শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : তুয়ান ওয়েন চি চাং-এর মৃত দেহটি ঘোড়ার পেটের সাথে বেঁধে দ্রুত ঘোড়া ছুটিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রের চার দিকে একটা চক্কর দিলো। ওর কপালের উপর রহস্যময়ভাবে উল্কির মতো করে লেখা অক্ষর, ভরদুপুরে তীব্র সূর্য কিরণের মধ্যে জ্বলজ্বল করে বিকিরণ করছিলো উজ্জ্বলতা! সাদা রঙের ঘোড়াটা যে পথ দিয়ে গিয়েছিলো, বেঁচে থাকা প্রাণ রক্ষা পাওয়া সৈনিক এবং সেনা কর্মকর্তারা সবাই খুব পরিষ্কারভাবেই দেখতে পেয়েছিলো তুয়ান ওয়েনের কপালের সামনে খোদাই করে লেখা দু’টি চীনা অক্ষর ‘সিয়ে ওয়াং’, যার ভাবার্থ সিয়ে দেশের সম্রাট! সেই অক্ষর দু’টির উজ্জ্বল আভা অবলোকন করে ভীতসন্ত্রস্ত হয়েই ওরা নিজেদের নিবেদন করছিলো, চিৎকার করে বলছিলো : সম্রাট, সিয়ে সম্রাট!
ওরা যেন একটু খানি শরৎ কালীন দুর্বা ঘাসের মতোই তুয়ান ওয়েনের তৈরী করা ঘূর্ণি বায়ুর চক্র বাতে উড়ে যাওয়া মাদুরের মতো পাক খেয়ে গুটিয়ে গেলো, ওরা মাথা নত করে নুয়ে পড়লো ঐ সাদা ঘোড়াটার সামনে!
ওখন থেকে ষাট লি দূরবর্তী বিশাল সিয়ে রাজ প্রাসাদ যেন ডুবে গেলো একটা মৃত্য আবহ-এর মধ্যে! আমি রাজ প্রাসাদের কোণায় অবস্থিত পর্যবেক্ষণ মিনারে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম অনেক দূর থেকে আসা একটা সামরিক রসদ বাহী ঘোড়ার গাড়ি, যেটা এসে থামলো বড় রানী ফং শ্র-এর বাস ভবন আবছায়া গৃহ দালানের সামনে। গাড়ির সামনে এবং পিছনে আছে ব্যস্ত তাড়াহুড়া করা ফং কুয়ো দেশ-এর কালো পোশাক পরিহিত সশস্ত্র অশ্বারোহী সৈনিকরা। তারা খুব তাজিমের সাথে ফং কুয়ো দেশের রাজা চাও মিয়েন-এর কন্যা সম্মানিত রাজ কুমারীকে এখানকার বিশৃঙ্খলা পূর্ণ পরিবেশ এড়িয়ে ফং কুয়ো দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে! আমি অস্পষ্ট শুনতে পেলাম ফং শ্র-এর গলা ভাঙ্গা কর্কশ কান্নার আওয়াজ! আমি জানি না, সে কার জন্য কান্নাকাটি করছে! তবে কি সে এরই মধ্যে জেনে গেছে যে, এবারের মতো চলে গেলে, আর কখনও-ই সে এখানে ফিরে আসতে পারবে না?
প্রথম বারের মতো আমার হৃদয়ে এই উদ্ধত আর স্বার্থপর মেয়ে মানুষটার প্রতি সহানুভূতির সঞ্চার হলো। সে এবং প্রাসাদের অন্যান্য প্রাসাদ দাসীদের অবস্থা একই রকম। রূপ- চর্চায় ব্যাস্ত, রঙ্গিন প্রসাধনীর ঘোরে নিমজ্জিতরা হঠাৎ করেই স্বপ্নের মোহ কাটিয়ে জেগে উঠেছে! ওরা তো সঙ্গ দিয়েছে একজন দুর্ভাগ্যবান সম্রাটকে, যে কিনা পতিত হতে চলেছে একটা পরিমাপহীন গভীর কালো অন্ধকার অতল শূন্য স্থানে!
