স্পোর্টস ডেস্ক : দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ঢুকতে গিয়েই হোঁচট খেতে হলো! কিছুটা চমকেও গেলাম। এ দেখি বিরান ভূমি। চারপাশে অন্যরকম নীরবতা। একটু পর এখানে একটা বিশ্বকাপ ম্যাচ হবে। মাঠের বাইরে দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। শারজাহ কিংবা আবুধাবিতে ঢুকতে গিয়েই দেখেছি প্রবাসী দর্শকদের উন্মাদনা। কিন্তু এখানে হাতে গোনা কিছু সমর্থক ছাড়া কারওই দেখা মিলছিল না। অবশ্য তেমনটা হবেই না কেন? বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নিয়ে প্রবাসীদের প্রত্যাশার বেলুন যে আগেই চুপসে গেছে! এমন ছন্নছাড়া ক্রিকেট আর যাই হোক কাজ বাদ দিয়ে দেখার কী কোন মানে হয়?

বাংলাদেশ চেয়েছিল শেষটা অন্তত জয়ে রাঙাতে। কিন্তু মুখের কথা বুমেরাংয়ের মতো ফিরে এলো। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচটাও হেরে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করল বাংলাদেশ। মূল পর্বে ৫ ম্যাচ খেলে দল হারল পাঁচটিতেই! বৃহস্পতিবার বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়ে সেমি-ফাইনালের সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখল অস্ট্রেলিয়া। ৪ ম্যাচে তিন জয় তাদের।

দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এদিন টস ভাগ্যটাও সঙ্গে ছিল না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে যা করল দল, সেটা ভুলে যেতে পারলেই বরং ভালো। অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণের সামনে সোজা বাংলায়-লজ্জায় ডুবালেন টাইগাররা। দল মাত্র ৭৩ রানে অলআউট হলো। তারপর ৬ ওভার ২ বলে কেবল ২ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া হেসে-খেলে তুলে নেয় পুরো ২ পয়েন্ট। ৮২ বল হাতে রেখেই পায় জয়।

অথচ বাংলাদেশ কি না দুবাইয়ে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল মিরপুরের স্মৃতি। যেখানে গত আগস্টে অস্ট্রেলিয়া দলকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৪-১ এ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ঢাকা থেকে দুবাইয়ের বিমান পথ ৩,৫৪৫.৯৯ কিলোমিটার। এই বড় দূরত্বটা থাকল ক্রিকেট মাঠেও। দুবাইয়ের অনেকটা ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা যেন ব্যাট করতেও ভুলে গেলেন। উইকেটে আসা-যাওয়ার এই খেলাটা নিজেরা ফের দেখলে নিশ্চিত করেই লজ্জায় পাবেন!

আরেকটু হলে তো টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন সংগ্রহের লজ্জায় পড়তে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। সেটা অবশ্য টপকালো। আগের সেই দুঃস্বপ্ন ৭০ রান এসেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই। সেটি ২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আত্মহুতির গল্পটা প্রায় একইরকম। উইকেটে এসেছেন আর ফেরত গেছেন সাজঘরে। আসলে ঘরে ফেরার তাড়াটাও ছিল হয়তো। শুক্রবার সকালেই ফিরে যাওয়ার কথা বাংলাদেশে। তার আগে হোটেল রুমে দ্রুত গিয়ে ব্যাগ গোছাবেন বলেই কী খেলা শুরুর তিন ওভার না দল হারাল তিন উইকেট! ব্যর্থতার গল্প সমৃদ্ধ করে সেই লিটন দাস ফিরলেন কোন রান না করেই। সৌম্য সরকার ৫ আর মুশফিকুর রহিম ১ রান করে এটুকু অন্তত বুঝিয়ে দিলেন-২০ ওভারের ক্রিকেটে তার দিনও বুঝি ফুরাল!

