শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : তার পরনে আছে বিশাল ঢোলা লাল রঙের পায়জামা, সে মাথায় দিয়েছে বিশাল এক টুপি যা দেখতে জাহাজের মতো, তার কোমরে আছে সোনার পাত লাগানো প্রসস্থ কোমর বন্ধ। ওর পায়ে আছে এক জোড়া মোটা শুকতলা বিশিষ্ট কালো রঙের চামড়ার বুট জুতা!

ওকে দেখে আমার মনে পড়ছে প্রাসাদের ভেতর ঘটে যাওয়া কতগুলো বলার অযোগ্য অশ্লীল ঘটনার কথা, হৃদয়ের মধ্যে সঞ্চারিত হচ্ছে প্রচন্ড ঘৃণা!
তুয়ান উ বিড়বিড় করে মৃদু কন্ঠস্বরে ঠোঁট নেড়ে কি যেন আওড়াচ্ছে! আমার অনুমান, সে আমাকে গালি আর অভিশাপ দিচ্ছে! কিন্তু ওর মতো একটা নিকৃষ্ট প্রকৃতির আবর্জনার মতো মানুষের কথাকে আমি আমলে নিতে একে বারেই আগ্রহী নই!
এরপর শুরু হলো প্রতিযোগিতা! আমি অবলোকন করলাম প্রাসাদ প্রাঙ্গণে ঘটে যাওয়া এক দুর্দান্ত হত্যা যজ্ঞ, প্রাণ সংহারের ঘটনা!

ফুল বাগানের মধ্যে বিরাজ করছিলো সুনশান নিরবতা, শুধুই ছিলো পরস্পরের খুব কাছাকাছি থাকা যুদ্ধরত দুই যোদ্ধার হাঁফিয়ে ওঠা দীর্ঘশ্বাস আর দুই তলোয়ারের ধারালো পিঠের পরস্পরের বাড়ি খাওয়া ক্ষণের সংঘর্ষ নিনাদ!
পিছনের বাগান-এর তাজা বাতাস হয়ে গিয়েছিলো ভারী আর শুষ্ক। এর কারণই যেন ছিলো তলোয়ারের উপর প্রতিফলিত আলোর ঝলকানি, আসলে আমি বুঝতে চাচ্ছি, ঐ পরিবেশটা হয়ে উঠেছিলো ভয়ঙ্কর!
উপস্থিত বহু মানুষের অবয়বে ফুটে উঠেছিলো একটা অদ্ভুত রক্তিম আভা, যেটার বর্ণনা দেয়া অসম্ভব!
তুয়ান ওয়েন এবং চাং চ্রি, উভয়ে একটা বড় ঝাউগাছকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, পাক খাচ্ছে, সুযোগ বুঝে পরস্পরকে আঘাত করছে তলোয়ারের খোঁচা দিয়ে! দেখেই বুঝা যাচ্ছে, তুয়ান ওয়েন যাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে, সেই গুরু ব্যক্তিটি নিঃসন্দেহে তলোয়ার চালনার উচ্চ মার্গের বুৎপত্তিধারী ঐতিহ্যবাহী ‘সাদা হনুমান অশি-র’ ধারক!
এই যুদ্ধে তুয়ান ওয়েন ব্যবহার করছে গুরুর উপহার দেয়া সেই অশি!
তুয়ান ওয়েনের পদচারণার পদ্ধতি খুব সাবলীল নিশ্চিন্ত ভঙ্গির! তলোয়ার উত্তলনে আছে ক্ষিপ্রতা, আর আঘাতগুলো নিখুঁত লক্ষ্যভেদী!

