শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : তৃতীয় অনুচ্ছেদ
। ১।
সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার কর্ম জীবনের শুরু একটা বিষন্ন তীব্র গরমের গ্রীষ্মের দিনে! রাজধানী শহরের বাতাসের প্রবাহ যেন থেমে গিয়েছে, বাতাস হয়ে গেছে স্থির! রাস্তায় চলা পথিকেরা গ্রীষ্মের দাবদাহের মধ্যে পথ চলার সময় যেন জ্বলন্ত তন্দুরি চুলার তাপ অনুভব করছে, ঘর্মাক্ত হচ্ছে, ঘামের তীব্র কটু গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে ওদের শরীর থেকে। রাজ দরবারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পরিবারের পোষা কুকুরগুলো বাড়ির সদর দরজার ছাওনির নীচে বসে আছে অলসভাবে, হাই তুলছে কিংবা নিদ্রা যাচ্ছে। কখনও কখনও ওদের কেউ কেউ রাস্তায় চলা পথিকদের দিকে তাকিয়ে লাল জিহ্বাটা বের করে হাঁফাচ্ছে! মদের দোকানগুলো যেন শীতল আর প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। গায়ে কালো পোশাক আর পোশাকের উপর ‘উত্তর পশ্চিম’ লেখা ছাপ নিয়ে বিদ্রোহী সেনারা রাস্তার এক কোণা দিয়ে দল বদ্ধভাবে চলছে সামনের দিকে। আমি দেখতে পাচ্ছি লাল শরীর, কালো কেশর আর কৃষ্ণ লেজ বিশিষ্ট একটা ঘোড়ায় চড়ে রাস্তা দিয়ে চলছেন পশ্চিম অঞ্চলের সুবাদার চাও ইয়াং! তাকে ঘিরে এগিয়ে যাচ্ছে চার জন উচ্চ পদস্থ সেনাপতি। তারা বহন করছে পাঁচ বাঘের মুখ খোচিত ধ্বজা, যা কিনা নির্দেশ করে সুবাদারদের ক্ষমতা আর প্রতিপত্তিকে। পশ্চিম অঞ্চলের সুবাদার চাও ইয়াং-এর আছে সাদা দাড়ি আর শুভ্র কেশ! চোখ জোড়া উজ্জ্বল জ্বল জ্বলে। শহরের ভিতরের রাজপথের উপর দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে চলার কালে তার চেহারার অভিব্যক্তিতে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে আত্মবিশ্বাস আর অচঞ্চল সুস্থিরতার চিহ্ন। সব কিছুই সংগঠিত হচ্ছে যেন তারই ইচ্ছায়! আমি জানি এই লোকগুলোই তুয়ান ওয়েন-এর সাথে একত্রে হাত মিলিয়ে উৎখাত করেছে সরকার! দখল করেছে সিয়ে রাজ প্রাসাদ। কিন্তু আমি জানি না ওরা কি ভাবে আমার রেখে আসা কালো চিতার অবয়ব খোচিত রাজ মুকুটটা ভাগাভাগি করবে! জানি না ওরা কি ভাবে ভাগ করবে আমার ফেলে আসা পর্যাপ্ত ধনসম্পদ আর দেশের জমি, ভূখণ্ড!
এখন আমার এবং ইয়েন লাঙ, দু’জনের পরনেই আছে সাধারণ মানুষের পরিধান করা পোশাক। আমি চড়েছি গাধার পিঠে, তাকিয়ে আছি উপরের দিকে রোদ ভরা আকাশের পানে! চারি দিকে এখন দৃশ্য মান যুদ্ধ পরবর্তী বিশৃঙ্খল পরিবেশ। ইয়েন লাঙ একটা টাকার থলে কাঁধে নিয়ে, গাধাটাকে টানতে টানতে হাঁটতে হাঁটতে চলছে সামনের দিকে। আর আমি চলছি ঈশ্বরের পক্ষ থেকে আমাকে উপহার হিসেবে দেয়া এই বিশ্বস্ত খোজা দাসটিকে অনুসরণ করে! সে আমাকে সাথে করে নিয়ে যাবে তার আদি নিবাস পাথর খনি জেলায়। আসলে ওর সাথে যাওয়া ছাড়া কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই আমার!
