সিনহা আবুল মনসুর : পর্ব: চৌদ্দ
অয়নের ডায়েরি
শুক্রবার
৩রা আগস্ট ১৯৮৪।
ঘুম আমার অতি প্রিয় একটি বিষয়! প্রতি রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে আমি কিছু না কিছু পড়ি। গল্প, কবিতা, নিবন্ধ বা প্রবন্ধ। হাতের কাছে যা পাই। হাতের কাছে কিছুই না পেলে আর্কিটেকচারের কোনো বিষয় পড়ি।
পড়ার বই, ম্যাগাজিন বা পত্রিকা হাতে নিয়েই আমি বিছানায় যাই। টেবিল ল্যাম্পের হালকা আলোয় পড়তে শুরু করি। দশ মিনিট, পনেরো মিনিট বা বিশ মিনিট। ধীরে ধীরে আমার শরীর অবসন্ন হয়ে আসে। চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। ঘন ঘন চোখের পলক পড়তে শুরু করে। একসময় বই বা ম্যাগাজিনের মুদ্রিত অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে আসে।
হাত থেকে বই পড়ে যায়!
ম্যাগাজিন পড়ে যায়!
আমি আস্তে আস্তে চলে যাই চেতন থেকে অচেতনে। ঠিক যেন দিঘির জলে ধীরে ধীরে তলিয়ে যাওয়ার মতো!
ওই দিঘিটা সমুদ্রের মতো গভীর, অথচ পুকুরের জলের মতো শান্ত আর নিস্তরঙ্গ! চেতন থেকে অচেতনে চলে যাওয়ার ওই যে সময়টা, তার ব্যাপ্তি খুবই কম কিন্তু তীব্রতা অনেক!
সময়টা বড়ই অদ্ভুত!
আমি মন-প্রাণ দিয়ে ওই সময়টাকে উপভোগ করি! মাঝে মাঝেই আমার মনে হয়, চেতন থেকে অচেতনে যাওয়ার পর কী হয়।
আমার আত্মা কি তখনো আমার শরীরে লেপ্টে থাকে?
নাকি বাঁধন আলগা করে কিছু সময়ের জন্য উড়াল দেয়। যদি উড়ালই দেয়, তাহলে কখন ফিরে আসে?
আর যদি না ফিরে আসে!
ওটাই কি মৃত্যু?
ঘুম কি মৃত্যুর মহড়া?
প্রতি রাতেই কি আমরা মৃত্যুর মহড়া দিচ্ছি!
ভোররাতে আমার খুব গাঢ় ঘুম হয়। ওই রাতে আমি কোনো স্বপ্ন দেখি না। অথবা দেখলেও মনে রাখতে পারি না। আমার বেশির ভাগ স্বপ্নই প্রথম রাতের। কিন্তু গত সাত দিন ধরে এই নিয়মের ব্যাঘাত ঘটছে। আমার ভোর রাতের ঘুম হালকা হয়ে গেছে। ওই হালকা ঘুমে আমি ছেঁড়া ছেঁড়া স্বপ্ন দেখি।
অদ্ভুত সব স্বপ্ন!
কিছু কিছু স্বপ্ন খুব ভয়জাগানিয়া।
আমার ঘুম ভেঙে যায়!
কেমোথেরাপির পরপরই এটা শুরু হয়েছে।
অপুকে জিজ্ঞেস করেছি, ‘অপু, এটা কি কেমোথেরাপির সাইড এফেক্ট?’
অপু বলেছে, ‘হতে পারে। তবে আমার ধারণা, এটা বিষণ্ণতা থেকে হচ্ছে। ভালো কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলাপ করতে হবে। দাঁড়া, আমি ব্যবস্থা করছি’।
আমার বেশির ভাগ স্বপ্নই অসম্পূর্ণ আর অসংলগ্ন। ঘুম ভেঙে গেলে আমি বিছানায় শুয়ে শুয়েই ভাবি:
আচ্ছা, স্বপ্ন কী?