অন্য দিকে দক্ষ যোদ্ধা বলে সুখ্যাতির সুনামধারী চাং চ্রি ব্যবহার করছে ‘গাঙ বিল’ নামের প্রচলিত অশি চালনা পদ্ধতি, যুদ্ধে সে চলনা করছে ‘বসন্ত আগমনী ফুল’ নামধারী তলোয়ার। ওর তরবারী চলনার ধরন ক্ষিপ্র আর ভয়ঙ্কর! চাং চ্রি-এর প্রতিটা কোপে, প্রতিটা আঘাতে যেন ঝরে পরছে বসন্তের কোন একটা সদ্য ফোটা ফুলের পাপড়ি একটা একটা করে!
তুয়ান ওয়েন-এর হাতে থাকা ঢালটা ক্রমাগত প্রতিহত করছে প্রতিপক্ষের তলোয়ারের আঘাত, শোনা যাচ্ছে কানের পর্দা কাঁপানো শব্দ! আমি দেখতে পাচ্ছি, তুয়ান ওয়েনও পিছপা হওয়ার নয়! সে লাফ দিয়ে পেরিয়ে গেলো হলুদ রঙের কাপড়ে ঢাকা শূন্য শবাধারটা! পরমুহূর্তেই চাং চ্রিও লাফিয়ে উঠলো সেটাকে অতিক্রম করার জন্য।
ঠিক এই সময় আমি সচেতনভাবে অনুভব করলাম, শুনতে পেলাম সম্মান সূচক সনদ লাভের তলোয়ার চালোনা প্রতিযোগিতা নামের নিষ্ঠুর এই খেলার অন্তিম আওয়াজটি!
একজন মানুষ ইতিমধ্যেই পাড়া দিয়ে দিয়েছে আপন সমাধির কিনারায়!

যেই মুহূর্তে চাং চ্রি শবাধারটি অতিক্রম করার জন্য লাফিয়ে উঠেছিলো, ঠিক তখনই তুয়ান ওয়েন আবিষ্কার করতে পেরেছিলো প্রতিপক্ষের গতিময়তার একটা দুর্বল বিন্দু! হঠাৎ করেই যেন তলোয়ারের তীক্ষ্ণ অগ্রাভাগের একটা খোঁচা এসে ছেদ করে ফেললো চাং চ্রি-এর কণ্ঠনালী!

আমি শুনতে পেয়েছিলাম তুয়ান ওয়েন-এর গগনবিদারী চিৎকার, যা কিনা হয়তো শুনতে সক্ষম হয়েছে এমন কি শ্রবণ প্রতিবন্ধী বধিরাও! তলোয়ারের আঘাত ছিন্ন করে ফেলেছিলো যে মানুষটার ত্বক ও মাংস, তার তীক্ষ্ণ আর্তনাদের শব্দও হালকা আর ভোতা হয়ে ঢাকা পরে গিয়েছিলো তুয়ান ওয়েনের কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসা বিকট আওয়াজের মধ্যে!
দক্ষ যোদ্ধা চাং চ্রি যেন তুয়ান ওয়েন-এর হামলার জবাব দিলেন শবাধারের ভেতর পতিত হয়ে! তার সমুন্নত শির অপমানিত হয়ে কর্তিত হলো! গিয়ে পতিত হলো শবাধারের দেয়ালের বাইরে! তার চোখ দু’টো খোলা, ওরা যেন গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে ফুল বাগানের উপরের শূন্য আকাশের সুদূর নীলিমা! কর্তিত কণ্ঠনালী থেকে ঝর্ণা ধারার মতো রক্ত বেরিয়ে এসে কফিনের উপরে থাকা হলুদ রঙের মোটা তাঁবুর কাপড়কে ভিজিয়ে ফেলছিলো। তারপর সেই রক্ত টপ টপ করে এসে পরছিলো সবুজ ঘাসে ঢাকা জমির উপর। বাগানের এক পাশে ঘন গাছের বনের ধার থেকে শোনা যাচ্ছিলো তুয়ান উ এবং উত্তর অঞ্চল থেকে আসা সৈন্যদের আনন্দ উল্লাস আর জয়ধ্বনির শব্দ!

