জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ

অনলাইন ডেস্ক : গত ২৫শে ডিসেম্বর, শনিবার, গ্রীনিচ মান সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন যুগের সূচনা ঘটিয়ে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্র ‘জেমস ওয়েব’ মহাশূন্যে উৎক্ষেপিত হয়েছে। ফ্রেঞ্চ গায়ানার কোউরু মহাকাশ কেন্দ্র থেকে এর যাত্রা শুরু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাসা’র তত্ত্বাবধানে ইউরোপিয়ান আরিয়েন রকেট দিয়ে মাত্র আধ ঘণ্টার কম সময়ে এটাকে কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি গত তিন দশকের সবচেয়ে শক্তিশালী হাবল টেলিস্কোপ থেকে তিন গুণ বড় এবং একশ গুণ বেশি শক্তিশালী। বিজ্ঞানীরা প্রত্যাশা করছেন, এই টেলিস্কোপের সাহায্যে মহাবিশ্বের অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ পাবে।

প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের এই প্রজেক্ট এ কাজ করেছেন কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিজ্ঞানীরা। উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে হাবল টেলিস্কোপ মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের অনেক অকল্পনীয় চিত্র আমাদের কাছে উম্মোচিত হয়েছে এবং নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পথ সূচিত হয়েছে। সেই হিসেবে হাবল টেলিস্কোপের চেয়ে শত গুণ ক্ষমতাশালী জেমস ওয়েব আগামী কয়েক দশকে পৃথিবীর মানুষকে অনেক অজানা বিষয়ের সন্ধান দিতে সক্ষম হবে এবং বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন আবিষ্কারের দ্বার উদ্ঘাটনে সহায়তা করবে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য ন্যাশনাল এরোনোটিক্স এন্ড স্পেস এডমিনিস্ট্রেশন’ (নাসা), ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং ‘দ্য কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি’ (সিএসএ) সম্মিলিতভাবে এই টেলিস্কোপ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। এছাড়াও ১৫টি দেশের হাজার হাজার বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং সংগঠন এ প্রক্রিয়ার অংশ নেয়। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের আয়নাটা হাবল টেলিস্কোপের চেয়ে বড় হওয়ায় এবং এর ক্ষমতা একশ গুণ বেশি হওয়ায় এটা অতীত এবং ভবিষ্যতের অনেক কিছুই তুলে আনতে পারবে। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের এই ক্ষমতার জন্য বিজ্ঞানীরা একে ‘টাইম মেশিন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত নাসা’র এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জেমস ই ওয়েব এর নাম অনুসারে এই টেলিস্কোপের নামকরণ করা হয়। জেমস ই ওয়েব ১৯৬৯ সালে চন্দ্রাভিযানের এপোলো প্রকল্প এবং হাবল টেলিস্কোপ নির্মাণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়ায় কানাডার প্রায় ৫০০ জন বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী অংশ নেন। মহাবিশ্বের অনেক অজানা বিষয় মানব সমাজের কাছে তুলে ধরতে কানাডার অংশগ্রহণ এবং অবদান নিঃসন্দেহে ইতিহাসের এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।