ঐ দিন মধ্যাহ্নে, আমি একটা নিরানন্দ অনুভূতি নিয়ে প্রাসাদের কোণায় অবস্থিত পর্যবেক্ষণ মিনারের চাতালের কাঠের বেষ্টনীর গায়ে হেলান দিয়ে পশ্চিম দিকে তাকিয়েছিলাম। দৃষ্টি সীমায় আসছিলো নীল আকাশ, আর রাজধানী শহরের ধূসর কালো হয়ে যাওয়া বাসা-বাড়ির ছাদগুলো! দ্রুত তাড়াহুড়া করে চলা মালামাল সরবরাহকারী ব্যবসায়ীদের ঘোড়ার খুরের আঘাতে উঠা হলুদ ধূলার ঘূর্ণি ধাবিত হচ্ছে বাতাসে। যুদ্ধের বিপর্যয় আসার পর রাজধানীর সাধারণ মানুষ নিজেদেরকে আবদ্ধ করে রেখেছে নিজ নিজ গৃহে, ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না একে বারেই।
আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না! দেখতে পাচ্ছি না, পঞ্চাশ লি দূরত্বের বাইরে সংগঠিত হওয়া সব শেষ যুদ্ধের ক্ষেত্রটাকে! আমি দেখতে পাচ্ছি না সাধারণ মানুষের ভীড়, যারা চলাচল করে শহরের রাস্তায় পিপীলিকাদের ঝাঁকের মতো দল বেঁধে। শূন্যতায় ভরে গেছে আমার হৃদয়টা।
একটু পরে আমি শুনতে পেলাম প্রাসাদের কোণার পর্যবেক্ষণ মিনারের চূড়ায় থাকা ঘন্টা ঘড়ির শব্দ, কে যেন টান দিয়ে ওটার ঘন্টাটা বাজিয়ে দিয়েছে! আমি জানি এটা হচ্ছে মৃত্যু ঘন্টার ধ্বনি! কিন্তু, কোণার মিনারটা তো নিরব নিস্তব্ধ, কোন মানুষ জন তো নেই ওখানে! এমন কি কোন দমকা হাওয়াও তো বইছে না এখন! আমি জানি না কে, ঘন্টার দড়ি টেনে ঘন্টাটা বাজিয়ে দিয়েছে! আমি এরপর বাদামী হলুদ রঙের ঘন্টা ঘড়ির দড়িটার দিকে মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করলাম। ওটা তো স্বাভাবিক বাতাসের মধ্যে আছে সুস্থির!
হয়তো একটা রহস্যময় যাদুকরী কারণে শুরু হয়েছে ওটার অস্বাভাবিক দোলন!
অবিশ্বাস্য বিষয় হচ্ছে, আমি ঐ ঘন্টা ঘড়ির দড়ির উপর দেখতে পাচ্ছি আটটা সাদা রঙের ছোট ভূত! ওদের আবির্ভাব হয়েছে উজ্জ্বল আলোয় ভরা প্রকাশ্য দিবালোকে! ওরা ঘন্টা ঘড়ির দড়ি বেয়ে উঠে ঘন্টার গায়ে বাড়ি দিয়ে একটা বরফ শীতল আওয়াজ করছে, যা কিনা আসলে মৃত্যু ঘন্টারই ধ্বনি!