আমরা রাজধানী শহরের উত্তর তোরণ দিয়ে শহর ছেড়ে বেরিয়েছি। নগর তোরণের কাছাকাছি আছে নিরাপত্তা রক্ষীদের কড়া প্রহরা। যে সব পথচারীরা আসা যাওয়া করছে তাদের সবাইকেই পড়তে হচ্ছে উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের সেনাদের কঠোর নিরাপত্তা তল্লাশী ও জিজ্ঞাসাবাদের মুখে। আমি দেখতে পেলাম ইয়েন লাঙ একটা রেশমের রুমালে কয়েকটা রৌপ মুদ্রা পুটলির মতো করে বাঁধলো, তারপর সেই পুটলিটা একজন বসে থাকা হাবিলদারের কোলের উপর গুঁজে দিলো। আর এর পর পরই গাধাটা নির্বিঘেœ নগর তোরণ অতিক্রম করে যেতে পারলো। কেউ-ই আমার চেহারা চিনতে পারেনি। কে ভেবেছে, গাধার পিঠে চড়া, কড়া রোদের উত্তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাঁশের তৈরী মাথালি মাথায় দিয়ে চলতে থাকা বণিকের মতো দেখতে ঐ তরুণ বয়সের মানুষটাই হচ্ছে সিয়ে দেশের অপমানিত আর পরিত্যক্ত সেই সম্রাট! রাজধানী শহর থেকে পাঁচ লি উত্তরে আছে একটা ঢাল। এখানে পৌঁছাবার পর আমি ঘাড় ফিরিয়ে সিয়ে রাজ প্রাসাদের দিকে তাকালাম। জৌলুশে ভরা সম্রাটের সেই আবাসস্থল ইতিমধ্যেই যেন আমার কাছে পরিণত হয়েছে হলুদ রঙের একটা অবাস্তব হাতে আঁকা ছবিতে! সব কিছুই যেন ভেসে চলে যাচ্ছে বাতাসে। শুধু আমার জন্য রেখে যাচ্ছে মায়াবী ধাচের স্মৃতির রোমন্থন!
পাথর খনি জেলা-র দিকে যাওয়া তো হচ্ছে আসলে সিয়ে দেশের দক্ষিণ পূর্ব দিকে যাওয়া। এটা হচ্ছে, যে বছর প্রথম বারের মতো আমি প্রাসাদের বাইরে গিয়েছিলাম পশ্চিম সীমান্ত পরিদর্শন করার কাজে, সেই পথের ঠিক উল্টা দিকের রাস্তা! দেশের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে আছে সমতল ভূমি, যতো দূর চোখ যায় ততো দূরই সমান! আছে ঘন জনবসতি, মানুষের ভীড় যা আমার কাছে এক অপরিচিত ভিন্ন জগৎ! যা সৃষ্টি করছে আমার হৃদয়ে এক ভিন্ন মাত্রার আবেগ। কতো জায়গায় আছে কতো উর্বর জমির কৃষি খামার, আছে কতো শত ছন দিয়ে ছাওয়া কুটির, বসত বাড়ি আর ঘর। আছে কতো পরিবার, যেখানে পুরুষরা করে চাষাবাদের কাজ, আর মেয়েরা ঘরে বসে হাতে বুনে কাপড়। সুবিশাল গ্রামাঞ্চলের বিস্তীর্ণ প্রান্তর! যেন হলুদ আর সবুজ রঙে রাঙ্গানো একটা বিশাল পর্দা বিছানো আছে আমার পালিয়ে যাওয়ার পথের উপর। সাধারণ মানুষের জীবন ধারা আর সংস্কৃতির সাথে আমি পরিচিত নই, রাজ প্রাসাদে থাকাকালীন সময়ে আমার এবং ওদের মধ্য দিয়ে যেন বয়ে গিয়েছিলো একটা বিশাল নদী। একটা কর্দমাক্ত পথ অথবা নানা জাতের কিছু গাছ গাছালি —– সবাই, সব কিছুই