মানুষ কেন স্বপ্ন দেখে?
স্বপ্নের কোনো অর্থ আছে?
শাব্দিক বা রূপক!
স্বপ্ন কি কেবলই অবচেতন মনের কল্পনা না আরো কিছু?
মানুষই কেবল স্বপ্ন দেখে না অন্যান্য প্রাণীও স্বপ্ন দেখে।
আচ্ছা,অন্ধরাও কি স্বপ্ন দেখে?
এই সব প্রশ্নের কোনো উত্তর আমি জানি না!
নদীর সাথে আলাপ করতে হবে। আমি অনেক প্রশ্নের উত্তর জানি না। নদী ঠিকঠিক ওই সব প্রশ্নের উত্তর জানে।
অনেক দিন ক্যাম্পাসে যাই না। নদীর সাথে দেখা হয় না।কথাও হয় না।
নদী কেমন আছে!
আজ ক্যাম্পাসে যাব। নদীর সাথে দেখা হবে। কথা হবে। নদীকে নিয়ে কয়েকটা স্বপ্ন দেখেছি। নদীর সাথে স্বপ্নগুলো শেয়ার করব।
আমি ক্যাম্পাসে ঢুকলাম সকাল সাড়ে এগারোটায়। আজ বুধবার। সকাল এগারোটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত আমাদের কোনো ক্লাস নেই। এই সময়টা নদী কোথায় থাকে, কী করে আমি তা জানি। নদী এখন আছে ডিপার্টমেন্টের লাইব্রেরিতে। দোতলায়, রুম নম্বর দুশো বারোর বাম দিকের শেষ টেবিলটায়। ঠিক জানালার পাশে!
আমি চলে এলাম দোতলার রুম নম্বর দুশো বারোর সামনে।জানালা দিয়ে উঁকি দিলাম। নদী বসে আছে অন্য দিকের জানালার পাশে। একা, আশপাশে কেউই নেই।
নদী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জানালার বাইরে।
জানালার বাইরে বিশাল বিশাল অশ্বত্থ আর দেবদারুগাছ। গাছের ওপাশে খোলা আকাশ।
ওই আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ।
জানালা দিয়ে নদী কী দেখে?
বৃক্ষ, আকাশ, না আকাশের কোলে ভেসে বেড়ানো ওই সব মেঘ!
নদীর গায়ে গাঢ় নীল রঙের পোশাক।
নদীকে দেখে মনে হয়, ও যেন মেঘের দেশের স্বপ্নবালিকা অথবা মেঘের দেশের রাজকন্যা!
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মতো নদীকে আমার বলতে ইচ্ছে হয়, নদী:
‘যেতে পারি, কিন্তু কেন যাব?
ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো।
এতকাল মেখেছি দুহাতে
এতকাল ধরে!
কখনো তোমার ক’রে, তোমাকে ভাবিনি।
এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ ডাকে: আয় আয় আয়
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতাকাঠ ডাকে: আয় আয়
যেতে পারি
যেকোনো দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাব?
সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাব
যাব কিন্তু, এখনি যাব না
তোমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাব
একাকী যাব না, অসময়ে’!
কিন্তু নদীকে আমার কিছুই বলা হয় না। বলতে পারি না। শুধু হাত ইশারায় ডাক দিই। নদী আমার ডাকে সাড়া দেয়। আমরা নেমে আসি একতলায়। সেখান থেকে ক্যাফেটেরিয়ায়।
চায়ের কাপে চুমুক দিতেই নদী আমাকে বলে, ‘অয়ন, তোমাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। রাতে ঘুমোওনি?’
আমি বলি, ‘নদী, গত সাত দিন ধরে আমার ঘুমের সাইকেলটা ওলট-পালট হয়ে গেছে। ভোররাতের দিকে অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নে প্রচণ্ড পানির পিপাসা হয়!