হান ছোট রানী আধা অচেতন আর বিভ্রান্ত অবস্থায় যেখানে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলো, প্রত্যাশিতভাবেই সেই স্থানটাই হয়ে গিয়েছিলো ওর শেষ গন্তব্য, ওর মৃত দেহের মর্গ! পরে আমি শুনেছি, বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই সে গিয়েছিল তাই নিয়াং-এর কারা প্রকোষ্ঠে। সে অনুরোধ করেছে, শুকনো ঘাস দিয়ে ঢেকে ওকে যেন লুকিয়ে রাখে তাই নিয়াং! ওর কথা মতোই কাজ করেছে তাই নিয়াং! অনেক দিন আগেই তাই নিয়াং-এর জিহ্বা কেটে ফেলা হয়েছিলো। তাই নিয়ং তো আর কথা বলতে পারে না। এ ছাড়াও তাই নিয়াং-এর দুই হাতের দশটা আঙ্গুল লোহার যাঁতি দিয়ে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে তারও আগে। সুতরাং হান ছোট রানীকে শুকনা ঘাস দিয়ে ঢেকে রাখার কাজটা তিনি করতে পারছিলেন খুবই ধীরে ধীরে! হান ছোট রানী ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে তাই নিয়াং-কে তাড়া দিচ্ছিলো বার বার। শেষে তাই নিয়াং বিরক্ত হয়ে ব্যবহার করছিলেন তার এক মাত্র অক্ষত অঙ্গ পা জোড়া, পা দিয়ে তিনি শুকনা ঘাস ঠেলে ঠেলে হান ছোট রানীর দেহের উপর ফেলে পাগলের মতো পাড়ানো শুরু করলেন। তিনি একটানা পাড়ানোর কাজ করে চললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না হান ছোট রানীর প্রাণ রক্ষার আকুতি মূলক চিৎকারের শব্দ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে গেলো। খটখটে শুকনা হলুদ রঙের ঘাসের উপরের পরত রাঙ্গা হয়ে উঠলো রক্তের লাল রঙে!
আমি দেখি নাই হীম প্রাসাদের ঘাসের স্তুপের উপরে এনে রাখা হান ছোট রানীর মৃত দেহটা! একই ভাবে আমি দেখি নাই আমার রক্তের ধারক ভ্রূণটি কিভাবে জীবিত অবস্থায়ই মাতৃ গর্ভ থেকে বেরিয়ে এসে ছিলো একজন পরিত্যাক্ত রানীর উন্মাদনায় পদ দলিত হতে হতে! বিশাল সিয়ে রাজ প্রাসাদে কাটানো সর্বশেষ দিনটা আমার জন্য ছিলো গতিহীন অপরিবর্তনশীল স্থবিরতায় ভরা! আমি ভাষা তত্ত¡ গ্ধ নামের কনফুসীয় দর্শনের বইটা হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম মাথার উপর আপতিত বিপর্যয়ের জন্য, যা ছিলো অতি আসন্ন! অপ্রত্যাশিতভাবেই আমার মনটা ছিলো সুস্থির পরিষ্কার পানির মতো শান্ত উদ্বেগ হীন! খানিকক্ষণ পর শোনা গেলো ঐক্য তান তোরণ-এর খিল ভেঙ্গে যাওয়ার নিরুত্তাপ আওয়াজ! আমি এতক্ষণ মাথা নীচু করে বসেছিলাম, এবার মাথা তুললাম। দেখতে পেলাম দরজার বাইরে বুক টান করে দাঁড়িয়ে আছে ইয়েন লাঙ! এক ধরনের শীতল কন্ঠে সে তার কাজের বিবরণ পেশ করার মতো করে বললো, “সম্রাটের আম্মাজান পরপারে চলে গেছেন, হান ছোট রানীও চলে গেছেন। চিন এবং লাল ছোট রানীরা তো আগেই চলে গেছেন পরলোকে!”
“তা হলে আমি? আমি কি এখনও বেঁচে আছি?”
“জাঁহাপনা দীর্ঘজীবী হোন, অফুরান প্রাণ শক্তি নিয়ে!”, ইয়েন লাঙ বললো।
কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে একটু একটু করে আমি মারা যাচ্ছি, আমার ভয় হচ্ছে- ভাষা তত্ত¡ গ্ধ নামের বইটা পড়ে শেষ করার মতো সময় আমি পাবো না!
শেষ কালে ঘোড়ার খুরের আওয়াজসহ নানা রকম বিশৃঙ্খল শব্দ শোনা গেলো। ঐক্য তান তোরণ-এর মধ্য দিয়ে প্রাসাদের ভিতরে জোয়ারের পানির মতো প্রবেশ করলো বিদ্রোহী সেনা দল। আমি কানে আঙ্গুল দিয়ে কানের ছিদ্র চেপে ধরে বললাম, “তুমি কি শুনতে পাচ্ছো? এ ভাবেই ধেয়ে আসছে সিয়ে রাজ্যের বিপর্যয় আর অন্তিম দিন!”