এখন আমার অতি নিকটবর্তী! কৃষকরা পাথরের পাটাতনের উপর বাড়ি দিয়ে পাকা ধানের ছড়া থেকে শস্য দানা আলাদা করছে! একটা অনুভূতিহীন অস্পষ্ট, যেন কাদায় মাখা অস্বচ্ছ দৃষ্টিতে আমি দেখছি রাজ পথ দিয়ে তাড়াহুড়া করে চলে যাওয়া মানুষ জন! কৃষক পরিবারের কালো রঙের ঢোলা পোশাক পরা মেয়েরা এসেছে নদীর পাড়ে কাপড় ধোয়ার জন্য। ওরা গোল করে চুলের খোঁপা বেঁধেছে লাল রঙের কাপড়ের টুকরা পেঁচিয়ে যেন-তেন ভাবেই! ওরা তিন জন, পাঁচ জন করে এক সাথে পাথরে বাঁধানো নদীর ঘাটলার উপরে এসে বসেছে। একটা অমার্জিত আর স্থুল পদ্ধতি প্রয়োগ করে মানুষের চেহারা আর পোশাক পরিচ্ছদ দেখে ওরা বেশ তাড়াতাড়ি পথচারীদের গোত্র পরিচয় যাচাই করে, করছে মন্তব্য! ওরা ওদের হাতে থাকা কাপড় ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত লম্বা কাঠের মুগুরটা দিয়ে পানির উপর ফুটে থাকা জলজ উদ্ভিদের ফুলের উপর আঘাত করে ছিটাচ্ছে পানি, সেই পানির ছিটা এসে পড়ছে আমার মুখে!
“ঐ লোকটা একজন লবণ ব্যবসায়ী!”, বললো একজন মহিলা।
“কি যা তা বলছো! লবণ ব্যবসায়ীদের পিছনে সারি বদ্ধভাবে আসে, চলতে থাকে বস্তা ভরা লবণ বাহী ঘোড়াগুলো। আমার মনে হচ্ছে সে একজন পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনকারী সরকারি আমলা নিয়োগ পরীক্ষায় অকৃতকার্য প্রার্থী।”, দ্বিতীয় মহিলা মন্তব্য করে বললো এসব কথা।
“বাদ দাও! ও ব্যাটা কে, কি করে তাতে তোমার কি যায় আসে? তুমি তোমার থান কাপড় কাঁচো মন দিয়ে। সে তার পথে যাক!”, তৃতীয় মহিলা এ কথাগুলো বলে এর সাথে আরও যোগ করলো, “তোমরা কেউ-ই আসল ব্যাপারটা ধরতে পারোনি! আমার মনে হচ্ছে, সে হচ্ছে গিয়ে একটা পদচ্যুত নীচু শ্রেণীর সাবেক সরকারি কর্মকর্তা!”
এই পালিয়ে যাওয়ার পথে আমাকে এই রকম অসংখ্য মন্তব্য শুনতে হয়েছে! শুরুতে এমন মন্তব্যগুলো কাঁটার মতো গায়ে বিঁধতো, পর্যায়ক্রমে কষ্ট পাওয়ার এই অনুভূতিগুলো পুরোপুরি গা সওয়া হয়ে গিয়েছিলো। কোন একবার একটা খালের পাড় দিয়ে যাওয়ার সময়, খালের অন্য পাড়ে বসা মহিলাদের আলোচনা আর কথোপকথনের আওয়াজ আমার কানে আসছিলো। তাদের কথা শুনে আমি উচ্চ স্বরে বলে উঠলাম, “আমি হচ্ছি তোমাদের দেশের রাজা!”, কাপড় ধুতে আসা মেয়ে লোকগুলো এক সাথেই হো হো করে উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। তীক্ষ্ণ কন্ঠধারী একজন আমাকে সতর্ক করে বললো, “সাবধান হও, সরকারি লোকজন এসে এমন কথা শুনলে তোমার কুকুরের মতো মাথাটা এক কোপে কেটে ফেলবে!”