ঘুম ভেঙে যায়!
বিছানায় শুয়ে শুয়েই স্বপ্ন নিয়ে আকাশ-পাতাল চিন্তা করি। আর ঘুম হয় না’!
নদী বলে, ‘কী স্বপ্ন দেখো, অয়ন! আমাকে বলবে?’
আমি বলি, ‘অবশ্যই বলব। তোমাকে বলার জন্যই তো এসেছি। গত রাতে দুটো স্বপ্ন দেখেছি। দুটোই ভীষণ খাপছাড়া, ভীষণ অসংলগ্ন।’
প্রথম স্বপ্নটা এরকম:
আমি ক্যাম্পাসে এসেছি। তোমার সাথে দেখা হলো লাইব্রেরির বারান্দায়। তোমার পরনে হলুদ রঙের শাড়ি, লাল পাড়। খোঁপায় বেলিফুলের মালা। গলায় লাল গোলাপের মালা।
স্বপ্নেই আমি তোমাকে বললাম, নদী, তোমাকে খুবই সুন্দর লাগছে। একেবারে নববধূর মতো!
তুমি বললে, কেন অয়ন, তুমি জানো না, আজ আমার গায়ে-হলুদ। তুমি দেখো তো বরপক্ষের ওরা এসেছি কি না। তার পরই বললে, ও অয়ন, তোমার জন্য একটা উপহার আছে। তুমি একটু অপেক্ষা করো। আমি উপহারটা নিয়ে আসি।এই বলে তুমি লাইব্রেরির ভেতরে ঢুকে গেলে।
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম বাইরে!
তুমি আর এলে না!
দ্বিতীয় স্বপ্নটা আরো অদ্ভুত।
গভীর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আমি। আমি হাঁটছি। আমি হাঁটছি। কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি, কিছুই জানি না। হাঁটতে হাঁটতেই একসময় ক্লান্ত হয়ে দাঁড়ালাম এক জায়গায়। দেখি আমার সামনেই বিশাল এক রাজপ্রাসাদ। প্রাসাদের দুজন প্রহরী আমাকে ধরে নিয়ে এল প্রাসাদের ভেতরে।
রাজদরবারে দাঁড়ানো আমি। প্রহরী দুজন বলল, মহারানি, এই লোক বিনা অনুমতিতে আমাদের রাজ্যে প্রবেশ করেছে। আমি চোখ তুলে তাকালাম মহারানির দিকে। দেখি মহারানির আসনে তুমি। তুমি আমাকে ইশারায় কাছে ডাকলে। তোমার পাশের আসনে বসালে। তারপর কানে কানে বললে, অয়ন, তুমি এই রাজ্যের রাজা হবে?
আমি রাজি হলাম। তোমার গলায় মালা দিতে উদ্যত হলাম।
কিন্তু একি!
তোমার আসনে তুমি নেই!
ওখানে বসে আছে এক কদাকার ডাইনি। ডাইনি আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাইল। আমি ভয়ে, আতঙ্কে দৌড়ে প্রাসাদের বাইরে চলে এলাম। জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম।আমার পেছনে ডাইনির সৈন্য-সামন্তরা।
আমি দৌড়াতে পারছি না। আমার পা জড়িয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের লতাপাতায়। বুক ফেটে যাচ্ছে তৃষ্ণায়। ঠিক তখনই আমার ঘুম ভাঙল। মাথার বালিশ ভেজা। খুব সম্ভবত কেঁদে ভিজিয়েছি!
নদী, আমি কি বিকারগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছি? পাগল হয়ে যাচ্ছি? বলতে বলতেই আমার চোয়াল শক্ত হলো, হাত দুটোও শক্ত হলো।
নদী আমার কাঁধে হাত রাখল।
এই হাত সান্ত¡নার!
তার চেয়েও বেশি নির্ভরতার!