অতি নিষ্ঠুর এই খেলাটাই তুয়ান ওয়েনকে দিলো উচ্চ মর্যাদা, পরিণত করলো বিজয়ী বীরে, আর সেই সাথে ঘোষণা করলো আমার পরিণতির ইঙ্গিত!
ঘাসের জমির উপর গালিচার মতো, প্রথমে গাঢ় লাল, পরে কলো হয়ে যাওয়া রক্তের প্রলেপ দেখে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো! এই জলসার তত্ত্বাবধানে থাকা খোজা দাসটি প্রতিযোগিতার পুরষ্কার ধারক তামার বাক্সটা উঁচু করে ধরে তুয়ান ওয়েন-এর দিকে এগিয়ে গেলো। খোজা দাসটি বাক্সের মুখ খুলে বের করলো চিতা বাঘের অবয়ব খোচিত বিশাল সীলমোহরটি, যা নির্দেশ করে সম্মান সূচক সনদ! সে সীলমোহরটি পেশ করলো তুয়ান ওয়েন বরাবর!

এখন আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য, নান ফা এলাকায় ফসল পূজার বেআইনী সমাবেশ দমনে সামরিক অভিযানে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বাছাই করা এক মাত্র ব্যক্তিই হচ্ছে তুয়ান ওয়েন!
সবই ভাগ্য, সব কিছুই নির্ধারিত হয় ঈশ্বরের ইচ্ছায়! আমি আমার সাম্রাজ্যে সকল উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, কিন্তু ওদের জীবন ও মৃত্যুর উপর আসলে আমার কোন ক্ষমতা নাই, আমার সাধ্য নাই ঈশ্বরের ইচ্ছাকে অমান্য করার!

একটা জীবন মরণ লড়াই সমাপ্ত হয়েছে, পিছনের ফুল বাগানে প্রত্যুষের কুজ্ঝটিকার চাদর যেন পাক খেয়ে উপরে উঠে ছড়িয়ে পরে মিলিয়ে যাচ্ছে! বসন্ত দিনের সূর্যালোক হালকাভাবে আলোকিত করতে শুরু করেছে পুরো বাগানের ফুল-তৃণ আর মাটির উপর রাখা সেই শবাধারটাকে! প্রাসাদ ভৃত্যরা শবাধারের উপর বিছানো হলুদ রঙের মোটা তাঁবুর কাপড়ের আবরণটা সরালো। খুব সতর্কতা আর তাজিমের সাথে দক্ষ যোদ্ধা চাং চ্রি-এর মৃত দেহটি শবাধারের মধ্যে ঠিক মতো শুইয়ে দিলো। আমি দেখতে পাচ্ছি গোটা চেহারায় রক্তের দাগ মাখা তুয়ান ওয়েন এগিয়ে আসছে, সে দুই হাত প্রসারিত করে স্পর্শ করলো চাং চ্রি-এর শির, ওর সম্পূর্ণ খুলে থাকা অক্ষি যুগলের উপর চুম্বন করলো এক বার! “তুমি চোখ বুজো”, তুয়ান ওয়েন-এর কন্ঠস্বর শুনে মনে হচ্ছে সে খুবই ক্লান্ত, আর দুঃখে ভারাক্রান্ত! সে বললো, “সেই সুদূর অতীত কাল থেকেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়েছে অনেক বীরদের, কিছু মানুষের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে। কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করেছে, আর ওরা হয়েছে রাজনীতির বলি। এমন মৃত্যু মোটেও অবাক করার মতো নয়!”
এখানকার দায়িত্বে নিয়োজিত একজন সৈনিক ঘাসের উপর পরে থাকা একটা ঘাম মুছার রুমাল উঠিয়ে নিলো, রুমালটার উপর সুতার কারুকাজে করা আছে একটা ঈগল পাখীর অবয়ব এবং লেখা আছে চাং চ্রি-এর নাম।