আমি ইয়েন লাঙের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। গাধাটার পিঠে বাড়ি দেয়া হলো আরও জোরে চলার জন্য। কাপড় কাঁচতে আসা মেয়েগুলোর সাথে মশকরা করে আমি যে হাসি হাসলাম, তা আনন্দের না কি হৃদয় থেকে বয়ে আসা দুঃখের? ঈশ্বরই ভালো জানেন!
দীর্ঘ পথের পরিভ্রমণ আমাকে সাধারণ মানুষের জীবনাচারের কাছাকাছি টেনে এনেছে, নিয়ে এসেছে ঘনিষ্ট সংস্পর্শে! অতিক্রম করা পাথর খনি জেলার হলুদ রঙের উড়ন্ত ধূলায় ভরা পথ আমার একেবারেই পছন্দের নয়। আমি খুবই অপছন্দ করি গা বেয়ে উঠা কীড়া আর মলের স্তুপ থেকে উড়ে আসা মাছি গুলোকে! অনন্যোপায় হয়ে পথিমধ্যে রাত্রিযাপন করতে যাওয়া নোংরা সরাইখানাগুলো আমার আরও বেশি অপছন্দের! সহ্য করতে হয় মশা-মাছির গুঞ্জন আর দংশন, গ্রহণ করতে হয় প্রায় স্বাদহীন নিম্নমানের খাবার। রাস্তার পাশের একটা ছোট দোকানে বিছানো বাঁশের মাদুরের উপর, আমি নিজের চোখে দেখেছি তিনটা রক্ত চোষা নীল মাছি, যারা বাঁশের মাদুরের খাঁজ থেকে বেরিয়ে আসছিলো! একটা বড় ধাড়ি ইঁদুর দেয়ালের গর্ত থেকে মুখ বের করে চি চি আওয়াজ করছিলো, ওরা সাহস করে আমার গা বেয়ে উঠতে চাচ্ছিলো! হাত দিয়ে বাড়ি দিলেও ওরা একটুও ভয় পাচ্ছিলো না!
আমার দুই হাত-দুই পায়ের বহু জায়গা ফুলে উঠেছে, অস্বস্তি লাগছে, চুলকাচ্ছে খুব। ইয়েন লাঙ প্রতিদিন কলাপাতা ঘাসের রস আমার শরীরের ফুলে উঠা জায়গাগুলোতে মালিশ করে দেয়। এ সবই যে ঈশ্বরের হুকুম! এখন নীল মাছি পর্যন্ত আমাকে অপমান করতে আসে! আমি মনের দুঃখে নিজেই নিজের সাথে পরিহাস করি! ইয়েন লাঙ নিরব থাকে, কোন কথা বলে না। সে এক টুকরা কাপড়ে ঔষুধি রস মাখিয়ে দেয়, আমি লক্ষ্য করি ওর চোখ দু’টো ভিজে আসছে! মালিশ করার কাজটা সে করে খুব নরমভাবে যতেœর সাথে! আমি শুনতে পাই সে গভীরভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “বাড়ি পৌঁছাতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। জাঁহাপনাকে আর অপমান সইতে হবে না কিট পতঙ্গ কিংবা বুনো জানোয়ারের কাছ থেকে!”