আট বছর পর আমি এবং আমার বৈমাত্রেয় ভাই আরেক বার মুখামুখি হলাম প্রাসাদ দেয়ালের নীচে! ওর অবয়বে ফুটে থাকা শত্রæতা মূলক বিমর্ষতার আভা এর-ই মধ্যে মিলিয়ে গেছে! রাজ মুকুটের নিমিত্তে সংগঠিত হওয়া এই দীর্ঘ মেয়াদি সমরের বিজয়ী, তুয়ান ওয়েন-এর চোখ বোজা মৃদু হাসি নির্দেশ করছিলো ক্লান্তি আর অবসন্নতাকে! নীরবতার মধ্যে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে কেটে যাওয়া মুহূর্তগুলো যেন ছিলো অনন্ত কালের ধীরে বয়ে যাওয়া সময়ের প্রবাহ! যেন প্রাসাদের কতো বছরের নির্গত ধূঁয়ার মেঘ আমার চোখের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে চলে যাচ্ছিলো। সাদা ঘোড়ার উপরে বসা যুদ্ধের পোশাক পরিহিত, শত প্রতিক‚লতায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া তুয়ান ওয়েনের শরীরের ছায়া বাস্তবে ঠিক অবিকল প্রয়াত সম্রাটেরই যেন প্রতিচ্ছবি!
“তুমিই সিয়ে দেশের সম্রাট!”, আমি বললাম।
আমার কথার মর্মার্থ অনুধাবন করেই, তুয়ান ওয়েন পরিষ্কার গলায় উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। তারপর আগের মতোই নীরবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো, তার চোখের দৃষ্টিতে ছিলো এক ধরনের অস্বাভাবিক সহানুভূতির অভিব্যক্তি এবং কোমলতা আর সুবিবেচনার বহিঃপ্রকাশ!
“একটা বিশুদ্ধ আবর্জনা, একটা চলমান মৃতদেহ, যার কোন প্রেষণা নাই! ঘটনা চক্রে শুরুতে সেই সময় ওরা জোর করেই তোমার মাথায় পরিয়ে দিয়েছিলো, কলো চিতার অবয়ব খোচিত রাজ মুকুটটি! এটা ছিলো তোমার জন্য একটা দুর্ভাগ্য! একই সাথে সিয়ে দেশের জনসাধারণের জন্যেও একটা দুর্ভাগ্য!”, তুয়ান ওয়েন সাদা ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে আমার দিকে এগিয়ে আসলো। ওর গায়ের ঢোলা কালো রঙের আলখেল্লাটা পাখীর ডানার মতো যেন বাতাসের তোড়ে ঝাপ্টাচ্ছে! একটা অপ্রীতিকর কটু গন্ধ ওর জামা থেকে বাতাসে পাক খেয়ে বেরিয়ে আসছে। ওর কপালের উপর উল্কির মতো সবুজাভ নীল রঙের খোদাই করে লেখা চীনা অক্ষর দু’টো থেকে দ্যুতি পাথরের মতো বিচ্ছুরিত জ্যোতির বর্ণবলয়ের কারণে আমার চোখের ভিতরে অনুভূত হচ্ছিলো তীক্ষ্ণ ছুরির খোঁচার আঘাতের যন্ত্রণা!
“আমার কপালের উপরে খোদাই করা অক্ষর দেখতে পাচ্ছো কি?”, তুয়ান ওয়েন বললো, “এটা হচ্ছে প্রয়াত সম্রাটের পবিত্র আত্মার ফরমান! আমার আদিতে ইচ্ছা ছিলো তুমিই হবে প্রথম ব্যক্তি, যে দেখবে এটা! তোমার দেখার পরই শান্ত, ধীর-স্থিরভাবে আমি মৃত্যুকে করতাম আলিঙ্গন!