সে ঘাম মুছার রুমালটি আমার কাছে পেশ করলো অত্যন্ত সম্মানের সাথে, আমাকে জিজ্ঞেস করলো যে, আমি রাজি আছি কি না, এই রুমালটা স্মারক হিসাবে চাং চ্রি-এর পরিবার বর্গের কাছে হস্তান্তর করতে! “দরকার নেই”, আমি বললাম, “তুমি বরং ওটা ফেলে দাও!”, সৈনিকটি হতভম্ব হয়ে দুই হাত শূন্যে উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষণ, ওর হাতের আঙ্গুলগুলো থর থর করে কাঁপছিলো, তারপর আমি দেখলাম চাং চ্রি-এর ঘাম মুছার রুমালটাকে একটা মরে যাওয়া পাখীর মতোই ফেলে দেয়া হলো ঘাসে ঢাকা জমির উপরে!
চন্দ্র বর্ষের তৃতীয় মাসের নবম দিবসে তুয়ান ওয়েন সেনা দল সংগঠিত করে যুদ্ধ যাত্রা করলো! তাদের শক্তি সামর্থের বহিঃপ্রকাশ ঘটছিলো বলিষ্ঠ পদচারণার শব্দের মধ্য দিয়ে! বার্ধক্য জনিত নানা ব্যাধিতে পীড়িত হুয়াং ফু ফুরেন তুয়ান ওয়েন-কে বিদায় জানাতে নিজেই উপস্থিত হলেন রাজধানীর নগর তোরণে! এই ঘটনাটা তাৎক্ষণিকভাবেই সিয়ে দেশের সর্বত্র একটা আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছিলো। আমজনতা সকলেরই নজরে এসেছিলো সিয়ে দেশের কলো চিতার অবয়ব খোচিত ধ্বজা যার উপর ছিলো রক্তের ছোপ ছোপ দাগ, যা নির্দেশ করছিলো তুয়ান ওয়েন-এর সাফল্য আর বীরত্বের অর্জন! তুয়ান ওয়েন নিজে বাম হাতের কব্জির ত্বক খানিকটা কেটে বের করেছিলো রক্ত, ছিটিয়ে দিয়েছিলো কালো চিতার অবয়ব খোচিত সিয়ে দেশের পতাকার উপর! শোনা যায়, এটা দেখে আমার বৃদ্ধা দাদী হুয়াং ফু ফুরেন কান্নায় ভেঙ্গে পরেছিলেন, ঝর্ণা ধারার মতো নেমে এসেছিলো তাঁর চোখের পানি! আর দূরে দাঁড়ানো দর্শক জনতা ফেলছিলো দীর্ঘশ্বাস, আবেগে আপ্লæত হয়ে তারা করছিলো চিৎকার! কেউ কেউ উচ্চ স্বরে করছিলো তুয়ান ওয়েন-এর প্রশংসা স্তুতি, ওরা চিৎকার করে বলছিলো, “মহান সেনাপতি দীর্ঘজীবি হোন!”

আমি নগর তোরণের সুউচ্চ মিনারে দাঁড়িয়ে নীচে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো লক্ষ্য করছিলাম। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো সময়টাই আমি ছিলাম নির্বাক নিঃশ্চুপ! আমি অনুমান করতে পারছিলাম তুয়ান ওয়েন-এর এই প্রকাশ্যে রক্ত ঝরানোর কাজে, অন্তর্নিহিত আছে এক প্রগাঢ় তাৎপর্য! তীব্র উম্মাদনা, আরও আছে ব্যাপক উচ্চাকাঙ্খা আর দুরভিসন্ধি! তাই আমি ভেতরে ভেতরে অনুভব করছি একটা চরম অস্বস্তি যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন! আমার প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে, ইচ্ছা করছে মাথাটাকে খন্ড করে ভেঙ্গে ফেলি! আমি ঘামছি, আমার ভিতরের জামা কাপড় সব ভিজে যাচ্ছে অস্বাভাবিক ঘামে! খুটি উপর টাঙ্গানো হলুদ শামিয়ানায় ঢাকা ছায়ার নীচে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে আমি শান্তি পাচ্ছিলাম না মোটেও! সারি বদ্ধ ভাবে দাঁড়ানো সেনা দল, সিঙ্গা ধ্বনির সাথে সাথে অগ্র যাত্রা শুরু করলো, আমি লাফ দিয়ে উঠে পরলাম। যেন পালিয়ে এসে উঠে বসলাম রাজকীয় শকটে, ফিরে আসলাম রাজ প্রাসাদে! আমার নিজের কণ্ঠস্বর শুনে মনে হলো, আমি যেন দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি! আমার মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই আমি সত্যি সত্যিই কেঁদে ফেলবো!