নদী আমাকে বলল, ‘অয়ন, প্রতিটি মানুষই স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্ন চেতন মনের কল্পনা হতে পারে। অবচেতন মনের কথা হতে পারে। অথবা অন্য কিছুও হতে পারে। বিভিন্ন কারণে তোমার মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। তোমার চেতন এবং অবচেতন মনের ওপর বিরাট চাপ। এগুলোই তোমার ঘুমের সাইকেল নষ্ট করেছে। আর সেজন্যই তুমি অদ্ভুত অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখছ।’
আমি বলি, ‘কিন্তু সব স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দুতে তুমি কেন?’
নদী বলল, ‘কি জানো অয়ন, মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে, ওই স্বপ্নগুলো দেখার পাঁচ মিনিটের মধ্যে তার পঞ্চাশ ভাগ স্বপ্ন ভুলে যায়। দশ মিনিটের মধ্যে ভুলে যায় নব্বই ভাগ স্বপ্ন। অয়ন, তুমি অনেক স্বপ্ন দেখছ। সব মনে রাখতে পারছ না। অথবা তোমার অবচেতন মন সব মনে রাখতে দিচ্ছে না। শুধু আমাকে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো, সেগুলোই তোমার মনে থাকছে!বা তুমি মনে রাখতে চাইছ!
অয়ন, আমার ধারণা কী জানো? তোমার ভেতরে দুটো ভয় খুব গভীরভাবে দানা বেঁধেছে।
একটি হচ্ছে মৃত্যুভয়!
আরেকটি হচ্ছে আমাকে হারানোর ভয়! ‘জীবন এবং নদী’ দুটোই তোমার সমান প্রিয়!তাই ওই ধরনের স্বপ্নগুলোই তোমার চেতন মন মনে রাখছে’!
আমি বলি, ‘আচ্ছা নদী, অন্ধরা কি স্বপ্ন দেখে?’
নদী বলল, ‘যেসব মানুষ জন্মান্ধ নয়, তারা জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এই পৃথিবীর রং, রূপ আর দৃশ্যাবলি দেখেছে। ওই রং, রূপ আর দৃশ্যাবলির একটা স্থায়ী চিত্র জমা আছে ওদের মস্তিষ্কে। কাজেই ওরা স্বপ্নে আমাদের মতোই রং ও রূপ দেখতে পারে। আর যারা জন্মান্ধ, তারা তো কখনোই এই পৃথিবীর রং-রূপ দেখেনি। পৃথিবীর রূপ আর রঙের কোনো চিত্রই ওদের মস্তিষ্কে নেই। কাজেই স্বপ্নে ওরা কোনো রং-রূপ বা ছবি দেখতে পারে না। তারা শুধু আশপাশের শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ আর অনুভুতির স্বপ্ন দেখে’!
আমি বললাম, ‘নদী, তুমি এত সুন্দর করে ব্যাপারগুলো ব্যাখা করেছ। আমার মনটা হালকা হয়ে গেছে’!
নদী বলল, ‘অয়ন, এবার আমি তোমাকে একটা গল্প বলি। না, গল্প নয়। সত্যি ঘটনা। বছর তিনেক আগের কথা। ফ্লোরিডা থেকে আমার কাজিন অনুপম দা ফোন করলেন ঢাকায় আমার খালাকে। অনুপম দা দুয়েকটা কথা বলার পরপরই খালাকে বললেন, মা, কিছুক্ষণ আগে বাবাকে নিয়ে একটা বাজে স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্নে দেখেছি বাবা অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন। মা, বাবাকে দাও, বাবার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। খালা বললেন, তোর বাবা অফিসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। অনুপম দা বললেন, আমি ঘণ্টা খানেক পর আবার ফোন করব। অনুপম দা ঘণ্টা খানেক পর ফোন দিলেন। ততক্ষণে তার বাবাও বাসায় চলে এসেছেন।
তবে জীবিত নন, মৃত!
