, আপনি কোথায় যাবেন ওদের খোঁজে?”
“দক্ষিণ বরাবর যাবো অথবা যাবো দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। শুধুমাত্র অদৃষ্টের উপর ভরসা করে ভাগ্যের দিক নির্দেশনায় এগিয়ে গিয়ে, শেষমেশ আমি ওদের খুঁজে পাবোই!”
“দেখেতো মনে হচ্ছে জাঁহাপনাকে বিরত করা যাবে না! আমার আছে একটাই উপায়, সেটা হচ্ছে জাঁহাপনাকে অনুসরণ করে পথে নামা!”, ইয়েন লাঙ শব্দ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর পিছন ফিরে ঘরের কোণায় গিয়ে জিনিসপত্র গোছগাছ করতে শুরু করলো। সে বললো,
“এখন আমাদের উচিত ভ্রমণ সামান গুছিয়ে নেয়া। ধারকর্জ করে ভ্রমণের টাকা জোগাড় করতে হবে। আমি ভাবছি মঙ কুয়ো চিউ-এর বাড়ি গিয়ে ওনার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিবো। তিনি হচ্ছেন পাথর খনি জেলার সবচেয়ে ধণাঢ্য ব্যক্তি!”
“কোন কিছুই লাগবে না। মঙ বাড়িতে গিয়ে টাকা ধার চাওয়ার কোন দরকার নাই। আর তোমারও দরকার নাই, আমার সাথে যাওয়ার! আমাকে একা বের হতে দাও। আমাকে সত্যিকারের সাধারণ মানুষের জীবন যাপন করতে দাও। আমি বেঁচে থাকতে পারবো!”
“জাঁহাপনা, আপনি কি আমাকে বাড়িতে রেখে যেতে চাচ্ছেন?”, ইয়েন লাঙ একটা বিস্ময়ের দৃষ্টি নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো। “জাঁহাপনা! আপনি কি, সেবা যতœ ঠিক মতো করতে পারি নাই বলে আমাকে দায়ী করছেন?”, ইয়েন লাঙ আরেক বার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আমি দেখলাম সে জড়োসড়ো হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। দুই হাতের তালু দিয়ে একটা লোহার পাতে সে বাড়ি দেয়া শুরু করলো। “কিন্তু আমি কিভাবে দীর্ঘ দিন ধরে বাড়িতে থাকবো? যদি আমি একটা স্বাভাবিক পুরুষ মানুষ হোতাম, আমি স্ত্রী গ্রহণ করে পুত্র কন্যার জনক হতে পারতাম, গড়ে তুলতে পারতাম একটা সংসার। যদি আমার কাছে অনেক টাকা থাকতো তাহলে, জমি কিনে বাড়ি তৈরী করতাম। ঘুঁচিয়ে দিতাম, ঢেকে ফেলতাম খোজা দাস নামের পদবী! তাহলেই আমি থাকতে পারতাম বাড়িতে। কিন্তু এখন তো আমার কিছুই নাই!”, ইয়েন লাঙ হামাগুড়ি দিয়ে এসে আমার হাঁটুর নীচে পা দু’টি জড়িয়ে ধরলো। সে অশ্রæ সিক্ত মুখটা উপরের দিকে তুলে বললো, “জাঁহাপনা, আমি চাচ্ছি না বাবা-মার উপর নির্ভরশীল হয়ে বাড়িতে থেকে যেতে। একই সাথে আমি চাচ্ছি না, রাস্তায় নেমে ভ্রমণ পথের ধূলায় ধূসর হয়ে কোন অশুভ ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার কষ্টে পতিত হতে। আমি চাই সারাটা জীবন জাঁহাপনার ডান-বাম পাশে থেকে জাঁহাপনার সেবায় নিয়োজিত থাকতে। প্রার্থনা করছি এমন একটা দিন আসুক, জাঁহাপনা আবার অর্জন করবেন তাঁর সম্মান ও ক্ষমতা। হয়তো বা এমন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যেতে পারে শুধুই শূন্যতার দিকে, আর তা হলে ইয়েন লাঙের জন্য শুধু বাকী থাকবে মৃত্যু পথের দিকে হাঁটা!”
আমি দেখতে পেলাম ইয়েন লাঙ টলতে টলতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। সে পেড়িয়ে গেলো বাষ্পের মতো উত্তপ্ত কামার শালের কারখানা ঘর, গিয়ে নামলো রাস্তায়, তারপর দৌড়াতে শুরু করলো। পিছন থেকে ইয়েন লাঙ-এর বাবা উচ্চ স্বরে ডাকলেন, “তুমি দৌড়াচ্ছো কেনো? কোন দোযখে যাচ্ছো তুমি?” দৌড়াতে দৌড়াতে ইয়েন লাঙ উত্তর দিলো, “যাচ্ছি তো ওখানেই! আর ওখানেই তো আমার ছুটে যাওয়া দরকার!”
আমি কামারদের সাথে দৌড়ে কারখানার বাইরে এসে ইয়েন লাঙ-কে অনুসরণ করে সোজা চলে আসলাম নদীর তীরে। ইয়েন লাঙ এক দল কাপড় ধুতে আসা মহিলার মাথার উপর দিয়ে লাফ দিয়ে পানির মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়লো। পানি ছিটকে উঠলো অনেক উঁচুতে। পাড়ে থাকা মানুষেরা আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলো। আমি দেখতে পেলাম, ডুবন্ত ইয়েন লাঙের সংগ্রামরত দৃশ্য, আর শুনতে পেলাম তীক্ষ্ণ চিৎকার! (চলবে)