৪.
বসন্ত কালের বিকেল, প্রাসাদের ভেতর দিনের আলো কমে আসছে, শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহ-এর বাইরের বড় বকুল গাছটা থেকে এ বছরে প্রথম বারের মতো ভেসে আসছে ঝিঁঝি পোকার ডাকের আওয়াজ ।

দক্ষিণ অঞ্চলের যুদ্ধ ক্ষেত্রে সরকারি সেনা দল এবং বিদ্রোহী ডাকাত যোদ্ধার দল কেউই নিজেদের অবস্থান থেকে এক চুল নড়তে চাচ্ছে না। বহু মানুষ আর প্রচুর সংখ্যক ঘোড়া হতাহত হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধের দামামা কমে নাই, আছে আগের মতোই! আমার সিয়ে রাজ প্রাসাদের ভিতরে যেন বিরাজ করছে একটা বসন্ত গোধূলির শেষ লগ্নের দৃশ্যপট!
নাচ গানের আসরের আয়োজন চলছে, যা কিনা শান্তি আর সমৃদ্ধির নির্দেশক! সুন্দরী রমনীরা গালে মেখেছে ভেষজ পদার্থের চূর্ণ থেকে তৈরী লাল রঙের আভা সৃষ্টিকারী প্রসাধনী যা থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে সুবাস। সেই সুগন্ধের সাথে যুক্ত হয়েছে বড় মাটির পত্রে, ছয়ার নীচে সদ্য ফোটা পদ্ম ফুলের সৌরভ! তবে একই সাথে যেন বরাবরের মতো বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে বারুদের ধূয়ার গন্ধ যা কিনা ব্যবহৃত হয় যুদ্ধ ক্ষেত্রে। আর এই যুদ্ধটা হচ্ছে অন্তঃপুর বাসিনীদের মধ্যকার সমর। যার কোন সুনির্দিষ্ট শুরু নাই, শেষও নাই!

পক্ষী ক‚জন ঘর থেকে একটা খবর এসেছে যা চমকে দিয়েছে মানুষকে! শোনা যাচ্ছে, বেশ কয়েক মাসের অন্তঃসত্ত্বা হুই ছোট রানীর হঠাৎ করেই নাকি গর্ভপাত হয়ে গিয়েছে! তার গর্ভ থেকে বেড়িয়ে এসেছে তুষার সাদা চামড়া আর পশমধারী একটা মরা শিয়াল! প্রাসাদের যে ছোট খোজা দাসটি এমন সাঙ্কেতিক বার্তাটা বয়ে নিয়ে এসেছিলো, সে দীর্ঘ সময় ধরে তো তো করে তোতলাতে তোতলাতে যা বলছিলো সেটা আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি অনেক দেরীতে! আমি পাগলের মতো রেগে গিয়ে আমার হাতে থাকা হাত পাখা দিয়ে ওর গালে কষে দিলাম এক চড়!

“কে তোমাকে উল্টা পাল্টা কথা ছড়াতে বলেছে?” ছোট খোজা দাস সাহস পেলো না, আমার সাথে তর্ক করতে, শুধু পক্ষী ক‚জন ঘর-এর দিকে আঙ্গুল তুলে ইঙ্গিত করে বললো,
“এই গোলাম কিছুই জানে না। সম্রাটের আম্মাজান এবং সম্রাজ্ঞী বড় রানী, জাঁহাপনাকে অনুরোধ করছেন, জাঁহাপনা যেন অনুগ্রহ করে নিজে গিয়ে ব্যাপারটা তদন্ত করে দেখেন!
আমি খুব তাড়াহুড়া করেই পক্ষী ক‚জন ঘর নামের দালানটার আসলাম। দেখতে পেলাম আমার মাতা মঙ ফুরেন আর অন্যান্য রানীরা সবাই বসে আছে দালানের নীচের তলার বসার ঘরে, সবাই খুব নীচু স্বরে কথা বলছে, পরস্পরের সাথে কানাকানি করছে! (চলবে)