বাসার সামনেই এক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন আমার খালু, অনুপম দার বাবা।
অয়ন, এই ঘটনার কোনো ব্যাখা আছে তোমার কাছে?’
আমি বললাম, ‘এটা কি টেলিপ্যাথি?’
নদী বলল, ‘হতে পারে, আমি জানি না’!
আমাদের আলোচনার এই সময়ে ক্যাফেটেরিয়ায় এল শামিম আর রনি। দুজনেই আমাকে বলল, ‘অয়ন, কেমন আছিস?’ বলতে বলতে ওরাও আমাদের টেবিলে বসল।
আমি বললাম, ‘ঘুম হচ্ছে না। অদ্ভুত অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখছি।ওগুলো নিয়েই নদীর সাথে কথা বলছিলাম।’
রনি বলল, ‘অয়ন, আমিও একটা অদ্ভুত স্বপ্নের কথা বলি, যদিও স্বপ্নটা আমার নয়।’
আমি বললাম, ‘বল।’
রনি বলল, ‘সত্যি-মিথ্যা জানি না। গল্পটা আমি পড়েছি একটা ম্যাগাজিনে। স্বপ্নটা দেখেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন। তিনি তার স্ত্রী এবং প্রিয় বন্ধু ওয়ার্ড লেমনের কাছে এই স্বপ্নের ঘটনাটা লিখে গেছেন।
লিঙ্কন লিখেছেন, আমি স্বপ্ন দেখলাম, আমি হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন কক্ষে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কিন্তু কোনো কক্ষেই কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু শুনছি প্রতিটি কক্ষ থেকে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ।হোয়াইট হাউসের পূর্ব দিকের কক্ষে আমি দেখতে পেলাম পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রক্ষিত একটি কফিন। প্রহরী ও সৈনিকদের চারদিক ঘিরে ওখানে অগণিত শোকাচ্ছন্ন নর-নারী।
আমি ওদের জিজ্ঞেস করলাম, এটি কার লাশ? হোয়াইট হাউসে কে মারা গেছেন?
ওরা জবাব দিল, ওটা প্রেসিডেন্টের লাশ। তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন ওই একই চিঠিতে লিখেছেন, যদিও এটি ছিল একটি স্বপ্ন, তবু তা আমার মনের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। সারা রাত আমার আর ঘুম এল না। মনে হলো, আমি সবকিছুর পরিসমাপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মনটা বেদনায় লীন হয়ে গেল। অনেক চেষ্টা করেও আমি এই বেদনাদায়ক অনুভূতিকে দূরে ঠেলে দিতে পারছিলাম না।
এর কিছুদিন পরই আততায়ীর হাতে নিহত হলেন প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন’!
আমি বললাম, ‘তার মানে তুই বলতে চাচ্ছিস, প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন আগে থেকেই তার মৃত্যুর খবর স্বপ্নের মারফত জানতে পেরেছিলেন।’
রনি বলল, ‘ব্যাপারটা তো তা-ই। তবে এর কোনো ব্যাখ্যা আমার জানা নেই।’
শামিম বলল, ‘স্বপ্নে যে অনেকে অনেক কিছু পায়, এটা মানিস তোরা?’
নদী বলল, ‘সেটা কী রকম?’
শামিম বলল, ‘বিখ্যাত উপন্যাস ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ এর লেখক স্বপ্নে এক দৈত্য দেখার পরপরই ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ লিখতে শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর রাজর্ষি নাটকের কাহিনি পেয়েছিলেন স্বপ্নে। বিজ্ঞানী নিলস বোর পরমাণুর গঠন দেখেছিলেন স্বপ্নে। বিজ্ঞানী কেকুলে বেনজিনের গঠন-শৈলি পেয়েছিলেন স্বপ্নে’!
আমি বললাম, ‘আসলে কি জানো নদী, শেকসপিয়ারের কথাই সত্যি:
‘There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy’! চলবে…