তাদের পতনের পর কিছুটা সময় লড়েছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। কিন্তু পাওয়ার প্লে শেষের আগেই ওপেনার ধরেন সাজঘরের পথ। তার আগে করে আসেন ১৬ বলে ১৭। এরপর আফিফ হোসেনও অস্থির হয়ে উঠেন ফেরার জন্য। তাকে যেন সেই সুযোগটা করে দিলেন অ্যা্ডাম জাম্পা। অজি এই স্পিনারের বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে কাটা পড়েন আফিফ, ০ রানে। টানা দুই ম্যাচে কোন রান করা হলো না তার।

লড়তে চেয়েছিলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। কিন্তু থিতু হয়েও শেষ রক্ষা হলো না তরুণ এই হার্ড হিটার ব্যাটসম্যানের। সেই অ্যাডাম জ্যাম্পার বল তার ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকে কিপারের গ্লাভসে। ১৮ বলে ১৯ রানে শেষ শামীম। বাংলাদেশ দল তখন ১০ ওভার ৫ বলে ৬ উইকেটে ৬২।

তখন অন্তত মনে হচ্ছিল পুরো ২০ ওভারে খেলে আসবে দল। কিন্তু পতনের মিছিল তো আর থামেনি। কিছুটা ফর্মে থাকা শেখ মেহেদি হাসান এবার আউট প্রথম বলেই। দল তখন মহা বিপর্যয়ে। তখন কিছু একটা করতে পারতেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু হতাশার জন্ম দিয়ে তিনিও হতে পারলেন না ত্রানকর্তা। তাকে ফেরালেন মিচেল স্টার্ক। গ্ল্যান্স করতে গিয়ে বল তুলে দেন ম্যাথু ওয়েডের হাতে। ১৮ বলে ১৬ রান তুলে আউট রিয়াদ। অধিনায়কের বিদায়ে তখন দল ১২.২ ওভারে ৮ উইকেটে ৬৪ রান।

তারপর দলে ফেরা মুস্তাফিজুর রহমান আর শরিফুল ইসলাম কতটা কী আর করতে পারেন? স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা সর্বনাশ বাংলাদেশের। ৪ ওভারে ১৯ রানে ৫ উইকেট নেন জ্যাম্পা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটিই তার সেরা বোলিং ফিগার। আর লজ্জার ব্যাপার হলো ২০ ওভারের খেলায় ১৫ ওভারেই অলআউট বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে নিজেদের সবচেয়ে কম ওভার খেলার অনাকাংখিত রেকর্ডও এটি। আগের ম্যাচে ৮৪ রানে অলআউটের পর এবার ৭৪।

সেই সংগ্রহটা ফুঁ দিয়েই উড়িয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। যে উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান খাবি খেলেন সেখানে দুই অজি ওপেনার অ্যারন ফ্রিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার রান তুললেন অনায়াসে। বুঝিয়ে দিলেন, এই উইকেটে যোগ্যতা থাকলে খেলা যায়। একটা সাফল্য অবশ্য পেলেন তাসকিন আহমেদ। এই পেসার ফেরালেন ফিঞ্চকে। ২০ বলে ৪০ রান তুলে ততক্ষণে অজি অধিনায়ক দলকে নিয়ে যান জয়ের খুব কাছে।

এরপর ওয়ার্নারকে (১৪ বলে ১৮) সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন পেসার শরিফুল ইসলাম। বাকি কাজটুকু গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে (০) নিয়ে করে ফেলেন মিচেল মার্শ (৫ বলে ১৬)।

এ-যাচ্ছেতাই ক্রিকেট আর দৃষ্টিকটু ব্যাটিংয়ের স্মৃতি নিয়েই এবার ঘরে ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। ২০ ওভারের বিশ্বকাপ লাল-সবুজের জন্য দুঃস্বপ্ন ছাড়া আবার কি? এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও জয় মাত্র একটি। এবার ৫ ম্যাচে পাঁচটিতেই হার। আসছে বছর আরেকটি বিশ্বকাপ, জেগে উঠতে চাইলে পরের দিন সকাল থেকেই নতুন করে ভাবতে হবে ক্রিকেট কর্তাদের। সেই ভাবনার সময় কি তাদের হবে?