গ্রাম্য সরাইখানাগুলোতে রাত যাপনের দুঃসহ স্মৃতিগুলো ভুলে যাওয়া সহজ নয়! আমরা ছিলাম দ্রæত পথ চলা ক্লান্ত-অবসন্ন পথিক, বাঁশের মাদুরের উপর জড়াজড়ি করে লম্বা ঘুম দিতাম। গ্রামীণ জঙ্গল আবৃত এলাকা স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত হতো ভরা জ্যোৎস্নায়, কাঠের জানালা দিয়ে বাইরে থেকে চাঁদের আলো ভেসে আসতো সরাইখানার ঘরের ভেতরে! ঘন ঘাসের শয্যা থেকে গ্রীষ্মকালিন ঝিঁঝি পোকারা ঝিঁঝিঁ শব্দ করে ডাকতো! পানির নালা এবং ধান ক্ষেত থেকে শোনা যেত ব্যাঙের ডাক অবিরাম। সিয়ে দেশের পূর্বাঞ্চলের গ্রীষ্ম কাল তীব্র আর অসহ্য গরমের! এমন কি দুপুর রাতেও খড় আর কাদার তৈরী সরাইখানার দেয়ালগুলো তন্দুল রুটি তৈরীর মাটির চুলার দেয়ালের মতো উত্তপ্ত থাকে! এ রকম পরিবেশের মধ্যেই আমি আর ইয়েন লাঙ পাশাপাশি শুয়ে ঘুমাতাম। শুয়ে পড়ার অল্প ক্ষণ পরেই প্রায়ই আমি স্পষ্ট আর পরিষ্কার শুনতে পেতাম ইয়েন লাঙ-এর কন্ঠস্বর, স্বপ্নের ঘোরে রিন রিনে গলায় সে কথা বলে উঠতো, “বাড়ি ফিরবো, বাড়ি ফিরবো, জমি কিনবো, ঘর উঠাবো থাকার জন্য!”
পাথর খনি জেলায় পূর্ব পুরুষদের ভিটায় ফিরে যাওয়া নিঃসন্দেহে ইয়েন লাঙ-এর কাছে একটা দীর্ঘ দিনের কাক্সিক্ষত স্বপ্ন! আর আমি? আমি তো হয়ে আছি বাড়ি ফিরে যাওয়া এক জন মানুষের ঘাড়ের উপর কাপড়ে মোড়ানো বোঝার সাথে যুক্ত হওয়া আরেকটা বোঝা! সব কিছুই যেন ঘটছে ঈশ্বরের নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত আর ইচ্ছায়! এখন আমার কাছে মনে হয় গ্রামীণ এই সরাইখানায় থাকা প্রতিটা মানুষই আমার চেয়ে অনেক বেশি সুখী, আর ওরা কাটাচ্ছে আনন্দ ভরা সময়! যদিও কোন এক কালে আমি ছিলাম একটা দেশের সর্বময় ক্ষমতাধর মানুষ —– দেশের সম্রাট!
ডাকাতের কবলে পরার স্থানটা ছিলো পাথর খনি জেলা সদর থেকে ত্রিশ লি দক্ষিণের একটা এলাকা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিলো। ইয়েন লাঙ গাধাটাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলো একটা ডোবার ধারে পানি খাওয়াবার জন্য। আমি পথের পাশে একটা পাথরের উপর বসে একটু খানি বিশ্রাম করছিলাম। ডোবার অন্য পাড়ে আছে একটা গহীন ওক গাছের বন। আমি হঠাৎ করেই লক্ষ্য করলাম, বনের ভিতর থেকে ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে বেরিয়ে আসছে এক ঝাঁক কালো রঙের দাঁড় কাক! শোনা যাচ্ছে দূর থেকে আসা ঘোড়ার খুরের আঘাতের তরঙ্গায়িত শব্দ! গাছের পাতা আর ডালের ফাঁক দিয়ে উদয় হলো পাঁচটা ধাবমান ঘোড়া এবং পাঁচ জন মুখ ঢেকে রাখা রথ চালক! তারা তড়িৎ বেগে ইয়েন লাঙের দিকে আসলো এবং ধুসর রঙের গাধাটার পিঠে থাকা ভ্রমণ সামানটা টান দিয়ে নিয়ে গেলো!
“জাঁহাপনা! দ্রæত দৌড়ান, রাস্তার লুটেরা ডাকাতদের কবলে পড়েছি আমরা!”, আমি শুনতে পেলাম ইয়েন লাঙ-এর ভয়ার্ত চিৎকার! সে প্রাণপণে গাধাটাকে তাড়া দিয়ে রাজ পথের দিকে ধাবিত হলো। (চলবে)