আমি ভাবতেও পারি নাই, একজন বৃদ্ধ ভিখারির কুকুর তাড়াবার লাঠি আমার পুরো জীবন রেখার চলমান দিককে বদলে দিবে!
আর এখন সত্যিকারের সিয়ে সম্রাট কে?
কি আশ্চর্য! সেটার শেষ সাক্ষদাতা হিসেবে আবির্ভূত হলে তুমি!”
আমি বললাম, “তুমিই সিয়ে সম্রাট!”
“হাঁ, আমিই সিয়ে দেশের সম্রাট! পুরো জগতটা সত্যিই সাক্ষ্য দিচ্ছে, আমার প্রকৃত মর্যাদার!”, তুয়ান ওয়েন একটা হাত তুলে আমার কাঁধের উপর রাখলো, অন্য হাতটা দিয়ে করলো একটা অপ্রত্যাশিত কাজ! সে সত্যিকারের একজন জেষ্ঠ্য ভ্রাতার মতোই স্নেহ মাখা স্পর্শে আমার অবয়বের উপর হালকাভাবে হাত বুলিয়ে দিলো। তার কণ্ঠস্বর প্রশান্ত ধীর-স্থির, শুনে মনে হয় ওতে আছে ধ্যাণ মগ্নতার ছাপ।
“প্রাসাদের দেয়াল টপকে তুমি চলে যাও”, তুয়ান ওয়েন বললো, “বাইরের জগতে গিয়ে হয়ে যাও এক জন সাধারণ মানুষ! একজন নকল সম্রাটের জন্য এটাই হতে পারে সর্বোত্তম শাস্তি! দেয়াল টপকাও”, তুয়ান ওয়েন বললো,
“তোমার সবচেয়ে অনুগত খোজা দাস ইয়েন লাঙ-কে সাথে নেও। এখন থেকে শুরু করো সাধারণ মানুষ হিসেবে তোমার কর্ম জীবন!”
আমি দাঁড়িয়ে আছি ইয়েন লাঙ-এর নরম কোমল কাঁধের উপর। আমার দেহটা যেন একটা বিধ্বস্ত পতাকার মতো উত্তোলিত হলো। বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান রাজকীয় কর্ম জীবনের ঘাঁটিটা জীবন থেকে পর্যায়ক্রমে সরে যাচ্ছে দূরে, চলে যাচ্ছে বহু দূরে! প্রাসাদ দেয়ালের উপরে গজিয়ে উঠা বুনো ঘাসের সাথে ঘষা খাচ্ছে আমার হাতের তালু। করাতের মতো ধারালো তীক্ষ্ণ ঘাসের পাতা আমার শরীরের ত্বকে কাটছে আঁচড়, অনুভব করছি চামড়া ছিলে যাওয়ার জ্বালা। আমি দেখতে পাচ্ছি প্রাসাদ দেয়ালের বাইরে, রাজধানী শহরটার দৃশ্য। মাথার উপর ভাসছে একটা তাতানো গনগনে সূর্য! উত্তপ্ত সূর্যের নীচে আছে শহরের নানা এলাকার সংযোগকারী রাস্তা, আবাসিক ভবন, গাছ গাছালি, আছে পাহাড়, আছে সাগর!
যেখানে আছে আমার জন্য দাবাদাহ পীড়িত প্রায় অপরিচিত একটা জগৎ! আমি দেখতে পাচ্ছি ধূসর রঙের একটা পাখী আমার মাথার ঠিক উপর দিয়ে উড়ে চলে যাচ্ছে। অদ্ভুত ব্যপার, গ্রীষ্মের দিনে আকাশ থেকেই পাখীর ডাক প্রতিধ্বনিত হয়ে আসছে, শোনা যাচ্ছে ওয়াং —– ওয়াং —— ওয়াং (?— ? —-?), যার ভাবার্থ হতে পারে, পালাও —– তুমি পালাও ——– অথর্ব, তুমি পালিয়ে যাও!
(দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ শেষ)
(চলবে)