স্পোর্টস ডেস্ক : ঠিক বছরের পহেলা দিন টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামার ঘটনা বাংলাদেশের ক্রিকেটে আগে কখনোই ঘটেনি। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় আসরে টাইগারদের দ্বিতীয় সিরিজ সে সুযোগ করে দিয়েছে। সেটিও হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের মতো ভূস্বর্গে। বাংলাদেশেরও ছয় ঘণ্টা আগে যে দেশে নতুন বছরের নতুন সূর্যের মোলায়েম রোদে স্নান করবেন মুমিনুলরা। পুরোনো বছরের ব্যর্থতার গ্লানি মুছে ফেলে নতুন স্বপ্ন নিয়ে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামবেন বছরের প্রথম টেস্ট। সাগর আর পাহাড়ের মিতালিতে ছবির শহরে সাদা পোশাক আর লাল বলে এই প্রথম খেলবেন মুমিনুলরা শ্বেতশুভ্র মন নিয়ে ‘নিউ ইয়ার টেস্টে’।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুই টেস্টের এ সিরিজ থেকে বাংলাদেশ দল কোনো কিছু অর্জন করতে চায় কিনা জানা যায়নি। গতকাল আরামের ছুটি কাটিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা হয়তো ভুলে গেছে বাংলাদেশের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের সময়ের ব্যবধানের কথা। বিসিবির মিডিয়া বিভাগও স্রোতে গা ভাসিয়ে বছর পার করতে ব্যস্ত। তাই অধিনায়ক মুমিনুল হক বা কোচ রাসেল ডমিঙ্গো অথবা টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের জুম সংবাদ সম্মেলন দূরে থাক, ভিডিওবার্তাও পাওয়া যায়নি। ট্রফি উন্মোচনের ছবি কিউই বোর্ড আর্কাইভ করলেও বাংলাদেশের মিডিয়াকে তা সরবরাহ করতে পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। এটিই হয়তো বছরের শেষ ব্যর্থতা বিসিবি ও টিম বাংলাদেশের। নতুন বছরে ক্রিকেটাররা মাঠে এমন উদাসীন না হলেই হলো। কারণ মুমিনুলরা সঙ্গ করেছেন নতুন বছরে ভালো কিছু করে দেখানোর স্বপ্ন।
যদিও নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনই বাংলাদেশ দলের বড় প্রতিপক্ষ। দেশটিতে খেলতে গিয়ে ২০ বছরে কোনো সংস্করণেই ম্যাচ জিততে পারেনি টাইগার বাহিনী। কারণ দেশের মাটিতে কিউইরা অপ্রতিরোধ্য। অস্ট্রেলিয়ার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিও নিউজিল্যান্ডে গিয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারে না। সেখানে টেস্টের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে জয়ের আশা করা এ মুহূর্তে মুমিনুলদের চন্দ্রাভিযানের মতোই। বরং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলে ম্যাচ পাঁচ দিনে নিয়ে যেতে পারলে সে অর্জন হবে জয়ের সমান।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলে যে ১২টিতে হেরেছে বাংলাদেশ, তাতে ইনিংস পরাজয় সাতটি। বাকি যে তিন টেস্ট ড্র হয়েছে সেগুলো খেলা হয়েছে বাংলাদেশে। নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ দল সবচেয়ে ভালো টেস্ট খেলেছে ২০১৭ সালে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে। বেসিন রিজার্ভে প্রথম ম্যাচ ড্রর কাছে গিয়েও হেরেছে কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের ভুল সিদ্ধান্তে। সাকিব-মুশফিকের রেকর্ড জুটিতে প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেটে ৫৯৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ম্যাচ তুলে দেয় স্বাগতিকদের হাতে। বডি লাইন বলে আঘাত পেয়ে মুশফিক খেলতে পারেননি দ্বিতীয় ইনিংসে। ইমরুল কায়েস বলের আঘাতে ছিলেন ভীত। সাকিবের ডাবল সেঞ্চুরির টেস্টে প্রতিকূল কিছু ঘটনার কারণে হেরে যেতে হয়। ক্রাইস্টচার্চে পরের টেস্টে ইনজুরি ছিটকে দেয় দলের একাধিক মূল খেলোয়াড়কে। যে ম্যাচ ৯ উইকেটে হেরে দেশে ফেরে দল।
সেবার দেশের সেরা ক্রিকেটারদের নিয়েও যেখানে ম্যাচ জেতা সম্ভব হয়নি সেখানে কচিকাঁচার দল নিয়ে জেতার স্বপ্ন দেখবে না কেউই। বড়জোর ভালো ক্রিকেট উপহার দিতে পারলেই খুশি হবে দল। একটি ভালো স্পেল, ইনিংসে পাঁচ উইকেট বা একটি সেঞ্চুরি এবং দলগত পারফরম্যান্স করাই থাকবে লক্ষ্য। নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচেও সে মহড়া দিতে দেখা গেছে বাংলাদেশকে।